
Watercock
কোড়া বা জলমোরগ
কোড়া Rallidae গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Gallicrex গণের একমাত্র সদস্য। এই জলের পাখিটির নাম কোড়া। জলমােরগও বলা যায়।
ইংরেজি নাম: Water Cock
বৈজ্ঞানিক নাম: Gallicrex cinerea
বর্ণনাঃ
পুরুষটির মাপ ৪৩ সেন্টিমিটার। মেয়েটির ৩৬ সেন্টিমিটার। কোড়া হচ্ছে বাদামি রঙের পাখি। মাথার চাঁদি কালচে। পাখার প্রান্তের পালকগুলাে কালাে। বাদামি পিঠের ওপর কালচে কালচে ছােপ আছে। বুকে আড়াআড়িভাবে অস্পষ্ট কালচে কালচে সূক্ষ্ম দাগ। পেট ও লেজের তলায় ওই পাথালি দাগ বেশি ঘন ও স্পষ্ট। লেজের আগ তীর্যক। ভয়ে ও আনন্দে ওই লেজ ঘন ঘন দোলায়। বাসা যখন বাধে তখন পুরুষ পাখিটির রঙ যায় বদলে। ঘাড়, চিবুক ও পিঠ কালাে হয়ে যায়। গলা, বুক ও পেটের রঙও হয়ে যায় কালচে। ওই সময় পুরুষ কোড়াকে ভারি সুন্দর দেখায়। চোখ হয় বেশি উজ্জ্বল।
প্রজননঃ
বর্ষা-শরত্ই কোড়াদের বাসা বাঁধার মৌসুম, ডিম-ছানা তোলার মৌসুম। ধানগাছ বা ঘাস দিয়ে ধানখেত বা বিল-হাওরের ঘাসবনে বেশ বড়সড় বাসা করে। ডিম ছয় থেকে আটটি। ফোটে ১৬ দিনে।
খাদ্য তালিকাঃ
বিভিন্ন বীজ, পোকা-পতঙ্গ, কচি ঘাসের ডগা, ছোট মাছ ইত্যাদি।
স্বভাবঃ
কোড়া কিছুটা লাজুক প্রকৃতির ও আড়ালে-আবডালে থাকতে ভালবাসে। কিন্তু তাদেরকে কখনো কখনো উন্মুক্ত অঞ্চলে দেখা যায়। ডাকপ্রিয় পাখি হিসেবে এদের পরিচিতি রয়েছে। বিশেষ করে উষা ও গোধূলীলগ্নে এরা খাবারের সন্ধানে ডেকে চলে। পুরুষ কোড়ার ডাক চালাচালি—সেটা প্রতিপক্ষকে হুঁশিয়ার করে দেয়ার জন্য। পোষা কোড়াদের সামনে আয়না ধরলে প্রতিপক্ষ ভেবে দারুণভাবে খেপে যেতে পারে। এদের ছোট বাচ্চারাও দেখতে খুব সুন্দর। দুটো বুনো পুরুষ কোড়ার লড়াইও দারুণ উপভোগ্য দৃশ্য। লড়াইরত দুটি পাখিকেই ধরে ফেলা সম্ভব।
বিস্তৃতিঃ
বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা থেকে শুরু করে চীনের দক্ষিণাংশ, জাপান, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া দেশগুলোতে কোড়া দেখা যায়। কোড়া বর্ষাকালে বাংলাদেশের মাঠে-ঘাটে, বিশেষ করে ধান খেতের পানিতে প্রচুর দেখা যায়।
অবস্থাঃ
মাংস ও ডিমের জন্য এটি শিকারে পরিণত হয়। বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা কমছে, তবে আশঙ্কাজনক পর্যায়ে এসে পৌঁছায়নি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।