
জরায়ুতে টিউমার এর লক্ষণ - Symptoms of Uterine fibroids
নারীদের প্রজননক্ষম বয়সে জরায়ুতে সবচেয়ে বেশি যে টিউমার হতে দেখা যায় তা হলো ফাইব্রয়েড বা মায়োমা। জরায়ুর পেশীর অতিরিক্ত ও অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে এ টিউমারের সৃষ্টি হয়।
৩০ বছরের ঊর্ধ্বে নারীদের মধ্যে ২০ শতাংশই এই সমস্যায় আক্রান্ত। ফাইব্রয়েড এক ধরনের নিরীহ টিউমার, এটি ক্যানসার বা বিপজ্জনক কিছু নয়। তবে দুটো সমস্যার কারণে সুচিকিৎসা দরকার।
এক. এর ফলে অতিরিক্ত মাসিক ও ব্যথা হওয়া এবং তার জন্য রক্তশূন্যতা হতে পারে।
দুই. এটিকে বন্ধ্যাত্বের একটি অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
টিউমারের ধরন
জরায়ুর টিউমার সাধারণত ৩ ধরনের হয়ে থাকে। জরায়ু দেয়ালের ভেতরে টিউমার হলে ইন্ট্রামুরাল ফাইব্রয়েড; বাইরের দিকে হলে সাবসেরোসাল ফাইব্রয়েড এবং যে অংশে ভ্রূণ থাকে সেখানে হলে সাবমিউকোসাল ফাইব্রয়েড বলা হয়।
টিউমার হওয়ার ঝুঁকিসমূহ
সাধারণত যাদের সন্তান নেই, বন্ধ্যত্ব সমস্যা আছে বা একটিমাত্র সন্তান আছে, তাদের ক্ষেত্রে টিউমার দেখা যেতে পারে। মাতা অথবা বোনের জরায়ুতে টিউমার থাকলে জেনেটিক কারণে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ইস্ট্রোজেনহরমোন বেশি থাকলেও টিউমার হতে পারে।
অতিরিক্ত ওজন টিউমার হওয়ার ঝুঁকি দুই থেকে তিন গুণ বাড়িয়ে তোলে। এ ছাড়া খাদ্যাভ্যাসে অতিরিক্ত লাল মাংস থাকলে টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
জরায়ু টিউমারের লক্ষণ
সাধারণত ফাইব্রয়েডের তেমন কোন উল্লেখযোগ্য লক্ষণ নেই। তাই রোগী নিজে বুঝতেই পারেন না যে, তিনি ফাইব্রয়েড সমস্যায় ভুগছেন। গবেষণায় দেখা যায় প্রতি তিনজন আক্রান্তের মধ্যে এক জনের লক্ষণ প্রকাশ পায়। নিম্নলিখিত এক বা একাধিক লক্ষণ প্রকাশ পেলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
ব্যথাযুক্ত ও অতিরিক্ত পরিমাণে রক্তস্রাব
টিউমারের কারণে মাসিক চক্রের কোন পরিবর্তন হয় না। কিন্তু স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক পরিমাণে রক্তরণ হয়। কখনো কখনো অত্যধিক ব্যথা অনুভূত হয়ে থাকে। যার ফলে রক্তের আয়রণের পরিমাণ কমে গিয়ে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।
মাসিক দীর্ঘস্থায়ী হওয়া
টিউমার বা ফাইব্রয়েডের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে মাসিক চালু থাকতে দেখা যায়।
তলপেট ফুলে যাওয়া
বড় আকারের টিউমারের ক্ষেত্রে তলপেটে অস্বস্তিসহ তলপেট ফুলে যেতে পারে। কোন কোন সময় ফাইব্রয়েডের জন্য কোমর ব্যথাও হতে পারে।
মুত্রথলী ও অন্ত্রে চাপ
কখনো কখনো ফাইব্রয়েড জরায়ুর সামনে অবস্থিত মুত্রথলীতে চাপ সৃষ্টি করে। ফলে রোগীর ঘণ ঘণ প্রস্রাব করার প্রয়োজন হয়। আবার কখনো ফাইব্রয়েড জরায়ুর পশ্চাতে অবস্থিত অন্ত্রে চাপ সৃষ্টি করে। ফলে রোগীর কুষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।
সহবাসকালীন ব্যথা
ভ্যাজাইনা বা জরায়ু মুখে টিউমার হলে সহবাসের সময় অস্বস্তি বা ব্যথা হতে পারে। এ জাতীয় সমস্যাকে ডিস্পেরনিয়া বলে।
গর্ভপাত বা বন্ধ্যাত্ব
জরায়ুর অভ্যন্তরীণ অংশে ফাইব্রয়েড সৃষ্টি হলে তা ফেলোপিয়ান টিউবকে বন্ধ করে দেয় যা গর্ভধারণকে অসম্ভব করে তোলে বন্ধ্যাত্বের সৃষ্টি করে। কখনো কখনো ফাইব্রয়েডের কারণে গর্ভপাত হতে দেখা যায়।
জরায়ুতে টিউমার থাকাবস্থায় গর্ভধারণ
জরায়ুতে টিউমার থাকাবস্থায় গর্ভধারণ করতে পারেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে এই টিউমারে মা ও শিশুর বিভিন্ন জটিলতা তৈরি করতে পারে। চলুন জেনে নেয়া যাক সেগুলো-
সাব মিউকাস হলে জটিলতা হতে পারে। কারণ সাব মিউকাস টিউমার জরায়ুর ভেতরে অবস্থিত হওয়ায় ভ্রূণ ও প্লাসেন্টার স্থাপনকে বাধাগ্রস্ত করে।
গর্ভধারণের কারণে জটিলতা হতে পারে। জরায়ুতে এই টিউমার থাকলে জরায়ু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টিউমারের আকার ও সাইজ পরিবর্তন হতে পারে। অনেক সময় টিউমারের মধ্যে রক্তক্ষরণ ও পানি জমে পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে।
শিশুর ওজন কমে যাওয়া, প্লাসেন্টা প্রিভিয়া (গর্ভফুল নিচের দিকে থাকা), সময়ের আগে ডেলিভারি হওয়ার জটিলতা দেখা দিতে পারে।
ফাইব্রয়েডের কারণে নরমাল ডেলিভারির পথ বাধাগ্রস্ত হয় এবং সিজারের প্রয়োজন হতে পারে।
চিকিৎসা
ফাইব্রয়েডস-এর একমাত্র চিকিৎসা অপারেশন। তবে সবার অপারেশন করানোর দরকার পড়ে না। কোনও কোনও রোগীর রক্তপাত খুব বেশি হলে ওষুধ দিয়ে ব্লিডিং কমানোর চেষ্টা করা হয়। এছাড়া বেদনা হলে ব্যথা কমানোর ব্যবস্থা কর হয়। তবে ফাইব্রয়েডেস-এর কারণে পা ফুলে গেলে বা ইউরিন অথবা স্টুল আটকে গেলে তখন ফাইব্রয়েড বাদ দেওয়া ছাড়া কোনও উপায় থাকে না। এছাড়া ফাইব্রয়েডস-এর কারণে ইনফার্টিলিটি আসলে বা বারংবার সন্তান নষ্ট হলে সেক্ষেত্রেও ফাইব্রয়েডস বাদ দিতে হয় অপারেশন করে।
তবে আধুনিক কিছু পদ্ধতি রয়েছে যেমন ইউটেরাইন আর্টারি এম্বোলাইজেশনএবং এমআরআই গাইডেড ফোকাসড আলট্রাসাউন্ড অ্যাবলেশন। কমবয়সি মহিলা যাঁরা সার্জারি এড়াতে চান তাঁদের জন্য এই পদ্ধতিগুলি উপকারী।