ঘুম না হলে কী করণীয়

অনিদ্রা বা ইনসোমনিয়া কী?

আমাদের শরীর সারা দিনের কাজকর্মের পর ছন্দগতভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তখন ঘুমের প্রয়োজন পড়ে। একজন স্বাভাবিক মানুষ দৈনিক ছয় থেকে আট ঘণ্টা, অথবা সব মিলিয়ে প্রায় সাত ঘণ্টা ঘুমায়। এই ঘুম যখন কম হয়, তাকে অনিদ্রা বলা হয়। কিন্তু সেটি কীভাবে হয়? ঘুম আসতে দেরি হলে অনিদ্রা হতে পারে। অথবা ঘুম এলে বারবার ভেঙে যায়। অথবা একবার ঘুম ভাঙলে পরবর্তী সময়ে ঘুম আসতে চায় না। খুব সকালবেলা ঘুম ভেঙে যায়। এই সবগুলোকে বলা হয় অনিদ্রা বা ইনসোমনিয়া।

অনিদ্রার লক্ষণ

দীর্ঘ সময় বিছানায় শুয়ে থাকার পরও ঘুম না আসা।

রাতে অনবরত হাঁটা চলা করা।

তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে যাওয়া ও পরে ঘুম না আসা।

এই ধরনের সমস্যা যত বেশি দিন থাকবে তত বেশি স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেবে।

অনিদ্রার ধরণ

অনিদ্রার সময়ের ব্যাপ্তির উপর ভিত্তি করে একে দুই ভাগে ভাগ করা যায়

অ্যাকিউট’ বা তীব্র অনিদ্রা: কোন বিশেষ কারণে অনিদ্রা দেখা দেয় যেমন- মানসিক চাপ বা উদ্বেগ এবং কয়েকদিন বা সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী অনিদ্রা: এটা সাধারণত শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের কারণে হয়ে থাকে এবং তা দীর্ঘদিনের জন্য- প্রতি সপ্তাহে তিনবার করে কমপক্ষে তিন মাস ব্যাপী।

গবেষণায় দেখা গেছে যে, আমেরিকানদের মধ্যে প্রতি বছর ২৫ শতাংশের তীব্র অনিদ্রার সমস্যা দেখা দেয় এবং তার ৭৫ শতাংশই দীর্ঘস্থায়ী অনিদ্রার সমস্যায় পরিণত না হয়ে সমাধান হয়ে যায়।


কারণ

সাধারত, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক এই দুই কারণে অনিদ্রা দেখা দেয়। এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য হল- মাধ্যমিক অনিদ্রা সাধারণত অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা বা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে হয়ে থাকে। আর প্রাথমিক অনিদ্রা হল প্রধান অসুস্থতা।   

প্রাথমিক অনিদ্রা

এটা কোনো স্বাস্থ্য জনিত সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত না এটা সাধারণত তীব্র অনিদ্রা।  এটা মূলত নিম্নোক্ত কারণের জন্য হয়ে থাকে-

মানসিক চাপ: চাকুরির সাক্ষাৎকার, পরীক্ষা এমন কি জীবনের বড় কোনো পরিবর্তন যেমন- কাছের কারও মৃত্যু বা সম্পর্কে বিচ্ছেদ ইত্যাদি নানা কারণে এমন সমস্যা দেখা দিতে পারে।

আরামদায়ক ঘুমের পরিবেশের অভাব: উদাহরণ স্বরূপ, ঘুমানোর সময় বেশি গরম, বা ঠাণ্ডা ইত্যাদি কারণেও ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়।

ঘুমের অনিয়মিত রুটিন: অস্বাস্থ্যকর ঘুমের অভ্যাস যেমন- প্রতিদিন একই সময় ঘুমাতে না যাওয়া। ঘুমের রুটিনের পরিবর্তন এই ধরনের অনিদ্রার কারণ।

এই ধরনের সমস্যা চিকিৎসকের সাহায্য ছাড়াই সমাধান করা সম্ভব।

মাধ্যমিক অনিদ্রা

সাধারণত, স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে এই ধরণের অনিদ্রার সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও, বিভিন্ন রকম ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলস্বরূপ এমনটা দেখা দিতে পারে।  

এর ফলে নানা রকমের সমস্যা দেখা দেয়। যেমন-

ঘুমের সমস্যা: গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের সমস্যা আছে এমন ৩৮ শতাংশ লোকের অনিদ্রা দেখা যায় এবং ৬০ শতাংশের মধ্যে পায়ের অস্বস্তির সমস্যা আছে।  

দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা: দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক সমস্যা যেমন- শ্বাসকষ্ট, অ্যাসিডিটি, দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা, হরমোন ও থায়রয়েড ও স্নায়বিক সমস্যা যেমন- পারকিনসন ইত্যাদি থেকে ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়। 

গর্ভাবস্থা: গবেষণা থেকে জানা গেছে, গর্ভাবস্থায় প্রায় ৭৮ শতাংশেরই নিদ্রাহীনতার সমস্যা দেখা দেয়। গর্ভধারণের তিন মাসের মাথায় এই ধরনের সমস্যা হয়। কারণ এই সময় সন্তান বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়।

মানসিক স্বাস্থ্য: মানসিক চাপ ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করে। উদ্বেগ ও হতাশা অনিদ্রার সৃষ্টি করে। এমনটা দেখা দিলে থেরাপি নেওয়ার প্রয়োজন।

অতিরিক্ত ক্যাফেইন, নিকোটিন ও অ্যাল্কোহল ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করে। দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি থাকে।

ওষুধ: উদ্বেগ জনিত সমস্যার কারণে দেওয়া ওষুধ, উচ্চ রক্ত চাপের জন্য আলফা, বেটা এবং আর্থ্রাইটিসের কারণে দেওয়া স্টেরয়েডের জন্য অনিদ্রার সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ঘুম না হলে কী করণীয়

দৈহিক ও মানসিক প্রশান্তির জন্য নিদ্রা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, অবসাদ কাজ করে। দীর্ঘদিন ঘুম না হলে নানা রোগব্যাধি বাসা বাধে শরীরে।

অনেকেই ঘুমের সমস্যায় ভোগেন। প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা এখন অনেক সময় ব্যয় করি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ ইন্টারনেটে। এর একটা প্রভাব পড়ে মনোজগতে।  এর ফল হিসাবে সময়মতো ঘুম না আসার মতো সমস্যাগুলো বেশি দেখা যাচ্ছে।

অভ্যাসে পরিণত করুন

প্রত্যেক দিন নিয়ম করে একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া অত্যন্ত জরুরি। বহু কাজ থাকলেও, আপনি যদি একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান, তা হলে সেটি কিছু দিনের মধ্যেই আপনার অভ্যাসে পরিণত হবে।

ফোনের সরিয়ে রাখুন

রাতে শুয়ে শুয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোন ঘাঁটা শুধু ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় তাই-ই নয়, এ ছাড়াও চোখের সমস্যা আর মানসিক সমস্যার জন্যও এই বদভ্যাস অত্যন্ত ক্ষতিকারক।

ছোট ছোট অভ্যাস অত্যন্ত জরুরি

অনেক সময় বিভিন্ন অভ্যাস ঘুমের পক্ষে সুবিধেজনক হতে পারে। ধ্যান করা বা ঘুমানোর আগে বই পড়ার অভ্যাসও ঘুমের জন্য ভালো। চাইলে ক্যামোমিল চা খেতে পারেন।

নিয়মিত শরীরচর্চা করুন

নিয়মিত শরীরচর্চার মধ্যে থাকলে তা শুধু শরীরের গঠনের জন্য নয়, ঘুমের জন্যেও অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে।

ডায়াবেটিসের কারণে চোখে যেসব সমস্যা হয় - Eye problems caused by diabetes
দাঁতে ব্যথা কমানোর উপায় - Ways to reduce toothache
নারীস্বাস্থ্য নিরাপদে মেন্সট্রুয়াল কাপ
মাড়ির মাংস বৃদ্ধি পেলে কি করনীয় - What to do if the gums grow
গর্ভাবস্থায় পেট ব্যথা - Abdominal pain during pregnancy
চর্ম রোগের কারণ ও প্রতিকার
শরীরের ব্যাথা কমানোর উপায় - Ways to reduce body pain
ধ্বজভঙ্গ রোগের চিকিৎসা
গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত বমি হলে করণীয় - What to do in case of excessive vomiting during pregnancy
পিরিয়ডের রক্তের রং জানান দেবে স্বাস্থ্যের অবস্থা