চোখ ভালো রাখার সহজ উপায়
চোখ শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। তাই তাদের সঠিক যত্ন নেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। চোখ সংক্রান্ত সামান্য সমস্যা হলে তা অবহেলা করবেন না। দীর্ঘ সময় চোখ সংক্রান্ত সমস্যাকে উপেক্ষা করলে দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বা দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হতে পারে। চোখের সমস্যা হলে সব কাজেই ঝামেলায় পড়তে হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, গাড়ি চালানো, পড়াশোনা করা, টিভি দেখার সমস্যা হতে পারে। পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাবে চোখের ক্ষতি হয়। তাই উপযুক্ত খাবার খাওয়া প্রয়োজন। চোখ ভালো রাখতে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
১. ফল ও সবজি
চোখ ভাল রাখতে গাজরের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাক-সব্জি, বাদাম, কমলালেবু খান। টাটকা শাক-সব্জিতে থাকে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, ভিটামিন ‘এ’ এবং ভিটামিন ‘সি’। যা চোখের কর্নিয়া ভাল রাখতে সাহায্য করে। ছানি পড়ার হাত থেকেও বাঁচায়।
২.আখরোট
আখরোটে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই, জিঙ্ক এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। দৃষ্টিশক্তি উন্নত করার জন্য দারুণ উপকারী আখরোট। পুষ্টিবিদরা পরামর্শ দিচ্ছেন যে, চোখের সুস্বাস্থ্যের জন্য নিয়মিত একমুঠো আখরোট খাওয়া যেমন উপকারী, তেমনই দুধ, দই এবং পনিরের সঙ্গে মিশিয়েও খেতে পারেন। এর জন্য আখরোট, পনির, দুধ, দই এবং নুন একসঙ্গে মিক্সিতে ব্লেন্ড করে নিন। এবার মিক্সি থেকে বের করে সেটিকে ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে নিন। ঠান্ডা ঠান্ডা খেতে উপাদেয় লাগবে। সুস্বাদু তো বটেই। তারসঙ্গে উপকারীও।
৩. ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড চোখের স্নায়ুকোষগুলিকে সুস্থ রাখে। রেটিনাকে সুরক্ষিত রাখে। তাই চোখ ভাল রাখতে স্যামন, টুনা, হ্যালিবাটের মতো ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ খান।
৪.ডিম
ডিমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং উপকারী উপাদান রয়েছে। চোখ শুকিয়ে যাওয়া এবং অন্ধত্ব প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে ডিম। তাই চোখের স্বাস্থ্যের জন্য প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় ডিম রাখতে ভুলবেন না।
৫.পানি পান করা
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, চোখ ভালো রাখতে গেলে, সারাদিনে প্রচুর পরিমানে জল খাওয়া প্রয়োজন। রোজ অন্তত ৬ থেকে ৮ গ্লাস জল খেতে হবে। তার ফলে একদিকে যেমন চোখ পরিষ্কার এবং সুস্থ থাকবে, তেমনই ডিহাইড্রেশনেরও চিন্তা থাকবে না।
৬. ধূমপান ছাড়ুন
অতিরিক্ত ধূমপান চোখের ক্ষতি করে। রেটিনা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। পাশাপাশি, এর ফলে ক্ষতি হয় চোখের স্নায়ুকোষগুলিরও।
৭.ধুলো-ময়লা
প্রতিদিন কাজের শেষে চোখ ঠান্ডা ও পরিষ্কার জল দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। সূর্যালোকের অতিবেগুনি রশ্মি চোখের পক্ষে ক্ষতিকর। তাই রোদে বেরোলে অবশ্যই সানগ্লাস পরা উচিত। যাঁদের এমনিতেই চশমা পরতে হয়, তাঁদের ফটোক্রোমেটিক লেন্স ব্যবহার করা আরামদায়ক হবে। চোখ ভালো রাখতে প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঠান্ডা ও পরিষ্কার জল দিয়ে চোখ ভালোভাবে ধুয়ে ঘুমানো শ্রেয়।
৮.চোখের ব্যায়াম
মাথা স্থির রেখে ক্লকওয়াইজ চোখের মণি ১০বার ও এন্টি ক্লকওয়াইজ ১০বার ঘোরান। এটি করলে চোখের লাল ভাব ও ভার হওয়া থেকে রক্ষা পাবেন। চোখ বন্ধ করে চোখের মণি উপর থেকে নীচে ও নীচ থেকে উপরে তুলুন। এইভাবে ৫-১০বার করুন।
চোখের সামনে একটি কলম বা ফুল ধরে এগিয়ে আনুন যতক্ষণ না সেটার উপর চোখ তার ফোকাস হারাচ্ছে এবং সেটা ঘোলাটে দেখছেন। এরপর আস্তে আস্তে সেটা চোখের থেকে দূরে নিয়ে গিয়ে সেটার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করুন। এইভাবে কয়েক বার করতে থাকুন।
৯. চোখে পানির ঝাপটা
দিনে ১০ থেকে ১৫ বার চোখে পানির ঝাপটা দিন। তাতে চোখ ঠান্ডা থাকে। চোখ আর্দ্র হয় ও রক্তসঞ্চালন বাড়ে। তবে বরফজল বা মাত্রাতিরিক্ত গরম পানি দেবেন না।
১০. মাছ
যেসব মাছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, সেগুলো চোখের জন্য বেশ উপকারী। স্যামন, সার্ডিন, ম্যাকরেল, কড, টুনা এ সমস্ত মাছ চোখের দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে এবং চোখকে নানা সমস্যা থেকে দূরে রাখে।
১১. পর্যাপ্ত ঘুম
প্রতিদিন রাতে পর্যাপ্ত ঘুমের ফলে চোখ ভাল থাকে। ঘুমের সময় চোখের পেশি শিথিল হয়। চোখও সতেজ থাকে। কম ঘুমে চোখের পেশিতে চাপ পড়ে। ফলে চোখ জ্বালা হতে পারে।
১২. নিয়মিত চোখ পরীক্ষা
বছরে অন্তত দু’বার নিয়ম করে চোখ পরীক্ষা করানো জরুরি। এতে ছানি, গ্লুকোমা বা রেটিনার ম্যাকুলার ক্ষয়ের মতো মারাত্মক সমস্যা অল্পেই ধরা পড়ে।