ছোটকান প্যাঁচা-Short Eared Owl
আমাদের দেশের একমাত্র পরিযায়ী প্যাঁচার নাম ছোটকান প্যাঁচা। অন্য সব প্যাঁচার চেয়ে আলাদা স্বভাবের পাখি এটি। দেখা যায় মূলত শুষ্ক মৌসুমে। নদীর চর ও উপকূলে এদের বিচরণ বেশি।
ইংরেজি নাম: Short Eared Owl
বৈজ্ঞানিক নাম: Asio flammeus
বর্ণনাঃ
ছোটকান প্যাঁচার দৈর্ঘ্য কমবেশি ৩৩-৪৩ সেন্টিমিটার। প্রসারিত ডানা ১০৫-১০৭ সেন্টিমিটার। ওজন পুরুষ পাখি ২০০-৪৫০ গ্রাম। স্ত্রী পাখির ওজন ২৮০-৫০০ গ্রাম। পুরুষের চেয়ে স্ত্রী পাখি খানিকটা বড়। গায়ের রঙে সামান্য পার্থক্যও রয়েছে। মাথা বড়। কান খাটো। বাইরে থেকে নজরে পড়ে না। গোলাকার মুখ ধূসরাভ সাদা। পিঠে কালো-সাদা-বাদামি বুটিক। কারো কারো গায়ে হলদে-তামাটে মিশ্রণ দেখা যায়। লেজ খাটো। দেহের নিচের দিকে হলদে সাদার সঙ্গে কালো রেখাযুক্ত। গোলাকার চোখের তারা সালফার-হলুদ। কখনো কখনো উজ্জ্বল হলুদ হয়। চোখের কোটর কালো। ভ্রু সাদা। ঠোঁট খাটো, কালো। পা পালকে আবৃত। পায়ের আঙ্গুল সাদাটে ক্রিম ফ্যাকাসে। নখ কালো।
স্বভাবঃ
বাংলাদেশের ১৬ প্রজাতির প্যাঁচার মধ্যে এই ছোটকান প্যাঁচাই একমাত্র পরিযায়ী। এটি উপকারী প্যাঁচা। স্বভাবেও একদম ব্যতিক্রম। অন্য সব প্যাঁচা নিশাচর হলেও এই প্যাঁচা দিনের বেলা খাবার সংগ্রহ করে। নিশাচর পাখি হলেও রাতের আঁধার ঘনিয়ে আসার ঘণ্টা খানেক আগেই শিকারে বের হয়। প্রশস্ত তৃণভূমি, মোহনা অঞ্চল, কৃষি জমি, বালিয়াড়ি কিংবা পাহাড়ি অঞ্চলে খাদ্যের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। ঘন জঙ্গল এদের পছন্দ নয়। একাকি জোড়ায় কিংবা ছোট দলে দেখা যায়। মাথা ঘুরিয়ে চারদিকে উড়ন্ত পোকামাকড় ইঁদুর বা সরীসৃপজাতীয় প্রাণীর গতিবিধি লক্ষ্য করে।
প্রজননঃ
প্রজনন মৌসুম উত্তর গোলার্ধে মার্চ থেকে জুন। অন্যান্য অঞ্চলে প্রজনন মৌসুমের হেরফের দেখা যায়। মরা গাছের প্রাকৃতিক কোটরে অথবা শুকনো মাটিতে ঘাস-লতা বিছিয়ে গড়ে ৪-৭টি ডিম পাড়ে। কোনো কোনো পেঁচাকে ৪-১২টি ডিম পাড়তে দেখা যায়। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৪-২৯ দিন। শাবক স্বাবলম্বী হতে মাসখানেক লেগে যায়। বয়ঃপ্রাপ্ত হতে সময় লাগে এক বছর। গড় আয়ু ১৩ বছর।
খাদ্য তালিকাঃ
ইঁদুর, কাঠবিড়ালি, খরগোশ, বাদুর, ফড়িং, তেলাপোকা, টিকটিকিসহ অন্যান্য সরীসৃপ।
বিস্তৃতিঃ
বাংলাদেশ ছাড়া এশিয়া, ইউরোপ, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, ক্যারিবিয়ান, হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত এদের বিস্তৃতি।
অবস্থাঃ
প্রধানত বাসস্থান ধ্বংসের কারণে বিশ্বব্যাপী গয়ারের পরিমাণ দিন দিন কমছে। শিকারীর গুলিতেও বহু পাখি মারা পড়ছে। বর্তমানে বিশ্বে এরা প্রায়-বিপদগ্রস্ত এবং বাংলাদেশে সংকটাপন্ন বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।