
নারীদের হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ - Heart attack symptoms in women
হার্ট অ্যাটাক বর্তমান সময়ে সবচেয়ে জীবনঘাতি। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব বয়সী মানুষ এ রোগে মারা যাচ্ছেন। এই রোগের কিছু সাধারণ লক্ষণ থাকলেও নারীদের হার্ট অ্যাটাকের আলাদা কিছু লক্ষণ নির্ধারণ করেছেন গবেষকরা।
নারীদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো হলো- বদহজম, হাঁপিয়ে ওঠা, বুক ধড়ফড় করা, থুতনি, ঘাড়, হাতে ব্যথা। অথচ নারীদের ক্ষেত্রে এসব উপসর্গ বেশিরভাগ সময়ই অবহেলিত থেকে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, এর ফলে সমবয়সি পুরুষদের তুলনায় নারীদের মৃত্যু ঝুঁকি বেশি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুসারে, প্রতিবছর আনুমানিক ১৭.৯ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক। তথ্য অনুসারে, প্রতি ৫টির মধ্যে অন্তত চারটি মৃত্যুর জন্য দায়ী হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্ট্রোক। বিশেষজ্ঞদের মতামত এমনই।
হার্ট অ্যাটাক যেভাবে হয়
হার্টের ধমনীতে চর্বিযুক্ত, কোলেস্টেরল-ধারণকারী জমাসহ বিভিন্ন কারণে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। যখন এই ফ্যাটি জমা বা ফলক ফেটে যায়, তখন এটি রক্ত জমাট বাঁধে। যা ধমনীগুলোকে ব্লক করে ও শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্ত প্রবাহকে বাধা দেয়। এর ফলেই হার্ট অ্যাটাক হয়।
নারী ও পুরুষের হার্ট অ্যাটাকের মধ্যে পার্থক্য কী?
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, নারীদের হার্ট অ্যাটাক পুরুষদের চেয়ে ভিন্ন হতে পারে। যদিও বুকে ব্যথা ও চাপ অন্যতম এক লক্ষণ, যা পুরুষ ও নারী উভয়ের মধ্যেই ঘটতে পারে।
পরে বমি বমি ভাব, ঘাম, বমি, ঘাড়, চোয়াল, গলা, পেট বা পিঠে ব্যথাসহ অন্যান্য উপসর্গগুলো দেখা দিতে পারে। এমনকি রোগী অজ্ঞান হয়েও পড়তে পারেন।
অন্যদিকে পুরুষদের শ্বাসকষ্ট, চোয়াল ও কাঁধে ব্যথাসহ বমি বমি ভাব হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।যদিও নারীদের চেয়ে পুরুষদের বড় ধমনীতে প্লেক তৈরি হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে, যা হৃৎপিণ্ডে রক্ত সরবরাহ করে।
অন্যদিকে নারীদের হৃৎপিণ্ডের ধমনী ছোট হওয়ার সেখানেও প্লেক জমার প্রবণতা বেশি। তাই এটি পুরুষ বনাম নারীদের মধ্যে লক্ষণগুলোর গতিপথ পরিবর্তন করে।
নারীদের হার্ট অ্যাটাকের কারণ
** জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল ও ধূমপান একই সাথে খেলে হৃদরোগের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। ধূমপান বন্ধ করে দিলে হৃদরোগের আশঙ্কা কমে যায় শতকরা ৮০ ভাগ।
** নিয়মিত মদ্যপান হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। অতিরিক্ত মদ্যপান উচ্চরক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল, অতিরিক্ত ওজনের মতো সমস্যা তৈরি করে।
** শরীরচর্চা বা ব্যায়াম না করাও একটি কারণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, নারীদের সপ্তাহে অন্তত আড়াই ঘণ্টা শরীরচর্চা করা উচিত এবং সেই সঙ্গে দৈনিক ৩০ মিনিট হাঁটা উচিত।
** ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও উচ্চ কোলেস্টেরলের সমস্যা থাকলে নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে।
নারীদের হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ
সাধারণত নারীদের হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো পুরুষদের সঙ্গে অধিকাংশ সময়ই মেলে না। বিশেষজ্ঞদের এমনটাই মতামত। উচ্চ রক্তচাপ, মানসিক চাপ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান সহ আরও অনেক কারণে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। তবে হার্ট অ্যাটাক থেকে রক্ষা পেতে বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে যেগুলো জানা অতি জরুরি।
উদ্বেগ ও মানসিক চাপ
মানসিক চাপ হার্ট অ্যাটাকের জন্য একটি ঝুঁকির কারণ। অনেক নারীই হার্ট অ্যাটাকের আগে ভীষণভাবে মানসিক চাপের ভেতর সময় পার করেন। তাই উদ্বেগ থাকলে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করুন।
দুর্বলতা
কোন ভারী পরিশ্রম করা ছাড়াই শরীর ক্লান্ত লাগলে বা দুর্বলতা কাজ করা হৃদযন্ত্রের চাপ নির্দেশ করে। খেয়াল রাখতে হবে এর সঙ্গে বুকের ব্যথাও জড়িত আছে কিনা।
শ্বাস ছোট হয়ে আসা
ফুসফুসে রক্ত সঞ্চালন ঠিক মত না হলে এটি পর্যাপ্ত পরিমাণ বাতাস গ্রহণ করতে উঠতে গেলে ভালোভাবে শ্বাস নিতে সমস্যা হয়। এটি হার্ট অ্যাটাকের একটি অন্যতম কারণ। এ রকম হলে আগে থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
অবসন্নতা
বিশেষজ্ঞরা বলেন, হার্ট অ্যাটাকের পর অন্তত ৭০ শতাংশ নারী অভিযোগ করেন, যে মাসে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে, সে মাসে একটু বেশিই অবসন্ন লেগেছিল তাদের। এ সময়ে তাদের স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি অবসন্ন লেগেছিল।
ঘাম হওয়া
যে কোনো মৌসুমেই কারণ ছাড়া হঠাৎ করে ঠাণ্ডা ঘাম দেখা দেওয়া হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ হতে পারে। এই অস্বাভাবিক ঘাম দেখা দিলে দ্রুত তার প্রতি মনযোগী হওয়া উচিত।
ঠাণ্ডা লাগা ও ফ্লু হওয়া
অনেকেরই হার্ট অ্যাটাকের আগে ঠাণ্ডা ও ফ্লু হয়ে থাকে। এছাড়া ঘর্মাক্ত ত্বক বা মাথা ঘোরানোর সমস্যা হতে পারে। এসব সমস্যা সহজে সারতে চায় না। হার্ট অ্যাটাকের আগে এ রকম লক্ষণ দেখা যায়।
বুক ব্যথা
ব্যথা, চাপ অথবা বুকের যে কোনো অস্বস্তি নারীদের ‘হার্ট অ্যাটাক’য়ের লক্ষণ। তবে অনেক নারীর বুক ব্যথা ছাড়াই হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে। এই ধরনের বুক ব্যথায় অনেকটা চেপে আসা বা টান লাগার মতো অনুভূতি হতে পারে। আর এটা কেবল বুকের বাম পাশে নয় বরং বুকের যে কোনো জায়গায়ই হতে পারে।
চোয়াল, কান, ঘাড় ও কাঁধে ব্যথা ছড়ানো
অনেক নারীই বলেন, হার্ট অ্যাটাক হলে বুকের বাঁ পাশ ব্যথা শুরু হয়ে চোয়াল, কান, ঘাড় ও কাঁধের দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এ সময় পেশিতে টানটান ভাব অনুভূত হয়। এসব সমস্যায় দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
হজমে সমস্যা ও বমি বমি ভাব
হার্ট অ্যাটাকের আগের সময়টায় সাধারণত পাকস্থলীতে ব্যথা, ইনটেসটাইনাল ক্রাম্প, বমি বমি ভাব এবং হজমে সমস্যা ইত্যাদি হতে দেখা যায়। তাই এ ধরনের বিষয় এড়িয়ে না গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ঘুমের অসুবিধা
অবসন্নতার পাশাপাশি ঘুমের অসুবিধা হয়। হার্ট অ্যাটাকের মাস খানেক আগে থেকেই কম ঘুমের সমস্যা হতে থাকে। তাই ঘুমের সমস্যা হলে বিষয়টি এড়িয়ে যাবেন না।