আল্লামা নুরুল ইসলাম ফারুকী জীবনী
Allama Nurul Islam Farooqi Biography
জন্মঃ
নুরুল ইসলাম ফারুকী ছিলেন একজন বাংলাদেশী ইসলামী পণ্ডিত, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ এবং ইসলাম প্রচারক। তিনি ২৪ নভেম্বর ১৯৫৯ সালে পঞ্চগড় জেলার বড়শশী ইউনিয়নের নাউতারী নবাবগঞ্জ গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম জামসেদ আলী, তিনিও একজন সুপরিচিত আলেম ছিলেন।
শিক্ষাঃ
ফারুকী তার নিজ গ্রাম নাউতারী নবাবগঞ্জে প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অর্জন করেন। ১৯৭৫ সালে নীলফামারী জেলার ডোমার থানার অন্তর্গত চিলাহাটি জামিউল উলুম সিনিয়র মাদরাসা থেকে দাখিল পরবর্তীতে একই মাদরাসা থেকে আলিম পাস করেন। ১৯৭৯ সালে ছারছিনা দারুসসুন্নাত কামিল মাদরাসা থেকে ফাজিল ও কামিল (হাদিস বিভাগ) পাশ লাভ করেন।[৪]
এছাড়াও সাধারণ শিক্ষার দিক থেকে ১৯৮১ সালে নীলফামারী সরকারি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে জগন্নাথ কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে স্নাতক করেন। তিনি স্থানীয় কলেজের প্রতিযোগিতায় কোরআন তেলাওয়াতে প্রথম স্থান অধিকার করতেন।
কর্মজীবনঃ
তিনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করতেন। তিনি প্রথমে পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার জামে মসজিদের খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার কিছুদিন পর ঢাকা কেরানীগঞ্জের নূরানীয়া চিশতীয়া আলিয়া মাদরাসার প্রধান হিসেবে যোগদান করেন। এছাড়াও তিনি ১৯৮৯ সালে প্রথম হজ গমনের উদ্দেশে মক্কায় যান।
তিনি মোয়াজ্জামায় মোহাম্মদ মালিকি আলাদির রওজায় ১০ বছর দায়িত্ব পালন করেন। কিছুদিন সেখানে কাটিয়ে আবার ঢাকায় ফিরে আসেন। এসময় ঢাকাসহ বিভিন্ন মসজিদে ৩৩ বছর ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করেন। আবার ছারছীনা পীর আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ মাজারে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সারা দেশে ওয়াজ মাহফিল করতেন, সুন্নিয়াতের পক্ষে যুক্তিযুক্ত প্রামাণ্য দলিল উপস্থাপন করতেন।
সর্বশেষ জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত খাজা শরফুদ্দিন চিশতির মাজারে খাদেম ও সুপ্রিমকোর্ট জামে মসজিদের খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ইসলামী মিডিয়া জনকল্যাণ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবনঃ
ফারুকীর দুটি স্ত্রী ছিল। তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী লুবনা ইসলাম, রাজাবাজার বাড়ীতে তার সাথে বসবাস করতেন ও তার প্রথম স্ত্রী সন্তানদের সাথে বাস করতেন যখন ঢাকার মালিবাগ এলাকায়।
গণমাধ্যমে কাজঃ
তিনি চ্যানেল আই-এ শান্তির পথে এবং ও কাফেলা নামে দুটি প্রোগ্রাম এবং মাইটিভিতে হক কথা প্রোগ্রাম উপস্থাপন করতেন। এছাড়াও সুপ্রিম কোর্ট মসজিদের খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। রাজনৈতিকভাবে, তিনি একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন এবং বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, যা কয়েকটি ইসলামী গোষ্ঠীর প্ল্যাটফর্ম।
প্রকাশিত বইঃ
তিনি কয়েকটি বই লিখেছেন। তার বইগুলো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকিদা ও সুফিবাদ ভিত্তিক। সর্বশেষে ‘মারেফুল হারামাইন’ বইটি লিখেছেন। বইগুলোতে ইসলামের স্থাপত্য বা অবিকৃত রূপ তুলে ধরা হয়েছে।
সফরঃ
তিনি কাফেলা অনুষ্ঠানের প্রচারণার জন্য বহু দেশ ভ্রমন করেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, ভারত, শ্রীলঙ্কা, জর্ডান, তুরস্ক, ইতালি, ইরান, মিশর সহ বহু দেশ বহু বার ভ্রমন করেছেন।
মৃত্যুঃ
১৭৪ পূর্ব রাজাবাজার মুন্সীবাড়ীর একটি চার তলা ভবনের দুই তলায় দ্বিতীয় স্ত্রীর পরিবার নিয়ে থাকতেন মাওলানা ফারুকী। ২০১৪ সালের ২৫ আগস্ট বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে হজে যাওয়ার কথা বলে দুই জন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন। এরপর ১৫/২০ মিনিট পর আরো তিনজন ভক্ত পরিচয় দিয়ে বাসায় আসেন। কিছুক্ষণ পর এরা অস্ত্রের মুখে স্ত্রী-সন্তানদের ও পরিবারের অন্য সদস্যদের একটা কক্ষে আটকে রেখে ডাইনিং রুমে ফরুকীকে গলাকেটে হত্যা করে চলে যায়।