মাথা ব্যাথা দূর ঘরোয়া চিকিৎসা - Home remedies for headache
আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হোক বা কাজের চাপ, অল্পতেই মাথা ধরে অনেকের। ব্যস্ততার মধ্যে বিশ্রাম নেয়ার অবকাশও খুব একটা মেলে না। তাই মাথা ধরলেই ঘুমানোর ফুরসত সকলের মেলে না। তবে মাথা ধরলে বেদনানাশক ওষুধ খাওয়া মোটেও কাজের কথা নয়। এসব ওষুধের অল্পবিস্তর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে, সেই সাথে শরীরের ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
মাথাব্যথার কারণ
মাথাব্যথা মানে শুধুমাত্র মাইগ্রেন নয়। একাধিক কারণে মাথাব্যথা হয়ে থাকে। কেন মাথাব্যথা হচ্ছে তার কারণ সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারলে এ ব্যথা উপশমের চিকিৎসা সম্ভব হতে পারে। আরাম পাবেন আপনি।
মাথার একপাশে: মাইগ্রেন
যদি মাথাব্যথা আপনার মাথার একপাশে (মাথার বামপাশ অথবা ডানপাশ) হয় এবং মাথায় স্পন্দন অনুভূত হয়, তাহলে তা মাইগ্রেনের লক্ষণ হতে পারে। মাইগ্রেনে ভোগার এক ডজনেরও বেশি কারণ রয়েছে, পরিত্রাণ পাওয়া খুব একটা সহজ নয়।
মাইগ্রেনের ব্যথা তীব্র হয় এবং কার্যক্রমে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। যত দ্রুত সম্ভব মাইগ্রেনের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কাজ থেকে বিরত থাকতে এবং বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। এই ব্যথা নির্মূল হয় না। তবে সতর্ক ও পর্যবেক্ষণের মধ্যেই থাকা উচিত।
মাথার চারদিক জুড়ে: টেনশন হেডেক
মানসিক চাপে মাথাব্যথাকে টেনশন-টাইপ হেডেক বা দুশ্চিন্তাজনিত মাথাব্যথা বলা হয়। এ ব্যথায় আঁটসাট যন্ত্র মাথার চারদিকে চেপে আছে বলে মনে হয়।
মুখমণ্ডলে: সাইনাস হেডেক
যদি আপনি চোখে এবং গালে চাপ অনুভব করেন, তাহলে তা সাইনাস হেডেকের লক্ষণ বলে ধরে নিতে পারেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সাইনাস হেডেক খুব বিরল এবং প্রায়সময় তা আসলে মাইগ্রেন, যার কারণে মুখমণ্ডলে ব্যথা হতে পারে।
হঠাৎ মাথার যেকোনো অংশে: থান্ডারক্ল্যাপ হেডেক
অথান্ডারক্ল্যাপ হেডেকের ক্ষেত্রে মাথার ভেতর বজ্রাঘাত অনুভূত হয়। এ ব্যথা তীব্র হয়, কমপক্ষে পাঁচ মিনিট থাকে এবং আপনি হয়তো জানতেও পারবেন না কেন তা হচ্ছে। মাথাব্যথার প্রকারভেদের মধ্যে এ ধরনের মাথাব্যথা বিপদাশঙ্কার নির্দেশ করতে পারে। আপনার যদি এরকম মাথাব্যথা হয়, তাহলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।
চোখের পিছনে: ক্লাস্টার হেডেক
যদি আপনি অনুভব করেন যে চোখের পিছন থেকে কোনোকিছু আপনাকে খোঁচা দিচ্ছে, তাহলে তা ক্লাস্টার হেডেকের লক্ষণ হতে পারে। মাথাব্যথাকে সুইসাইড হেডেকও বলে। কারণ এতে ব্যথা খুব তীব্র হয়। এটি প্রায়ক্ষেত্রে নারীদের চেয়ে পুরুষদের বেশি প্রভাবিত করে। ব্যথার সঙ্গে চোখে লাল ভাব, চোখ থেকে জল পড়া, ক্লান্তি আসবে।
মাথার উপরিভাগে বা মুখমণ্ডলের উপরিভাগে: অ্যালার্জি হেডেক
অ্যালার্জি হেডেক সাইনাসের সঙ্গে সম্পর্কিত হলেও তা ঋতুভিত্তিক হয়ে থাকে সঠিকভাবে এ সমস্যা শনাক্ত করতে ডাক্তার থেকে ডায়াগনোসিস করা উচিত।
মাথার যেকোনো অংশে ব্যথা
যদি কাজকর্মের সময় বা পরে শ্রমসংক্রান্ত মাথাব্যথা হয়ে থাকে। ব্যায়াম বা অনুশীলন কিংবা উত্তেজনা বা কামোত্তেজনায় বেড়ে যেতে পারে। এতে তীব্র মাথাব্যথা, এক-পার্শ্বস্থ মাথাব্যথা, স্পন্দিত মাথাব্যথা, একটানা মাথাব্যথা এবং বমি বমি ভাব দেখা যায়।
কপাল বা মাথার একপাশে: এয়ারপ্লেন হেডেক
আকাশপথে ভ্রমণের সময় মাথার একপাশে ব্যথা অনুভূত হতে থাকে, যাকে এয়ারপ্লেন হেডেক বলে। আকাশপথে ভ্রমণ খুব একটা কঠিন না হলেও গবেষণায় পাওয়া গেছে যে, প্রতি ১২ জনের একজন লোক এয়ারপ্লেন হেডেকে ভোগে।
ঠান্ডায় মাথা ব্যথা
ঠান্ডা লেগে মাথা ব্যাথা করা মাথা ব্যথার কারণ গুলোর মধ্যে একটি। সর্দি ও জ্বর হলে মাথা ব্যথা হতে পারে। সর্দিতে নাকের সাইনাসে ইনফেকশন বা সাইনোসাইটিক হয় যার কারনে মাথা ব্যথা হয়। এক্ষেত্রে মেন্থল বাষ্প বেশ উপকারে আসে। নাকের জ্যাম ও মাথা ব্যথা দূর করতে মেন্থল বাষ্প নিতে পারেন। আদার রস, মধু, তুলসী পাতা একসাথে মিশিয়ে চা বানিয়ে পান করলে সর্দি উপশম হবে এবং মাথা ব্যথা দূর হবে।
প্রাকৃতিক উপায়ে মাথাব্যথা দূর করুন
কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করলে অসহ্যকর মাথা ব্যথা থেকে আরাম মিলবে সহজেই।
আকুপ্রেশার
বহুবছর ধরে মাথা ব্যথা দূর করতে অনেকেই আকুপ্রেশার পদ্ধতি ব্যবহার করে আসছেন।এই ছোট্ট ঘরোয়া পদ্ধতিটি আপনাকে এক মিনিটের মধ্যে মাথা ব্যথা সারাতে সাহায্য করবে। বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি এবং তর্জনির মাঝখানের অংশে অন্য হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তর্জনি দিয়ে চাপ দিন এবং ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ম্যাসাজ করুন। একই ভাবে ডান হাতেও করুন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, আশা করা যায় এতে এক মিনিটেই মাথা ব্যথা সারবে।
চা-কফি
চা বা কফিতে উপস্থিত ক্যাফেইন মাথা যন্ত্রণা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। চায়ে আদা-লবঙ্গ ও মধু মিশিয়ে খেলে মাথা যন্ত্রণায় আরাম পাওয়া যায়।
পানি পান করুন
অপর্যাপ্ত হাইড্রেশন আপনার মাথা ব্যাথার কারণ হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী ডিহাইড্রেশন হলে টান মাথা ব্যাথা এবং মাইগ্রেন ঘটা একটি সাধারণ কারণ।
পানীয় জল বেশিরভাগ ডিহাইড্রেটেড ব্যক্তিদের মাথা ব্যথা ৩০ মিনিট থেকে তিন ঘন্টার মধ্যে উপশম করার ক্ষমতা রাখে। ডিহাইড্রেট হলে মনোযোগ নষ্ট করতে পারে এবং বিরক্তির কারণ হতে পারে যা ধীরে ধীরে আপনার লক্ষণগুলো আরও খারাপ হতে পারে। ডিহাইড্রেশন মাথাব্যথা এড়াতে সহায়তার জন্য, সারা দিন পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং জলের সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার উপর মনোনিবেশ করুন।
কাঠ বাদাম খান
সবচেয়ে সহজ ও সুবিধা জনক প্রতিকার হচ্ছে কাঠ বাদাম। কাঠবাদাম বা আমন্ড এ সেলিসিন থাকে যা ব্যথা উপশমে কাজ করে। যখনই মাথাব্যথা শুরু হবে একমুঠো আমন্ড খান। কাঠ বাদাম স্বাস্থ্যকর এবং অন্য ঔষধের চেয়ে নিরাপদ।
তুলসি
কয়েকটি তুলসি পাতা নিয়ে হাতে ঘোষে কপালে লাগিয়ে ফেলুন। আরাম পাবেন। কারণ এই পাতাটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান, যা এই ধরনের কষ্ট কমাতে দারুন কাজে আসে।
হাসুন
হালকা মাথা ব্যথা উপশমে হাসি বেশ উপকারী। হাসলে ভালো লাগার অনুভূতি সৃষ্টিকারী হরমোন এন্ড্রোফিন হরমোন মস্তিষ্কে নিঃসৃত হয়। এন্ড্রোফিন মাথা ব্যথা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।
পর্যাপ্ত ঘুম
একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের দিনে ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। যদি ঘুমের সমস্যা হয় এবং পর্যাপ্ত সময় ঘুম না হয় তখন মাথা ব্যথা হতে পারে।
গরম পানিতে পা ভিজানো
এটা কিছুটা অদ্ভুত মনে হবে, তবে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, কিছু সময়ের জন্য গরম পানিতে পা ভিজিয়ে রাখলে মাথাব্যথা ও টেনশন দূর হয়। এতে পায়ের পাতার রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং মাথার রক্ত নালিকা গুলোর চাপ কমে। পানির মধ্যে সামান্য সরিষার গুঁড়া মিশিয়ে নিতে পারেন।
সাম্প্রতিক মন্তব্য
#MD Ebadat
আপনাদের সিরাপ ১০০% বিশুদ্ধ এবং এটার কোনো সাইড ইফেক্ট নেই এটা কিভাবে বুঝতেপারবো