
পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় - Home remedies for ankle pain relief
মানুষের পায়ে ২৬টি হাড়ের মধ্যে গোড়ালির হাড় সবচেয়ে বড়। যা শরীরের ওজন ধরে রাখতে সাহায্য করে। হাঁটা বা দৌড়ানোর সময় পায়ের ওপর যে চাপ পড়ে সেই চাপের বেশির ভাগটাই বহন করে গোড়ালির হাড়। বিশেষজ্ঞদের দাবি, হাঁটার সময় পায়ের ওপর শরীরের ওজনের ১.২৫ গুণ চাপ পড়ে।
দৌড়ানোর সময় চাপ পড়ে ২.৭৫ গুণ। যার ফলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গোড়ালি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও ব্যথা হয়। এ ছাড়াও অনেক কারণেই গোড়ালিতে ব্যথা হতে পারে।
গোড়ালি ব্যথা কী?
চিকিৎসকদের ভাষায় এই অবস্থাটির নাম প্লান্টার ফাসাইটিস। এতে পায়ের তলায় বিশেষ করে হিল বা গোড়ালিতে খোঁচা দেয়ার মতো ব্যথা অনুভূত হয়। এতে সাধারণত সকালে ঘুম থেকে উঠে পা ফেললে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটির পর ব্যথা কমে আসে।
পায়ের গোড়ালি ব্যথার কারণ
পায়ের গোড়ালি ব্যথার কারণ জেনে নেয়ার আগে এর গঠন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকা দরকার। আমাদের পায়ের সামনের দিকে কিছু ছোট ছোট হাড় পেছনের দিকে গোড়ালি বা হিলের একটি হার এবং মাঝে কিছু হাড় নিয়ে গঠিত। এই হাড়গুলোর মধ্যে সংযোগ রক্ষা করে লিগামেন্টস। সামনের এবং পেছনের হারের সঙ্গে একটি ব্যান্ডের মতো জিনিস দিয়ে সংযুক্ত থাকে। যেটাকে বলে প্লান্টার ফাসা।
আমাদের শরীরের ওজন যেন সরাসরি আমাদের পায়ের হাড়ের ওপরে চাপ প্রয়োগ করতে না পারে এ জন্য এই ব্যান্ডটি আমাদের শক এবজরবারের মতো কাজ করে। এই ব্যান্ডে যদি কোনো ইনফ্লামেশন হয় তাহলে পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা অনুভূত হয়। আমাদের শরীরের ওজন বেশি হলে বা দীর্ঘ মেয়াদী কোনো চাপ থাকলে এই ব্যান্ড বা ফাসাতে ছোট্ট টিয়ার বা ইনজুরি হয়। প্রথমদিকে ব্যথা কম থাকায় এটা অনুভুত কম হয় এবং হাঁটাহাঁটি অব্যাহত থাকে। শুরুর ব্যথা আমলে না নিলে ইনজুরি গভীর হয়ে দীর্ঘ মেয়াদী ব্যথায় পরিণত হয়। তখন এটিকে বলে প্লান্টার ফাসাইটিস।
পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়
তবে কিছু প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে চললেই কিন্তু গোড়ালির ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কীভাবে আসুন জেনে নেওয়া যাক
বরফ
শারীরিক পরিশ্রম করার ১৫ মিনিট আগে গোড়ালির যে স্থানে ব্যথা হয় সেখানে বরফ ধরে রাখতে পারেন। প্রয়োজন অনুযায়ী বার বার বরফ ব্যবহার করা যাবে। বরফ ব্যবহার ক্যালসিয়াম জমে যাওয়া অংশটির চারপাশের কোষকলায় প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
অ্যাপল সাইডার ভিনিগার
এই টকজাতীয় তরল মাখানোর মাধ্যমে গোড়ালিতে জমে থাকা ক্যালসিয়ামের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া বলে মনে করা হয়। অ্যাপল সাইডার ভিনিগারে এক টুকরা ব্যান্ডেজের কাপড় ডুবিয়ে আক্রান্ত গোড়ালির উপর বসিয়ে বেঁধে রাখা যেতে পারে। এই পদ্ধতি ব্যবহারের সময় বিশ্রামে থাকলে ভালো উপকার মিলবে।
বাঁধাকপির পাতা
প্রদাহরোধকারী উপাদানযুক্ত বলে পরিচিত বাঁধাকপির পাতা আক্রান্ত গোড়ালিতে বেঁধে রেখেও ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। ব্যবহারের আগে পাতাটিকে সামান্য গরম করে নরম করে নিয়ে লাগাতে হবে। শুকিয়ে গেলে তা পরিবর্তন করে নতুন পাতা লাগাতে হবে।
বেইকিং সোডা
বেইকিং সোডায় কয়েক ফোঁটা পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে আক্রান্ত স্থানে মাখিয়ে রেখে ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আক্রান্ত স্থানে পেস্ট মাখানোর পর এক টুকরা পরিষ্কার ব্যান্ডেজের কাপড় তার উপর বসিয়ে বেঁধে দিতে হবে।
নারিকেল তেল
আক্রান্ত স্থানে নারিকেল তেল সামান্য গরম করে মালিশ করলে উপকার পাওয়া যায়। গোড়ালিতে জমে থাকা বাড়তি ক্যালসিয়াম গলিয়ে ফেলতে সাহায্য করে এই তেল। পাশাপাশি ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে।
ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড
স্বাস্থ্যকর ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের শক্তিশালী প্রদাহরোধকারী উপাদান গোড়ালির ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে পারে। এজন্য ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট কিংবা তেলযুক্ত সামুদ্রিক মাছ খাওয়া যেতে পারে।
তিসির তেল
গোড়ালির হাড় বেড়ে যাওয়ার চিকিৎসায় ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত এই তেল ব্যবহা করা যেতে পারে। এক টুকরা ব্যান্ডেজের কাপড় বা সাধারণ কাপড় তিসির তেলে ডুবিয়ে আক্রান্ত স্থানে তোয়ালে বা প্লাস্টিকের কাগজ দিয়ে বেঁধে রাখলে উপকার পাওয়া যায়।
গোড়ালি ব্যথার ব্যায়াম
মেঝেতে বা চেয়ারে বসে যেকোনো এক পা সোজা রাখুন। এবার একটি বড় ফিতা পায়ের পাতার সামনের দিকে আটকে দিয়ে দুই প্রান্ত দুই হাত দিয়ে ৩০ সেকেন্ড ধরে হালকা চাপে রাখুন বা টানুন। এভাবে উভয় পায়ে করুন।
আধা লিটার পানির বোতল পুরোপুরি বরফ জমাট করে পায়ের নিচে রেখে রোল করতে হবে ৩০ সেকেন্ড।
হাত দিয়ে পায়ের পাতায় ম্যাসেজ করে দিতে হবে, কেন্দ্র থেকে বাইরের দিকে।
সিঁড়িতে পায়ের পাতার সামনের দিকের অংশ রেখে বাকি অংশ বাইরে রেখে যেকোনো এক পায়ের ওপর ভারসাম্য রেখে দাঁড়াতে হবে ৩০ সেকেন্ড।
রোগ নির্ণয় পদ্ধতি
মূলত ব্যথা নিয়ে যারা কাজ করেন সেই সব চিকিৎসক দেখে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে পারেন। তবে হাড় ভাঙা ও অন্যান্য কারণ অলাফা করার জন্য এক্স রে ও এম আর আই করা যেতে পারে।
গোড়ালি ব্যথায় চিকিৎসা পদ্ধতি
প্রাথমিক চিকিৎসা
RICE
R- Rest
I – Ice pack
C- Compression
E- Elevation
ঔষধ: প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ খাওয়া যেতে পারে ৫-৭ দিন।
দীর্ঘ মেয়াদী ব্যথার চিকিৎসা
যে সব প্লান্টার ফাসাইটিসের ব্যথা প্রাথমিক চিকিৎসা ও সতর্কতা এর মাধ্যমে যায় না, তাদের ক্ষেত্রে ট্রিগার পয়েন্ট ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে স্টেরয়েড প্রয়োগ করে সাময়িকভাবে ব্যথা কমানো যায়।
ফিজিওথেরাপি: বেশ কিছু ফিজিওথেরাপি এখানে কাজ করে যেমন আল্ট্রাসাউন্ড, ESW থেরাপি ও ম্যাসেজ। এসব ক্ষেত্রে ব্যথা নিরাময়ে কিছু সময় লাগে।
তবে ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে পায়ে রক্ত চলাচল বাড়ে। লিগামেন্ট ও ফাসাগুলো নিউট্রিশন পায়। নিয়মিত সপ্তাহ খানিক ফিজিওথেরাপি করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
পিআরপি: দীর্ঘ মেয়াদী ও জটিল প্লান্টার ফাসাইটিস এর ক্ষেত্রে পিআরপি খুবই ভালো কাজ করে। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত নিয়ে মেশিনে দিয়ে রক্ত কণিকা আলাদা করে এই পিআরপি তৈরি করা হয়। এই পিআরপি