চাক উপজাতির পরিচিতি - Introduction to Chak tribe
চাক বাংলাদেশের একটি উপজাতি। বাংলাদেশের বান্দরবান, চট্টগ্রামের চক পাহাড় ও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তাদের বসবাস রয়েছে। চাকরা যে ভাষায় কথা বলে সেটি 'চাক ভাষা' নামে পরিচিত। চাকদের ভাষায় 'চক' শব্দের অর্থ 'দাঁড়ানো'। চাকরা নিজেদের নামের শেষে চাক লিখলেও আরাকানিরা চাকদের 'সাক' এবং কখনো কখনো 'মিঙচাক' বলে ডাকে। চাকরা অবশ্য নিজেদের বলে 'আচাকঃ'।
জনসংখ্যা
পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের দশ ভাষা-ভাষী তেরো-চৌদ্দটি জাতির মধ্যে চাক জাতি অন্যতম। 'চাক' জাতির রয়েছে নিজস্ব বর্ণমালা, ধর্ম, সংস্কৃতি, লোককথা, গান, ছড়া, কবিতা, প্রবন্ধ। ১৯৯১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী বাংলাদেশে চাকদের সংখ্যা প্রায় ২ হাজার, মিয়ানমারে ২০ হাজার (বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, ২০০২) হলেও তা এখন বাংলাদেশের সংখ্যা প্রায় পাচ হাজার (৫০০০)।
অবস্থান
পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইশারি, নাইখংছড়ি, আলিখ্যং, কামিছড়া, কোয়াংঝিরি, বাকখালী, দোছড়ি, বাদুরঝিরি, ক্রোক্ষ্যং প্রভৃতি জায়গায় চাক জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।
পেশা
মূলত কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতে চাকদের জুমচাষ ও হালচাষের প্রচলন থাকলেও বর্তমানে জুমচাষের ফলন হ্রাস পেয়েছে। চাক জনগোষ্ঠীর নিজস্ব উপকরণে বাসগৃহ ও মন্দির বা প্রার্থনাগৃহ নির্মাণ করে। কৃষিকাজ ছাড়াও চাকদের গৃহপালিত পশুপাখি এবং গৃহ সংলগ্ন বাগান রয়েছে। বনজদ্রব্য আহরণ এবং ঝিরি বা ছড়ার মৎস্য শিকারের সাথেও কেউ কেউ জড়িত।
ভাষা
চাক হচ্ছে সিনো-তিব্বতীয় ভাষা গোষ্ঠীর সাল শাখা। বার্মা এবং চীনে এই ভাষায় কথা বলা হয়। চাক ভাষার একাধিক কথ্যরূপ বিদ্যমান। কাদো, কানান ইত্যাদি। আন্দ্রো এবং সেংমাই উপভাষা বিলুপ্তির পথে। এই ভাষায় কথা বলা লোকগুলো এখন মৈতৈ ভাষায় কথা বলে। কাদো/কানান ভাষী লোকেরা বার্মিজ এবং চাকমা বাংলায় কথা বলে। প্রাচীন পিয়ু ভাষা এই ভাষা থেকেই উৎপত্তি লাভ করেছিলো।
বিয়ে
পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকদের মধ্যে প্রধাণত দুটো গোত্র দেখা যায়। 'আন্দো' ও 'ঙারেখ'। এই দুটি প্রধান গোত্রের মধ্যে আবার অনেকগুলো উপগোত্র আছে। একই গোত্রের মধ্যে ছেলে-মেয়েদের বিয়ে নিষিদ্ধ।
ধর্ম
নামগত সাদৃশ্য ছাড়া চাকমাদের সাথে এদের ভাষা বা সংস্কৃতিগত কোনো মিল নেই। চাকরা মূলত বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। তবে অনেক খ্রিষ্টধর্মালম্বীও আছেন।
খাদ্য
চাকরা ভাত, শাকসবজি, শুঁটকি, মাছ ও মাংস খায়। চাকদের প্রিয় খাদ্য কাইংরাবুং ও কাইংদাক
গোত্র প্রথা
গোত্র প্রথার মধ্যে আন্তঃসম্পর্কের ও নবজাত শিশুর মঙ্গল কামনার্থে যে সংগীত পরিবেশন করা হয় তা স্বাতন্ত্রের দাবি রাখে। এছাড়া জীবনের বিভিন্ন ধাপে পালিত কৃষ্টির মাধ্যমে চাকরা নিজেদেরকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করেছে। জন্ম-মৃত্যুর ক্ষেত্রে অন্যান্য উপজাতিদের মত রয়েছে প্রথাগতসংস্কার। সন্তান জন্মদানের পর সাত দিন মাকে অপবিত্র বলে আলাদা রেখে নিজস্ব পদ্ধতিতে পবিত্র করা হয়।
মৃত্যু সৎকার
মৃত্যুর পর শশ্মানে দাহ করা হয়। মৃতের আত্মীয়রা বৌদ্ধ মন্দিরে সাত দিনের ভাত দান করে আত্মার মঙ্গল কামনা করে। মৃত দেহ সৎকারের ক্ষেত্রে চাকদের একটি বিশেষ ‘আপেংজা’ (দেহ অধিকার প্রথা) রয়েছে। এই প্রথা অনুসারে পুরুষ ব্যাক্তির মৃতদেহ সৎকারের অধিকারী তার মামা অথবা মামাতো জ্ঞাতি। অপরদিকে স্ত্রীলোকের মৃতদেহ সৎকারের অধিকারী পিতৃব্য আপনভাই অথবা ভাতুষ্পুত্র।