
ছোট বাচ্চার পেটে গ্যাস হওয়ার কারন ও করনীয়, শিশুর পেটের গ্যাস কমানোর ঘরোয়া উপায়
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় কমবেশি সবাই ভোগেন। ছোট্ট শিশুরাও বাদ যায় না। মায়ের বুকের দুধ, ফিডারের দুধ, অতিরিক্ত কান্না করার সময় পেটে প্রচুর বাতাস ঢোকে গ্যাসের সমস্যা হয়। এ ছাড়া বাইরে ভাজাপোড়া, চিপস, চকলেটসহ মুখরোচক খাবার খেলেও বাড়ন্ত শিশুদের পেটে গ্যাস হতে পারে।
অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হলে শিশুর শরীর বেশ পীড়াদায়ক হয়ে ওঠে। গ্যাসের সমস্যার কারণে শিশু অনবরত কাঁদে।
আরো পড়ুন: বাচ্চাদের গ্যাসের ঔষধের নামের তালিকা
ছোট বাচ্চার পেটে গ্যাস হওয়ার কারন
খুব দ্রুত খাওয়া:-
যদি বাচ্চার মায়ের বুকের দুধ বেশী থাকে বা বোতলে খাওয়ানো বাচ্চার বোতলের নিপলের ছিদ্র যদি বড় থাকে তবে বাচ্চা খুব দ্রুত দুধ গিলতে থাকে এবন সেই সাথে বাতাসও বাচ্চার পেটে চলে যায়, যার কারণে গ্যাস হতে পারে।
খুব আস্তে খাওয়া:-
একইভাবে মায়ের বুকে দুধ কম আসলে বা বোতলের ছিদ্র বেশী ছোট হলে বাচ্চার দুধ খাওয়ার সময় অতিরিক্ত বাতাস বাচ্চার পেটে চলে যায় এবং গ্যাস তৈরি করে।
বোতলের দুধে ফেনা থাকলে:-
বাচ্চাকে ফর্মুলা খাওয়ানো হলে ফর্মুলা তৈরি করার সময় বোতল যত বেশী ঝাঁকানো হয় তত বেশী তাতে ফেনা হয়। এতে বাচ্চার পেটে গ্যাস হতে পারে। তাই দুধ তৈরি করার পর কিছুক্ষণ রেখে দিন যাতে ফেনা কমে যায়। এরপর বাচ্চাকে খেতে দিন।
দুধের কোন নির্দিষ্ট প্রোটিন এর কারণে:-
বাচ্চার যদি বুকের দুধ খায় তবে মায়ের ডায়েটের কোন প্রোটিনের কারণে বাচ্চার পেটে গ্যাস হতে পারে। মা ডেইরি প্রোডাক্ট খেলে এ সমস্যা বেশী দেখা যায়। কিসের কারণে হচ্ছে তা নিশ্চিত করা গেলে তা মায়ের ডায়েট থেকে বাদ দিন। যদি বাচ্চা ফর্মুলা খায় তবে ফরমুলার কোন প্রোটিন হয়ত বাচ্চার সহ্য হচ্ছেনা তাই গ্যাস হচ্ছে। এমন হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ফর্মুলা পরিবর্তন করে দেখতে পারেন। মায়ের ডায়েটের কারণে হচ্ছে মনে হলে মায়ের ডায়েট থেকে একবারে একধরনের খাবার বাদ দিয়ে দেখুন বাচ্চার সমস্যা কম হচ্ছে কিনা।
আরো পড়ুন: শিশুর যেসব ওষুধ ঘরে রাখবেন
কিছু কিছু খাবারের কারণে:-
বড়দের মত বাচ্চাদের কিছু কিছু সবজিতে পেটে গ্যাস হতে পারে। যেমন- ব্রকলি এবং বাঁধাকপি। এগুলো যদি খুবই স্বাস্থ্যকর এবং খাওয়া উচিত তারপরও চেষ্টা করুন যাতে খুব বেশী পরিমাণে খাওয়ানো না হয়। ছয় মাস বয়সের পর বুকের দুধের পাশাপাশি একটু বাড়তি খাবার দেওয়া হয়। এতেও অনেক সময় পেটে গ্যাস হতে পারে। এসব শিশুর বাড়তি খাবারে বিভিন্ন প্রকার ফল বা শাকসবজি দিয়ে খিচুড়ি এবং মাছ-মাংস ও ডিম থাকে। অনেক সময় খিচুড়িতে শাকের পরিমাণ বেশি হলে গ্যাস হওয়ার ঝুঁকি থাকে আবার ডালেও গ্যাস হতে পারে, এমনকি সিদ্ধ ডিমেও গ্যাস হতে পারে। তাই উচিত বাড়তি খাবার দেওয়ার সময় খাবারের দিকে নজর রাখা। যেমন- খিচুড়িতে শাক ও ডালের পরিমাণ কম দিয়ে কাঁচা কলা বা কাঁচা পেঁপের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া।
জুস খাওয়ার কারণে:-
বাচ্চাদের মায়ের দুধ এবং ফর্মুলা ছাড়া অন্য কোন পানীয় খাওয়া উচিত নয়। যদি ৬ মাস হয় তবে পানি খেতে পারে। জুসে যে ফ্রুক্টোস ও সুক্রোস থাকে তা বাচ্চা ঠিকমত হজম করতে পারেনা। এর ফলে বাচ্চার পেটে গ্যাস এমনকি ডায়রিয়াও হতে পারে।
পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না খাওয়া:-
বাচ্চা ৬ মাস হওয়ার পর পর্যাপ্ত পানি খেলে তার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে অনেক সময় পেটে গ্যাস ও ব্যাথা হয়। ৬ মাস বয়সী বাচ্চাকে দৈনিক বুকের দুধ বা ফর্মুলার পাশাপাশি ২-৪ আউন্স পানি খাওয়াতে হবে। বাচ্চার বয়স ১২ মাস হলে তা বাড়িয়ে ৪-৬ আউন্স করুন।
বাচ্চার অতিরিক্ত কান্নার কারণে:-
বাচ্চা অনেক্ষন ধরে কান্না করতে থাকলে তার পেটে বাতাস ঢুকে যেতে পারে। তাই বাচ্চার কান্না যত দ্রুত সম্ভব থামানো উচিত।
আরো পড়ুন: বাচ্চাদের পেট ব্যাথা কমানোর উপায়
যেভাবে বুঝবেন শিশুর গ্যাস হয়েছে
নবজাতকের গ্যাস হওয়া যদিও স্বাভাবিক, তবে স্বাভাবিক এর থেকে বেশি গ্যাস হলে কিছু লক্ষ্মণ দেখা যায়, যেমন:
* আপনার বাচ্চা অনেক কান্না করবে। এটা বেশিরভাগ বাচ্চার ক্ষেত্রেই ঘটে থাকে। গ্যাসের সমস্যা হলে তারা ঘন্টার পর ঘন্টা, এমনকি সারাদিনও কাঁদতে পারে। এতে চিন্তার কিছু নেই, তবে এই সমস্যা যদি প্রতিদিনই হতে থাকে এবং না কমে, তাহলে ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।
* আপনার বাচ্চাকে বেশিরভাগ সময় বিরক্ত মনে হবে। বাচ্চা হাসতে ও খেলতে পছন্দ করবে না। সবসময় অস্বস্তি নিয়ে থাকবে। এটিও অতিরিক্ত গ্যাস সৃষ্টি হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
* বাচ্চা ঠিকমতো খেতে চাইবে না, ঘুমাতে পারবে না। বাচ্চাদের অনেক রকম সমস্যার কারণে খাওয়া ও ঘুমের বিঘ্ন ঘটে, তারমধ্যে গ্যাসের সমস্যা অন্যতম।
* বাচ্চা কাঁদলে তার চোখমুখ লাল হয়ে যাবে। বাচ্চাকে দেখলে আপনার মনেহবে সে কোনো কারণে ব্যাথা পাচ্ছে বা তার খারাপ লাগছে।
শিশুর পেটের গ্যাস কমানোর ঘরোয়া উপায়
কয়েকটি ঘরোয়া উপায়েই শিশুর গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দ্রুত সারিয়ে তুলতে পারবেন। জেনে নিন করণীয়-
>> প্রতিবার শিশুকে খাওয়ানোর পর তাকে শুইয়ে না রেখে বরং কোলে নিয়ে সোজা করে রাখুন। আপনার এক হাত শিশুর পিছে রাখুন ২-৩ মিনিট। এতে শিশুর হজম হবে দ্রুত, পেটে গ্যাস জমবে না।
>> শিশুর পেটে গ্যাস জমলে, আলতোভাবে ঘষুন। আঙুল দিয়ে ম্যাসেজ করুন শিশুর পেট। এতে গ্যাস পরিপাকতন্ত্রের দিকে প্রবাহিত হবে এবং শরীর থেকে বের বের হয়ে যাবে।
>> এমন সময় শিশুকে হালকা গরম পানি খাওয়াতে হবে। হালকা গরম পানিতে শিশুকে গোসলও করাতে পারেন। এতে শরীর ঠান্ডা হবে আর গ্যাসও বের হয়ে যাবে।
>> বুকের দুধের বদলে অনেকেই শিশুকে বাইরের দুধ খাওয়ান। এতেও অনেক সময় শিশুর পেটে গ্যাস জমতে পারে। ফর্মুলা মিল্কে থাকা কিছু উপাদান শিশুর পেটে গ্যাস তৈরি করতে পারে। নিয়মিত এমনটি হলে ফর্মুলা মিল্ক খাওয়ানো বন্ধ করুন।
>> প্রতিদিন কয়েক মিনিটের জন্য শিশুকে ব্যায়াম করান। যেমন- শিশুকে উল্টো করে কিছুক্ষণ শুইয়ে রাখুন। তার হাত-পা ম্যাসেজ করে দিন। এতে পাকস্থলীয় ক্রিয়াকলাপ বাড়ে।
>> ২-৫ বছর বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রেও গ্যাস্টিকের সমস্যা হতে পারে ভাজা-পোড়া খাবার খাওয়ার অভ্যাস ও শারীরিক কসরতের অভাবে। বর্তমানে শিশুরা খেলাধুলা করার সময় ও সুযোগ কোনোটিই পায় না। যা তাদের জন্য শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
>> শিশুকে সবসময় বসে খাওয়ানোর অভ্যাস করুন। শুয়ে খাওয়ালে শিশুর মুখে বাতাস প্রবেশ করতে পারে। এতে শিশুর পেটে গ্যাস হতে পারে।
আরো পড়ুন: বাচ্চাদের পেটে গ্যাস হলে করনীয়
শিশুর মায়ের যেসব খাবার খাওয়া উচিৎ না
নবজাত শিশু বা দুধ পান করানো শিশুর মায়েদের উচিৎ তাদের খাওয়া কোনো খাবার যেন শিশুর পেটে গ্যাস জমা না করে, সে দিকে খেয়াল রাখা। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ক্ষতির কারণ হতে পারে দুধ ও দুধজাত সব খাবার। তাই মায়েদের উচিৎ দুধ, পনির, দই, পুডিং, আইসক্রিম, মাখন, ঘি সহ দুধ থেকে তৈরি খাবার বর্জন করা। এছাড়া ডিম, মাছ, গম, শিম, ফুলকপি, ব্রকোলি, মসলাদার মাংস, চিংড়ি, বাদাম এসব খাবারও শিশুর পেটে গ্যাস তৈরি করতে পারে। তাই এসব খাবার না খাওয়া ভালো।