
দেশী সজারু- Indian Crested Porcupine
দেশী সজারু বা ভারতীয় সজারু বা ঝুঁটিধর সজারু তীক্ষ্ণ দন্তবিশিষ্ট ইঁদুরজাতীয় প্রাণী হিসেবে হিস্ট্রিসিডে পরিবারভূক্ত সদস্য। কখনো কখনো এটিকে তীক্ষ্ণ দন্তবিশিষ্ট ইঁদুর হিসেবে গণ্য করা হয়।
ইংরেজি নাম: Indian Crested Porcupine
বৈজ্ঞানিক নাম: Hystrix indica
বর্ণনাঃ
দেশী সজারুর দেহ ০.৯ মিটার (৩ ফুট) বা তদূর্ধ্ব হতে পারে এবং দৈহিক ওজন ১৪.৫ কিলোগ্রাম (৩২ পাউন্ড) হয়ে থাকে। দেহের বহিরাবরণের পশমগুলো মোটা। এতে কয়েক স্তরবিশিষ্ট শক্তিশালী, ধারালো ও তীক্ষ্ণ ধরনের কাঁটা রয়েছে। দীর্ঘতম কাঁটাটি কাঁধের দিকে জন্মায় যা প্রাণীর দেহের এক-তৃতীয়াংশ হয়। এর লেজও ছোট কাঁটার আবরণে পূর্ণ যা আত্মরক্ষার্থে ব্যবহার করে ও বিচ্ছুরণ ঘটায়। এর বিস্তৃত পা এবং লম্বা থাবা রয়েছে। যখন দেশী সজারু আক্রমণের শিকার হয় তখন তার দেহস্থিত কাঁটাগুলো সক্রিয় হয় ও লেজ থেকে খসে গিয়ে শিকারের দিকে বিচ্ছুরিত করে শিকারীকে দূরে সরাতে বাধ্য করে। যদি কোন কারণে এই বিষাক্ত কাঁটা শিকারীর গায়ে বিদ্ধ হয়, তাহলে মৃত্যু কিংবা গুরুতর আহত হবার ঘটনা ঘটতে পারে।
স্বভাবঃ
অন্যান্য প্রাচীন বিশ্বের সজারুদের মতো, দেশী সজারু নিশাচর। প্রাপ্তবয়স্ক এবং দুধ ছাড়ানো নাবালক উভয়েই প্রতি রাতে গড়ে ৭ ঘন্টা খায়। দিনের বেলা, তারা তাদের গর্তের মধ্যে থাকে, তবে শীতকাল জুড়ে, তারা মাঝে মাঝে দিনের আলোর সময় বের হয় সূর্যের আলোর জন্য।পাহাড়-পর্বত, উষ্ণমণ্ডলীয় এবং নাতিষীতোষ্ণমণ্ডলীয় এলাকার সমতলভূমি ও সংশ্লিষ্ট বনাঞ্চলে দেশী সজারুকে দেখা যায়। হিমালয় পবর্তমালার ২,৪০০ মিটার উচ্চতায়ও দেশী সজারুর সন্ধান পাওয়া গেছে। নিশাচর প্রাণী হিসেবে দেশী সজারু মাটির নীচে আশ্রয় নেয়।
প্রজননঃ
স্ত্রীজাতীয় দেশী সজারুর যৌবনপ্রাপ্তি ঘটে ২৫ মাস বয়সে। এর বিপরীতে পুরুষ প্রজাতিটির সময় লাগে প্রায় ২৯ মাস। স্ত্রী সজারুটি ২১০ দিন সময় পর্যন্ত গর্ভধারন করে। বছরে এরা ২ থেকে সর্বোচ্চ ৪টি শাবক প্রসব করে। অল্পবয়সীরা খোলা চোখ নিয়ে জন্মায় এবং ছোট, নরম কোমল আবরণে আবৃত থাকে যা জন্মের কয়েক ঘন্টার মধ্যে শক্ত হয়ে যায়। বাচ্চাদের জন্মের ১৩-১৯ সপ্তাহের মধ্যে সম্পূর্ণ দুধ ছাড়ানো হয়, কিন্তু ২ বছর বয়সের কাছাকাছি যৌন পরিপক্কতা পর্যন্ত বাবা-মা এবং ভাইবোনদের সাথে খাদে থাকে।
খাদ্য তালিকাঃ
এটি পাতা, ঘাস, ছোট ছোট গাছপালা খেয়ে জীবনধারন করে। ফলমূল, শস্য, গাছের শিকড় পর্যন্ত এরা খেয়ে ফেলে।
বিস্তৃতিঃ
বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা; পশ্চিম ও মধ্য এশিয়াসহ আফগানিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, চীন এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে এজাতীয় সজারুকে দেখতে পাওয়া যায়।
অবস্থাঃ
বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।