কন্দ উপজাতির পরিচিতি - Introduction to Kanda tribe
Khonds, Kondha, Kandha

কন্দ উপজাতির পরিচিতি - Introduction to Kanda tribe

কন্দ বাংলাদেশের অন্যতম ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী। এদের আদিনিবাস ভারতের উড়িষ্যা রাজ্য। উনিশ শতকের মাঝামাঝিতে কন্দরা  চা ও রেল শ্রমিক হিসাবে বাংলাদেশে আসে এবং রেললাইন নির্মাণের কাজে যোগদান করে। রেললাইন নির্মাণ শেষে এদের একাংশ চা বাগানের শ্রমিক হিসেবে এদেশে স্থায়ীভাবে থেকে যায়। বর্তমানে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলাধীন হরিণছড়া, উদনাছড়া, পুটিয়া ও লাখাউড়া এবং কমলগঞ্জ উপজেলার কুরমাছড়া চা বাগানে কন্দদের দেখা যায়।

কন্দদের সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। অন্যান্য জনগোষ্ঠীর লোকেরা তাদেরকে স্থানীয়ভাবে কুই নামে অভিহিত করে। আবার কোথাও কোথাও তারা উড়িয়া নামেও পরিচিত। তাদের সঙ্গে মধ্যভারতের বিভিন্ন ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী যেমন ভীল, কোল, মুন্ডা প্রভৃতির সাদৃশ্য বিদ্যমান। কন্দ জনগোষ্ঠীর লোকেরা পাঁচটি দলে বিভক্ত। এ দলগুলি ভিন্ন ভিন্ন গোত্র বা বংশে বিভক্ত। কন্দদের নিকট ব্রাহ্মণ, গোয়ালা, কায়স্থ, তেলী, বাউড়ি, কর্মকার প্রভৃতি হলো উঁচু বর্ণ এবং তারা নিজেদেরকে কাহার, মালাকার, নমশূদ্র প্রভৃতি নিচু বর্ণ মনে করে। কন্দ সমাজে একক এবং যৌথ উভয় পরিবার প্রথা বিদ্যমান। পরিবারের বধূ শ্বশুর ও ভাসুরকে সম্মান দেখায়। কন্দ সমাজ পুরুষ প্রধান। পরিবারের পুত্রসন্তানেরাই পারিবারিক সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়। পারিবারিক এবং সামাজিক সমস্যা নিরসনে সমাজ নেতাগণ এগিয়ে আসেন। কন্দ সমাজে নির্বাচিত পরিষদ রয়েছে। পরিষদের প্রধানকে বেহেড়া বলা হয়। তাদের মধ্যে গ্রাম পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু রয়েছে।

বাঁশ ও বেঁতের কাজে কন্দরা খুবই পারদর্শী। কাজের ফাঁকে ঘরে বসে বাঁশবেত দিয়ে ঝুঁড়ি, ধামা, কুলা তৈরি করে বিক্রি করে। কন্দ মহিলারা চারুশিল্পে পারদর্শী। নানা উৎসবে তারা দৃষ্টিনন্দন আল্পনা অাঁকে। শিশু জন্ম, বিবাহে কন্দ মহিলারা সমবেতভাবে নাচগান পরিবেশন করে। মাতৃভাষা কুই অথবা কন্দ ভাষাতেই তারা গান পরিবেশন করে। কন্দদের মৌখিক সাহিত্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ।

খাদ্য

কন্দরা আমিষভোজী। ভাত তাদের প্রধান খাদ্য। তারা মাছ, মাংস, ডিম এবং নানা ধরণের শাকসবজি আহার করে। নানা জাতের বন্য আলু এবং দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্যসামগ্রী তাদের নিকট প্রিয়। পান সুপারির ব্যবহার এবং ধুমপান তাদের সমাজে লক্ষ্য করা যায়। কন্দ নারী পুরুষ মদ পান করে। কন্দরা শুকরের মাংস খায়। পৌষ মাসের শেষ দিন তারা পিঠা উৎসব করে। কন্দদের নিজস্ব ভাষা রয়েছে। প্রবীণদের এখনো তাঁদের আদিভাষায় কথা বলতে দেখা যায়। এ ভাষার কোন বর্ণমালা নেই। নতুন প্রজন্ম ভাষা বাংলা ভাষায় কথা বলে। কন্দ সমাজে শিক্ষার হার খুবই কম।

র্ধম

কন্দরা হিন্দুদের মতই বিভিন্ন দেবদেবীর পূজা করে। তাদের নিজেদের ভাষায় এসব দেবদেবীর নামকরণ করা হয়েছে যেমন ময়মুরুবিব, ত্রিনাথ প্রভৃতি। এগুলো কন্দদের পারিবারিক দেবতা। প্রতিটি পরিবারেই ময়মুরুবিব দেবতার বেদি থাকে যেখানে সন্ধ্যায় ভোগারতি প্রদান করা হয়। প্রতি বৃহস্পতিবারে তারা ত্রিনাথ দেবতার পূজা করে। কন্দরা পূনর্জন্ম ও কর্মফলে বিশ্বাস করে। তাদের বিশ্বাস পূণ্যবান ব্যক্তি মৃত্যুর পর মোক্ষ লাভ করবে এবং পাপীরা নরকে যাবে।

বিবাহ

কন্দ সমাজে নিজ গোত্রের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ। এ সমাজে ছেলের কুড়ি এবং মেয়ের পনের বছর অতিক্রম করলে তারা বিয়ের উপযুক্ত বিবেচিত হয়। বিয়ের কথা পাকাপাকি হলে উলু ধ্বনির মাধ্যমে ঘোষণা করা হয়। বরকে বিবাহ মঞ্চে বসানো হয় এবং কনে বরকে সাতবার প্রদক্ষিণ করে। এরপর বরকনে পরস্পর মালাবদল করে। বিয়ের পুরোহিত পবিত্র অগ্নি প্রজ্জ্বলিত করেন এবং বর কনে উভয়ে অগ্নি সাক্ষী রেখে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। কন্দ সমাজে বিবাহবিচ্ছেদের প্রচলন নেই, তবে বিধবা বিবাহের প্রথা বিদ্যমান।

মৃত্যু

কন্দরা মৃতদেহ দাহ করে। দাহ শেষে দেহভস্ম মাটির নতুন পাত্রে সংগ্রহ করে নদীর ধারে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়। মৃতব্যক্তির পরিবারে এগারো দিন পর্যন্ত অশৌচকাল পালিত হয়। সে সময় মৃতব্যক্তির ছেলেরা এক বস্ত্রে, নগ্নপায়ে, তেলবিহীন থাকে। তারা হবিষ্যান্ন আহার করে। আতপ চালের ভাত ও কাঁচকলাসিদ্ধ মশলা ও লবণ ছাড়া হবিষ্যান্ন তৈরি হয়। দশদিন পর নাপিত অশৌচকাল পালনকারীদের মাথার চুল ফেলে দেয় এবং এগারো দিনে শ্রাদ্ধকর্ম সম্পন্ন হয়।

ভাষা

বাংলাদেশে কন্দ সম্প্রদায় কন্দফারসি নামক ভাষাকে তাদের আদি ভাষা হিসেবে মনে করে থাকে। বর্তমান প্রজন্মের কন্দ ছেলেমেয়েরা এ ভাষায় কথা বলতে পারে না। তবে বয়স্কদের মধ্যে কেউ কেউ এখনো এ ভাষায় কথা বলতে পারেন। বর্তমানে কন্দরা উড়িয়া ভাষায় কথা বলে।

বাংলাদেশের সেরা ১০ ব্যাংক-Top 10 Best Banks in Bangladesh
সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার আর নেই
কাঁকড়াভুক বেজী-Crab-eating Mongoose
বোচা-নাক কলাবাদুড়-Short-nosed Fruit Bat
ত্রিপুরা উপজাতির পরিচিতি - Introduction to Tripuri Tribes
এনজিও তালিকা রাজশাহী - NGO List Rajshahi
বাংলাদেশের সংরক্ষিত মাছের তালিকা - List of protected fish in Bangladesh
বাংলাদেশী ব্র্যান্ড নামের তালিকা
বাংলাদেশের শীর্ষ দশ জন ধনী ব্যক্তি
মুক্তিযোদ্ধা ছাড়া সব কোটা বাতিল