
হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া যেসব রোগের লক্ষণ - Symptoms of cold hands and feet
শীতকালে হাত পা সাধারণ অবস্থাতেই ঠান্ডা থাকে। কিন্তু যদি মোটা জামা কাপড় দিয়ে হাত পা ঢেকে রাখা সত্ত্বেও তা গরম না হয় তা কিন্তু অবশ্যই চিন্তার বিষয়। হাত পা ঠান্ডা বেশিক্ষণ ধরে থাকলে তা কিন্তু অবশ হওয়ার উপক্রম ঘটে।
বিশেষজ্ঞরা এই বিষয়ে সতর্কতার সাথে জানান, এমন সমস্যা মারাত্মক কয়েকটি রোগের জানান দেয়।
চলুন জেনে আসি হাত পা ঠান্ডা থাকলে যেসব রোগের লক্ষণ হতে পারে :
হাত, পা ঠান্ডা হওয়ার স্বাভাবিক কারণ
শরীরের রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থা গোটা শরীরে উষ্ণ রক্ত পৌঁছে দেয়। ফলে হাত, পা সহ গোটা শরীর গরম থাকে। তবে ঠান্ডায় থাকলে আপনার শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভীষণ সক্রিয় হয়ে যায়। সে শরীরকে নির্দেশ দেয় 'তাপমাত্রা ধরে রাখার'। এক্ষেত্রে উষ্ণ রক্ত শরীরের ত্বকের কাছে কম যায়। কারণ শরীর জানে, এই জায়গা থেকেই সবথেকে বেশি গরম বেরিয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে শরীরের মধ্যভাগে বেশি পরিমাণে গরম রক্ত পৌঁছয়। এবার প্রশ্ন হল কেন মধ্যভাগেই গরম রক্ত যায়? কারণ শরীরের এই অংশেই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলি থাকে। সেই অঙ্গগুলিকে গরম রাখতে চায় শরীর। হাত, পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার এটাই হল স্বাভাবিক কারণ।
হাত, পা ঠান্ডা থাকার বড় কারণ
হাইপোথাইরয়েডিজম
থাইরয়েডের সমস্যায় নারী-পুরুষ উভয়ই ভোগেন। থাইরয়েড হলো শরীরে শক্তির ভারসাম্য রক্ষাকারী গ্রন্থি। হাইপোথাইরয়েডিজমের ক্ষেত্রে এই গ্ল্যান্ডে দেখা দেয় সমস্যা।
তখন থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে সঠিক পরিমাণে থাইরয়েড হরমোন বের হয় না। এই রোগের লক্ষণ হিসেবেই হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায় কিংবা প্রচণ্ড শীত অনুভব করার সমস্যা দেখা দেয়।
ফলে শরীরে দেখা দেয় হরমোনের ভারসম্যহীনতা। এ রোগে আক্রান্ত রোগীরও শরীর গরম রাখতে সমস্যা হয়। তাই হাত-পা প্রায়ই ঠান্ডা থাকতে পারে। বেশি সমস্যা হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
রেনৌডস ডিজিজ
আপনার যদি হাইপোথাইরয়েডিজমের সমস্যা না হয় সেক্ষেত্রে হতে পারে রনৌডস ডিজিজ। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির হাত,পায়ের ছোটছোট রক্তনালি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে গরম রক্ত সেই হাত, পায়ে পৌঁছাতে পারে না। ফলে হাত-পা ঠান্ডা থাকে।
ডায়াবেটিস
আপনার সুগার নিয়ন্ত্রণে না থাকলেও দেখা দিতে পারে এই সমস্যা। এক্ষেত্রে অনিয়ন্ত্রিত সুগার থেকে মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথিতে।
ফলে পায়ের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া ডায়াবেটিস থেকেও দেখা দিতে পারে পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ। এই রোগে আক্রান্ত হলে রক্তনালির অন্দরে রক্তপ্রবাহে দেখা দেয় সমস্যা।
দুশ্চিন্তা
অবাক করা বিষয় হলেও সত্যিই যে, হাত-পা ঠান্ডা থাকার কারণ হতে পারে মানসিক দুশ্চিন্তাও। এক্ষেত্রে দুশ্চিন্তা, উৎকণ্ঠা শরীরে এপিনেফ্রিন হরমোনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে শরীরে দেখা দেয় সমস্যা। তখন হাত-পায়ে রক্তপ্রবাহ কমে।
হাই কোলেস্টেরল
ভালো কোলেস্টেরল যেমন শরীরের জন্য অনেক উপকারী, ঠিক তেমনই খারাপ কোলেস্টরল হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। কোলেস্টেরল রক্তনালির ভেতরে জমলে দেখা দিতে পারে মারাত্মক সমস্যা। তখন হাত-পায়ে ঠান্ডা লাগতে পারে।
কীভাবে গরম থাকবেন?
জেনে নিন শীতে বরফ ঠান্ডা হাত-পা গরম রাখার উপায়-
> মোজা ও গ্লাভস পরুন। এজন্য ভালো কাপড়ের গ্লাভস ও মোজা ব্যবহার করুন। ফলে হাত-পা গরম থাকবে।
> হাত-পায়ে সরিষার তেল মাখুন। এর ফলে হাতে-পায়ে রক্তপ্রবাহ বাড়বে। গরম অনুভূতি মিলবে। অনেক সময় রাতে পা ঠান্ডা থাকায় শরীরে কাপুঁনি হয়। তাই রাতে ঘুমানোর আগে পায়ে সরিষার তেল লাগান।
> নিয়মিত ব্যায়াম করলেও শীতে শরীর গরম থাকে। দিনে অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন। শরীরচর্চা করলে সারা শরীরেই রক্ত সঞ্চালন বাড়ে।
> অতিরিক্ত ঠান্ডা হলে হাত-পায়ে হিটিং প্যাড ব্যবহার করুন সেঁক দিন।
> শরীরে রক্ত প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণ হলো অ্যানিমিয়ার লক্ষণ। তাই রক্ত প্রবাহ বাড়াতে আয়রন যুক্ত খাবার খান যেমন- শাক, সবজি, মাংস, মাছ ইত্যাদি।
> শীতে পানি খাওয়া কম হয়। ফলে শরীর আর্দ্রতা হারায়। এ কারণেও হাত-পা ঠান্ডা হতে পারে। তাই দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন।