প্যানিক ডিজঅর্ডার চিকিৎসা - Panic Disorder Treatment
নিক ডিজঅর্ডার একধরনের মানসিক রোগ। এই রোগে ব্যক্তি প্রচণ্ড রকম আতঙ্কের শিকার হন। এখানে একটি প্যানিক অবস্থা তৈরি হয়। অনেক সময় এর কারণ আমরা জানি না। আবার অনেক সময় হয়তো কারণ থাকে, কোনো চাপজনিত কারণ থাকে। তবে হঠাৎ করে হতে পারে। দেখা গেল একজন মানুষ প্রতিদিনের কাজ করছেন, হঠাৎ করে বুক ধড়ফড় করা, দম বন্ধ হয়ে আসা মনে হয় যে আমি অজ্ঞান হয়ে যাব, অথবা আমি মারা যাব, অথবা আমি মারা যাচ্ছি এ রকম একটা অবস্থা তৈরি হয়। একটি প্যানিক অবস্থা তৈরি হয়। এটি যদি একজন মানুষের মাসে অন্তত চারবার হয়, অথবা একবার হওয়ার পর যদি সব সময় মনে একটি ভয় থাকে, আবার যেন কোনো সময় হয় এবং আমি বোধহয় মরে যাব। আমি বোধ হয় অজ্ঞান হয়ে যাব। তাহলেই সেটি প্যানিক ডিজঅর্ডার হয়। এখানে একটি কথা রয়েছে। অবশ্যই এই সমস্যাটি শারীরিক সমস্যার কারণে হচ্ছে না। যদি শারীরিক সমস্যার কারণে হয় তখন ওই নির্দিষ্ট রোগের দিকে চলে যাবে। যেমন : থাইরয়েড হরমোনের কারণে এটা হতে পারে বা অন্য কোনো কারণে হতে পারে। তাই আমাদের বুঝতে হবে যেই সমস্যাটি হচ্ছে সেটি থাইরয়েডের কারণে নয়।
প্যানিক অ্যাটাক ও প্যানিক ডিসঅর্ডার কি?
প্যানিক অ্যাটাক হলো আকর্ষিক তীব্র ভয় ও অস্বস্তিতে নিমজ্জিত হয়ে যাওয়া। এই সমস্যাটি তুলনামূলক কম তীব্র ভাবে শুরু হয় ও ধীরে ধীরে সমস্ত শরীর ও মনকে গ্রাস করতে থাকে। অল্প কিছু সময় যা ভয়াবহ আকার ধারণ করে ও সর্বচ্চ ১০ মিনিট স্থায়ি হয়। এর উপসর্গ এত বিশ্রী রকম তীব্র যে, মনেহয় আপনি মারা যেতে চলেছেন! হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, ঘেমে যাওয়া, দম আটকে আসা, সারা শরীর কাঁপা, বুকে ব্যাথা, নিয়ন্ত্রন হারানোর মত উপসর্গ প্যানিক অ্যাটাক রোগীকে নারকীয় অনুভূতি প্রদান করে।
প্যানিক ডিসঅর্ডার হলো বারবার প্যানিক অ্যাটাক হবার রোগ। কারো এক দুবার প্যানিক অ্যাটাক হলে তাকে প্যানিক ডিসঅর্ডার বলা যায় না বরং যারা প্রত্যহ প্যানিক অ্যাটাক এর সম্মুখীন হয় তাদেরই প্যানিক ডইসঅর্ডার আছে। বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত একেবারে কোন পূর্বাভাস ছাড়াই প্যানিক অ্যাটাক হয়ে থাকে। যাদের রোগটি থাকে, কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ বিশেষ কোন পরিস্থিতি প্যানিক অ্যাটাক হতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। কোন ধরনের ফোবিয়া, বিব্রতকর পরিস্থিতি, দুশ্চিন্তা থেকে প্যানিক অ্যাটাক শুরু হতে পারে। তাই অনেক প্যানিক ডিসঅর্ডার রোগীদের এ ধরনের পরিস্থিতি এড়িয়ে চলতে দেখা যায়।
প্যানিক অ্যাটাক হওয়ার লক্ষণ সমূহ
- হার্টের গতি বৃদ্ধি পায়
- দুর্বল অনুভব করে, অজ্ঞান হয়ে যায় বা মাথা ঘোরায়
- হাত ও আঙ্গুল অসাড় হয়ে যায় বা কাঁপে
- আতংক অনুভব করে বা মৃত্যুভয় পায়
- ঘামতে থাকে ও শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়
- বুকে ব্যথা হয়
- শ্বাসকষ্ট হয়
- নিয়ন্ত্রণ হারানোর অনুভূতি হয়
প্যানিক অ্যাটাক সাধারণত সংক্ষিপ্ত হয়, ১০ মিনিটের কম সময় স্থায়ী হয়। যদিও কিছু লক্ষণ দীর্ঘসময় যাবত থাকতে পারে। যাদের একবার প্যানিক অ্যাটাক হয়েছে তাদের পরবর্তীতে আবারও অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। যদি বার বার এই অ্যাটাক হতে থাকে তাহলে তা চিন্তিত হওয়ার মত বিষয়। তখন তাকে প্যানিক ডিজঅর্ডার বলা হয়। প্যানিক ডিজঅর্ডার অত্যন্ত ভীতিজনক বা উদ্বেগের বিষয় কারণ পরবর্তী অ্যাটাক কখন হবে এটি বলা যায় না। আমেরিকায় ৬ মিলিয়ন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ প্যানিক ডিজঅর্ডারের শিকার। পুরুষের চেয়ে নারীদের প্যানিক ডিজঅর্ডার হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ। সাবালকত্ব অর্জনের প্রথম দিকে এই লক্ষণ প্রকাশ পায়।
প্যানিক ডিজঅর্ডার কেন হয়
যদিও এর মূল কারণ এখনও জানা যায়নি তবে এতো বছরের গবেষণা বলে, প্যানিক ডিজঅর্ডার শরীরবৃত্তীয়, পরিবেশগত উভয় কারণের সংমিশ্রণ।
• পরিবারে বাবা-মা কারও যদি প্যানিক ডিজঅর্ডার থেকে থাকে বা হৃদরোগ থেকে থাকে তাহলে সন্তানদেরও এটা হতে পারে।
• মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ এলাকায় অস্বাভাবিকতা থাকলে। মস্তিষ্কের ফাইট অর ফ্লাইট রেসপন্স এরিয়া নিয়ন্ত্রণকারী অংশে সমস্যা থাকলে প্যানিক ডিজঅর্ডার হতে পারে।
• জীবনে স্ট্রেসফুল কোনো মেজর ঘটনা থাকলে এটা হওয়া স্বাভাবিক।
প্যানিক অ্যাটাক হলে করনীয়
প্যানিক অ্যাটাক যেহেতু বেশি সময় স্থায়ী হয় না, মনে জোর নিয়ে ধৈর্য ধারণই প্রথমিক সমাধান। তাছাড়াও কিছু কাজ প্যানিক অ্যাটাকের তীব্রতা ও সময় দুটিই কমিয়ে আনতে পারে। যেমন:
১) মানসিক প্রস্তুতি
একবার প্যানিক অ্যাটাক দেখা দিলে পরবর্তী অ্যাটাকের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। অনেক সময় প্যানিক অ্যাটাক একই অবস্থায় থাকলে তীব্র আকার ধারণ করে। ঘর থেকে বারান্দায় গিয়ে বসাও অবস্থার উন্নতি করতে যথেষ্ট। কোথায় যাবেন, কাকে ফোন দেবেন আগে থেকে ঠিক করে রাখুন।
২) লম্বা শ্বাস নিন
প্যানিক অ্যাটাক শুরু হলে লম্বা লম্বা শ্বাস নিন। আস্তে আস্তে ছেড়ে দিন। শুরুতেই মস্তিষ্কে যথেষ্ট অক্সিজেন পৌঁছালে অ্যাটাকের তীব্রতা কমে আসবে। মনে মনে বলুন শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়াটা স্থায়ী নয়। শ্বাস নিয়ে চার পর্যন্ত গুনুন তারপর ছেড়ে দিন, আবার একই কাজ পুনরাবৃত্তি করুন, এতে একদিকে মনোযোগ থাকলে অ্যাটাকের তীব্রতা সেভাবে অনুভূত হবে না।
৩) মাসল রিল্যাক্সেশন পদ্ধতি
প্যানিক অ্যাটাকে মনে হয় আপনি শরীরের নিয়ন্ত্রন হারাতে চলেছেন, মাসল রিলেক্সেশন পদ্ধতি শরীরের নিয়ন্ত্রন রাখতে সাহায্য করবে। দুই হাত শক্ত করুন, তারপর ১০ পর্যন্ত গুনে হাত ছেড়ে দিন, আবার শক্ত করুন। এবার একই কাজ কাঁধ, ঘাড়, পেট, আর পা এও করুন।
৪) মনোযোগ ঘোরানো চেষ্টা করুন
মনোযোগ অন্য দিকে ঘুরানোর চেষ্টা করুন, মনে মনে কোন অনুপ্রেরনা মূলক গান গান, ছোটবেলার একটা ছড়া মনে করার চেষ্টা করুন, পাশে কেউ থাকলে তার সাথে জোরে জোরে কথা বলুন। সময়টা দ্রুত কাটিয়ে দেওয়া গেলেই হলো। আশেপাশের জিনিস গুলো লক্ষ্য করুন, ফ্লোর এর টাইলস গুনুন, যেকোনো কিছুই কাজে লাগবে যদি একটু মনযোগ সরানো যায়।
প্যানিক অ্যাটাকের চিকিৎসা
নতুন একটি শব্দ এসেছে যাকে আমরা বলি সাইকো এডুকেশন। এখানে অনেক বড় একটি বিষয় থাকে, রোগটি যে এ রকম একটি রোগ, রোগীকে সেটা বোঝাতে হবে। পাশাপাশি রোগীর যারা পরিবারের লোকজন থাকে, অফিসে লোকজন যদি সম্ভব হয়, ওনাদেরও এই বিষয়ে জ্ঞান দিতে হবে। যেমন : এই রোগের কারণে মৃত্যুর কোনো কারণ নেই। যদি আমরা চুপ করে থাকতে পারি। এবং অবস্থা যদি আওতায় থাকে আধাঘণ্টার মধ্যে এটি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এ বিষয়ে বেশ কিছু শিথিলকরণ প্রশিক্ষণ আছে। শিথিলকরণ ব্যায়াম শিখিয়ে দিতে হবে বা মেডিকেশনের একটি বিষয় রয়েছে। মেডিকেশন যেটা করে, রোগটি বারবার হওয়ার বিষয়টিকে কমিয়ে দেয়। এটার মারাত্মক বিষয়টিকেও কমিয়ে দেয়।
পাশাপাশি সাইকোথেরাপি, কাউন্সেলিং যেটা সেটাও করানো যেতে পারে। অসুস্থ হওয়ার কারণে তার দৈনন্দিন কার্যক্রম যেন বন্ধ না হয়। আসলে সম্পূর্ণ বিষয়টি যদি ভালোভাবে চিকিৎসা করা যায়, এই রোগীরা খুব ভালো থাকেন।