
পাতি মাছরাঙা
Common Kingfisher
পাতি মাছরাঙা বা ছোট মাছরাঙা Coraciiformes বর্গের এবং আলসেডিনিড গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত আলসেডো গণের অন্তর্গত রঙচঙে ক্ষুদে মৎস্যশিকারী পাখি।
ইংরেজি নাম:Common Kingfisher
বৈজ্ঞানিক নাম: Alcedo atthis
বর্ণনাঃ
পাতি মাছরাঙা ছোট আকারের পাখি । এরা লম্বায় ১৬ সে মি হয়ে থাকে। পাখার বিস্তৃতি ২৫ সে মি এবং এদের ওজন ৩৪ থেকে ৪৬ গ্রাম হতে পারে। এদের প্রায় সবারই দেহের তুলনায় মাথা বড়, লম্বা, ধারালো ও চোখা চঞ্চু, খাটো পা ও খাটো লেজ রয়েছে। বেশিরভাগ মাছরাঙার দেহ উজ্জ্বল রঙের আর স্ত্রী-পুরুষে সামান্য ভিন্নতা দেখা যায়।
স্বভাবঃ
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের স্বচ্ছ ও ধীরগতির ঝর্ণা, নদী ও লেকের পানিতে পাতি মাছরাঙাকে দেখতে পাওয়া যায়। ছোট ঝোপঝাড়ের ডালে মাছরাঙা বসে থাকে। মাছরাঙ্গা পাখি অত্যন্ত শান্ত ও ধৈর্য্যশীল। জলাশয়ের কাছাকাছি কোন ডালে বা কোন তারে বসে থাকে, নড়াচড়াও কম করে। মাছ কিভাবে আছে সেখানেই তার দৃষ্টি। আর যখনই মাছের অবস্থান টের পায় সাথে সাথে তীর গতিতে মাছের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। মাছ কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাছরাঙা তাকে ধরে ফেলে। কিছুক্ষণ পর দেখা যায় পাখিটার ঠোঁটের ফাঁকে ছোট্ট একটি মাছ ঝটপট করছে। এরা অনেক ধরনের প্রাণী শিকার করে, তবে তার বড় একটি অংশ জুড়ে রয়েছে মাছ। এরা সাধারণত ডালে থেকে ডাইভ দিয়ে পানির মধ্যে থেকে মাছ শিকার করে।
খাদ্য তালিকাঃ
পোকামাকড়, ব্যাঙ, সরীসৃপ, পাখি এমনকি ছোট আকারের স্তন্যপায়ী।
প্রজননঃ
এদের প্রজননের সময় সাধারণত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত। এসময় এরা জোড় বেঁধে একত্রে থাকে। বর্গের অন্যসব সদস্যদের মত মাছরাঙারাও গর্তে বাসা করে। সাধারণত জলাশয়ের পাশে খাড়া পাড়ের গর্তে এরা বাসা বানায়। বাসা বানানোর জন্য এরা একে অপরকে সাহায্য করে। বাসা তৈরি হলে স্ত্রী পাখি ডিম পাড়ে। এরা একসাথে ৫ থেকে ৭ টি ডিম পাড়ে। ডিমগুলো দেখতে চকচকে সাদা। বাবা ও মা পাখি উভয়ই ডিমগুলিতে দিনের বেলা তা দেয়। তবে রাতের বেলায় শুধু মা পাখি ডিমগুলিতে তা দেয়। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে ১৯ থেকে ২০ দিন সময় লাগে। বাচ্চারা আরো ২৪ থেকে ২৫ দিন বাসায় থাকে।
বিস্তৃতিঃ
পাখিটি বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও ইউরেশিয়া ও উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়।
অবস্থাঃ
সারা পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকা জুড়ে এরা বিস্তৃত, প্রায় ১ কোটি ৭৯ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এদের আবাস। ব্যাপকভাবে বিস্তৃত বলে আই. ইউ. সি. এন. প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটিকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয় নি। সারা বিশ্বে সম্ভবত ৬ লক্ষের কম পাতি মাছরাঙা রয়েছে।