
রাতকানা রোগের লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকার
রাতকানা হচ্ছে ভিটামিন এ-এর অভাবজনিত রোগ। এটা আসলে কতিপয় চোখের রোগের উপসর্গ। কারো ক্ষেত্রে জন্ম থেকে এই সমস্যা থাকে, এছাড়া চোখে আঘাত বা অপুষ্টির কারণে (যেমন ভিটামিন এ এর অভাব) এই সমস্যা হতে পারে। রাতকানা রোগে স্বল্প আলো বা অন্ধকারে চোখের অভিযোজন ক্ষমতা হ্রাস পায় বা নষ্ট হয়ে যায়।
রাতকানা রোগের লক্ষণ
রাতকানা রোগের একমাত্র লক্ষণ অন্ধকারে বা মৃদু আলোতে দেখতে অসুবিধা হয়। আপনার চোখ যখন কোনও উজ্জ্বল পরিবেশ থেকে কম আলোর দিকে রূপান্তরিত হয় আপনি রাতকানা রোগের ঝুঁকির সম্ভাবনা বেশি অনুভব করতে পারি, যেমন আপনি যখন কোনও হালকা আলো জ্বালানো রেস্তোঁরাতে সানির পাশের পথ ছেড়ে চলে যান। রাস্তায় হেডলাইট এবং স্ট্রিট লাইটের মাঝে মাঝে উজ্জ্বলতার কারণে গাড়ি চালানোর সময় আপনি দুর্বল দৃষ্টিও অনুভব করতে পারেন।
প্রথমে ভোরে ও সন্ধ্যায় অল্প আলোতে দেখতে অসুবিধে হয়, একে রাতকানা বলে৷
পরে তার চোখ শুকিয়ে যায় (জেরোসিস), চোখের সাদা অংশের চকচকে ভাবটা চলে গিয়ে সেটা কুঁচকিয়ে যায়৷
চোখে ছোট ছোট ছাই রঙের বুদবুদ ভর্তি দাগ (বিটট্স স্পট) দেখা দেয়৷
এরপর চোখের কর্নিয়া নরম হয়ে যায়৷
কর্নিয়াতে ঘা হয়৷ কর্নিয়া ঘোলাটে হয়ে যায়৷ নরম কর্নিয়া ঠেলে ফোঁড়ার মতো বেরিয়ে আসতে পারে বা ফুটো হয়ে যেতে পারে৷
অবশেষে সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে যায়৷
রাতকানা রোগের কারণ
রাতকানা রোগের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো রেটিনল বা ভিটামিন এ-এর অভাব।
বাচ্চা অল্প ওজনে জণ্ম হলে এবং অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর এই রোগ বেশি হয় ৷
ডায়রিয়া, হাম, নিউমোনিয়া ইত্যাদি হলে শরীরে ভিটামিনের অভাব হয় ৷
বাড়ন্ত বয়সে অতিরিক্ত খাদ্যের চাহিদা পূরণ করতে না পারলে এই রোগ হতে পারে।
দূরদৃষ্টিতে অবাস্তব জিনিসগুলির দিকে তাকালে অস্পষ্ট দৃষ্টি।
ছানি বা চোখের লেন্সের ক্লাউডিং।
রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসা, যা অন্ধকার রঙ্গক যখন আপনার রেটিনায় সংগ্রহ করে এবং টানেলের দৃষ্টি তৈরি করে তখন তা ঘটে।
উশর সিন্ড্রোম, একটি জেনেটিক অবস্থা যা শ্রবণশক্তি এবং দৃষ্টি উভয়কেই প্রভাবিত করে।
রাতকানা রোগের প্রতিকার
আপনি রাতকানা রোগে আটকাতে পারবেন না যা জন্মগত ত্রুটি বা জেনেটিক অবস্থার ফলস্বরূপ, যেমন অ্যাশার সিনড্রোম। তবে আপনি আপনার রক্তে শর্করার মাত্রাটি সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন এবং রাতকানা রোগ কম হওয়ার জন্য সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে পারেন। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ খাবার খান, যা ছানি প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। এছাড়াও, আপনার রাতকানা রোগের ঝুঁকি কমাতে এমন খাবারগুলি গ্রহণ করুন যাতে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন এ রয়েছে।
প্রতিদিন ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে যেমন-
গার সবুজ শাক যেমন- কচু-শাক, পুঁইশাক, পালংশাক, মূলা-শাক ইত্যাদি৷
হলুদ সবজি যেমন- মিষ্টি কুমড়া, গাজর ইত্যাদি৷
হলুদ ফল যেমন- পাকা কাঁঠাল, পাকা আম, পাকা পেঁপে ইত্যাদি৷
প্রাণী জাতীয় খাদ্য বা প্রোটিন জাতীয় খাদ্য যেমন- দুধ, ডিমের কুসুম, কলিজা, ছোট মাছ ইত্যাদি৷
শাক-সবজি অবশ্যই তেল দিয়ে রান্না করতে হবে৷ তেল দিয়ে রান্না করে খেলে ভিটামিন-এ বেশি পাওয়া যায়৷
বাড়ির আঙিনায় শাক-সবজির চাষ
যেহেতু বাংলাদেশের অধিকাংশ লোকই দরিদ্র৷ তাই স্বাভাবিক কারণেই ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ বেশি দামের খাদ্য যেমন- মাছ, কলিজা, দুধ ডিম, পনির, মাখন প্রভৃতি কিনতে পারে না৷ ভিটামিন-এ যুক্ত শাক-সবজি বাড়ির আঙিনায় জমিতে চাষ করলে সহজে ভিটামিন-এ এর চাহিদা মেটানো যায়৷