
পায়ের তলায় ব্যথা হলে কি করতে হবে
ঘুম থেকে ওঠার পর হঠাৎ দেখা গেল মাটিতে পা ফেলা যাচ্ছে না। পায়ের তালুতে তীব্র ব্যথা। এটা চলাফেরা বা জীবনযাপন সংক্রান্ত কোনো কারণে হতে পারে। আবার কোনো কোনো রোগের উপসর্গ হিসেবেও এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। পায়ের তালুতে ব্যথার অনেক কারণের মধ্যে প্লান্টার ফ্যাসাইটিস অন্যতম। এটা খুবই বিরক্তিকর ও বেদনাদায়ক, যা দৈনন্দিন চলাফেরায় বিঘ্ন সৃষ্টি করে। হঠাৎ খেলাধুলার পরিমাণ বাড়িয়ে দিলে, পায়ের জুতা বিশেষ করে শক্ত সোলের ভারী জুতা পরলে, উঁচু-নিচু স্থানে হাঁটলে বা দৌড়ালে; এ ছাড়া কিছু রোগ যেমন- গাউট, এনকাইলোসিং স্পন্ডেলাইটিস, রেইটার্স ডিজিজ ইত্যাদি কারণে এ রোগ হতে পারে।
কারণ
সাধারণত প্লান্টার ফাসাতে অতিরিক্ত টান বা স্ট্রেস পড়লে কিংবা ফাসাতে কোনো কারণে আঘাত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্লান্টার পাসাইটিস হতে পারে। এছাড়াও আরও কিছু কারণ হলো-
১. প্রতিদিন দীর্ঘ সময় পায়ের পাতার উপর একটানা দাঁড়িয়ে থাকলে।
২. দীর্ঘ সময় গোড়ালিতে চাপ পড়ে এমন কাজ করলে।
৩. শক্ত ফ্লাট জুতা পড়লে।
৪. পায়ের পাতার অস্বাভাবিক বাঁকা থাকলে।
৫.সঠিক পরিমাপের জুতা ব্যবহার না করা।
৬.পায়ের পিছনের কাফ মাসল অথবা TA টাইট থাকলে।
৭.অতিরিক্ত ওজন বা বিএমআই বেশি।
৮. আঘাতজনিত কারণ।
৯. পেচ কাভাস অথবা পেচ প্লানাস ডিফর্মিটি এর জন্য।
১০. ডায়াবেটিস ম্যালাইটাস থেকে।
প্রতিরোধ করার উপায়
ওজন বেশি থাকলে কমানো, দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে না থাকা, নরম সোলের জুতা পড়া, খালি পায়ে শক্ত জায়গায় না হাঁটা, পায়ের তালুর উপর অত্যধিক ভর না দেয়া।
চিকিৎসা ও করণীয়
এ রোগের চিকিৎসার জন্য একজন ফিজিয়াট্রিস্ট বা ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে সমন্বিত চিকিৎসা নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে জীবনযাত্রার পরিবর্তন, ওষুধ, ব্যায়াম ও ফিজিক্যাল থেরাপি।
১. জীবনযাত্রার পরিবর্তন : ওজন বেশি থাকলে কমানো, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে না থাকা, নরম সোলের ফিট জুতা পরা, খালি পায়ে না হাঁটা, বিছানা থেকে নামার সময় নরম সোলের জুতা বা স্যান্ডেল পরে এরপর নামা, পায়ের তালুর ওপর অত্যধিক ভর না দেওয়া ইত্যাদি।
২. ওষুধ : ব্যথানাশক ওষুধ এবং ব্যথা তীব্র হলে ইনজেকশন দেওয়া যেতে পারে।
৩. ব্যায়াম : প্লান্টার ফ্যাসা স্ট্রেস, ফুট সার্কল, টো কার্ল, টো টাওয়েল কার্ল ইত্যাদি ব্যায়াম। এর সঙ্গে পায়ের তালুতে কিছু ম্যাসাজ করা। ব্যায়ামের আগে ব্যথার জায়গায় বরফ ব্যবহার করা যেতে পারে।
৪. ফিজিক্যাল থেরাপি : ফিজিওথেরাপির মধ্যে আলট্রাসাউন্ড থেরাপি দেওয়া দরকার হয়।
পায়ের তলায় ব্যথায় ঘরোয়া চিকিৎসা
১. জল চিকিত্সা : ব্যথাযুক্ত পায়ের পাতার ব্যথাকে সারিয়ে তুলতে আপনার জন্য সবচাইতে সহজ চিকিত্সাটি হতে পারে জল চিকিত্সা। এক্ষেত্রে দুটি পাত্র নিন। তাদের একটিতে ঠান্ডা জল ও অন্যটিতে সহ্য করতে পারার মতন গরম জল রাখুন। এবার প্রথমে ঠান্ডা জলে পাঁচ মিনিট নিজের পায়ের পাতা ডুবিয়ে রাখুন। এরপর পাঁচ মিনিটের জন্য পা ডোবান গরম দর হয়ে যাবে আপনার পায়ের পাতার ব্যথা একটু হলেও।
তবে বেশি ভালো ফল পেতে পেপারমিন্ট চা বানিয়ে তাতেও ডুবিয়ে রাখতে পারেন আপনার পায়ের পাতা।
২. বল চিকিত্সা : ক্যালিফোর্নিয়ার স্নায়ু-বিশেষজ্ঞ ও ‘ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ স্পোর্টস মেডিসিন’য়ের প্রশিক্ষক কোরিনা আপারিসিও রিয়েল-সিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এর একটি সহজ সমাধান জানান, আর তা হল একটি রাবারের বল। পায়ের তালুতে প্রায় ২০টি ভিন্ন ধরনের পেশি থাকে যা চলাফেলা নিয়ন্ত্রণ, পায়ের ওপর শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখে।
এই বল মাটিতে রেখে পায়ের পাতার নিচে চাপ দিয়ে চারপাশে ঘোরালে এক প্রকার মালিশ করা হয় যা ওই পেশিগুলোর টান টান অবস্থাকে শিথিল করে, পেশির স্থিতিস্থাপকতা এবং নড়াচড়ার ক্ষমতা বাড়ায়।
বসে কিংবা দাঁড়িয়ে এই বল দিয়ে মালিশ করতে পারেন। বলের নিচের সমতল শক্ত হতে হবে। পায়ের পাতা চারভাগে ভাগ করে নিয়ে প্রতিভাগে আলাদাভাবে মালিশ করতে হবে সামনে পিছনে ও ডানে বামে। ৩০ থেকে ৬০ সেকেন্ড সময় দিতে হবে প্রতি পায়ের পেছনে। যেখানে ব্যথা বেশি সেখানে বেশি সময় ব্যয় করতে হবে। চাপ দিতে হবে আলতোভাবে। ব্যথাযুক্ত স্থানে চাপ দেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে, সহ্যের বাইরে চলে যায় এমনভাবে চাপ দেওয়া যাবে না।
৩. পেন্সিল চিকিত্সা : একজন মানুষের শরীরের মাথা থেকে পা পর্যন্ত পুরোটাকে ঠিকঠাক রাখার অন্যতম উপায় হচ্ছে সেগুলোকে নাড়ানো। একটু শরীরচর্চা করা। ব্যয়াম করা। আর তাই পায়ের পাতার ক্ষেত্রেও কেন সেটা বাদ থাকবে? তাই পায়ের পাতার ব্যায়ামের জন্যে প্রথমে মেঝেতে কিছু পেন্সিল ফেলুন। এরপর সেগুলোকে তুলে ফেলুন। তবে কেবল পায়ের আঙ্গুলের সাহায্যে। পেন্সিল ছাড়াও এক্ষেত্রে লাঠি বা অন্যকিছু ব্যবহার করতে পারেন আপনি।
৪. দেয়াল চিকিত্সা : এটি কেবল হিলের করণে তৈরি হওয়া পায়ের ব্যথার ক্ষেত্রেই কার্যকরী। মূলত, ব্যথা দূর করাই নয়, এর আরেকটি উদ্দেশ্য হিলের সাথেই পাকে মানিয়ে নেওয়ার। এক্ষেত্রে হিল পায়ে থাকা অবস্থাতেই দেয়াল থেকে তিন ফুট দূরত্বে দাঁড়ান। এবার আপনার দুটো হাত দেয়ালে সোজা করে লাগান। ডান পাকে সামনে নিয়ে আসুন আর বাঁ পাকে সোজাই রেখে দিন। এভাবে খুব অল্প করে হলেও হিলের সাথে নিজের পায়ের ব্যথার সম্পর্কটাকে ভাঙতে পারবেন আপনি।