আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এর জীবনী-Biography of Allama Delwar Hossain Sayedee
বাবার নাম: ইউসুফ সাঈদী
মায়ের নাম: গুলনাহার বেগম
জন্ম: ১৯৪০ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি
ধর্ম: ইসলাম
জন্মস্থান: পিরোজপুর, ব্রিটিশ ভারত
বর্তমান বয়স: ৮৩ বছর
জাতীয়তা: বাংলাদেশী
নাগরিকত্ব: বাংলাদেশী
পেশা: রাজনীতি, দাওয়াত
দাম্পত্য সঙ্গী: শেখ সালেহা বেগম
সন্তান: রাফিক বিন সাঈদী, শামীম সাঈদী, মাসঊদ সাঈদী, নাসিম সাঈদী
সমাধিস্থল: সাঈদী ফাউন্ডেশনের পারিবারিক কবরস্থান,পিরোজপুর
দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী একজন বাংলাদেশী ইসলামী পণ্ডিত, বক্তা এবং রাজনীতিবিদ ও প্রাক্তন সংসদ সদস্য,যিনি ১২ জুন ১৯৯৬ থেকে ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ পর্যন্ত একজন সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের মানুষের কাছে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী পরিচিতি পান মূলত আশির দশকের শুরু থেকে। তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে-আমির বা ভাইস প্রেসিডেন্ট।
জন্ম
দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী ১৯৪০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ইউসুফ শিকদার গ্রামের খুব সাধারণ এক গৃহস্থ ছিলেন। ছোটবেলায় তিনি স্থানীয় লোকদের কাছে দেলোয়ার শিকদার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি তার প্রাথমিক ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করে তার বাবার প্রতিষ্ঠিত স্থানীয় একটি মাদ্রাসায়।
শিক্ষা
পিতার প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসায় প্রাথমিক শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করেন। পরে তিনি খুলনা আলিয়া মাদ্রাসায় কিছুদিন এবং পরে ১৯৬২ সালে ছারছিনা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কামিল পাশ করেন। কামিল পাশ করার পর বিভিন্ন ভাষা,ধর্ম,বিজ্ঞান ,রাজনীতি,অর্থনীতি,পররাষ্ট্রনীতি,মনোবিজ্ঞান ও বিভিন্ন তত্তের উপর দীর্ঘ ৫ বছর অধ্যায়ন করেন। ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণের পর সাঈদী স্থানীয় গ্রামে ব্যবসা শুরু করেন। তিনি মুসলমান আলেম বা মওলানা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
সাঈদী বাংলা, উর্দু, আরবি ও পাঞ্জাবি ভাষায় দক্ষ এবং ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায়ও তার দক্ষতা রয়েছে।
পারিবারিক জীবন
দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর স্ত্রীর নাম শেখ সালেহা বেগম। এই দম্পতীর চার সন্তান— রাফিক বিন সাঈদী, শামীম সাঈদী, মাসঊদ সাঈদী ও নাসিম সাঈদী।
রাজনৈতিক জীবন
১৯৮০’র দশকের প্রথমদিকে দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী সাড়াদেশব্যাপী ইসলামী ওয়াজ-মাহফিল ও তাফসির করা শুরু করেন এবং তার সুন্দর বক্তব্য দানের ক্ষমতার জন্য দেশব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জন করেন; এ সময়ই তিনি রাজনীতিতে প্রবেশের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম নেতা নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল নির্বাচনী জোট গঠন করে এবং তিনি এই নির্বাচনে পুনরায় জাতীয় সংসদ-এর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
গ্রেফতার
“ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুভূতিতে আঘাত করেছে” মর্মে অভিযোগে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ২১ মার্চ তারিখে দায়েরকৃত বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীর মামলার প্রেক্ষিতে ঐ বছর ২৯ জুন তারিখে রাজধানীর শাহীনবাগের বাসা থেকে পুলিশ দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে গ্রেপ্তার করে।
দায়ী ইলাল্লাহ
১৯৬৭ সাল থেকে তিনি “দায়িইলাল্লাহ” হিসেবে আত্মনিয়োগ করেন । মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাইদী পৃথিবীর অর্ধশতেরও বেশি দেশে আমন্ত্রিত হয়ে ইসলামের সু-মহান আদর্শ মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন। দেশে তাঁর ৫০ বছরের ইসলাম প্রচারের নমুনা সংক্ষেপে দেখুন:-
ক. চট্টগ্রাম প্যারেডগ্রাউন্ড ময়দানে প্রতি বছর ৫ দিন করে দীর্ঘ ২৯ বছর মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় । পবিত্র কাবা শরীফের সম্মানিত ইমাম এ মাহফিলে দু’বার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
খ. খুলনা সার্কিট হাউজ ময়দানসহ শহরের বিভিন্ন মাঠে প্রতি বছর ২ দিন করে দীর্ঘ ৩৮ বছর তাফসীর মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
গ. সিলেট সরকারী আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে প্রতি বছর ৩ দিন করে দীর্ঘ ৩৩ বছর যাবৎ তাফসীর মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
ঘ. রাজশাহী সরকারী মাদ্রাসা মাঠে প্রতি বছর ৩ দিন করে দীর্ঘ ৩৫ বছর যাবৎ তাফসীর মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
ঙ. বগুড়া শহরে প্রতি বছর ২দিন করে দীর্ঘ ২৫ বছর যাবৎ তাফসীর মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
চ. ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে ময়দান ও পল্টন ময়দানে প্রতি বছর ৩ দিন করে দীর্ঘ ৩৪ বছর যাবৎ তাফসীর মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
ছ. কুমিল্লা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে তিনদিন ব্যাপী প্রায় দীর্ঘ ৩১ বছর যাবৎ তাফসীর মাহফিলঅনুষ্ঠিত হয়।
উপাধী
১৯৯১ সালে ইসলামিক সার্কেল অব নর্থ আমেরিকা কতৃক তিনি ‘’আল্লামা’’ উপাধিতে ভূষিত হন।
গ্রন্থ রচনা
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ৭৫টি গ্রন্থ রচনা করেন।
আখিরাতের জীবনচিত্র
দুর্নীতি মুক্ত সমাজ গড়ার মূলনীতি
ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবী ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা
আমি কেন জামায়াতে ইসলামী করি
সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে ইসলাম
শিশুর প্রশিক্ষণ পদ্ধতি
রাসূলুল্লাহর (সাঃ) মোনাজাত
কাদিয়ানীরা কেন মুসলমান নয়
নীল দরিয়ার দেশে
নিজ পরিবারবর্গের প্রতি আমার অসিয়্যত
মহিলা সমাবেশে প্রশ্নের জবাবে - ১ম খন্ড
মহিলা সমাবেশে প্রশ্নের জবাবে - ২য় খন্ড
মানবতার মুক্তি সনদ মহাগ্রন্থ আল-কোরআন
খোলা চিঠি
জান্নাত লাভের সহজ আমল
ঈমানের অগ্নিপরীক্ষা
হাদীসের আলোকে সমাজ জীবন
দ্বীনে হক-এর প্রতি দাওয়াত না দেয়ার পরিণতি
দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ধৈর্যের অপরিহার্যতা
দেখে এলাম অবিশ্বাসীদের করুণ পরিণতি
চরিত্র গঠনে নামাযের অবদান
তাফসীরে সাঈদী - সূরা আল-আসর
তাফসীরে সাঈদী - সূরা লূকমান
তাফসীরে সাঈদী - সূরা আল-ফাতিহা
তাফসীরে সাঈদী - আমপারা
বিষয়ভিত্তিক তাফসীরুল কোরআন - ১ম খন্ড
বিষয়ভিত্তিক তাফসীরুল কোরআন - ২য় খন্ড
আল্লামা সাঈদী রচনাবলী - ১ম খন্ড
আল্লামা সাঈদী রচনাবলী - ২য় খন্ড
মাওলানা সাঈদী রচনাবলী - ৩য় খন্ড
আল্লাহ মৃতদেহ নিয়ে কি করবেন?
আল্লাহ কোথায় আছেন?
আল কোরআনের মানদন্ডে সফলতা ও ব্যর্থতা
আল-কোরআনের দৃষ্টিতে মহাকাশ ও বিজ্ঞান
আল-কোরআনের দৃষ্টিতে ইবাদাতের সঠিক অর্থ
সীরাতে সাইয়্যেদুল মুরসালীন
শিশু-কিশোরদের প্রশ্নের জবাবে
নন্দিত জাতি নিন্দিত গন্তব্যে
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে
ক. ১৯৭৬ সাল থেকে সৌদি আমন্ত্রনে রাজকীয় মেহমান হিসেবে তিনি হজ্জ ব্রত পালন করেন । ১৯৯০ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর রমজান মাস মক্কা মদীনায় থাকা রুটিন হয়ে গিয়েছিল তাঁর।
খ. ১৯৮২ সালে ইমাম খোমিনির আমন্ত্রনে ইরানের প্রথম বিপ্লব বার্ষিকী উজ্জাপন উপলক্ষে তিনি তেহরান সফর করেন ।
১৯৯১ সালে সৌদি বাদশার আমন্ত্রনে কুয়েত -ইরাক যুদ্ধের মিমাংসা বৈঠকে তিনি যোগদান করেন । ১৯৯১ সালে ইসলামী সারকেল অফ নর্থ অ্যামেরিকা তাকে "আল্লামা" খেতাবে ভূষিত করেন ।
গ. ১৯৯৩ সালে নিউইয়ার্কে জাতিসঙ্ঘের সামনে অ্যামেরিকান মুসলিম ডে প্যারেড সম্মেলনে আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীকে "গ্র্যান্ড মার্শাল" পদক দেয়া হয় । দুবাই সরকারের আমন্ত্রনে ২০০০ সালের ৮ই ডিসেম্বর আরব আমিরাতে ৫০,০০০হাজারেরও বেশি শ্রোতার সামনে তিনি কোরআনের তাফসির পেশ করেন ।
ঘ. লন্ডন মুসলিম সেন্টারের উদ্ভধনি অনুষ্ঠানে কাবা শরিফের সম্মানিত ইমাম "শায়েখ আব্দুর রাহমান আস সুদাইসির" সাথে মাওলানা সাঈদী ও আমন্ত্রিত হন ।
মৃত্যু
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মুফাসসিরে কুরআন ও সাবেক এমপি আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৮৩ বছর বয়সে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এর আগে ১৩ আগস্ট রবিবার তিনি কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে হৃদরোগে আক্রান্ত হন। পরে তাকে কারাগার থেকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নেওয়া হয়। ১৫ আগস্ট ২০২৩ পিরোজপুরের সাঈদী ফাউন্ডেশনে জানাজা নামাজের পর সমাহিত করা হয়।