বিষাক্ত সাপ চেনার উপায় - How to identify poisonous snakes
সাপে কাটলেই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমাদের দেশে বিষধর সাপের চেয়ে বিষহীন সাপের সংখ্যাই বেশি। সাধারণত কিং কোবরা, গোখরা, চন্দ্রবোড়া, শঙ্খচূড়, গ্রিন পিট ভাইপার, রাসেল ভাইপার ইত্যাদি বিষধর সাপ দেখা যায়। এক এক সাপের কামড় এক এক রকম হয়। তবে বিষাক্ত সাপের চোখের মণি ও বিষদাঁত লম্বা হয়ে থাকে।
বিষধর সাপের কামড় চেনার জন্য প্রধান যেটি দরকার তা হলো সাপটাকে চেনা। এছাড়া বিষ দাঁতের ক্ষতচিহ্ন দেখে ও বিষক্রিয়ায় সৃষ্ট লক্ষণ থেকে বিষধর সাপের কামড় চেনা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৯১৯ জন সাপের কামড়ের শিকার হয়। এদের মধ্যে বছরে মারা যায় ৬ হাজার ৪১ জন। বেশিরভাগ মানুষ মারা যায় রোগীকে হাসপাতালে আনতে দেরি করায় ও ওঝা বা বেদের মাধ্যমে অবৈজ্ঞানিক উপায়ে চিকিৎসা করানোতে। তাই সাপ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য জানা ও সতর্কতা সাপের কামড় থেকে জীবন রক্ষা করতে পারে।
আমাদের দেশের মূলত ৬ ধরনের বিষধর সাপ দেখা যায়। এসব সাপের কামড় চেনার আগে সাপটাকে চেনা অনেক বেশি জরুরি। কেননা সাপ চিনলেই সাপের কামড় ও করণীয় সর্ম্পকে জানা যায়।
কিং কোবরা:
কিং কেবরা বিষধর সাপের মধ্যে সবচেয়ে লম্বা। দেখতে গোখরা সাপের মতো হলেও এটি এই প্রজাতির কোন সাপ না। এই সাপ অন্য সাপ খেয়ে থাকে। এই সাপের বিষ নিউরোটক্সিক। যা স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে। এই সাপ মূলত সুন্দরবনেই দেখা যায়। তবে সম্প্রতি সাতছড়িতে দেখা গিয়েছে বলে শোনা গেছে। এদের শরীর কালো ও জলপাই বর্ণের। বিশাল লম্বা দেহ আর নকশাহীন ফণার জন্য খুব সহজেই এদের চেনা যায়।
গোখরা বা কেউটে সাপ:
স্থানীয় মানুষের কাছে গোখরা সাপটাই কেউটে সাপ নামেই বেশি পরিচিত। সাপুড়েদের কাছে দেখা যায় বেশি। এরা মূলত শুস্ক স্থানে থাকতে পছন্দ করে। এদের ফণার পিছনে চশমার মতো নকশা থাকে। এই সাপের বিষও নিউরোটক্সিক।
খইয়া গোখরা বা খরিশ গোখরা:
এই সাপটাও গোখরা প্রজাতির সাপ। এদের বিষ ও কার্যকারিতাও অনেকটা কমন। পুরোনো বাড়ির ধ্বংসাবশেষ, ইঁদুরের গর্ত কিংবা গাছের কোটরে এরা বসতি গড়ে।
কালাচ বা কমন ক্রেইট:
কালাচ বা কমন ক্রেইট মূলত গোখরা থেকেও বিষধর। এরা দেয়াল বাইতেও দক্ষ বিধায় মানুষের বিছানাতেও উঠে যাইতে পারে। গভীর রাতে ব্যাঙ ও ইঁদুর ধরে খায়। এরা খুব আস্তে নড়াচড়া করে।
শাখামুটি:
এই সাপটি এতটাই বিষাক্ত যে, এই সাপ বিষধর কেউটে ও কালাচকেও খেয়ে থাকে। এজন্য এই সাপ যেখানে থাকে সেখানে অন্য বিষধর সাপ থাকে না। এবং এই সাপ সহজে কামড় দেয় না। তাই এইদিক দিয়ে এই সাপ উপকারীও বটে।
চন্দ্রবোড়া:
চন্দ্রবোড়া দেখতে বাদামি রঙের ও মোটা হয়ে থাকে। অনেকটা অজগরের মতো দেখতে। উত্তেজিত হলে উচ্চস্বরে হিসহিস করতে থাকে ও শরীর উপরের দিকে উঁচু করে ধরে। এদের বিষ রক্তে কাজ করে শরীরের টিস্যু গলিয়ে ফেলে। এরা অসম্ভব ধীর গতির হয়ে থাকে। আর এরা জঙ্গলের সাপ বলে এরা সহজে মানুষের সংস্পর্শে আসে না।
সাপ কামড় দেয়ার সময় যদি সাপটিকে দেখা না যায় তবে কামড়ে সৃষ্ট ক্ষতস্থান দেখেও কোন সাপ কামড় দিয়েছে তা জানা যায়। বিষাক্ত সাপ কামড় দিলে ক্ষতস্থানে দুটি বিষ দাঁতের চিহ্ন থাকবে। এবং যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে যেতে হবে। যদি ডাক্তারকে সাপের নাম বলতে পারেন তাহলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হবে।