Rules for taking pills
পিল খাওয়ার নিয়ম
কনডম ছাড়াও জন্ম নিয়ন্ত্রণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল। বাধাহীনভাবে যৌন মিলন করার জন্য অনেক নারীই জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বা খাবার বড়ি ব্যবহার করে থাকেন। তবে এই পিল বা বড়ি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা অনেকেরই নেই। জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল ব্যবহার করলে অবাঞ্চিত প্রেগন্যান্সির সম্ভাবনা কমে যায়। তার ফলে নারীদের ভিতরে গর্ভবতী হওয়ার ভয় আর কাজ করে না। এবং সেক্স লাইফও রঙিন হয়।
এগুলো মূলত ইস্ট্রোজেন-প্রজেস্টেরন হরমোনের বড়ি। ওইসব বড়ি খেলে ওভিউলেশন বা ডিম্বাণু নির্গমন হয় না। ফলে গর্ভসঞ্চারের সম্ভাবনাও থাকে না। সাধারণত দুই ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বাজারে পাওয়া যায়। একটিতে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন থাকে এবং অপরটিতে শুধু প্রোজেস্টেরন থাকে। দুটিই গর্ভসঞ্চার রোধে সমান কার্যকরী। কিন্তু প্রথম পিলটি কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
এই দুই ধরণের পিল পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এবং ব্যথা কমায়। যেসকল বড়িতে কেবল প্রোজেস্টেরন থাকে, সেগুলো একটি নির্দিষ্ট সময়ে খেতে হয়। তবে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খেতে শুরু করলেও প্রথম সপ্তাহে যৌন মিলনের সময় অন্য কোনো কার্যকরী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি (যেমন কনডম) ব্যবহার করা উচিত। কারণ ওই পিলের প্রভাব কার্যকর হতে কিছুটা সময় লেগে যায়। অবশ্যই মনে রাখবেন, জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বা বড়ি খাওয়া শুরু আগে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা জরুরি।
সাধারণত অরক্ষিত শারীরিক সম্পর্কের ৭২ থেকে ১২০ ঘণ্টার মধ্যে এই পিল খেতে হয়।
এই পিল খেলে ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু বের হয়ে জরায়ুতে আসতে দেরি হয়। এই সময়ের মধ্যে জরায়ুতে থাকা শুক্রাণুগুলো নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ডিম্বাণু শুক্রাণুর সঙ্গে নিষিক্ত হতে পারে না। ফলে গর্ভধারণও হয় না। তবে মানবদেহ বড় বিচিত্র। অনেক সময় কিছু শুক্রাণু দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত কর্মক্ষম থাকতে পারে। তখন এই পিল খাওয়ার পরও গর্ভসঞ্চার হতে পারে। এ পর্যন্ত পাওয়া উপাত্ত অনুযায়ী দেখা গেছে, প্রতি ১০০ জনে ২ জন নারী অরক্ষিত শারীরিক সম্পর্কের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এই পিল খাওয়ার পরও গর্ভধারণ করেছেন।
এই পিলগুলো সাধারণত ‘মর্নিং আফটার পিল’ নামে পরিচিত। অনেকে তাই অরক্ষিত সম্পর্কের পরদিন সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করেন পিল খাওয়ার জন্য। কিন্তু এই পিলগুলো অরক্ষিত সম্পর্কের পরপরই খাওয়া উচিত। কারণ, এগুলো খাওয়ার পর অরক্ষিত সম্পর্ক গড়লে পিলের কার্যকারিতা থাকে না।
ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার নিয়ম
এই পিল সঙ্গমের পরের দিন সকালেই খেতে হবে এমন কোনো কথা নেই। সাধারণত সঙ্গমের ৭২ ঘণ্টা থেকে ১২০ ঘণ্টার মধ্যে যেকোনো সময় খাওয়ার নিয়ম। তবে দ্রুত খেলে ভালো কাজ করবে গর্ভনিরোধক ওষুধ। রাতে সঙ্গমের পরও খেতে পারেন।
কোনো ওষুধই গর্ভধারণ রোধ করার শতভাগ প্রতিশ্রুতি দেয় না। কখনো কখনো শুক্রাণু যদি দীর্ঘ মেয়াদে সক্ষম থাকে, তবে ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার পরও গর্ভসঞ্চার হতে পারে। প্রতি ১০০ জনে ২ জন নারী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ইমার্জেন্সি পিল সেবন করার পরও অন্তঃসত্ত্বা হতে পারেন। তাই কিছু ক্ষেত্রে ওষুধ খাওয়ার পরও প্রেগন্যান্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
এই ওষুধ খেলে পিরিয়ড সাইকেল অনিয়মিত হতে পারে। এ ছাড়া মাথা ঘোরা, বমির মতো সমস্যা হতে পারে।
ইমার্জেন্সি পিল গর্ভনিরোধক ওষুধ গর্ভপাত করায় না। তবে গর্ভধারণের ঝুঁকি এড়াতে সাহায্য করে।
গর্ভনিরোধক এই ওষুধ খেলে ওজন বেড়ে যাবে, এমন ধারণা ঠিক নয়। এই ওষুধের সঙ্গে ওজন বাড়ার কোনো সম্পর্ক নেই।
ফেমিকন পিল খাওয়ার নিয়ম
একটি পাতায় মোট ২৮ টি পিল থাকে যেখানে ২১ টি সাদা বড়ি এবং ৭ টি লাল বড়ি থাকে।
মেয়েদের মাসিক বা পিরিয়ড শুরু হওয়ার ১ম দিন বা ২য় দিন থেকে শুরু করে প্রতিদিন ১ টি করে টানা ২১ দিন সাদা বড়ি খাবেন।
২১ দিন শেষে অর্থাৎ ২২তম দিন থেকে লাল রঙের বড়ি খাওয়া শুরু করবেন। আপনারা যতদিন সন্তান নিতে না চান তাতো দিন পর্যন্ত নিয়মিত বড়ি খাবেন।
সহবাস না করলেও নিয়মিত ফেমিকন পিল খাবেন। যখন বাচ্চা নিতে চান তখন থেকে এই পিল বা বড়ি খাওয়া বন্ধ করে দিন। কোন দিন ট্যাবলেট বা পিল খেতে ভুলে গেলে পরের দিন দুইটি বড়ি একসাথে খেয়ে নিন।
মিশ্র খাবার বড়ি খাওয়ার নিয়ম
বাংলাদেশে প্রায় সকল মিশ্র খাবার বড়ির প্যাকেটে ২১টি সাদা জন্মনিরোধক বড়ি এবং ৭ টি খয়েরি বড়ি (আয়রন বড়ি) থাকে । যেসব প্যাকেটে ২১টি বা ২২টি বড়ি থাকে সেক্ষেত্রে সব শেষ হয়ে গেলে মাসিকের জন্য অপেক্ষা করতে হবে । মাসিক শুরু হলে মাসিকের প্রথম দিন থেকে আবার নতুন প্যাকেটের বড়ি খাওয়া শুরু করতে হবে । যদি মাসিক না হয় এবং গ্রহীতা নিশ্চিত থাকেন যে, কোনো বড়ি খেতে ভুল হয় নি তবে শেষ বড়ি খাওয়ার ৭ দিন পরে নতুন পাতা থেকে বড়ি খেতে শুরু করবেন । এছাড়া-
ডিম্বস্ফুটন সঠিকভাবে প্রতিরোধ করার জন্য মাসিকের প্রথম দিন থেকে শুরু করা উচিত ।
মহিলা যদি নিশ্চিত হন যে, তিনি গর্ভবতী নন তবে প্রয়োজনে যে কোনো দিন থেকে শুরু করতে পারেন ।
মিনিপিল
শুধুমাত্র প্রজেস্টোরেন দিয়ে যে জন্মবিরতিকরন খাবার বড়ি বা পিল তৈরি হয় তাই মিনিপিল । মিনিপিল শতকরা ৯৭- ৯৮ ভাগ কার্যকর । মিনিপিল খাওয়ার নিয়ম
প্রতিদিন একই সময়ে একটি করে বড়ি খেতে হবে ।
একটি প্যাকেটের সবগুলো বড়ি খাওয়া হয়ে গেলে পরদিনই নতুন আরেকটি পাতা থেকে শুরু করতে হবে । দুই প্যাকেটের মাঝে বিরতি দেয়া যাবে না ।
মিনিপিল খাওয়ার নিয়ম
মাসিক শুরুর ৫দিনের মধ্যে ।
যারা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন, তারা বাচ্চার জন্মের ৬ সপ্তাহ পর থেকে শুরু করতে পারেন ।
যারা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন না, তারা যে কোনো সময় শুরু করতে পারেন, মাসিক হোক বা না হোক।
যদি বাচ্চার জন্মের ৪ সপ্তাহ পর থেকে খাওয়া শুরু করেন তবে তাকে নিশ্চিত হতে হবে যে, তিনি গর্ভবতী নন ।
বড়ি খেতে ভুলে গেলে করণীয়
যদি একদিন বড়ি খেতে ভুলে যান তাহলে যখনই মনে পড়বে তখনই একটি বড়ি খাবেন এবং ঐদিনের বড়িটি যথাসময়ে খাবেন ।
যদি পরপর দুইদিন বড়ি খেতে ভুলে যান তাহলে মনে পড়ার সাথে সাথে দুইটি বড়ি খাবেন । পাতার বাকি বড়ি নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিদিন একটি করে খাবেন এবং পরবর্তী মাসিক না হওয়া পর্যন্ত কনডম ব্যবহার করবেন বা সহবাস থেকে বিরত থাকবেন ।
যদি পরপর তিনদিন বড়ি খেতে ভুলে যান তবে ঐ পাতা থেকে আর বড়ি খাবেন না এবং পরবর্তী মাসিকের আগ পর্যন্ত কনডম ব্যবহার করবেন বা সহবাস থেকে বিরত থাকবেন ।
যদি খয়েরি বড়ি (২৮টি বড়ির প্যাকেট) খেতে ভুলে যান তবে ঐ পাতা থেকে আর খয়েরি বড়ি খাবেন না এবং নতুন পাতা হতে রোজ একটি করে সাদা বড়ি খেতে শুরু করতে হবে ।
কোনো কারণে স্বামী সাময়িকভাবে বাড়িতে না থাকলে বড়ি খাওয়া বাদ দেয়া যাবে না ।
খাবার বড়ির পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া
খাবার বড়ি ব্যবহারের প্রথম দিকে (৩ থেকে ৪ মাস) ছোটখাটো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে । যেমন-
উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে
স্তন ভারী বোধ হওয়া এবং স্তন স্পর্শ কালে ব্যথার অনুভুতি
দুই মাসিকের মধ্যবর্তী সময়ে ফোঁটা ফোঁটা রক্তস্রাব
বিমর্ষতা দেখা দিতে পারে
বমি বমি ভাব
মাথা ধরা
মুখে ব্রন
ওজন বৃদ্ধি
যে সমস্ত মহিলা মায়োকার্ডিয়াল ইনফারকশন, স্ট্রোক ইত্যাদি-এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে, তাদের ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে দেয়।
ক্লোয়াজম বা গর্ভবস্থার মতো মুখের ত্বকের রঙের পরিবর্তন হতে পারে ।
শিরার রক্ত জমাট বেধে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় । তাই অতীতে বা বর্তমানে যাদের এই সমস্যা হয়েছে, তারা ইস্ট্রোজেন সমৃদ্ধ মিশ্র খাবার বড়ি খেতে পারবেন না ।
খাবার বড়ি কোথায় পাওয়া যায়
আমাদের দেশে সরকারি পর্যায় মাঠকর্মী, কমিউনিটি ক্লিনিক, স্যাটেলাইট ক্লিনিক, ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, জেলা সদর হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং স্বীকৃত এনজিও/ বেসরকারি ক্লিনিক, ফার্মেসিতে খাবার বড়ি পাওয়া যায় ।
সাম্প্রতিক মন্তব্য
#টিপু
আমি নতুন বিয়ে করেছি এখন সন্তান নিতে চাই না মায়া বরি কি ভাবে খাবে? সহবাসের আগে খেলে হবে?