সর্বকালের সেরা ১০ টি থ্রিলার সিনেমা-Top 10 Thriller Movies of All Time
ভারতে বলিউডকে টেক্কা দিচ্ছে সাউথ ইন্ডিয়ান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। মূলত দক্ষিণ ভারতের চারটি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে এই সাউথ ইন্ডিয়ান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি গঠিত। তামিল (কলিউড), তেলেগু (টলিউড), মালায়ালাম (মলিউড) এবং কন্নড় (স্যান্ডলউড)। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ইন্ডাস্ট্রি হলো তামিল।
উরাধুরা অ্যাকশনের পাশাপাশি দুর্দান্ত সব থ্রিলার সিনেমা তৈরিতে তামিল ইন্ডাস্ট্রির জুড়ি মেলা ভার। আজ তেমনই তামিলের ১০টি দুর্দান্ত থ্রিলার সিনেমার সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিবো। লকডাউনের এই সময়ে বাসায় বসে দেখতে পারেন এই সিনেমাগুলো-
১. ধুরুবঙ্গল পথিনারু- Dhuruvangal Pathinaaru (2016)
২০১৬ সালে মুভিটি মুক্তি পায় । মুভির কাহিনী একটি সুইসাইড , একটি এক্সিডেন্ট এবং একজন তরুণীর নিখোঁজ হওয়া নিয়ে। দীপক একজন অবসর প্রাপ্ত পুলিশ অফিসার। অবসরের পর নতুন বাসার কাজে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন। হঠাৎ একদিন তার ফোনে পরিচিত একজনের নম্বর থেকে কল আসে, যার ছেলে পুলিশ অফিসার হতে চায়। কিন্তু ছেলেকে পুলিশ অফিসার বানাতে রাজি নন তিনি। তাই ছেলেকে পাঠাতে চান দীপকের কাছে, যাতে দীপক উনার ছেলেকে বুঝাতে পারেন পুলিশের চাকরিতে জীবন কতোটা ঝুঁকি রয়েছে। কারণ একটি কেস নিয়ে দীপকের ভয়ংকর অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেই ছেলে দীপকের কাছে আসলে, অফিসার দীপক তার সেই কেস নিয়ে বিস্তারিত বলতে থাকেন। এভাবেই সিনেমার গল্প আগাতে থাকে। কি ছিলো সেই কেসের মাঝে? কেনো তিনি অন্য কাউকে পুলিশে আসার ব্যাপারে অনুৎসাহিত করেন? সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে সিনেমাতে। কিন্তু আপনি যা চিন্তা করছেন, তারচেয়েও বড় চমক অপেক্ষা করছে সিনেমার শেষ ভাগে। দুর্দান্ত এই থ্রিলার সিনেমাটি আগে না দেখে থাকলে অবশ্যই দেখে নিতে পারেন।
২.থেরি-Theri (2016)
থেরি মুভিটি পরিচালনা করেছেন অ্যাটলি কুমার । এত সুন্দর একটা গল্পের লেখক ছিলেন অ্যাটলি এবং এস রমনা গিরিভাসন । ২০১৬ সালে থেরি মুক্তি পায় । একসময় বিজয়ের পরিচয় হয় মেডিকেল স্টুডেন্ট মিত্রার সাথে । তারে দুজন দুজনার প্রতি বেশ আকৃষ্ট হয়ে ওঠে এবং দুই পরিবারের সম্মতিতে তাদের বিবাহ সম্পন্ন হয় । অতঃপর তাদের একটি মেয়েও হয় । এভাবে বেশ আনন্দেই কাটছিলো বিজয়ের জীবন। এরই মধ্যে তার হাতে একটি নতুন কেস আসে । কেসটি ছিলো রেপ কেস এবং এই কেসটি বিজয়ের লাইফে ব্যাপক পরিবর্তন আনে । এতক্ষণ যা বললাম , তা ৫ বছর আগেকার কাহিনি । বর্তমানে বিজয়ের নাম জোসেফ কুরুবিলা । সে এখন তার মেয়ে নিভিকে নিয়ে কেরালায় থাকে । এখানে সে একটি বেকারি চালায় । কি এমন ঘটেছিলো ডিসিপি বিজয় কুমারের জীবনে ?? তার স্ত্রী মিত্রাই বা কোথাই ?? জানতে হলে দেখতে হবে থেরি ।
৩.রাতসাসান- Ratsasan (2018)
২০১৮ সালে মুক্তি পেয়েছিল এই ছবিটি। আপনি যদি ফেসবুকে সিনেমার গ্রুপগুলোতে যুক্ত থাকেন, তাহলে এই সিনেমার নাম এতোদিনে অবশ্যই অনেকবার শুনে ফেলেছেন। সিনেমার শুরুতেই অরুন কুমার নামের একজন তরুণকে দেখা যায়, যার স্বপ্ন সাইকোপ্যাথ নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করবেন। কিন্তু স্ক্রিপ্ট নিয়ে অনেক প্রযোজক-পরিচালকের কাছে গেলেও, কোথাও সাড়া মেলেনি সেভাবে। নিজের স্বপ্নকে বিসর্জন দিয়ে অনেকটা বাধ্য হয়ে পুলিশে জয়েন করেন অরুন। ঠিক সেই সময় শহরে একের পর এক স্কুল ছাত্রীর নৃশংসহ মরদেহ উদ্ধার হতে থাকে। মরদেহের পাশে আবার একটি করে গিফট বক্স পাওয়া যায়। এসব কেসের তদন্তে যুক্ত হন অরুন কুমার। তিনি কি পারবেন সাইকো কিলারকে থামাতে? তার সিনেমার স্ক্রিপ্ট লেখার অভিজ্ঞতা কি কোনো কাজে আসবে এখানে? কেনোই বা সাইকো কিলার বেছে বেছে স্কুল পড়ুয়া তরুণীদের হত্যা করছেন? গিফট বক্স পাঠানোর উদ্দেশ্যই বা কি? এসব প্রশ্নের উত্তর মিলবে সিনেমার শেষে। রক্ত হিম করা টান টান উত্তেজনার এই থ্রিলার সিনেমাটি আপনাদের হৃদযন্ত্রের যে বড় পরীক্ষা নিবে, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।
৪.থাদাম-Thadam (2019)
এঢ়িল ও কাভিন দুজন দেখতে একই রকম। কিন্তু দুজনের চরিত্রে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। এদের মধ্যে এঢ়িল একজন ইঞ্জিনিয়ার এবং তার কনস্ট্রাকশন কোম্পানি আছে। তার জীবনযাপন অনেক বেশি ডিসেন্ট। মেয়েদের সাথে কথা বলতেও ভয় পায় এঢ়িল। অন্যদিকে কাভিন একটু ভবঘুরে টাইপের, অনেক বেশি চালাক। ধান্দাবাজি করে মানুষের টাকা হাতিয়ে নেয় কাভিন। জুয়া খেলা এবং অনেক মেয়ের সাথে সম্পর্ক করাই তার কাজ। এক রাতে শহরে আকাশ নামের একজন খুন হলে সন্দেহভাজন হিসেবে তাদের দুজনকেই আটক করে পুলিশ। দুজনের কেউ-ই খুনের ব্যাপারে স্বীকার করে না। তাদের দুজনের চেহারা যেমন এক, তেমনি ফরেনসিক রিপোর্টে দুজনের ডিএনএ-ও মিলে যায়। তাহলে দুজনের মধ্যে খুনী কে? ডিএনএ টেস্ট একই আসার কারণ কি? কখনো মনে হবে এঢ়িল, আবার কখনো মনে হবে কাভিন খুন করেছে। সিনেমায় পুলিশের মাথা যেমন চক্কর খেয়েছিল অপরাধী খুঁজতে, তেমনি সিনেমাটি দেখার সময় আপনার চিন্তাশক্তিও ঘুরপাক খাবে শিওর। আরেকটি তথ্য আপনাদের জানিয়ে রাখি। এই সিনেমাটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত।
৫.গেম ওভার-Game Over (2019)
গেম ওভার মুভিটি পরিচালনা করেছেন আশ্বিন সারাভানান এবং গল্পের লেখক ছিলেন আশ্বিন সারাভানান । ২০১৯ সালে গেম ওভার মুক্তি পায় । কয়েকটা খুন ও তার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক মহিলার মানসিকভাবে সুস্থতার প্রশ্ন । এই ছবি প্রথম দৃশ্য থেকেই আতঙ্ক , রহস্যে ঘিরে রেখেছে দর্শককে । কাহিনি শুরু এক নৃশংস খুন দিয়ে । এর পরের দৃশ্যতেই স্বপ্না (তাপসী পান্নু) দিকে ফোকাস করা হয়েছে , যে নিজের ভিডিও গেম নিয়ে ব্যস্ত । আর এই ভিডিও গেম ঘিরে স্বপ্না নিজের মনে লুকিয়ে থাকা কোনও রাক্ষসকে মারতে চাইছেন । তবে স্বপ্নার ভিডিও গেম খেলা আর শহরে একের পর এক খুনের ঘটনার মধ্যে যোগ কোথায় রয়েছে এর উত্তরে বড়সড় চমক দিয়েছে ক্লাইম্যাক্স ।
৬.ইমাইক্কা নডিগাল-Imaikkaa Nodigal (2018)
একটি কিডন্যাপের দৃশ্য দিয়ে সিনেমার শুরু। প্রথম ৫ মিনিটের মাথাতেই কিডন্যাপারকেও দেখানো হয়। কি ভাবছেন? সিনেমা শেষ! এমন যদি চিন্তা করে থাকেন, তাহলে আপনার চিন্তাকে ১৮০ ডিগ্রি পাল্টে দিবে এই সিনেমাটি। সিনেমার গল্পে আসি। শহরে হঠাৎ এক সাইকোপ্যাথের আবির্ভাব ঘটে। যে কিনা কিডন্যাপের পরে টাকা দাবী করে। কিন্তু টাকা দেওয়ার পরেও সে নৃশংসভাবে খুন করে। সাইকো নিজেকে রুদ্র নামে পরিচয় দেয়। কিন্তু রুদ্র এমন একজন সাইকোপ্যাথ, যে পাঁচ বছর আগে সিবিআইয়ের অপারেশনে অফিসার অঞ্জলীর হাতে মারা গিয়েছিল। রুদ্র তখন মারা গেলে এখন আবার ফিরে আসে কিভাবে? সে আবার সিবিআই অফিসার অঞ্জলীকে একের পর এক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে থাকে। পুরো সময় জুড়ে পুলিশের সাথে ইঁদুর-বিড়াল লড়াই চলে নিজেকে রুদ্র দাবী করা সাইকো প্যাথের। এক বসাতেই শেষ করার মতো দারুন থ্রিলার। আশাকরি উপভোগ করবেন বেশ।
৭. ঠোঁট্টাক্কাল- 8 Thottakkal (2017)
৮ ঠোঁট্টাক্কাল মুভিটি পরিচালনা করেছেন শ্রী গণেশ । গল্পের লেখকও ছিলেন শ্রী গণেশ । ২০১৭ সালে মুভিটি মুক্তি পায় । ৮ Thottakkal এর মানে হলো ৮ বুলেট । সাত্তিয়া একজন সৎ পুলিশ অফিসার । যিনি কারও কাছ থেকে কখনো ঘুষ খায় না । অপরদিকে অন্যান্য পুলিশরা ঘুষ খেয়ে অনেক টাকা কামাচ্ছে ।একদিন সাত্তিয়া ৮টি বুলেট লোড করা রিভলভর হারিয়ে যায় । ইন্সপেক্টর তাকে ১দিন সময় দেন রিভলভর খুঁজে বের করার জন্য । সেই রিভলভর চুরি করে কিছু পকেটমার ছেলে , এবং তারা সেটা বিক্রি করে । এভাবেই কাহিনী সামনের দিকে চলতে থাকে ।
ইরাভুক্কু আয়িরাম কাঙ্গাল-Iravukku Aayiram Kangal (2018)
এক বৃষ্টিমুখর রাতে নির্জন শহরের কোনো একটা বাড়িতে এক তরুণীর লাশ পড়ে আছে। সেই রাতে বাড়িটিতে ওই তরুণীকে খুন করতে একের পর এক মানুষ আসে। কিন্তু বাসায় যিনিই প্রবেশ করেন, তিনিই অবাক হয়ে যান। কারণ তার আগেই অন্য কেউ একজন এসে তরুণীকে খুন করে পালিয়ে গিয়েছে। অন্য সবার মতো শহরের একজন সাধারণ ট্যাক্সি ড্রাইভারও এসেছিলেন সেই বাড়িতে। কিন্তু বাড়িতে প্রবেশ করতেই বুঝতে পারেন, এখানে কোনো ঝামেলা চলছে। তাই তিনি দ্রুত বাড়িটি থেকে বের হয়ে চলে যান। কিন্তু তাকে বের হওয়ার সময় পাশের বাসা থেকে একজন দেখে ফেলে এবং পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ সেই তরুণীয় হত্যাকারী হিসেবে ট্যাক্সি ড্রাইভারকে হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকেন। ট্যাক্সি ড্রাইভার কি আসলেই হত্যাকারী? সেই রাতে সে কেনো ওই বাড়িতে গিয়েছিল? অন্য যারা হত্যা করতে গিয়েছিল, সেটার পেছনের কারণ কি? তরুণীটিকে আসলে কে হত্যা করলো? সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে সিনেমাটিতে। সিনেমার শেষভাগে আপনার জন্য আরেকটি বড় টুইস্ট অপেক্ষা করছে। শেষ হইয়াও যেনো হইলো না শেষ!
১০.কশানাম-Kshanam (2016)
কশানাম মুভিটি পরিচালনা করেছেন রবিকান্ত পেরেপু এবং গল্পের লেখক ছিলেন রবিকান্ত পেরেপু । ২০১৬ সালে কশানাম মুক্তি পায় । এক্সের ফোন পেয়ে আমেরিকা থেকে তড়িঘড়ি ইন্ডিয়া আসে রিশি , কারণ তার মেয়ে কে খুঁজে পাচ্ছেনা । পুলিশ কেস থেকে শুরু করে কেউ হারিয়ে গেলে যা যা করা সম্ভব সবকিছুই করা হয়েছে এরপরও বাচ্চাটার কোন খবর নেই । তাই বাধ্য হয়ে রিশিকেই ফোন করে সাহায্য চায় স্বোয়াতী । যেকোন বিপদে পাশে থাকবে কথা দেওয়ায় রিশিও চলে আসে ইন্ডিয়ায় । সেও তার মতো শুরু করে তদন্ত । এক পর্যায়ে জানতে পারে স্বোয়াতীর কোন মেয়েই নাই , সে মানসিক ভাবে বিকারগ্রস্থ । এমনকি ওর যে কোন মেয়ে আছে এমন কোন প্রমাণও স্বোয়াতী দিতে পারছে না । এই কথা জানার পর পুরোই দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায় রিশি । আশেপাশের সবাই বলে স্বোয়াতীর কোন মেয়ে নাই কিন্তু স্বোয়াতী বলে তার মেয়ে হারিয়ে গেছে । এই মূহুর্তে কাকে বিশ্বাস করবে সে ?? আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসে শত রহস্য । পুরো মুভিতেই আছে টুইস্টের পর টুইস্ট ।