অনিয়মিত পিরিয়ডের কারণ ও করণীয়
irregular periods

অনিয়মিত পিরিয়ডের কারণ ও করণীয়

বর্তমান দিনে শতকরা নব্বই ভাগ মহিলারাই অনিয়মিত পিরিয়ড বা ঋতুস্রাবের সমস্যায় ভুগছেন। কারও ডেট এগিয়ে যাচ্ছে, কারও পিছোচ্ছে, কারও খুব কম হচ্ছে তো আবার কারও বেশি। বিশেষ করে অবিবাহিত মহিলাদের ক্ষেত্রে এই ধরনের সমস্যা সবচেয়ে বেশি দেখা দিচ্ছে। চিকিৎসকদের মতে, চিকিৎসার মাধ্যমে এই জাতীয় সমস্যা মোকাবিলা করা গেলেও, করোনা প্রাদুর্ভাবের পর থেকে এই সমস্যা আরও বেড়ে চলেছে। কারণ, এই সমস্যার মূলে রয়েছে অত্যাধিক মানসিক চাপ, যা বাড়িয়ে তুলছে কোভিড-১৯।

অনিয়মিত পিরিয়ড নিয়ে ভুগে থাকেন অধিকাংশ নারী। এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে তা আরও অনেক সমস্যা ডেকে আনতে পারে। পরবর্তীতে সন্তানধারণে সমস্যা পর্যন্ত দেখা দিতে পারে! এমন সমস্যায় ভুগলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। পাশাপাশি সচেতন হতে হবে নিজেকেও।

মাসিকের চক্র কিভাবে হিসাব করতে হয়?

এক মাসিকের প্রথম দিন থেকে আর এক মাসিকের প্রথম দিন পর্যন্ত যে সময় সেটাই হলো এক মাসিক চক্র। সাধারণত ২৮ দিন পরপর মাসিক হয়। যদিও ২১ থেকে ৩৫ দিন অন্তর পর্যন্ত স্বাভাবিকতার তারতম্য হতে পারে। একবার মাসিক হলে সাধারণত ২-৮ দিন থাকে এবং এক মাসিকে মোট ৫-৮০ মিলি পর্যন্ত রক্ত যেতে পারে। এই তিনটার যেকোনো একটার অনিয়ম মানেই অনিয়মিত মাসিক। 

অনিয়মিত পিরিয়ডের কারণ

শরীরে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের তারতম্যের কারণে এই সমস্যা হয়।

বিবাহিত নারীরা হঠাৎ জন্মনিয়ন্ত্রক ওষুধ বন্ধ করে দিলে হতে পারে।

বিভিন্ন ধরনের মানসিক চাপের ফলে হতে পারে।

শরীরের রক্ত কমে গেলে অর্থাৎ এনিমিয়া হলে অনিয়মিত মাসিক হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

অনেকের ক্ষেত্রে ওজন বেড়ে গেলে এই সমস্যা হয়।

জরায়ুর বিভিন্ন জটিলতার কারণে হতে পারে।

সহবাসের সময় পুরুষের শরীর থেকে আসা অসুখের কারণে হতে পারে। যেমন : গনোরিয়া, সিফিলিস ইত্যাদি।

শরীরে টিউমার ও ক্যানসার ইত্যাদি অসুখে হতে পারে।

প্রি মেনোপজের সময় হয়ে থাকে।

যেসব নারী শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ান সেসব নারীর অনিয়মিত ঋতুস্রাব হতে পারে।

সমস্যা

প্রতিমাসে নিয়মিত ঋতুস্রাব হয় না। এক মাসে রক্তপাত হলে হয়তো আরেক মাসে হয় না। অনেকের ক্ষেত্রে দুই-তিন মাস পরপর হয়ে থাকে।

ঋতুস্রাব বেশি সময় ধরে হয়। কখনো  অল্প রক্তপাত হয় আবার কখনোও বেশি হয়।

সন্তান ধারণ ক্ষমতা হ্রাস পায়।

অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ হতে পারে।

এ ছাড়া মেজাজ খিটখিটে থাকা এবং অস্বস্তিবোধ তৈরি হয়।

চিকিৎসা

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সাধারণত হরমোনাল থেরাপি দেওয়া হয়। কারো ক্ষেত্রে যদি বেশি ওজনের জন্য এই সমস্যা হয় তবে ডায়েট ও ব্যয়াম করতে বলা হয়। অনেকের ক্ষেত্রে মেয়ের পাশাপাশি মাকেও পরামর্শ (কাউন্সিলিং) দেওয়া হয়। আর সন্তান ধারণক্ষম বয়সে সমস্যা অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে হবে। বেশি রক্তপাত হলে আয়রন সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা উচিত।

কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন

যদি বছরে তিন বারের বেশি ঋতুস্রাব না হয়।

যদি ঋতুস্রাব ২১ দিনের আগে এবং ৩৫ দিনের পরে হয়।

ঋতুস্রাবের সময় বেশি রক্তপাত হলে।

সাত দিনের বেশি সময় ধরে ঋতুস্রাব হলে।

ঋতুস্রাবের সময় খুব ব্যথা হলে।

জীবনযাপনে পরিবর্তন

শরীরের ওজন সবসময় নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

মানসিক চাপ মুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে।

পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে।

আয়রন জাতীয় খাবার খেতে হবে যাতে শরীরে পরিমিত পরিমাণে রক্ত থাকে।

প্রতিরোধ

স্বাস্থ্যকর জীবনাচরণে গুরুত্ব দিতে হবে।

মানসিক চাপমুক্ত থাকুন, অতিরিক্ত উদ্বেগ পরিহার করুন।

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। তবে তা যেন অতিরিক্ত না হয়।

ফাস্ট ফুড বা জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলুন। পুষ্টিকর ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার খাবেন।

কেন পিরিয়ড নিয়মিত হওয়া জরুরি

অনিয়মিত মাসিক এর সাথে অনেক দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা জড়িত বলেই মাসিক নিয়মিত হওয়া জরুরি। মেয়েদের পরিপাক, ঘুম, বাচ্চা হওয়া সবই এর সাথে সম্পর্কিত।

কিশোরীদের অনিয়মিত পিরিয়ডের কারণগুলো

ডিম্বাশয়ের অপরিপক্বতা, যার কারণে মেয়েলি হরমোন ইসট্রোজেন ও প্রজেস্টেরনের তারতম্য হয় এবং মাসিক যে পর্দা থেকে হয় সে পর্দা নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা এবং ভাঙতে শুরু করে। (পরিপক্ব ডিম্বাশয় হলো সেটা যেটা থেকে প্রতি মাসে একটা করে ডিম্বাণু ফুটে বের হয়। কিশোরীর ডিম্বাশয় পরিণত হতে সাধারণত কয়েক বছর সময় লেগে যায়। এজন্য এ কয় বছর মেয়েদের মাসিক অনিয়মিত হয়, ওজন পরিবর্তন হয় ও মানসিক পরিবর্তন হয়।)

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রম, যেখানে অনিয়মিত মাসিকের সাথে হাতে-পায়ে ও মুখে অবাঞ্ছিত লোম হয় এবং ঘাড়ে ও গলায় কালো দাগ পড়ে যায়। ওজন বেড়ে যায়।

এছাড়া যেসব কিশোরীর থাইরয়েডের সমস্যা আছে। 

যে সব কিশোরীর মাসিক অনিয়মিত তাদের চিন্তা থাকে কখন মাসিক হবে, কখন মাসিক হবে। তাদের মাসিক কখন হবে বোঝার জন্য কিছু লক্ষণ আছে।

সেগুলো হলো-

১) কোমরের পেছনে ক্রাম্পিং পেইন।

২) ব্রেস্ট ভার ভার লাগা।

৩) মাথা ব্যথা।

৪) ব্রণ।

৫) ঘুমের সমস্যা। 

৬) মেজাজ পরিবর্তন। 

৭) পেট ফাঁপা।

ভারতের সেরা নিউরোলজিস্ট
শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় - What to do if you have trouble breathing
গর্ভাবস্থায় মাথা ব্যাথার কারণ - Causes of headache during pregnancy
কারমিনা সিরাপ এর উপকারিতা
গর্ভপাত বা মিসক্যারেজের কারণ - Causes abortion or miscarriage
আক্কেল দাঁত কি ? আক্কেল দাঁত হলে কি করবেন?
মাথা ব্যথার ঔষধের নামের তালিকা - List of names of headache medicines
পর্ণগ্রাফি আসক্তি ভয়াবহতা ও মুক্তির উপায়
শীতকালীন বিভিন্ন রোগ ও করণীয় - Various winter diseases and what to do
গর্ভাবস্থায় ঘুমের সমস্যা, কী করবেন - Sleep problems during pregnancy, what to do