বিড়াল কামড় বা আঁচড় দিলে যা যা করবেন
বিড়াল বিশ্বের অনেক সংস্কৃতির দ্বারা প্রিয় এবং সম্মানিত একটি প্রাণী। তাদের তুলতুলে শরীর ও যেকোনো দেহভঙ্গি, যা ছোট বড় সবার কাছে অত্যন্ত পছন্দের।
যাইহোক, তারা আপনাকে কারণবশত কামড় দিতে পারে বা আঁচড় দিতে পারে যদি তারা ভয় পায় বা তারা রক্ষণাত্মক হয়। তাদের তীক্ষ্ণ দাঁত এবং নখ গভীরভাবে খোঁচা দিতে পারে, কখনও কখনও টিস্যু, লিগামেন্ট এবং টেন্ডন ভেদ করতে পারে।
যদিও পোষ্য বিড়াল গুলোকে নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে টিকা দেওয়া হয়, তবে এখনো আপনার পোষ্য বিড়াল অবশ্যই ব্যাকটেরিয়া বহন করতে পারে। যখন এই বিড়ালগুলি আপনাকে কামড়ায় বা আঁচড় দেয় তবে এটি আপনার জন্য বিপদজনক প্রমাণিত হতে পারে।
চিৎসকদের ভাষ্য, আপনার সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে আট ঘন্টার মধ্যে একজন ডাক্তারের সাথে দেখা করুন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আপনার অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হতে পারে যা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দেয়া প্রয়োজন হতে পারে। সংক্রমণ গুরুতর হতে পারে, বিশেষত ডায়াবেটিসযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য বা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, এবং তাদের সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বেশি।
বিড়ালের কামড়ে যা হতে পারে
মারাত্মক গভীর ক্ষত ও ফ্র্যাকচার হতে পারে
ধনুস্টংকার হতে পারে
জলাতঙ্ক হতে পারে
ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক রোগও কুকুর বিড়ালের আঁচড় বা কামড় থেকে ছড়াতে পারে
জোরে কামড়ালে ত্বকের নিচের রক্তনালী, স্নায়ু ও পেশীর ক্ষতি হয়
দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাদের, তাদের পাস্তুরেলা রোগ হতে পারে। যার ফলে গাট ও গ্রন্থি ফুলে যাওয়া, হাঁটাচলায় সমস্যা হতে পারে
বিড়াল এর ভ্যাক্সিন
পশুপ্রেমীদের জন্য চিন্তার কোনো কারণ নেই, কারণ এটার প্রতিষেধক ভ্যাক্সিন আছে। আপনার বাসায় যদি গৃহপালিত পশু থাকে, তাহলে অবশ্যই ভ্যাক্সিন দিন। নিকটস্থ পশু ক্লিনিক থেকে বা প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পোষা বিড়ালকে জলাতঙ্ক প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে।
পোষা বিড়াল কামড়ালে বা আঁচড় দিলে সেটাও কিন্তু নিরাপদ না, নিশ্চয় এখন সেটা বুঝতে পেরেছেন। বিশ্বে প্রতি ৯ মিনিটে ১ জন ও বছরে ৫৯ হাজার মানুষ জলাতঙ্ক রোগে মৃত্যুবরণ করে। এর মধ্যে শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের। জলাতঙ্ক রোগীর সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিন এশিয়ায় তৃতীয় সর্বোচ্চ। এ রোগে মৃত্যুর হার শতভাগ। তাই সতর্কতা অবলম্বন করা এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করাই একমাত্র পথ।
বিড়াল কামড় বা আঁচড় দিলে করণীয়
ক্ষতস্থান ধুয়ে ফেলুন
বিড়াল আঁচড়-কামড় দিলে প্রথম কাজ সাবান পানি দিয়ে সুন্দর করে ক্ষতস্থান ধুয়ে ফেলা। কোন পাত্রে ডুবিয়ে না ধুয়ে চলমান পানিতে ধোয়াই সবচাইতে ভালো। সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেললে জলাতঙ্ক, ইনিফেকশান সহ সবকিছুর সম্ভাবনা কমে যায়। সাবান দিয়ে ধোয়ার পর স্যাভলন, স্যাভলন ক্রিম, নেবানল পাউডার অথবা আফটার শেইভ দিয়ে আরেকবার ধুয়ে ফেলুন।
ক্ষতের গভীরতা দেখুন
মাঝেমধ্যে বিড়ালের আঁচড় লাগলেও তেমন ক্ষত তৈরি হয় না। এ ক্ষেত্রে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। জীবাণুনাশক দিয়ে ক্ষতস্থানটি ভালো করে পরিষ্কার করে নিন। তবে ক্ষত গভীর হলে বা অতিরিক্ত রক্তপাতে অবহেলা করবেন না। বিশেষ করে যদি কামড়ে ক্ষত হয় তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
এন্টিবায়োটিক ব্যবহার ও রক্তপাত প্রতিরোধ
এইসব ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হয় অন্যসব ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমন ঠেকাতে। এজন্য তরল এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা ভালো, যেমনঃ স্যাভলন, ডেটল ইত্যাদি। তবে ১০ সেকেন্ড ধরে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড সলিশন বা পভিসেপ (আয়োডিন সলিউশন) ব্যবহার করলে তার উপকারিতা হবে সবচেয়ে বেশি। যদি খুব বেশি রক্ত পড়ে তবে রক্তপাত ঠেকাতে ছোট ব্যান্ড এইড বা গজ ব্যবহার করতে পারেন; তবে লক্ষ্য রাখুন যেন রক্ত বন্ধ হলেই ব্যান্ডেজ খুলে দেওয়া হয়। কারণ ক্ষতে বাতাস আসা-যাওয়া করলে সেখানে টিটেনাসের (ধনুষ্টংকার) জীবানু বাসা বাঁধার সুযোগ পায় না। এন্টিবায়োটিক মলম বা ক্রিম না দেওয়াই ভালো কারণ ঠিকমত পরিষ্কার না হলে অনেক সময় ক্ষতে জমে থাকা ময়লা থেকে ক্রিমের নিচে বাতাসহীন পরিবেশে টিটেনাসের জীবানু বংশবৃদ্ধি করতে পারে।
সংক্রমনের চিহ্নগুলো লক্ষ্য করুন
ক্ষত গভীর না হলেও এতে জীবাণু সংক্রমিত হতে পারে। ফলে হালকা ক্ষত দেখে অবহেলা করবেন না। দেখুন ক্ষতস্থান ফুলে গেছে কি না। এ ছাড়া লাল হয়ে গেলে, রক্তপাত বন্ধ না হলে বা তীব্র ব্যথা করলে বুঝবেন জীবাণু সংক্রমিত হচ্ছে। তখন দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
জ্বর এলো কী না লক্ষ্য করুন
বেশির ভাগ সময় আঁচড়ের ফলে বয়স্কদের কিছু না হলেও ছোটদের জ্বর চলে আসে। এটি জীবাণুঘটিত কারণে হয়। একে বলে ক্যাট স্ক্র্যাচ ডিজিজ। জ্বর আসা, ফোসকা পড়া, পিঠ বা পেটব্যথার মতো লক্ষণ দেখলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। এতে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে।