
পরীমনি এর জীবনী-Biography Of Pori Moni
জন্মঃ
শামসুন্নাহার স্মৃতি, যিনি পরীমনি নামে অধিক পরিচিত, হলেন একজন বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের মডেল ও অভিনেত্রী। ১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা জেলায় এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন পরীমনি। বাবা মনিরুল ইসলাম,মা সালমা সুলতানা ।
প্রাথমিক জীবনঃ
উনিশ শতকের শেষের দিকে পরীমনির মা সালমা সুলতানা ঢাকায় একটি বাসায় রহস্যময়ভাবে এক দুর্ঘটনায় আগুনে পুড়ে গুরুতরভাবে দগ্ধ হন। এ সময় পরীর বাবা মনিরুল ইসলাম তার মাত্র তিন বছরের সন্তান পরীমনিকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন। ঢাকায় এক হাসপাতালে কিছুদিন তার দগ্ধ স্ত্রীর চিকিৎসা করান তিনি। সেসময় পরীকে তার নানা শামসুল হক গাজীর কাছে রেখে যান। এর দুই মাস পরেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পরীর মায়ের মৃত্যু হয়। এবং তিন বছর বয়সেই মা-হারা হন পরীমনি। তিনবছর বয়সী ছোট শিশু পরীমনি তার নানা-নানি ও খালার কাছে লালিত-পালিত হয়েছেন।
পরবর্তীতে তার বাবারও মৃত্যু হয়। স্মৃতির বাবা মনিরুল ইসলাম ছিলেন নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার পুলিশ কনস্টেবল। ২০১২ সালে কোনো একটা সুনির্দিষ্ট কারণে তার সেই চাকরি চলে যায়। এবং তখন থেকেই তিনি গ্রামের বাড়িতে থেকে ব্যবসা করতেন। ব্যবসাই বিরোধ নিয়ে প্রতিপক্ষের লোকজন মনিরুলকে কুপিয়ে হত্যা করেছিল। ছোট পরীমনি বড় হয়েছেন পিরোজপুরের নানা শামসুল হক গাজীর কাছে।
শিক্ষাজীবনঃ
পরীমনির নানা-নানি দুজনেই ছিলেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা। তিনি তার মাতৃশিক্ষায়তন সহ মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন পিরোজপুরে। তিনি তার স্নাতকশিক্ষায় প্রথমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন তবে শিক্ষাগ্রহণ শুরু করেননি। এ কলেজের অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর কবিরের ভাষ্যে, "স্মৃতি ২০১১–১২ সাল নাগাদ ভগীরথপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৩.৫ পেয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য এলেও সেখানে তিনি ভর্তিরত অবস্থায় আর কলেজে আসেনি"। পরিবর্তে তিনি সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে বাংলা বিভাগে স্নাতক পড়াকালীন ২০১১ সালে ঢাকায় চলে আসেন এবং বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে নাচ শেখেন।
অভিনয় জীবনঃ
পরীমনি মডেলিং এর মাধ্যমে তার কর্ম জীবন শুরু করেন। তিনি বিভিন্ন নৃত্যানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন এবং টিভি নাটকে অভিনয় করেন। তিনি মডেলিং থেকে ছোটপর্দায় এবং তারপর রূপালী পর্দায় অভিনয় শুরু করেন পরীমনি। অভিনয় জীবন শুরু করেন টিভি নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে। তিনি সেকেন্ড ইনিংস, এক্সক্লুসিভ, এক্সট্রা ব্যাচেলর, নারী ও নবনীতা তোমার জন্য এ চারটি ধারাবাহিক নাটকে কাজ করেছেন। এর মধ্যে জাকারিয়া শৌখিন রচিত নারী ও নবনীতা তোমার জন্য নাটকে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন পরীমনি। এতে চিত্রনায়ক আমিন খান, চিত্রনায়িকা পপি এবং ঈশানাও অভিনয় করেছিলেন। প্রথম অভিনীত নাটকেই তিনি ইলিয়াস কাঞ্চন এবং চম্পার সাথে অভিনয় করেন।
মুক্তির আগেই ২৩টি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে রীতিমত হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন পরী মনি। ছবি মুক্তির আগেই মিডিয়ায় নানা ধরনের খবরের জন্ম দিয়ে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেন তিনি। শাহ আলম মন্ডল পরিচালিত ভালোবাসা সীমাহীন তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র। কিন্তু তিনি আলোচনায় আসেন নজরুল ইসলাম খানের রানা প্লাজা চলচ্চিত্রে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর থেকে। পরবর্তীতে ওয়াজেদ আলী সুমন পরিচালিত পাগলা দিওয়ানা ও দরদিয়া, এস এ হক অলীকের আরো ভালোবাসবো তোমায় চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।
২০১৫ সালে ভালোবাসা সীমাহীন চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তার বড় পর্দায় অভিষেক হয়। তবে রানা প্লাজা (২০১৫) ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়ে তিনি আলোচনায় আসেন।
২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হল মনজুড়ে তুই, লাভার নাম্বার ওয়ান, নগর মাস্তান, মহুয়া সুন্দরী। ২০১৬ সালে মুক্তি পায় মন জানে না মনের ঠিকানা, পুড়ে যায় মন, ওয়াজেদ আলী সুমনের অ্যাকশনধর্মী রক্ত, এবং শফিক হাসানের ধূমকেতু।
২০১৭ সালে মুক্তি পায় কত স্বপ্ন কত আশা, আপন মানুষ, সোনা বন্ধু, এবং মালেক আফসারীর অন্তর জ্বালা। গিয়াস উদ্দিন সেলিমের স্বপ্ন জাল, ইনোসেন্ট লাভ, দেবাশীষ বিশ্বাসের মন জ্বলে, সৈকত নাসিরের পাষাণ, নদীর বুকে চাঁদ, এবং বুকের মাঝে প্রেমের আগুন।
ব্যক্তিগত জীবনঃ
অভিনয় জগতে আসার আগে তার বিয়ে হয়েছিল এরকম প্রচারণা থাকলেও পরীমনি তা কখনই স্বীকার করেননি। স্মৃতি ২০১০ সালে তার এসএসসি পাসের আগেই নানার কথামত গ্রামের জাকির হোসেনের ছেলে ইসমাইল হোসেনকে পারিবারিক ভাবে বিয়ে করেন। এবং বিয়ের ২ বছর পর তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়।
তারপর ২৮ এপ্রিল ২০১২ সালে কেশবপুরের ফুটবলার ফেরদৌস কবীর সৌরভের সাথে পরীমনির বিয়ে হয়।
এরপর সাংবাদিক তামিম হাসানের সাথে পরীমণির ২০১৬ সালে থেকে প্রেমের বন্ধনে চলা সম্পর্কটি ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সালে বাগদানের মাধ্যমে বৈবাহিক সম্পর্কে পরিবর্তন করেন এবং পরে সংসার পাতেন। তবে তাদের মধ্যে এই সম্পর্কটিও বেশি দিন টিকে থাকিনি এবং পরবর্তীতে বিবাহবিচ্ছেদ হয়।
৯ মার্চ ২০২০ সালে তিনি পরিচালক কামরুজ্জামান রনিকে তিন টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেন। ঐ বছরেই তাদের বিচ্ছেদ হয়।
১৭ অক্টোবর ২০২১ সালে তিনি অভিনেতা শরিফুল রাজকে বিয়ে করেন। কয়েকমাস পর ২০২২ সালের ১০ জানুয়ারি নিজের গর্ভাবস্থার খবর গণমাধ্যমকে জানান পরীমনি। গর্ভাবস্থার খবর জানানোর আগ পর্যন্ত শরিফুল রাজের সাথে তার বিয়ের বিষয়টি তারা গোপন রাখেন। পরে ২২ জানুয়ারি তারা পুনরায় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। সেই বিয়ে ছিল খুব গোপন। আয়োজন করে বিয়ের আফসোস ছিল তাই। সেই আফসোস মিটিয়ে নিলেন ২২ জানুয়ারি। জমকালো আয়োজনে জীবনের নতুন ইনিংসটা শুরু করলেন রাজ-পরী। ১০১ টাকা দেনমোহরে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা হয় পরীমনি ও রাজের। এই বিয়েতে উকিল বাবার হয়েছেন পরিচালক রেদওয়ান রনি। ২০২২ সালের ১০ আগষ্ট প্রথমবারের মতো তিনি পুত্র সন্তানের মা হন।
পুরস্কারঃ
বাবিসাস পুরস্কার- ২০১৬ (মহুয়া সুন্দরী)
মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার -২৬ এপ্রিল ২০১৯ (স্বপ্নজাল)
ভারত-বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পুরস্কার- ২২ অক্টোবর ২০১৯ (আমার প্রেম আমার প্রিয়া)
সিজেএফবি পারফরম্যান্স পুরস্কার- ২৫ জুলাই ২০২০ (আমার প্রেম আমার প্রিয়া)
ট্রাব অ্যাওয়ার্ড- ২০ নভেম্বর ২০২১ (বিশ্বসুন্দরী)
গ্রেফতারঃ
২০২১ সালের ৪ঠা আগস্ট পরীমনির বনানীর বাসায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের অভিযান শেষে বাসায় অনুমোদনহীন মিনিবার পরিচালনা ও মাদকদ্রব্য রাখার অভিযোগে তাকে আটক করা হয়। পরীমনিকে আটক করার পর প্রথম দফায় ৪ দিন এবং দ্বিতীয় দফায় ২ দিনের রিমান্ড দেন আদালত।
জামিনঃ
হাইকোর্টের নির্দেশে জামিন শুনানির নির্ধারিত সময় তের দিন এগিয়ে এনে পরীমনিকে ২৬ দিন কারাগারে থাকার পর ৩১ আগস্ট ২০২১ ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশ তাকে জামিন দেয়। পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন না দেয়া পর্যন্ত পরীমনি জামিনে থাকবেন বলে আদালত আদেশ দিয়েছেন।