
জিহ্বা অথবা ঠোঁটে ঘা হলে করণীয় কি?
মুখের ভেতরে যেমন-জিহ্বায়, মাড়িতে বা ঠোঁটের ভেতরে অনেকেরই ঘা হয়। যাকে বলা হয় মাউথ আলসার। খুবই যন্ত্রণাদায়ক এই ঘা হলে আক্রান্ত স্থান লালচে বা সাদাটে হয়ে ফুলে যায়। প্রায়ই হয়তো অনেকে এই সমস্যায় ভোগেন। তবে তারা ঠিক বুঝতে পারেন না এমনটি কেন ঘটে! মাউথ আলসার হওয়ার কয়েকটি অন্যতম কারণ হলো- ভিটামিনের ঘাটতি, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট খারাপ, কম পানি পান করা, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি।
আবার শরীরে ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের ঘাটতি দেখা দিলেও এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই অবস্থায় ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের ট্যাবলেট খেলে সমস্যা কমে। মাউথ আলসার অনেক সময় ক্যানসারেরও লক্ষণ হতে পারে। তাই দীর্ঘদিন এই সমস্যা অবহেলা করা উচিত নয়।
মুখের ঘা সেরে উঠবে এই ঘরোয়া টোটকায়
চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী প্রায় ২০০ রোগের প্রাথমিক লক্ষণ প্রকাশ পায় মুখগহ্বরের ঘা থেকে। এমন কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে যা মুখের ঘা-এর ক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী। এবার জেনে নিন এই উপায়গুলো:
যষ্টিমধু
মুখের ঘা সারাতে যষ্টিমধু বেশ কার্যকর। এক টেবিল চামচ যষ্টিমধু দুই কাপ পানিতে দুই থেকে তিন ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন। এটি দিয়ে দিনে কয়েকবার কুলকুচি করুন। যষ্টিমধুর অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরী এবং অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল উপাদান মুখের ঘা ভাল করে থাকে।
গ্লিসারিন-ফিকারি
প্রতিদিন কয়েকবার ফিটকিরির সাথে গ্লিসারিন মিশিয়ে মিশ্রণটি মুখের ঘা এর স্থানে লাগান। এই পদ্ধতিটি বেশ কার্যকরী।
টি-ব্যাগ
এই রোগের ক্ষেত্রে খুব সহজ ঘরোয়া উপায় হল টি-ব্যাগ। এটি দ্রুত ব্যথা এবং ইনফ্লামেশন দূর করে। একটি টি-ব্যাগ ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে সেটি ঘায়ের স্থানে লাগান। সঙ্গে সঙ্গে আপনার ব্যথা কমিয়ে দিবে।
লবণ
এক কাপ গরম পানিতে এক চিমটি লবণ ফেলে কুলকুচি ও গার্গল করুন। এতে ঘা হওয়া জায়গাটি তাড়াতাড়ি সেরে উঠবে। খাওয়ার আগে কুলকুচি করলে বেশি ফল পাবেন।
নারিকেল তেল
সহজলভ্য নারিকেল তেল দিয়ে মুখের ঘা দূর করা সম্ভব। একটু তুলার সঙ্গে নারকেল তেল লাগিয়ে সেটি মুখের ঘায়ের স্থানে লাগান। নারিকেল তেলের অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল উপাদান ঘা সারিয়ে তুলতে সাহায্য করবে।
টমাটো
খাবারের সঙ্গে পাতে কাঁচা টমাটো খাওয়া অভ্যাস করুন। কয়েক দিন খেলেই মুখের ভেতরের ঘা সেরে যাবে।
তুলসি পাতা
কয়েকটি তুলসি পাতাসহ দিনে তিন থেকে চারবার পানি পান করুন। এটি দ্রুত মুখের ঘা প্রতিরোধ করবে এবং মুখে ঘা হওয়ার প্রবণতা কমিয়ে দিবে।
বেকিং সোডা
এক চা চামচ বেকিং সোডা অল্প পানিতে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। এই পাতলা পেস্টটি মুখের ঘায়ের স্থানে লাগিয়ে নিন। এটি দিনে কয়েকবার করুন। এছাড়া বেকিং সোডা সরাসরি মুখের ঘায়ের স্থানে লাগাতেও পারেন।
মধু
তুলার সঙ্গে মধু লাগিয়ে নিন। এবার এটি মুখের ঘায়ের স্থানে লাগান। ব্যথার কষ্ট কমে আসবে।
অ্যালোভেরা
শুধু চুলে কিংবা ত্বকের যত্নের অ্যালোভেরা ব্যবহৃত হয় না বরং মুখ এর ঘা সারানোর জন্য অ্যালোভেরা বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করে। কয়েকটি তাজা অ্যালোভেরার রস মিশ্রণ করে তা মুখের ঘা এ লাগিয়ে রাখুন দেখবেন এতে দ্রুত ঘা সেরে যাবে।
জিহ্বা অথবা ঠোঁটে ঘার কারণ
১) যেকোনো প্রকার অ্যাসিডিক ফল খেলে এই রোগ হবার সম্ভাবনা থাকে। যেমন কমলা, লেবু, আনারস, স্ট্রবেরি ইত্যাদি। তবে এগুলো খেলে যে এ রোগ হবেই এমনটা নয়। অনেক সময় এর গায়ে এক ধরনের পর্দা বা আবরণ থাকে যার কারণে এই রোগ হবার সম্ভাবনা থাকে।
২) আমাদের মুখে এক ধরনের কোমল টিস্যু থাকে কোন কারণে এই টিসু ক্ষতিগ্রস্থ হলে এটি হবার সম্ভাবনা থাকে।
৩) যে কোন প্রকার মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে গেলে এ রোগ হবার সম্ভাবনা থাকে।
৪) সোডিয়াম লরেল সালফেট যুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে এটি হবার সম্ভাবনা থাকে।
৫) যদি কোন খাবারে অ্যালার্জি থাকে তবে এ রোগ হতে পারে।
৬) সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ধূমপান করলে এটি হবার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি থাকে।