জ্বর ও মাথাব্যথার যন্ত্রণা থেকে মুক্তির উপায় - Relieves fever and headaches
মৌসুমি অসুখের মধ্যে জ্বর একটি অন্যতম ব্যাধি। এর সঙ্গে অনেকেরই মাথা ব্যথার প্রবণতা দেখা যায়। মাথাব্যথা ও জ্বরের আক্রমণ থেকে দ্রুতই নিরাময়ের চেষ্টা করে আক্রান্ত ব্যক্তি। কেননা জ্বর ও মাথাব্যথার কারণে কোনো মানুষই স্বাভাবিক কোনো কাজকর্ম করতে পারে না। মাথাব্যথা ও জ্বর যত বেশি তীব্র হবে, তত একজন ব্যক্তিকে এমন স্তরে নিয়ে যেতে পারে, যেখানে মস্তিষ্ক সক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারে না। অফিসে যাওয়া মানুষ এবং গৃহিণীদের ক্ষেত্রে মাথাব্যথা খুব ঘন ঘন হয়।
অনেকেই জ্বর ও মাথাব্যথা হলে ওষুধের শরণাপন্ন হয়। ঘরোয়া এমন কিছু টোটকা রয়েছে যাতে করে সেই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে। জেনে নিন কীভাবে মাত্র অল্প সময়ে জ্বর ও মাথাব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
প্রচুর তরল পান
মৌসুমি রোগ নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে প্রথম উপদেশই পাবেন প্রচুর পানি ও অন্যান্য তরল পান করার। এর কারণ হলো জ্বরের কারণে তাপমাত্রা বাড়লে শরীর দ্রুত পানিশূন্যতার দিকে যেতে থাকে। তাই পর্যাপ্ত পানির সরবরাহ এখানে অত্যন্ত জরুরি। কুসুম গরম পানি, ফলের শরবত, ডাবের পানি, চা- যে কোনো তরল খাবারেই বাধা নেই। সর্দি-জ্বর থাকলে প্রতিদিনের লক্ষ্য হবে আট থেকে ১২ গ্লাস পানি পান করা। আর বেশি তরল পান করলে শরীর থেকে জীবাণু ও অন্যান্য বিষাক্ত উপাদান বেরিয়ে যাওয়া সহজ হয়।
গোসল
কপাল এবং ঘাড়ের পেছনের অংশে জলপট্টি দেওয়া জ্বর কমাতে অত্যন্ত কার্যকর। পুরোদস্তুর গোসলের পরিবর্তে কুসুম গরম পানিতে ভেজানো কাপড় দিয়ে শরীর মোছাও দ্রুত জ্বর কমাতে সাহায্য করে। চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া জ্বর নিয়ে ঠান্ডা পানিতে গোসল করা যাবে না। অন্যথায় শরীরে কাঁপুনি দেখা দিতে পারে এবং জ্বর আরও বেড়ে যেতে পারে।
বিশ্রাম
অসুস্থ অবস্থায় যত বেশি সক্রিয় থাকবেন ততই আপনার শরীরের তাপমাত্রা বাড়বে। তাই বিশ্রামে থাকলে তাপমাত্রা কমবে এবং রোগমুক্তি হবে দ্রুত। মৌসুমি সর্দি-কাশি, জ্বর সারাতে ওষুধ সবসময় প্রয়োজন না হলেও জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তারও বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রাখা নিরাপদ। জ্বরের সঙ্গে শরীর ব্যথা, মাথা ব্যথা, ঘাড় শক্ত হয়ে থাকা, বমি ইত্যাদি উপসর্গ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।
আকুপ্রেশার
বহুবছর ধরে মাথাব্যথা দূর করতে অনেকেই আকুপ্রেশার পদ্ধতি ব্যবহার করে আসছেন।এই ছোট্ট ঘরোয়া পদ্ধতিটি আপনাকে এক মিনিটের মধ্যে মাথাব্যথা সারাতে সাহায্য করবে। বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি এবং তর্জনির মাঝখানের অংশে অন্য হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তর্জনি দিয়ে চাপ দিন এবং ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ম্যাসাজ করুন। একইভাবে ডান হাতেও করুন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, আশা করা যায় এতে এক মিনিটেই মাথা ব্যথা সারবে।
কিছু লবঙ্গ তাওয়ার মধ্যে গরম করে নিন। গরম লবঙ্গ একটি রুমালের মধ্যে নিন। এক মিনিট এর ঘ্রাণ নিন এবং দেখুন মাথা ব্যথা চলে গেছে।
লবণযুক্ত আপেল
ব্যথা যদি বেশি হয় তবে এই ঘরোয়া পদ্ধতিটি চেষ্টা করে দেখতে পারেন।এক টুকরো আপেল চিবুতে পারেন তবে এতে একটু লবণ ছিটিয়ে নেবেন। এটা দ্রুত ব্যথা মুক্ত করতে সাহায্য করবে।
এক পিস টাটকা আদা চিবুতে পারেন এতে ৬০ সেকেন্ডে মাথা ব্যথা দূর হবে। আদা একটু বাজে গন্ধের হলেও পদ্ধতিটি কাজের।
পুদিনা পাতার ব্যবহার
অস্বস্তিকর মাথা ব্যথাকমানোর জন্য একটি অন্যতম ঘরোয়া উপাদান হলো পুদিনা পাতার রস। পুদিনা পাতার মধ্যে থাকা ম্যানথল ও ম্যানথন জাতীয় উপাদান গুলি মাথা ব্যথাদূরীকরণে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করে। এছাড়াও এটি শরীরে এক ধরনের আরামদায়ক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে, যার ফলে মাথা ব্যথা থেকে খানিক রেহাই পাওয়া যায়। একমুঠো পুদিনা পাতা নিয়ে সেটি পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখার পর জল থেকে তুলে পুদিনা পাতা টাকে বেটে নিন। এবার এই মিশ্রণটি সরাসরি আপনার কপালে লাগান, যেখানে ব্যথার প্রবণতা বেশি। কিছুক্ষণ বাদে দেখবেন এক ধরনের স্বস্তি পাওয়া যাচ্ছে।
অ্যাপেল সাইডার ও হলুদ চা
চায়ে অ্যাপেল সাইডার যোগ করলে ওই চা অতিরিক্ত শ্মেষ্মা দূর করতে সাহায্য করবে। সেই সঙ্গে হলুদ ও আদা দুটিরই রোগ প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আর যোগ করুন কালো গোলমরিচ, যা প্রাকৃতিক ব্যথামুক্তির টোটকা হিসেবে কাজ করে। আর এসব উপাদান মাথা ব্যথা সারাতে কাজ করে। আদা, হলুদ, লেবুর রস, অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার, গোলমরিচ দিয়ে ৫ থেকে ৮ মিনিট পানি ফোটান ভালোমতো। এরপর এই ভেষজ চা পরিবেশন করুন যা আপনার মাথব্যথা থেকে মুক্তি দেবে।
রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ান
জ্বর ও মাথাব্যথায় শরীরের শক্তি পুনরায় ফেরাতে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া জরুরি। খাদ্যতালিকায় কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ভিটামিন-জাতীয় খাবার রাখুন। এমন খাবার বেছে নিন যেটি সহজে হজম হবে। এই সময় চিকেন স্যুপও খেতে পারেন। এটি শরীরকে ঠিকঠাক করতে বেশ কাজে দেবে। খাদ্যতালিকায় ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি-জাতীয় খাবার রাখুন। এই ভিটামিনগুলো শরীর পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে এবং রোগ নিরাময়েও বেশ উপকারী।
তথ্যসূত্র: ঢাকা টাইমস