তারেক মাসুদ এর জীবনী-Biography of Tareq Masood
Tareq Masood

তারেক মাসুদ এর জীবনী-Biography of Tareq Masood

অন্যান্য নাম: আ তা মাসুদ

বাবার নাম: মশিউর রহমান মাসুদ

মায়ের নাম: মায়ের নাম নুরুন নাহার মাসুদ

জন্ম: ৬ ডিসেম্বর, ১৯৫৬ সালে

জন্মস্থান: ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার নূরপুর গ্রাম

বর্তমান বয়স: ৫৪

জাতীয়তা: বাংলাদেশী

নাগরিকত্ব: বাংলাদেশ

পেশা: চলচ্চিত্র পরিচালক,প্রযোজক,চিত্রনাট্যকার,লেখক,গীতিকার

কর্মজীবন: ১৯৯৫–২০১১ 

দাম্পত্য সঙ্গী: ক্যাথরিন মাসুদ

সন্তান: ছেলে নিষাদ বিংহাম পুত্রা মাসুদ

ওয়েবসাইট: http://tarequemasud.org/

জন্ম

১৯৫৬ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার নূরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম এই ব্যক্তিত্ব। তার পুরো নাম আবু তারেক মাসুদ। তবে তিনি আ তা মাসুদ নামেও পরিচিত। তার মায়ের নাম নুরুন নাহার মাসুদ ও বাবার নাম মশিউর রহমান মাসুদ।

শিক্ষা

তারেক মাসুদের প্রথম পড়াশোনা শুরু হয় ভাঙ্গা ঈদ্গা মাদ্রাসায়। এরপর ঢাকার লাল বাগের একটি মাদ্রাসা থেকে তিনি মৌলানা পাস করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর মাসুদ সাধারণ শিক্ষা অর্জনের জন্য ফরিদপুরের ভাঙ্গা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

এখানে তিনি প্রাইভেট পরীক্ষার মাধ্যমে প্রথম বিভাগে এস.এস.সি পাস করেন। পরবর্তীতে তিনি আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু সেখানে মাত্র ছয় মাস পড়াশোনা করার পর বদলি হয়ে নটরডেম কলেজে যান এবং মানবিক বিভাগে এইচএসসি পাস করেন।

তারেক মাসুদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন সময়েই তিনি স্বপ্ন দেখতেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নিয়ে কাজ করার।  প্রায় সময় ঢাকা আর্ট কলেজে তথা বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে দেখা যেত তাকে।

পাশাপাশি তিনি লেখক শিবির, বাম আন্দোলন এবং বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আন্দোলনের সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। আশির দশকের মধ্যভাগে শুরু হয় স্বাধীনধারার চলচ্চিত্র আন্দোলন। মাসুদ ছিলেন এই আন্দোলনের অগ্রগণ্য পরিচালক। এছাড়া তিনি দেশে বিদেশে চলচ্চিত্র বিষয়ক অসংখ্য কর্মশালা এবং কোর্সে অংশগ্রহণ করেন।

ব্যক্তিগত জীবন

তারেক মাসুদের পরিবারে রয়েছে তার স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ, তাদের ছেলে বিংহাম পুত্রা মাসুদ নিশাদ এবং তার ছোট ভাই নাহিদ মাসুদ। ক্যাথরিন এবং তারেক ঢাকায় অডিও ভিশন নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। চলচ্চিত্র নির্মাণ ছাড়া মাসুদের আগ্রহের বিষয় ছিল লোকসঙ্গীত এবং লোকজ ধারা।

তারেক মাসুদ তার সিনেমায় সাধারণ মানুষের জীবনের গল্পকে তুলে ধরবেন বলে অন্যান্য চলচ্চিত্রকারের মত বাণিজ্যিক ধারায় সিনেমা তৈরিতে ব্যস্ত হননি। তার নির্মিত চলচ্চিত্রের সংখ্যা খুব বেশি না হলেও, তিনি তার কাজের মধ্য দিয়ে সিনেমাপ্রেমীদের মনে বেঁচে থাকবেন সবসময়।

চলচ্চিত্র জীবন

১৯৮২ সালের শেষ দিকে মাসুদ বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ থেকে ফিল্ম অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্স শেষ করেন। এরপর তিনি তার প্রথম প্রামাণ্যচিত্র ‘আদম সুরত’ নির্মাণ শুরু করেন। তার এই প্রামাণ্যচিত্রটি ছিল প্রখ্যাত বাংলাদেশী শিল্পী এস এম সুলতানের জীবনের উপর।

১৯৮৯ সালে মুক্তি পাওয়া আদম সুরত নির্মাণ করতে মাসুদের সময় লেগেছিল প্রায় ৭ বছর। তবে আদম সুরতের আগেই ১৯৮৫ সালে মুক্তি পায় তার পরিচালিত প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘সোনার বেড়ি’।

১৯৯৫ সালে তারেক মাসুদ এবং তার স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ মিলে নির্মাণ করেন ‘মুক্তির গান’। মুক্তিযুদ্ধের ফুটেজনির্ভর এই প্রামাণ্যচিত্রটি মূলত স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংগঠিত ‘বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থা’ নামের ভ্রাম্যমাণ গানের দলকে নিয়ে। যারা গানের মাধ্যমে বাঙালি জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ করতেন মুক্তিযোদ্ধোদের।

তারেক ও ক্যাথরিন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাতা লিয়ার লেভিনের ক্যামেরাবন্দী করা ২০ ঘন্টার একটি ফুটেজ সংগ্রহ করেন। একটি পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য লেভিনের ফুটেজের সাথে বিভিন্ন উৎস থেকে সংগৃহীত মুক্তিযুদ্ধের অন্যান্য উপাদান একত্র করে তারা নির্মাণ করেন মুক্তির গান।

যা তাকে বংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনে এনে দিয়েছিল ব্যাপক পরিচিতি। ‘মুক্তির গান’ ১৯ তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্যচিত্রের পুরস্কার লাভ করে। বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক জহির রায়হানের ‘স্টপ জেনোসাইড’ এর পর তারেক মাসুদের ‘মুক্তির গান’ প্রামাণ্যচিত্রটিই মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রামাণ্য দলিল হিসেবে পরিচিত।

১৯৯৭ সালে ফিল্ম সাউথ এশিয়া থেকে মুক্তির গান বিশেষ সম্মাননা অর্জন করে। সেসময় মুক্তির গান প্রামাণ্যচিত্রটি সারা দেশে বিকল্প পরিবেশনায় প্রদর্শন করা হয়।

এই চলচ্চিত্র দেখে ১৯৯৮ সালে সাধারণ মানুষের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যক্ত প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে তারেক মাসুদ নির্মাণ করেন ‘মুক্তির কথা’ নামের একটি ভিডিও চলচ্চিত্র।

২০০২ সালে তারেক মাসুদের পরিচালনায় মুক্তি পায় তার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মাটির ময়না’। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাক্বালে পূর্ব পাকিস্তানের উদ্বেগের পটভূমিতে মাসুদ তার মাদ্রাসা জীবনের অভিজ্ঞতা ফুটিয়ে তুলেছেন এই চলচ্চিত্রে।

মাটির ময়না এডিনবার্গ, মন্ট্রিল, কায়রো সহ বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়। বাংলা সিনেমা হিসেবে বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্রে অস্কারের জন্য এই ছবিটি প্রথম মনোনয়ন পায়।

এছাড়া কান চলচ্চিত্র উৎসবে মাটির ময়না ফিপ্রেস্কি আন্তর্জাতিক সমালোচক পুরস্কার অর্জন করে। এবং ২০০৩ সালে এটি করাচি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা ছবির পুরস্কার লাভ করে।

২০০৬ সালে তারেক মাসুদ নির্মাণ করেন প্রথম ডিজিটাল চলচ্চিত্র ‘অন্তর্যাত্রা’। এই ছবিতে দুই প্রজন্মের মধ্য দিয়ে তিনি দেশত্যাগ, উদ্বাস্তু দশা আর দেশে ফেরার অনুভূতি কে তুলে ধরেছেন নিখুঁতভাবে।

২০০৮ সালে মাসুদ ‘রানওয়ে’র নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ‘রানওয়ে’ চলচ্চিত্রের কাহিনী ছিল সমসাময়িক বাংলাদেশের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে। এটি ছিল মাসুদের নির্মিত শেষ পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। ২০১০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত রানওয়ের জন্য তিনি মেরিল প্রথম আলো সমালোচক পুরস্কার লাভ করেন।

২০০৯ সালে বের হয় তারেক ও ক্যাথরিনের স্বল্পদৈর্ঘ্যের থ্রিলার ছবি ‘নরসুন্দর’। মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে তৈরি ১৫ মিনিট দৈর্ঘ্যের ‘নরসুন্দর’ একটি উর্দু ভাষার চলচ্চিত্র।

তারেক মাসুদের অসম্পূর্ণ চলচ্চিত্র কাগজের ফুল এর বিষয়বিস্তু ছিল ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগ নিয়ে। এটি ছিল মাটির ময়নার পূর্ববর্তী পর্ব।

প্রকাশিত বই

তারেক মাসুদের মৃত্যুর পর ২০১২ সালে বিভিন্ন সময়ে লেখা তার চলচ্চিত্র সম্পর্কিত প্রবন্ধগুলোকে একত্র করে একটি বই প্রকাশিত হয় "চলচ্চিত্রযাত্রা" নামে। বইটিতে ভূমিকা লিখেছেন তার স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ। লেখক হবার একটা টান সবসময়ই তার মাঝে ছিল।

তিনি বলেছিলেন-চলচ্চিত্রকার না হলে লেখক হওয়ার চেষ্টা করতাম।

তারেক মাসুদ এর বই সমূহ

চলচ্চিত্রলেখা : চিত্রনাট্য ও গান

আদম সুরত (২টা ডিভিডি সহ)

তিনে নেত্র

চলচ্চিত্রযাত্রা

মৃত্যু

২০১১ সালের ১৩ আগস্ট কাগজের ফুল নামক চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের লোকেশন দেখার জন্য তারেক মাসুদ তার সহকর্মীদের নিয়ে মানিকগঞ্জের সালজানা গ্রামে যান। লোকেশন নির্বাচন শেষে দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে তারেক মাসুদ তার গাড়িবহর নিয়ে রওনা দেন। পথে ঘিওরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বাসের সঙ্গে মাইক্রোবাসটির মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। ঘটনাস্থলেই তারেক মাসুদ এবং তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও চিত্রগ্রাহক মিশুক মুনীরের মৃত্যু হয়।

আনিসুজ্জামান এর জীবনী-Biography Of Anisuzzaman
আব্দুল হামীদ ফাইযী আল মাদানি
মোহাম্মদ আলী কিরণ-Biography Of Mohammad Ali Kiran
জুনায়েদ বাবুনগরী এর জীবনী-Biography of Junaid Babungari
মাওলানা মুজাফফর বিন মহসিন এর জীবনী - Biography of Maulana Muzaffar bin Mohsin
আবদুল গফুর হালী এর জীবনী - Biography of Abdul Gafur Hali
গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা এর জীবনী - Biography of Gabriel Batistuta
আবদুর রাজ্জাক বিন ইউসূফ এর জীবনী-Biography Of Abdur Razzak Bin Yusuf
মেসুত কুর্তিস এর পরিচয় ও জীবনী - biography of Mesut Kurtis
আনিসুল হক এর জীবনী-Biography Of Anisul Hoque