শীতে হাঁটু ব্যথায় করণীয়-What to do for knee pain in winter
শীতকালে অনেক সময় শরীরে ভিটামিন ডি কমে যায়। কমে যায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। শরীরে ক্যালসিয়াম ঘাটতিও হয় কিছুটা। ঠিক এ সময় হাড় ও জয়েন্টে ব্যথা বাড়ে। এসময় চিকিৎসকের স্মরাণাপন্ন হন যারা তাদের অনেকেই বলেন যে, সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর জয়েন্ট শক্ত হয়ে থাকে। হাত, পা অবশ হয়ে যায়। কোমরে শক্তি পান না। শুধু হাড়ের সমস্যাই নয় মাংসপেশির স্টিফনেসের সমস্যাও হয় শীতকালে। অনেক সময় টান লাগে মাংসপেশিতে। বেশি হলে ফুলে যায়।
শীতে শতকরা ৪২ ভাগ মানুষের হাঁটু ও অন্যান্য জয়েন্টের ব্যথা বেড়ে যায়। বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে ঠাণ্ডা, আর্দ্র আবহাওয়ায় জয়েন্ট ব্যথা বৃদ্ধি পায়। শীতে বায়োমেট্রিক চাপ কমে যায়। ফলে আমাদের শরীরের কোষ বা টিস্যুগুলো আমাদের স্নায়ুর ওপর চাপ দেয়। এজন্য জয়েন্টে ব্যথা হয়। এছাড়াও যাদের হাঁটুতে আথ্রাইটিস আছে তাদের হাঁটু ব্যথার মাত্রা বহুগুণ বেড়ে যায়।
ইংরেজিতে কবি জর্জ হারর্বাট বলেছেন, শীতে প্রত্যেক মাইল দ্বিগুণ হয়ে যায়। এসময় আমাদের জয়েন্ট মুভমেন্ট কমে যায়। অনেকেই দীর্ঘ সময় এক পাশে শুয়ে থাকেন ফলে জয়েন্ট ব্যথা হয়। এছাড়াও শীতে আমাদের ভাইটাল ওরগান হার্টকে গরম রাখার জন্য আমাদের শরীর কাজ করে। ফলে পেরিফিরাল বা প্রান্তীয় জয়েন্টগুলো অতি মাত্রায় ঠাণ্ডা হয়ে যায় এবং ব্যথা হয়।
শীতে হাঁটুর ব্যথা কমাতে যা করবেন
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে কোন কোন পদ্ধতিতে এ ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে-
নিয়ম করে শরীর চর্চা করুন
প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট শরীরচর্চা করুন। এতে দেহে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। হাঁটুর ব্যথা কমে। বয়সের ভারে যদি ভারী কাজ করতে অসুবিধা হয়, তবে হালকা জগিং কিংবা হাঁটাহাঁটিতেও অনেকটা ভাল থাকে শরীর।
ঠান্ডা এবং গরম পানির সেঁক
শীতকালে হাঁটু ব্যথা বাড়লে সবচেয়ে কাজ দেয় ঠান্ডা এবং গরম পানির সেঁক। হাঁটু ফুলে গেলে বা হাঁটুর সংক্রান্ত আরও অন্যান্য সমস্যাতেও প্রাথমিকভাবে কাজ দেয় ঠান্ডা এবং গরম পানির সেঁক।
ফিজিয়োথেরাপি
অনেকেই এখন হাঁটুর ব্যথা সারাতে ফিজিয়োথেরাপির সহায়তা নিচ্ছেন। এই পদ্ধতির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম। বিভিন্ন ধরনের তেল মালিশ কিংবা চিনা চিকিৎসা পদ্ধতি অ্যাকুপাংচারও করান অনেকে। তবে যেকোনো চিকিৎসা শুরু করার আগে এক বার চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নেওয়া আবশ্যিক।
ওজন কমানো
হাঁটু ব্যথার অন্যতম একটি কারণ শরীরের অতিরিক্ত ওজন। শরীরের অত্যধিক ওজন হাঁটুর উপর চাপ ফেলে। তাই হাঁটু ভাল রাখতে এবং ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করতে ওজন কমানো জরুরি।
শীতে হাঁটুর ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে যে খাবার খাবেন
শীতের সময় হাঁটুর ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পাতে রাখতে পারেন কয়েকটি খাবার। জেনে নিন কোন কোন খাবার খাবেন-
সামুদ্রিক মাছ
সামুদ্রিক মাছে থাকা ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন ডি’র মতো উপকারী উপাদানসমূহ হাঁটুর ব্যথা কমাতে দারুন কার্যকরী। গবেষণায় দেখা গেছে, এই ফ্যাটি অ্যাসিড হাঁটুর ব্যথা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
রসুনে থাকা অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান শরীরের পেশিকে সুস্থ রাখে। একইসঙ্গে গাঁটের ব্যথা নিয়ন্ত্রণেও গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
হাঁটুর ব্যথা কমাতে আদা খুব উপকারী। সর্দি-কাশি কমানো থেকে শুরু করে শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা কমাতেও আদা অনেক উপকারী। রান্নায় ব্যবহার করা ছাড়াও, চায়ে আদা দিয়ে খেতে পারেন। আদা হাঁটুর ব্যথা কমাতে দারুণ উপকারী।
বাদাম ও বীজ
কাঠবাদাম, কাজুর মতো এমন বিভিন্ন ধরনের বাদামে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট আর ওমেগা ৩ আছে ভরপুর। এছাড়া ডায়েটে রাখুন চিয়া বীজ, ফ্ল্যাক্স সিডসের মতো উপকারী কিছু বীজ। দেখবেন হাঁটুর ব্যথা থেকে মুক্তি পাবেন সহজেই।
মৌসুমী ফল
মৌসুমী ফলের স্বাস্থ্যগুণ অনেক। হাঁটুর ব্যথা সারাতে মৌসুমী ফল নিয়মিত খান। বিশেষ করে স্ট্রবেরি, ব্লুবেরির মতো ফলে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বেশি থাকে। প্রতিদিনের ডায়েটে এই ফলগুলো রাখলে হাঁটুর ব্যথা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
অলিভ অয়েল
অলিভ অয়েলের স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক। এই তেল ওমেগা ৩ এর উৎস। এতে আছে ‘ওলিয়োক্যানথাল’ নামক উপাদান, যা হাঁটুর পেশি সচল রাখতে সাহায্য করে। ফলে হাঁটু ব্যথা থেকে মুক্তি মেলে।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া