
কামাল উদ্দিন জাফরী এর জীবনী-Biography of Kamal Uddin Jafri
বাবার নাম: মাওলানা সাইয়্যেদ আবু জাফর আব্দুল্লাহ
জন্ম: ৫ মার্চ ১৯৪৫
ধর্ম: ইসলাম
জন্মস্থান: ভোলা জেলা, বাংলাদেশ
বর্তমান বয়স: ৭৭ বছর
পেশা: লেখক, ইসলামী চিন্তাবিদ ও ধর্মীয় পণ্ডিত
ফেসবুক: https://www.facebook.com
ওয়েবসাইট: https://www.kamaluddinzafree.com/
ড. সাইয়্যেদ কামালুদ্দীন আব্দুল্লাহ জাফরী একজন বাংলাদেশী লেখক, ইসলামী চিন্তাবিদ ও ধর্মীয় পণ্ডিত। তিনি বিশ্বের বেশ কয়েকটি আর্থিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান। তিনি বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান।
জন্ম
বিচক্ষণ আর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এই মানুষটির আদি বসতি বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত দ্বীপাঞ্চল ভোলায়। ১৯৪৫ সনের ৩ মার্চ তারিখে বরিশালের ভোলা জেলার বোরহানুদ্দিন থানার সৈয়দ আওলিয়া গ্রামে তাঁর জন্ম হয়। পিতা মাওলানা সাইয়্যেদ আবু জাফর আব্দুল্লাহ ছিলেন একজন খ্যাতনামা আলেম। তাঁর দাদার নাম হযরত মাওলানা মুফতি আব্দুল হাদী। তাঁর মহিয়সী মাতা ফাতেমা খাতুন ও নানা প্রখ্যাত আলেম আবেদ আলহাজ্ব মকবুল আহমেদ।
পারিবারিক ঐতিহ্য
তাঁর পরিবারের রয়েছে এক ঐতিহাসিক ও গৌরবজনক পরিচিতি। তাঁর পরিবারের উর্ধ্বতন পুরুষ প্রিয় নবী হযরত মুহাম¥দ (সা.) এর বংশধর। একারণেই তাঁর নামের পূর্বে ‘সাইয়্যেদ’ শব্দটি যোগ করা হয়।
শৈশব
অত্যন্ত দ্বীনি পরিবেশে আল্লামা জাফরীর শৈশব অতিবাহিত হয় । তাঁর পিতা ছিলেন অত্যন্ত পরহেজগার আলেম। পিতার তত্ত্বাবধানে ছোটকাল থেকেই তিনি ইলম ও আমলের উপর বেড়ে উঠেন। তাঁর পারিবারিক ইতিহাস অনুসন্ধান করলে জানা যায়, জমিদার আগা বাখের খানের সময় একটি আরব পরিবার ‘বোরহান উদ্দিন’ নামক দ্বীপাঞ্চলে আগমন করেন। তখন জমিদার সাহেব তাদেরকে পূর্ব ও পশ্চিমে দু’টি দ্বীপ লাখেরাজ করে দেন। সেই আরব পরিবারের প্রধান ছিলেন সৈয়দ আওলিয়া, তাঁর নামানুসারেই এ দু’টি দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত গ্রামের নাম দেয়া হয় ‘সৈয়দ আওলিয়া’।
তাঁর সম্মানিত পিতা মাওলানা আবু জাফর আব্দুল্লাহ ছিলেন স্থানীয় মির্জাকালু ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ। আবেদ জাহেদ ও প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন হিসেবে এলাকায় তাঁর বিশেষ খ্যাতি ছিল।
তাঁর দাদা মাওলানা মুফতি আবদুল হাদী ছিলেন ফুরফুরার প্রথম পীর হযরত মাওলানা আবু বকর সাহেবের খলিফা। কোলকাতা আলিয়া মাদরাসা থেকে তিনি সেকালে গোল্ডমেডেল পেয়ে টাইটেল পাশ করেছিলেন।
তাঁর নানা-বাড়ি ছিল ভোলা জেলার তজুমুদ্দিন থানার মহাদেবপুর গ্রামে। তাঁর নানাও একজন প্রখ্যাত আলেম ও আবেদ ছিলেন। তৎকালীন নোয়াখালীর কলাগাছিয়া পীর সাহেবের খলীফা ছিলেন তিনি।
কৈশোর
আল্লামা জাফরীর বাবা মাওলানা আবু জাফর আব্দুল্লাহ ছিলেন তাঁর দাদার প্রতিষ্ঠিত ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ এবং প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন। তাঁর বাবার কাছে বহু আলেম প্রতিনিয়ত আসা যাওয়া করতেন। তিনি সেসব আলেমদের খেদমত করবার স্থায়ী সুযোগ পেয়েছিলেন। তাঁর দাদা মাওলানা মুফতি আবদুল হাদীও ছিলেন প্রসিদ্ধ আলেম এবং সেই এলাকার প্রসিদ্ধ পীর। তাঁর কাছে বহু আলেম ও মুত্তাকী লোকদের আগমন ঘটত। আল্লামা জাফরী শিশু ও কিশোর বয়সে আন্তরিকভাবে তাঁদের সেবা-যত্ন করতেন। বিনিময়ে এসব মানুষের কাছ থেকে তিনি পেতেন অকৃত্রিম স্নেহ আদর আর হৃদয় নিংড়ানো দোয়া।
বাল্যশিক্ষা
বাল্যকাল থেকেই আল্লামা জাফরী তুখোর মেধাবী ও প্রচণ্ড সাহসী ছিলেন। গ্রামের মক্তবে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে দাদার প্রতিষ্ঠিত মির্জাকালু ইসলামিয়া সিনিয়ার ফাজিল মাদরাসায় ভর্তি হন। তখনও মাদরাসার অধ্যক্ষ ছিলেন তাঁর বাবা অধ্যক্ষ আবু জাফর আব্দুল্লাহ।
কুমরাদী সিনিয়র মাদরাসায় উচ্চশিক্ষা
উনিশ শতকে পূর্ব বাংলার সেরা ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে নরসিংদীর শিবপুরস্থ কুমরাদী দারুল উলুম সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার ব্যাপক সুখ্যাতি ছিল। উচ্চ শিক্ষার জন্য আল্লামা জাফরী ১৯৫৬ সনে অত্র মাদরাসায় ভর্তি হন। বাল্য বয়সে এত দূরে তাঁর মন টিকে নি বলে বাধ্য হয়ে অল্পদিনের ব্যবধানেই উস্তাদদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তিনি পুনরায় বাবার প্রতিষ্ঠানে ফিরে আসেন এবং ১৯৫৮ সনে কৃতিত্বের সাথে দাখিল পাশ করেন।
আবারো কুমরাদী মাদরাসায়: ভারতবর্ষের সেরা ইসলামী বিদ্যাপিঠ কুমরাদী মাদরাসায় ভর্তি হয়ে চার বৎসর অধ্যয়ন করে ১৯৬২ সনে তিনি আলিম পাশ করেন। অতপর ফাজিল শ্রেণীতে দুই বৎসর অধ্যয়ন করেও কুমরাদী মাদরাসা থেকে কেন্দ্রীয় পরীক্ষা দেয়ার সৌভাগ্য হয়নি তাঁর। পরীক্ষার কিছুদিন পূর্বে তাকে ফিরে যেতে হয় নিজ বাড়িতে। অবশেষে মির্জাকালু ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা থেকে ১৯৬৪ সনে ফাজিল পরীক্ষা দেন এবং কৃতিত্বের সাথে কৃতকার্য হন।
ঢাকা আলিয়া মাদরাসায় ভর্তি: ফাজিল পাশ করে তিনি ঢাকা আলিয়া মাদরাসায় ভর্তি হন এবং কিছু দিন অধ্যয়ন করবার পর নিয়মিত ক্লাশ করা তাঁর পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে।
জমিয়তে এত্তেহাদুল ওলামায় যোগ দান: তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সংকটময় প্রেক্ষাপটের কারণে তিনি জমিয়তে এত্তেহাদুল ওলামায় যোগ দেন। তখন এত্তেহাদুল ওলামার প্রেসিডেন্ট ছিলেন মাওলানা আবদুল আলী এম পি। উল্লেখ্য, মাওলানা আব্দুল আলী ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী আলী আহসান মোঃ মুজাহিদ সাহেবের বাবা। ১৯৬৭-৬৮ সনে আল্লামা জাফরী এই সংগঠনের পূর্ব পাকিস্তান শাখার ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ছাত্র বয়স থেকেই উর্দু ও বাংলা ভাষায় তার অসাধারণ বাগ্মিতা থাকায় তিনি নেতৃত্বে বেশ সুনাম কুড়ান।
জামেয়া প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন
বিজ্ঞ এই আলেমকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন নরসিংদীর প্রভাবশালী ও সম্ভ্রান্ত সুধীমহল। তাদের মাঝে উল্লেখযোগ্য হলেন- সর্ব জনাব রুস্তম আলী আশরাফি, আসহাব উদ্দীন ভূঁইয়া (মধু ভূঞা), মৌলানা মোঃ জালাল উদ্দীন, আব্দুর রহমান ভূঁইয়া, তায়েব উদ্দীন ভূঁঞা, মৌলভী তাফাজ্জল হোসেন, এ, কে, এম জয়নাল আবেদীন, তোতা মিয়া, শমসের আলী, শামসুদ্দীন ভূঁঞা, সাহাবুদ্দীন মিয়া, মোঃ বদরুজ্জামান, পোস্ট মাস্টার, মাওলানা ফজলুল হক প্রমুখ। এসব বিদগ্ধ গুণীজন আল্লামা জাফরীর কাছে একটি আধুনিক মানের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করবার আবেদন রাখেন। জাফরী সাহেব তাদের এ প্রস্তাবকে ধন্যবাদের সাথে গ্রহণ করেন এবং আন্তরিকতার সাথে একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠান গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করবার প্রতিশ্রুতি দেন।
শুরু হলো স্বপ্নের পথচলা : জামেয়া কাসেমিয়ার যাবতীয় দায়িত্ব তাঁর কাঁধে অর্পিত হওয়ার পর তিনি তা আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করেন। মাওলানা জাফরীর পরিবারের খরচ মিটানোর জন্য অধ্যক্ষ হিসেবে তার বেতন মাসিক ৫০০ টাকা ধার্য করা হয়। জনাব আসাবুদ্দিন মধু ভূঞা সাহেব এই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। জামেয়া কাসেমিয়াকে একটি আদর্শ আবাসিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ার স্বপ্ন নিয়ে দৃপ্ত পায়ে যাত্রা শুরু করেন আল্লামা জাফরী। তাঁর প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন প্রদান করেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
হজ্বে গমন
জামেয়া প্রতিষ্ঠার মাত্র এক বৎসরের মাথায় ১৯৭৭ সালে মাদরাসার পরিচালনা কমিটি অধ্যক্ষ জাফরীকে হজ্জে পাঠানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। উদ্দেশ্য ছিল জামেয়ার উন্নয়ন। হজ্জ্বে পাঠাতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। তাই কমিটির সম্মানিত সদস্যগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নরসিংদী বাজার থেকে তখন প্রায় ১৬০০০/=(ষোল হাজার টাকা) উত্তোলন করে আল্লামা জাফরীকে হজ্জ্বে পাঠানো হয়।
রাবেতা আলম আল ইসলামীতে আবেদন
আল্লামা জাফরী হজ্জ্বে গিয়ে ক্বাবাকে সামনে রেখে মহান প্রভুর দরবারে তাওহীদের মশাল হিসেবে জামেয়াকে কবুল করার প্রার্থনা করেন। পাশাপাশি জামেয়ার অর্থনৈতিক দুর্দশা লাঘবের জন্যে “রাবেতা আলম আল ইসলামী”তে একটি আবেদন দাখিল করেন। মাত্র এক বছর পর রাবেতার পক্ষ থেকে জামেয়ার অনুকূলে ১২,০০,০০০/= (বারো লক্ষ টাকা) প্রেরিত হয়। তখনকার যুগে এটা ছিল এক রাজ্য পাওয়ার আনন্দ। প্রদত্ত অর্থ থেকে ৯,০০,০০০/= (নয় লক্ষ টাকা) দিয়ে ইমাম ইবনে তাইমিয়া নামের বিশাল এক শিক্ষা ইমারত তৈরি করা হয়। আর অবশিষ্ট ৩,০০,০০০/= (তিন লক্ষ টাকা) দিয়ে গাবগাছসহ পশ্চিমের ঈদগাহের জায়গা ক্রয় করা হয়।
মহামান্য সৌদি রাষ্ট্রদূতের আগমন:
জামেয়া প্রতিষ্ঠার মাত্র দুই বছরের মাথায় ১৯৭৮ সনের ৫ এপ্রিল অধ্যক্ষ কামালুদ্দীন জাফরী তৎকালীন মহামান্য সৌদি রাষ্ট্রদূতকে জামেয়ার বার্ষিক মহাসম্মেলনে প্রধান অতিথি করে নিয়ে আসতে সক্ষম হন।
মক্কার কিং আবদুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি
ঢাকাস্থ সৌদি দূতাবাসের প্রথম রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হন শেখ ফুয়াদ আবদুল হামিদ আল খতীব। তিনি জামেয়ার বার্ষিক মাহফিলে এসে ইসলাম ও আধুনিক শিক্ষার অপূর্ব সমন্বয় দেখে অত্যন্ত মুগ্ধ হন। আল্লামা জাফরীর জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দেখে তিনি তাঁকে মক্কা কিং আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের পরামর্শ এবং এব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করেন।
শিক্ষা ব্যবস্থায় আল্লামা জাফরীর অবদান
শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড; উন্নয়নের চাবিকাঠি; একটি জাতির আশা-আকাক্সক্ষার বাস্তবায়ন ও ভবিষ্যতের প্রত্যাশিত সমাজ বিনির্মাণের হাতিয়ার। জাতি গঠনে শিক্ষার রূপরেখা কেমন হওয়া উচিত- সে ব্যাপারে আল্লামা জাফরী গভীর চিন্তা করে থাকেন। ইসলাম ও আধুনিক শিক্ষার সুসমন্বয় সাধন এবং তার বাস্তব প্রতিফলনের লক্ষ্যে তিনি জামেয়া কাসেমিয়ার পাশাপাশি আরো বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন। ঢাকায় উত্তরায় তাঁর হাতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘হলি ক্রিসেন্ট স্কুল’। ব্রিটিশ কাউন্সিলের কারিকুলামের সাথে ইসলামি শিক্ষার সমন্বয় সাধনের ক্ষেত্রে এটি একটি চমৎকার দৃষ্টান্ত। তাঁর দীর্ঘলালিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্নও বাস্তবায়িত হয়েছে। ঢাকার গোপীবাগে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়’। শিক্ষার অসাধারণ বিশেষত্বের কারণে অল্পদিনের ব্যবধানে বিশ্ববিদ্যালয়টি অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীদের কাছে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ইসলাম ও সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদির পাঠদানের পাশাপাশি এই বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামি দাওয়াহর প্রসার ও জনহিতকর কর্মসূচিও গ্রহণ করে আসছে।
অধ্যক্ষ সাইয়্যেদ কামালুদ্দীন জাফরী এর বই সমূহ
মুসলমানকে যা জানতেই হবে
আপনার প্রশ্নের জবাব?
মুসলমানকে যা জানতেই হবে