গর্ভাবস্থায় প্রি-এক্লাম্পসিয়া-pregnancy and Pre-eclampsia
Pre-eclampsia symptoms and treatment

গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ বা প্রি-এক্লাম্পসিয়ার কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা-High blood pressure during pregnancy causes, symptoms and treatment

অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ মা ও গর্ভস্থ শিশুর জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। গর্ভাবস্থায় তাই নিয়মিত রক্তচাপ পরিমাপ করা জরুরি। রক্তচাপ বেশি হলে তার চিকিৎসা নিয়ে অবহেলা করা উচিত নয়।

গর্ভাবস্থার প্রথম ৫ মাসের মধ্যে রক্তচাপ বেড়ে গেলে সেই মায়ের আগে থেকেই খানিকটা উচ্চ রক্তচাপ ছিল বলে ধরে নেওয়া যায়। যাঁদের আগে থেকেই উচ্চ রক্তচাপ আছে এবং ওষুধ খাচ্ছেন, তাঁরা সন্তান নেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন। কিছু রক্তচাপের ওষুধ গর্ভাবস্থায় খাওয়া যায় না। তাই প্রয়োজনে চিকিৎসক আগে থেকেই ওষুধ পরিবর্তন করে দিতে পারেন। সেই সঙ্গে রক্তচাপ পুরোপুরি স্বাভাবিক আছে কি না এবং উচ্চ রক্তচাপের কোনো জটিলতা আছে কি না, তা-ও পরীক্ষা করে নেওয়া যাবে।

গর্ভাবস্থার পাঁচ মাস পর যদি রক্তচাপ বেড়ে যায়, তবে তাকে জেসটেশনাল হাইপারটেনশন বা গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ বলা হয়। এটি সন্তান প্রসবের তিন মাসের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে যায়। কিন্তু গর্ভকালীন রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া নিয়ে সতর্ক থাকা উচিত। নিয়মিত রক্তচাপ মেপে নিয়ন্ত্রণে না রাখলে নানা জটিলতা হতে পারে।

প্রথম দিকে কি কি উপসর্গ দেখা দিতে পারে?

প্রথম দিকে প্রি-এক্লাম্পসিয়ার লক্ষণগুলো হল:

*উচ্চ রক্তচাপ,

*প্রস্রাবের সাথে প্রোটিন অর্থাৎ আমিষ বের হয়ে যাওয়া।

এই উপসর্গগুলোর কোনটিই আপনি হয়ত বাড়িতে বসে বুঝতে পারবেন না, কিন্তু আপনার ডাক্তারের কাছে বা নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়মিত গর্ভকালীন পরীক্ষা নিরীক্ষার সময় এগুলো ধরা পড়ে যায়।  

গর্ভবতী নারীদের মধ্যে শতকরা ১০ থেকে ১৫ জনই উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন। তাই কেবল রক্তচাপ বেশি হলেই প্রি-এক্লাম্পসিয়া হয়েছে, এমন বলা যাবে না। কিন্তু উচ্চ রক্তচাপের সাথে প্রস্রাবে প্রোটিন গেলে, তা প্রি-এক্লাম্পসিয়াকেই নির্দেশ করে।

আর কি কি উপসর্গ থাকতে পারে?

গর্ভাবস্থার শেষের দিকে প্রি-এক্লাম্পসিয়ার আরও কিছু উপসর্গ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়, যেমন:

* প্রচন্ড মাথাব্যথা,

* চোখে দেখতে সমস্যা হওয়া, যেমন দৃষ্টি ঘোলা হয়ে যাওয়া বা চোখের সামনে আলোর ঝলকের মত দেখতে পাওয়া,

* প্রচন্ড বুক জ্বালাপোড়া করা,

* পাঁজরের হাড়ের ঠিক নিচে তীব্র ব্যথা,

* বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া,

* শরীরে পানি জমে যাওয়ার কারণে ওজন অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া,

* খুব খারাপ বা অসুস্থ অনুভব করা,

* শরীরের বিভিন্ন জায়গা, যেমন পায়ের পাতা, গোড়ালি, মুখ ও হাত হঠাৎ ফুলে যাওয়া।

সাধারণত কাদের প্রি-এক্লাম্পসিয়া হয়?

গর্ভবতী নারীদের মধ্যে ৬% এর মৃদু প্রি-এক্লাম্পসিয়া হতে পারে। আর ১% থেকে ২% ক্ষেত্রে এটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। 

কিছু কিছু কারণে প্রি-এক্লাম্পসিয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়, যেমন:

* গর্ভবতী হওয়ার আগেই ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা কিডনীর রোগ থাকলে,

* আরও কিছু রোগেও প্রি-এক্লাম্পসিয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়, যেমন লুপাস বা এন্টিফসফোলিপিড সিনড্রোম,

* আগে কখনো যদি গর্ভাবস্থায় প্রি-এক্লাম্পসিয়া হয়ে থাকে।

আরও কিছু কারণে আপনার প্রি-এক্লাম্পসিয়ার ঝুঁকি সামান্য বেশি থাকতে পারে:

* পরিবারে আপনার মা অথবা বোনের কারো যদি এ সমস্যা হয়ে থাকে,

* আপনার বয়স যদি ৪০ এর বেশি হয়,

* এই বারের গর্ভাবস্থা এবং এর আগের গর্ভাবস্থার মধ্যে যদি কমপক্ষে ১০ বছর সময় পার হয়ে যায়,

* যমজ অর্থাৎ গর্ভে যদি একইসাথে দুই (বা এর বেশি) সন্তান থাকে,

* আপনার বিএমআই যদি ৩৫ বা তার বেশি হয়।

আপনার যদি এগুলোর মধ্যে ২টি বা তার বেশি উপসর্গ একসাথে থাকে তাহলে ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।

যদি প্রি-এক্লাম্পসিয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে তাহলে ডাক্তার আপনাকে গর্ভাবস্থার ১২ সপ্তাহ থেকে সন্তানের জন্ম হওয়া পর্যন্ত কম ডোজের এসপিরিন নেয়ার পরামর্শ দিতে পারেন। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনভাবেই এই ওষুধ খাওয়া যাবেনা। 

প্রি-এক্লাম্পসিয়া কেন হয়?

যদিও প্রি-এক্লাম্পসিয়ার সঠিক কারণ জানা নেই, মনে করা হয় অমরা বা গর্ভফুলের (যে অঙ্গটি মা ও সন্তানের রক্ত প্রবাহের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে) সমস্যা হলে প্রি-এক্লাম্পসিয়া হতে পারে।

প্রি-এক্লাম্পসিয়ার চিকিৎসা কি?

প্রি-এক্লাম্পসিয়া শনাক্ত হলে, আপনাকে দ্রুত একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে চিকিৎসা নিতে হবে। অবস্থা বেশি মারাত্মক মনে হলে তিনি আপনাকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেবেন। 

হাসপাতালে থাকা অবস্থায় আপনাকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে আপনার অবস্থা কতটুকু মারাত্মক ও আপনাকে কতদিন হাসপাতালে থাকতে হবে সেই ব্যাপারে আপনার চিকিৎসক সিদ্ধান্ত নেবেন।

সাধারণত সন্তান প্রসবের পর পরই প্রি-এক্লাম্পসিয়া ভালো হয়ে যায় । তাই যতক্ষণ পর্যন্ত নিরাপদে সন্তান প্রসব করানো সম্ভব হচ্ছে না, ততক্ষণ পর্যন্ত আপনাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে ।

সাধারণত গর্ভাবস্থার ৩৭ থেকে ৩৮ সপ্তাহের মধ্যে নিরাপদে সন্তান প্রসব করানো যায় । কিন্তু অবস্থা মারাত্মক হয়ে গেলে আরও আগে কৃত্রিমভাবে বা ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে আপনার প্রসব করানোর চেষ্টা করা হতে পারে অথবা অপারেশন বা সিজারিয়ান সেকশন ও করা হতে পারে।

প্রসবের আগ পর্যন্ত রক্তচাপ কমানোর জন্য আপনাকে ওষুধ দেয়া হতে পারে।

তথ্যসূত্র: shohay.health
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস রোগীদের খাওয়ার নিয়ম - Eating rules for patients with gestational diabetes
গর্ভাবস্থায় দাঁতের মাড়ি ফোলা ও রক্ত পড়ার কারণ - Gum swelling and bleeding during pregnancy
গর্ভবতী মহিলাদের ফলিক এসিড আয়রন ও জিংক ট্যাবলেট
গর্ভাবস্থায় পেট ব্যথা - Abdominal pain during pregnancy
গর্ভবতী অবস্থায় রক্তপাত হলে করণীয় - What to do if you bleed while pregnant