গর্ভাবস্থায় মাথা ব্যাথার কারণ ও প্রতিকার - Causes and remedies for headache during pregnancy
গর্ভবতী মায়ের মাথা ব্যাথা একটি সাধারণ ও পরিচিত সমস্যা। হরমোন পরিবর্তন থেকে ভাল ঘুম না হওয়াসহ আরো অনেক কারণে গর্ভাবস্থায় মাথা ব্যাথা হতে পারে। মাথা ব্যথা থেকে একটি পর্যায়ে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে; তবে এগুলো সাধারণত মা এবং নবজাতকের জন্য বিপজ্জনক নয়।
গর্ভাবস্থায় মাথা ব্যথার কারণ কী?
গর্ভাবস্থায় মাথা ব্যথা নয় সপ্তাহের পর থেকে বেশি হয় যখন রক্তের পরিমাণ এবং হরমোন বৃদ্ধি পায়। তবে গর্ভাবস্থায় যেকোনো সময় মাথা ব্যথা শুরু হতে পারে। এমন ধরনের মাথা ব্যথা হতে পারে যা আপনি আগে কখনও অনুভব করেননি। এই মাথা ব্যথা মাথার একপাশে বা উভয় পাশে ঘটতে পারে। জেনে নিন কী কারণে এই মাথা ব্যথা হতে পারে-
রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি
গর্ভাবস্থায় রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি সাইনাসের উপর চাপ বাড়াতে পারে, যার ফলে সাইনাস থেকে মাথা ব্যথা হতে পারে।
ঘুমের ব্যাঘাত
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মাথা ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
পানিশূন্যতা
গর্ভাবস্থা-সম্পর্কিত বমি বমি ভাব হবু মাকে পর্যাপ্ত পানি পান করা থেকে বিরত রাখতে পারে, ডিহাইড্রেশন দেখা দিলে তা মাথা ব্যথার ঝুঁকি বাড়ায়।
ক্ষুধা
যত খাবারই খাওয়া হোক না কেন, হবু মায়ের অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগতে পারে এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যেতে পারে। যা মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে।
হরমোনের ওঠানামা
হরমোনের ওঠানামা গর্ভাবস্থায় মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু করতে পারে।
চিন্তা
ওজন বৃদ্ধি এবং শরীরের পরিবর্তন কাঁধ এবং ঘাড়ে চাপ বাড়ায়, যার ফলে মাথা ব্যথা হয়।
ক্যাফেইন বাদ দিলে
অনেক মহিলা গর্ভাবস্থায় ক্যাফেইন সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করেন, যা মাথা ব্যথা এবং ক্লান্তির কারণ হতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ
প্রিক্ল্যাম্পসিয়া সম্পর্কিত উচ্চ রক্তচাপ মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি দেখা দিতে পারে গর্ভধারণের ২২ সপ্তাহ পরে। আপনি যদি হঠাৎ মাথা ব্যথা অনুভব করেন, যা আপনি আগে কখনও অনুভব করেননি তবে দ্রুত আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
গর্ভাবস্থায় মাথা ব্যথার চিকিৎসা
গর্ভবতী হওয়ার পরে মাথা ব্যাথা কমানোর জন্য বিভিন্ন ঔষধ গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে আপনি চাইলে প্রাকৃতিক উপায়ে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করেও এই ব্যথাটি মোকাবেলার চেষ্টা করতে পারেন। ঔষধের বিকল্প বেশকিছু উপায় রয়েছে, যা কার্যকর ভূমিকা পালন করে। চলুন জেনে নেই।
অন্ধকার ঘরে বিশ্রাম করুন:
মাথা ব্যাথা হলে কিছুক্ষণের জন্য (অন্তত আধা ঘণ্টা) কম আলোময় একটি কক্ষে বিশ্রাম নিন। টিভির ভলিউম কম রাখন বা এটি বন্ধ করুন। চেষ্টা করুন এমন একটি কক্ষে থাকার, যা তুলনামূলক কম কোলাহলপূর্ণ।
মাথায় ঠাণ্ডা সেঁক দিন:
হালকা মাথা ব্যথায় ঠাণ্ডা সেঁক দিলে সেটি ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।[১] এজন্য কিছু বরফের টুকরা একটি তোয়ালে কিংবা গামছায় পেঁচিয়ে নিন। এরপর বিছানায় শুয়ে সেটি কপালের ওপরে দিয়ে রাখুন। এ ছাড়া ফার্মেসি থেকে ‘কোল্ড প্যাক’ কিনে সেটিও কপালে দিয়ে রাখতে পারেন।
গোসল করুন:
যদি আপনি গর্ভাবস্থার কোন সমস্যায় না ভোগেন এবং আপনার ডাক্তার গোসল করতে নিষেধ না করে, তবে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল সেরে নিতে পারেন।
মাথার ত্বক এবং ঘাড় ম্যাসাজ:
ম্যাসাজ মাথা ব্যথা উপশম করতে, রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে এবং শিথিলতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
পানি পান করুন:
পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও তরল খাবার না খেলে আপনি পানিশূন্যতায় ভুগতে পারেন। এ ছাড়াও অতিরিক্ত গরমের জন্য কিংবা শারীরিক পরিশ্রমের কারণে শরীর থেকে পানি বের হয়ে গিয়ে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতার সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। যা থেকে আপনার মাথা ব্যথা শুরু হতে পারে। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও তরল খাবার খাবেন।
চোখের পরীক্ষা করুন:
গর্ভাবস্থায় নারীদের চোখ শুষ্ক হয়ে যায় এবং দৃষ্টিশক্তি পরিবর্তন করে প্রভাবিত করে। তাই অভিজ্ঞ কোন চক্ষু চিকিত্সক চোখের সমস্যাগুলি থেকে মাথাব্যথা উপশম করতে বিকল্প প্রস্তাব দিতে পারেন।
বিশ্রাম নিন:
গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নেওয়া খুবই জরুরি। রাতে অন্তত ৭–৯ ঘণ্টা ভালোমতো ঘুমানোর চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে দিনের বেলাও কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে পারেন।
নারীরোগ বিশেষজ্ঞের সহায়তা নিন:
আপনার মাথা ব্যথা যদি অতিরিক্ত হয়ে থাকে, তাহলে কোন অভিজ্ঞ গাইনী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন এবং তার পরামর্শ গ্রহণ করুন।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?
বেশিরভাগ সময়, মাথাব্যথা হলে খানিকটা সময় বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাবে। তবে কিছু কিছু সময়ে গভীর মাথাব্যথা যা কয়েক ঘন্টার মধ্যে চলে যায় না এবং অবস্থা আরো খারাপ হয়। এমতাবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ না নিলে গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই নিচের সমস্যাগুলো অনুভব করলে আপনার উচিত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া।
যদি আপনার প্রাকৃতিক চিকিৎসা কাজ না করে এবং ঔষধ গ্রহণ করতে হয়।
কোন ঔষধ গ্রহণের পূর্বে এটি আপনার জন্য নিরাপদ কিনা, তা চিকিৎসকের থেকে জেনে নিন।
আপনার যদি জ্বর হয়, নাক বন্ধ হয়ে যায় এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
যদি উচ্চ রক্তচাপ থেকে আপনার মাথা ব্যাথার সূত্রপাত হয়।
মাথা ব্যথার পাশাপাশি অতিরিক্ত বমি বমি ভাব, ঝাপসা দেখা, পেটে ব্যথা বা শরীরে ফোলাভাব হয়।