শিশুর মুঠোফোন আসক্তি দূর করার উপায় - Ways to get rid of mobile phone addiction in children
বর্তমান যুগে মোবাইল খুবই প্রয়োজনীয় এবং অপরিহার্য বস্তু। কিন্তু এর মন্দ দিকটা হলো—ক্রমাগত ও অত্যধিক ব্যবহার এর প্রতি আসক্তি তৈরি হয়। টিভি, মোবাইল গেম বা যেকোনো ধরনের ভার্চুয়্যাল বিনোদনের সময় মস্তিষ্কের কোষ থেকে ডোপামিন নিউরোট্রান্সমিটার নিঃসৃত হয়। এই ডোপামিন আমাদের মনে এক ভালো লাগার অনুভূতি সঞ্চার করে। তার ফলে অতি সহজেই আমরা আসক্ত হয়ে পড়ি। মুঠোফোনের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার শৈশবে সামাজিক এবং মানসিক বিকাশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। যেসব শিশু বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ক্রিয়াকলাপ যেমন খেলাধুলা, দৌড় বা সাইকেল চালানোর সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকে, তারা মোবাইল বা ভিডিও গেমে আসক্ত হয় বেশি। এতে বাধাগ্রস্ত হয় তাদের নানা রকম দক্ষতার বিকাশ। এর কারণে কোনো কিছুতে মনোনিবেশ এবং বাস্তব জীবনে কার্যকর যোগাযোগ গড়ে তোলার ক্ষমতাও বিঘ্নিত হয়। এ ছাড়া চোখের ক্ষতি তো আছেই।
মুঠোফোন আসক্তির সমস্যা
১.পারিবারিক ও সামাজিক জীবনধারা বাধাগ্রস্ত হবে মা–বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়বে।
২.একা থাকার প্রবণতা বাড়বে। সামাজিক অনুষ্ঠান বর্জন করার কারণে আসক্তরা নিজের ভেতর গুটিয়ে যায়।
৩.নিজের যত্ন কম করে। পরিমিত খাদ্য গ্রহণ না করার কারণে অপুষ্টিতে ভোগে, সারাক্ষণ বসে-শুয়ে থাকার জন্য মোটা হয়ে যায়।
৪.পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হলে স্বাভাবিক যৌনজীবন নষ্ট হবে।
৫.চোখের দৃষ্টি নষ্ট হবে। ঘাড়ে ব্যথা হবে।
৬.ব্যক্তিগত জীবন বাধাগ্রস্ত হবে। পড়াশোনা ও কর্মজীবনের মান কমে যাবে।
৭.সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা কমে যাবে।
৮.জেদি, অতিচঞ্চল হয়ে উঠবে।
৯.অতি উদ্বিগ্নতা, বিষণ্নতা এবং তীব্র মানসিক চাপের মতো মানসিক রোগ দেখা দিতে পারে।
১০.শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাঘাত ঘটায়। শিশুরা ভায়োলেন্ট হয়ে ওঠে। কখনো নিজের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বা অপরকে আঘাত অথবা হত্যা করার প্রবণতাও দেখা দিতে পারে।
১১.সাইবার অপরাধের শিকার হতে পারে।
শিশুর মুঠোফোন আসক্তি দূর করার উপায়
পরিবার থেকে একটু সচেতন থাকলে এ সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব। শিশুদের স্মার্টফোন আসক্তি কমাতে বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন। করণীয়—
১.মনে রাখবেন, বাড়ির খুব দরকারি যন্ত্রগুলোর মতো (ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ইত্যাদি) মোবাইল ফোনও একটি অতিপ্রয়োজনীয় জিনিস। এটা শিশুর খেলার সামগ্রী নয়। শিশুদের বুঝিয়ে বলুন টিভি বা মোবাইলের আসক্তির খারাপ দিকগুলো।
২.শিশুদের একাকিত্ব দূর করার চেষ্টা করুন। নানা ধরনের অ্যাকটিভিটি প্ল্যান করুন। যেমন নাচ, গান, অবৃত্তি, বাদ্যযন্ত্র বাজানো শেখান। সমবয়সী শিশুদের সঙ্গে মিশতে ও খেলতে দিন।
৩.শিশুদের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করতে পারলে খুব ভালো। ছোটবেলা থেকে রোজ রাতে শোবার আগে সন্তানকে যদি বই থেকে গল্প পড়ে শোনান, তাহলে তার মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠবে।
৪.মাঝেমধ্যে তাদের নিয়ে খেলাধুলা করতে বা ঘুরতে যান। শৈশবকে উপভোগ্য করে তুলুন। যারা শহরে থাকেন, তারা সপ্তাহে এক দিন বা মাসে দুই দিন শিশুকে নিয়ে প্রকৃতির কাছে যেতে পারেন।
৫.ইন্টারনেটে কী ধরনের ভিডিও শিশুরা দেখছে, লক্ষ রাখুন।
৬.শিশুদের প্রযুক্তি ব্যবহার ও স্ক্রিন টাইমের সময় নির্দিষ্ট করে দিতে হবে।
৭.শিশুদের ঘরের কাজে দায়িত্ব দিন। সংসারের ছোট ছোট কাজে সহযোগিতা করতে উৎসাহিত করুন।
৮.শিশুকে খাওয়ানোর সময় বা ঘুমোতে যাওয়ার আগে মোবাইল গেম, কার্টুন দেখানোর বা গ্যাজেটের অভ্যাস করবেন না। এ সময় গল্প শোনানোর অভ্যাস করুন।
৯.নিজেদের ব্যস্ততার জন্য সন্তানকে মোবাইল গেমে, ভিডিওতে আসক্ত করা অপরাধের শামিল। অনেক অভিভাবক নিজেও ফেসবুক বা টিভি সিরিয়াল, গেম বা গ্যাজেটে আসক্ত। সন্তানকে গুণগত সময় দিন।