কি কি খাবারে ক্যালসিয়াম আছে-What foods contain calcium?
ক্যালসিয়াম শরীরের অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। এই খনিজ উপাদানটি আমাদের হাড় ও দাঁত শক্ত করে, ক্ষয় রোধ করে। স্নায়ু, হৃদস্পন্দন, মাংসপেশির কাজেও লাগে। কৈশোরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম-জাতীয় খাবার গ্রহণ করলে পরবর্তী সময়ে ক্যালসিয়ামের ঘাটতিজনিত সমস্যাগুলো কম হবে। শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থাকলে হাড়ক্ষয়ের রোগ হতে পারে। তবে হাড়ের যত্নের বিষয়ে আমরা বেশিরভাগ মানুষই খুব উদাসীন। আর হাড়ক্ষয় হলেও আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না।
প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রয়েছে কিছু খাবার, যা হাড়ের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। যেমন লবণ অর্থাৎ সোডিয়াম ক্লোরাইড, সফট ড্রিংকস বা নরম পানীয়। আর চা ও কফির মধ্যে থাকা ক্যাফেইন, অতিরিক্ত প্রোটিন বা প্রাণিজ প্রোটিন ইত্যাদি। প্রাপ্তবয়স্কদের দৈনিক এক হাজার থেকে এক হাজার ৩০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা প্রয়োজন; বয়ঃসন্ধিকালে প্রয়োজন এক হাজার ৩০০ মিলিগ্রাম; শিশুদের ৭০০ থেকে এক হাজার মিলিগ্রাম, নবজাতক বা খুব অল্প বয়সী শিশুদের ২৫০ থেকে ৩০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা প্রয়োজন।
তবে আরও অনেক খাবার রয়েছে, যা খেলে আপনার শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হবে ও হাড় ভালো থাকবে। সাধারণত দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারের মধ্যে দিয়েই মানব দেহের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ হয়।
ক্যালসিয়াম কি-what is calcium
ক্যালসিয়াম হল এক ধরনের ক্ষারীয় ধাতব মৌলিক পদার্থ এবং এই ক্যালসিয়ামের সংকেত হল (Ca)। কোন বাতাসের সঙ্গে মিশে গাঢ় অক্সাইড - নাইট্রাইট এর স্তর তৈরি করা। পৃথিবীতে যতগুলো ভূত্বকের উপাদান রয়েছে তার মধ্যে ক্যালসিয়ামের অবস্থান পঞ্চম। আর ধাতুর দিক থেকে এর অবস্থান নির্ণয় করতে গেলে বলতে হয় অ্যালুমিনিয়াম ও লোহার পরেই এই ক্যালসিয়ামের অবস্থান।
ক্যালসিয়ামের কাজ কি
ক্যালসিয়াম আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পন্ন করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। আরে কারণে ক্যালসিয়ামের কাজ কি অথবা শরীরে ক্যালসিয়ামের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আমাদের জেনে রাখতে হবে। ক্যালসিয়ামের কাজ কি বা ক্যালসিয়ামের প্রয়োজনীয়তা কি সে বিষয়ে আপনার যদি জানা না থাকে তাহলে বিষয় কি জেনে নিতে পারেন। ক্যালসিয়াম আমাদের শরীরে যে সকল গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করে থাকে সেগুলো হলো,
* হাড় গঠনের সহায়তা করে
* দাঁত শক্ত করে
* হাড় ও দাঁতের ক্ষয় রোধ করে
* হার্টবিট স্বাভাবিক রাখে
* মাংসপেশী ও স্নায়ু গঠনে সহায়তা করে
* রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে
* হরমনের মাত্রা ঠিক রাখে
* ব্রেন থেকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে বার্তা পাঠাতে সহায়তা করে ক্যালসিয়াম
* বাত টাইপের রোগ গুলোর হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করে
ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার
ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণের জন্য আমাদেরকে অবশ্যই ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার গুলো গ্রহণ করতে হবে। তাই এবার আমরা ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার গুলো সম্পর্কে জানবো। চলুন তাহলে ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
দৈনিক কিছু পরিমাণ ছোলা বা মটর খাদ্য তালিকায় যুক্ত করার মাধ্যমেও আমরা শরীরের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি এর ঘাটতি পূরণ করতে পারি, কারণ ছোলা বা মটর এর মধ্যেও প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে, এক কাপ ছোলা বা মটর এর মধ্যে থেকে প্রায় ২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া সম্ভব।
কাঠ বাদামে থাকে প্রচুর ক্যালসিয়াম। পুষ্টিবিদরা বলেন, ১০০ গ্রাম কাঠ বাদামে থাকে প্রায় ২৬৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম। তাই নিয়মিত কাঠ বাদাম খেলে তা শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি মেটাতে সাহায্য করে। তবে খুব বেশি খাবেন না। প্রতিদিন কয়েকটি কাঠ বাদামই যথেষ্ট।
দিনে এক বাটি টক দই খাওয়ার অভ্যাস করতে বলেন বিশেষজ্ঞরা। এর অন্যতম কারণ হলো ক্যালসিয়ামের খুব ভালো উৎস এই টক দই। সেইসঙ্গে এতে থাকে প্রচুর প্রোটিনও। নিয়মিত টক দই খেলে তা হার্টের সমস্যা ও ডায়াবেটিস দূরে রাখে। সেইসঙ্গে কমে ওজনও। এক বাটি টক দইয়ে প্রতিদিনের চাহিদার প্রায় ২৩ শতাংশ ক্যালসিয়াম থাকে। এতে আর থাকে ভিটামিন বি২, বি১২, পটাশিয়াম এবং ফসফরাস।
দুধ বা দুগ্ধ জাতীয় খাবার গুলোর মধ্যে থেকেও প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। এক গ্লাস গরুর বা ছাগলে দুধ থেকে দৈনিক ক্যালসিয়ামের চাহিদার প্রায় ৩০০ মিলিগ্রাম পূরণ করা সম্ভব। তবে যারা করতে পারেন না বা দুধ খেলে সমস্যা বেড়ে যায় তাদের এ ব্যাপারে সচেতন থাকা উচত। এক্ষেত্রে আপনারা দুধের পরিবর্তে দই খেতে পারেন। দই খেলে আপনার গ্যাসের সমস্যাও দূর হবে এবং ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও পূরণ হবে।
প্রতি টেবিল চামচ তিল থেকে ৮৮ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ক্যালসিয়াম পাওয়া সম্ভব। এছাড়া এই তিল রক্ত চাপ কমানো, শরীরে জ্বালাপোড়া দূর করা সহ ক্যান্সার প্রতিরোধেও সহায়তা করে থাকে।
চিজ বা ছানা
খাদ্য তালিকায় বা ছানা জাতীয় খাবার যুক্ত করলে আপনি সেখান থেকে পেতে পারেন প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন প্লিজ অথবা ছানা জাতীয় খাবার গুলো মাত্রাতিরিক্ত খেলে শরীরে ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা।
সবুজ শাকসবজি
ক্যালসিয়ামের একটি বড় উৎস হলো সবুজ শাকসবজি। বিভিন্ন ধরনের সবুজ মধ্যে থেকে আপনি পেতে পারেন ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণের উপায়। এসব সবুজ শাকসবজি গুলোর মধ্যে রয়েছে পাতাকপি, ব্রকলি , ফুলকপি ইত্যাদি।
ডিমকে বলা হয় ‘সুপারফুড’। ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং মিনারেলস। প্রোটিনের সব চাইতে ভালো উৎস হচ্ছে ডিম। যা হাড়ের গঠন মজবুত করে। এবং এতে ক্যালোরিও থাকে বেশ কম। তাই হাড়ের সুস্থতায় দিনে অন্তত ১ টি ডিম খাওয়ার অভ্যাস করুন।
সামুদ্রিক মাছ
সামুদ্রিক মাছগুলো ,বিশেষ করে স্যামন জাতীয় মাছ গুলোর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। তাই ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণের জন্য আপনি খাদ্য তালিকায় সামুদ্রিক মাছ যুক্ত করতে পারে।
ডাল জাতীয় খাবার
ডাল জাতীয় খাবার গুলো থেকেও ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় যা শরীরের দৈনিক ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে সয়াবিন , রাজমা এবং ছোলা ও মুগ ডালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এই ডাল জাতীয় খাবার গুলো যুক্ত করুন। এছাড়াও ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার গুলো হল মিষ্টি কুমড়া ,শিম , কচুর লতি , কলার মোচা , সজনে ডাঁটা , মটরশুটি , ঢেঁড়স , টমেটো , মিষ্টি আলু , লেটুস পাতা, পেঁয়াজ , রসুন , লাল শাক, পালং শাক , মেথি শাক ,বিট।
ক্যালসিয়াম জাতীয় ফল
শুধুমাত্র শাকসবজি , ডাল বা দুগ্ধ জাতীয় খাবারই ক্যালসিয়ামের উৎস নয়। বিভিন্ন ফলমূল থেকেও আমরা ক্যালসিয়াম পেতে পারি। এই ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ ফলমূল গুলোর মাধ্যমেও আমরা আমাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে নিতে পারি। আপনার যদি জানা না থাকে ক্যালসিয়াম জাতীয় ফল বা ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ ফল কোনগুলো তাহলে, এই বিষয়টি আপনাকে এখনই জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কোন কোন ফল গুলোর মাধ্যমে আমরা ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে পারি চলুন এবার সেই ফলগুলোর নামের তালিকা জেনে নেয়া যাক। ক্যালসিয়াম জাতীয় ফলগুলো হলো-
* কমলা
* লেবু
* জলপাই
* আপেল
* আলুবোখারা
* লিচু
* আনারস
* পেঁপে
* আম
* বড়ই
* পাতিলেবু
* কলা
* আঙ্গুর
* খেজুর
* আখরোট
* পেয়ারা
* কাঁঠাল
ক্যালসিয়াম অভাবজনিত রোগ
বয়স বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতির সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। আর এটির অভাবে বিভিন্ন অঙ্গ ঠিকমতো কাজ করতে না পারা ছাড়াও অস্টিওপোরোসিস, অস্টিওপেনিয়া এবং হাইপোক্যালসেমিয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হচ্ছে কিনা সেটি নির্ণয় করা জরুরি।
১. পেশতিতে সমস্যা
শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতিযুক্ত ব্যক্তিরা পেশি ব্যথা, ক্র্যাম্প এবং খিঁচুনি অনুভব করতে পারেন। হাঁটাহাঁটি বা নড়াচড়া করার সময় উরু ও বাহুতে ব্যথা ছাড়াও হাত, বাহু, পা ও মুখের চারপাশে অসাড়তাও অনুভব হতে পারে। এ ধরণের সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ক্যালসিয়াম গ্রহন করা উচিৎ।
২. অতিরিক্ত ক্লান্তি
ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হলে তা আপনার চরম ক্লান্তি সৃষ্টি করতে পারে এবং আপনার সব সময় অলসতা বোধ করাতে পারে। এটির কারণে অনিদ্রাও দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া হালকা মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা এবং ব্রেইন ফগও হতে পারে যেটি মনোযোগের অভাব, ভুলে যাওয়া এবং বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে।
৩. নখ ও ত্বকের সমস্যা
ক্যালসিয়ামের দীর্ঘ সময় ধরে থাকলে তা ত্বক শুষ্ক, নখ ভঙ্গুর, চুল মোটা, একজিমা, ত্বকের প্রদাহ, ত্বকের চুলকানি এবং সোরিয়াসিসের মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
৪. অস্টিওপেনিয়া এবং অস্টিওপরোসিস
হাড় ক্যালসিয়াম ভালোভাবে সঞ্চয় করে। আর যখন শরীরে ক্যালসিয়ামের সামগ্রিক মাত্রা কম থাকে, তখন শরীর হাড় থেকে ক্যালসিয়াম শুষে নেয়। এ কারণে হাড় ভঙ্গুর এবং আঘাত প্রবণ হয়ে ওঠে।
এমনটা হতে থাকলে একসময় ক্যালসিয়ামের ঘাটতির কারণে অস্টিওপেনিয়া এবং পরে অস্টিওপোরোসিস হতে পারে। এমন হলে তা হাড়গুলোকে পাতলা করে তোলে এবং ফ্র্যাকচারের ঝুঁকিতে ফেলে।
শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমে গেলে তা দাঁতের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এর কারণে দাঁতের ক্ষয়, দাঁত ভঙ্গুর, মাড়ি খিটখিটে এবং দাঁতের শিকড় দুর্বল হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে।
৬. বিষণ্ণতা
গবেষণায় দেখা গেছে যে, ক্যালসিয়ামের অভাব হলে তা হতাশাসহ মেজাজ খারাপ হওয়ার মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।