
হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ রোগের চিকিৎসা - Treatment of hand foot and mouth disease
হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ বাংলাদেশে খুব একটা হয় না। তবে চিকিৎসকেরা বলছেন, ইদানীং রোগটি আগের চেয়ে কিছুটা বেশি দেখা যাচ্ছে। এটি ছোঁয়াচে এবং মূলত শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তবে বড়দেরও হতে পারে। এর লক্ষণগুলোর সাথে জলবসন্তের মিল রয়েছে। তাই অনেক সময় এটিকে জলবসন্তের সাথে মিলিয়ে ফেলেন অনেক অভিভাবক। এমনকি বাংলাদেশে চিকিৎসকেরাও অনেকসময় ভুলটি করে থাকেন।
কারণ
কক্সাকি ভাইরাস দিয়ে সংক্রমিত হলেই এই রোগ হয়।
যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তারা কক্সাকি ভাইরাসে সংক্রমিত হলে এ রোগ দেখা দেয়।
উপসর্গ কী
সাধারণত আক্রান্ত হওয়ার ৩ থেকে ৬ দিনের মধ্যে লক্ষণ শুরু হয়।
এই রোগে সাধারণত প্রথমে জ্বর, গলাব্যথা, অরুচি ও দুর্বলতা দেখা যায়।
মুখে ঘা তৈরি হয়, মুখ থেকে লালা ঝরে।
ত্বকে, বিশেষ করে হাতের তালু ও পায়ের তলায় লাল দানা ও ফুসকুড়ি দেখা যায়। তবে এটি সাধারণত চুলকায় না।
খুবই কম ক্ষেত্রে মস্তিষ্কে সংক্রমণ যেমন মেনিনজাইটিস, এনকেফালাইটিস ইত্যাদি হতে পারে।
যেভাবে ছড়ায়
এটি খুবই ছোঁয়াচে রোগ। আক্রান্ত শিশু অন্য শিশুর ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এলে হাঁচি, কাশি, সর্দি, লালা এমনকি একই খেলনা, থালাবাটি, গ্লাস ব্যবহার থেকে এই রোগ ছড়াতে পারে।
এ ছাড়া ফেটে যাওয়া ফুসকুড়ির পানি ও মলের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে।
জটিলতা
এই রোগ থেকে টনসিলাইটিস, ফ্যারিনজাইটিস, ল্যারিনজাইটিস, মেনিনজাইটিস, সেকেন্ডারি স্কিন ইনফেকশন হতে পারে।
জলবসন্তের সাথে অসুখটির পার্থক্য
দুটোর মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজে গলা ব্যথা, জ্বর এবং খাবারে অরুচি প্রথম দিকের উপসর্গ। এর কয়েকদিন পর মুখ ও জিহ্বায় পুঁজযুক্ত ঘায়ের মত ফুসকুড়ি হয়।
যাতে ব্যথা হতে পারে, খেতে কষ্ট হতে পারে। এই অসুখে হাতে এবং পায়ে ত্বকের রঙ অনুযায়ী গোলাপি, লাল অথবা কাল রঙের উঁচু গোটা দেখা দেয়। পরে তা পানিযুক্ত ফুসকুড়ির মতো হয়ে ওঠে।
বেশিরভাগ সময় হাত, পা এবং জিহ্বাতেই ফুসকুড়ি দেখা দেয় তবে উরু অথবা নিতম্বেও মাঝে মাঝে হয়ে থাকে।
শিশু এবং বড়দের একই রকম লক্ষণ থাকে। তবে পাঁচ বছরের নিচের বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে লক্ষণগুলো বেশি কষ্টদায়ক হয়ে থাকে। অসুখটি একাধিকবার হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল বা সিডিসি'র তথ্যমতে এটি ছোঁয়াচে এবং আক্রান্ত হওয়ার প্রথম সপ্তাহে বেশি ছড়ায়।
রোগীর শরীরের সাথে সরাসরি সংস্পর্শ, আক্রান্ত হওয়ার পর গোটা থেকে বের হওয়া তরল পদার্থ, হাঁচি ও কাশির মাধ্যমে যে 'ড্রপলেট' ছড়ায়, মুখের লালা, সর্দি, মলের মাধ্যমে এর সংক্রমণ হতে পারে।
ডা. রওনক জাহান বলছেন, সাধারণত বর্ষার সময় এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে অসুখটি কম হয়। 'ফুট অ্যান্ড মাউথ' নামে গবাদি পশুর একটি অসুখ রয়েছে যা এক নয়।
আর জলবসন্তে জ্বরের সাথে শরীরে বেশ ব্যথা হয়। এর তিন চারদিন পর গোটা দেখা দেয়। তবে শুধু হাত বা পায়ে নয়, সারা শরীরে হতে পারে, শরীরের নির্দিষ্ট যেকোনো স্থানে হতে পারে।
মাথায় এমনকি যৌনাঙ্গেও হতে পারে। জলবসন্তের গোটাগুলোতে তরল পদার্থ থাকে। সারা শরীরে একই ধরনের, যা পেকে ওঠে এবং একপর্যায়ে ফেটে যায়।
চিকিৎসা কী
তেমন কোনো চিকিৎসার দরকার নেই। লক্ষণ শুরু হওয়ার ৫ থেকে ৭ দিনে এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। জ্বরের জন্য গা মুছিয়ে দেওয়া ও প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খাওয়াতে হবে। শিশুকে প্রচুর পানি, সরবত ও স্যুপ খাওয়াবেন, যাতে পানিশূন্যতা না হয়। মুখের ক্ষত বা ঘায়ের কারণে ব্যথা হলে ছোট বরফের টুকরা চুষতে দিতে পারেন। যদি প্রচুর বমি হয়, শিশু কিছুই খেতে না পারে, পানিশূন্যতা দেখা দেয়, অতিরিক্ত দুর্বল হয়ে পড়ে, মাথাব্যথা, ঘাড় ব্যথা হয়, জ্বর ৭ থেকে ১০ দিনেও ভালো না হয়, তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেবেন।
প্রতিরোধ
‘হ্যান্ড-ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ’ মূলত ছড়ায় মল থেকে মুখে এবং কফ, কাশ, থুথু এসবের মাধ্যমে। তাই এ রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ এই পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করতে হবে।
* পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস
* সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা। অসুস্থ রোগীর কফ, বমি, রক্ত ইত্যাদি বর্জ্য পদার্থের সুষ্ঠু নিষ্কাশন। ব্যবহৃত পোশাক-পরিচ্ছদ, বাসন-কোসন ইত্যাদি ব্যবহার না করা
* পানীয় জল এবং সুইমিং পুলের পানি ক্লোরিনযুক্ত করা। বৈশ্বিকভাবে এ রোগের প্রতিষেধক টিকা তৈরির প্রচেষ্টা চালু আছে।