
পায়োরিয়া রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা - Home Remedies for Pyorrhea
পায়োরিয়া দাঁতের মারাত্মক রোগ। এতে দাঁতের গোড়ায় মাড়িতে দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজ হয়ে যায়। প্রথম অবস্থায় দাঁতের গোড়া ফুলে ওঠে, মাড়ি লাল হয়ে যায়। মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়তেও দেখা যায়। এতে মুখে প্রচন্ড দুর্গন্ধ হয়, মুখের স্বাদ নষ্ট হয়। জিভে নোংরা ভাব হয়। দাঁত বা মাড়ি ছুঁলে ব্যথা লাগে।
মনে রাখবেন, বাচ্চাদেরও দাঁতের নানা উপসর্গ থাকে যেমন, দাঁতের গোড়া ফোলা, দাঁত ব্যথা ইত্যাদি এসব কিন্তু পায়োরিয়া নয়, এই রোগ সাধারণত বয়স্কদেরই হয়।
দাঁতের গোড়ায় খাদ্যকণা জমে পচে গিয়ে পায়োরিয়া রোগ হয়। এই রোগীদের প্রায়ই কোষ্টকাঠিণ্য থাকতে দেখা যায়। পাচনতন্ত্রে গলযোগ দেখা দেয়। দাঁতের গোড়া থেকে নির্গত পুঁজ থেকে গলা, মুখ ও পড়ে ফুসফুসেও অন্য রোগ দেখা দিতে পারে। সহজ কথায়, পায়োরিয়া রোগ, শরীরের অন্যান্য রোগাক্রমনের পথ করে দেয়।
মাড়ির রোগ বা পায়োরিয়া কি
পায়োরিয়া (মাড়ি রোগ হিসেবেও পরিচিত) হলো দাঁতের একধরনের রোগ যা দাঁতের আশেপাশের কোষকলাকে আক্রান্ত করে। এটির প্রথম স্তরে, এটিকে গিঙ্গিভিটিস বলা হয়, যখন মাড়ি ফুলে যায়, লাল হয় এমনকি রক্তও পড়তে পারে।[৩] এটির গুরুতর অবস্থাকে বলা হয় "পেরিয়োডোন্টিটিস", এসময় মাড়ি দাঁত থেকে সরে যেতে পারে, হাঁড় ক্ষয় হয় এবং দাঁতও পড়ে যায়। মাঝে মাঝে মুখের শ্বাসে দুর্গন্ধও থাকতে পারে।
পায়োরিয়া সাধারণত দাঁতের চারপাশের কোষে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে হয়। এ অবস্থায় ঝুঁকি হলো ধূমপান করা, যাদের বহুমূত্ররোগ রয়েছে, এইডস আক্রান্তদের এবং কিছু ওষুধে।
কারণ
মাড়ির আনাচে কানাচে খাদ্যকণা আবরণের ন্যায় জমা হয়ে প্লাগ তৈরি করে ৷ এই প্লাগের মধ্যে রোগ জীবাণু জমা হয়ে মাড়ির সংক্রমণ সৃষ্টি করে৷ যা ধীরে ধীরে মাড়ির স্বাস্থ্য নষ্ট করে মাড়িকে দুর্বল করে দেয় ৷ যারা পান-জর্দাখান এবং ধূমপান করেন তাদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি ৷ এছাড়া ডায়াবেটিস রোগীরাও মাড়ির রোগে বেশি আক্রান্ত হয় ৷
লক্ষণ
পায়োরিয়ার খুব অল্প সংখ্যক লক্ষণ থাকে, এবং দেখা যায় চিকিৎসা করার পূর্বে রোগটি ব্যাপক মাত্রায় পৌঁছে যায়। তবে ভুলের কারনে চিকিৎসা না নিলে ইনফেকশন হয়ে যায়।
দাঁত মাজার সময় বা শক্ত খাবারে কামড় দেওয়ার সময় মাড়ি লাল হয়ে যাওয়া বা রক্ত পড়া।
মাড়ি ফুলে যাওয়া।
দাঁতের নিচে মাড়িতে গা হয়ে ফেটে যায়। মাঝে মাঝে রক্ত ঝড়া।
দাঁত মাজার পর থুতুর সাথে রক্ত ঝড়া।
দুর্গন্ধযুক্ত নিঃশ্বাস এবং মুখের মাঝে দাতব স্বাদ পাওয়া।
মাড়ি নেমে যাওয়া ও দাঁতকে বড় মনে হওয়া (জোড়ে-জোড়ে দাঁত মাজার কারণেও এরকম হতে পারে)।
দাঁত দুর্বল হয়ে যাওয়া (যদিও অন্যান্য দন্ত্য সমস্যাতেও এরকম হতে পারে)।
প্রতিরোধ
পায়োরিয়া এড়াতে দৈনিক যেসকল নিয়ম বজায় রাখতে হবে:
নিয়মিত দাঁত মাজা (দৈনিক কমপক্ষে দুইবার), মাড়ির আনাচে-কানাচে ব্রাশকে নিয়ে গেলে ব্যাকটেরিয়া-জীবাণু এবং প্লাক তৈরি হতে পারবেনা।
আঁকা বাঁকা দাঁত থাকলে তা পরিষ্কারে অসুবিধা হয়৷ তাই সেগুলোকে চিকিৎসকের মাধ্যমে স্বাভাবিক অবস্থানে নিয়ে আসতে হবে ৷
প্রচুর পরিমাণে মিষ্টি/চিনিযুক্ত খাবার (বিশেষ করে বাচ্চাদের চুয়িংগাম, লজেন্স, চকলেট) খেলে কুলি করতে হবে ৷
প্রচুর ফল ও শাক-সবজি খেতে হবে ৷
কৃত্রিম দাঁতের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যা করতে হবে ৷
দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়লে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে ৷
দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা খাদ্যকণা টুথব্রাশের সঙ্গে বের না হলে জীবাণুমুক্ত শলাকা ব্যবহার করে সেগুলো পরিষ্কার করতে হবে ৷
প্রতিদিন কিছু ক্যালসিয়াম, লৌহ,ভিটামিন সমৃদ্ধ ফলমূল ও শাক-সবজি খেতে হবে যেমন-আমলকি, পেয়ারা,জাম্বুরা, আখ, কমলা, লালশাক,পালংশাক, কচুশাক, পুঁইশাক ইত্যাদি ৷
ধূমপান বর্জন করতে হবে ৷ কারণ ধূমপানের ফলে দাঁত ও মাড়ির রঙ বদলে যায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়৷ ফলে খুব সহজেই দাঁতের মাড়ি সংক্রমিত হতে পারে ৷
পান সুপারি, জর্দা, সাদাপাতা খাওয়া এবং দাঁতের গোড়ায় গুল লাগানো বন্ধ করতে হবে ৷ কারণ এগুলো থেকে মুখের ভেতর ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ৷
নিয়মিত দন্ত্য-পরীক্ষা এবং দাঁত পরিষ্কার করা প্রয়োজনীয়: নিয়মিত দাঁতের পরীক্ষা করলে মানুষের মুখের ভেতরের অবস্থা জানা যায় এবং পায়োরিয়ার পূর্ব লক্ষণ শনাক্ত করা যায় ও ব্যবস্থা নেয়া যায়।
ঘরোয়া চিকিৎসা
(১) লেবুর রস মাড়িতে মালিশ করলে পায়োরিয়া রক্ত পড়া বন্ধ হয়।
(২) পিপুল বা বটের নরম বাকল বেঁটে জলে ফুটিয়ে সেই জলে কুলি করলে, গার্গল করলে পায়োরিয়া প্রশ্রমিত হয়।
(৩) গাওয়া ঘিএর সঙ্গে কর্পূর মিশিয়ে সকাল বিকাল দাঁতে মালিশ করলে পায়োরিয়া দাঁতের যন্ত্রনা কমে যাবে।
(৪) সরিষার তেলের সঙ্গে লবন মিশিয়ে দাঁত মাজলে পাওরিয়াতে উপকার পাওয়া যায়।
(৫) তিল তেল অনেক্ষন মুখে রেখে কুলি করলে পায়োরিয়া নির্মূল হয়। এতে দাঁত মজবুত হয়। নড়া দাঁতও বসে যায়।
(৬) পটলের পাতা, কচু, গোলমরিচ, পিপুল, ও সৈন্ধব লবন একসঙ্গে মিশিয়ে ফুটিয়ে পাচন তৈরি করে ছেঁকে নিতে হবে। ঠান্ডা হলে জল দিয়ে দুই বেলা কুলকুচি করতে হবে। একসপ্তাহের মধ্যেই পায়োরিয়া দূর হবে।
(৭) পেয়ারা পাতা জলে ভালো করে ফুটিয়ে নিতে হবে পাতা সেদ্ধ হয়েছে জলটা যখন ঘন হয়ে যাবে তখন নামিয়ে নিতে হবে। এটা হলো পেয়ারা পাতার কাথ। এটা দিয়ে বার বার কুলকুচি করলে দাঁত ব্যথা দাঁতের যন্ত্রনা নিবারণ হয়। দাঁত সুরক্ষিত থাকে।
গর্ভাবস্থায় চিকিৎসা
এ ক্ষেত্রে গাইনি ডাক্তারের উচিত পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম দেওয়া ও রোগীকে তার মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার রাখার পরামর্শ দেওয়া। যাতে মাড়িটা ফুললেও ক্ষতি করতে না পারে। এ ছাড়া ক্যালসিয়ামের জন্য প্রতিদিন এক লিটার পরিমাণ দুধ খেতে হবে। পেয়ারার পাতা ও নিমপাতা সেদ্ধ করে কুলি করার মতো গ্রাম্য চিকিৎসাও কিন্তু এ ক্ষেত্রে বেশ উপকারী।