চোখ ওঠা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
জীবনে একবারও চোখ ওঠেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। আর পরিবারে কারো চোখ ওঠেছে কিন্তু অন্য কেউ আক্রান্ত হয়নি এমন ঘটনা কম ঘটে। কিন্তু চোখ উঠলে চিন্তার কিছু নেই। সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে চোখ ওঠা আপনা আপনি ভালো হয়ে যায়। বিশেষ করে আমাদের দেশে শীতকালীন আবহাওয়ায় চোখ ওঠার সমস্যা বেশি দেখা দেয়। তবে চোখ ওঠার পরে অবশ্যই চোখের বাড়তি যত্ন নিতে হয়।
চোখ উঠা বা Conjunctivitis কি
চোখ উঠা (ইংরেজি: Conjunctivitis) হচ্ছে চোখের ভাইরাসজনিত ইনফেকশন। সাধারণভাবে প্রচলিত কথা ‘চোখ ওঠা’ বলতে চোখ লাল হওয়া বুঝানো হয়ে থাকে। কিন্তু চোখ লাল হওয়া একটি উপসর্গ মাত্র। বিভিন্ন কারণে চোখ লাল হতে পারে। যেমন-জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে, এডিনো ভাইরাসজনিত কারণে, হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাসজনিত কারণে, স্কেলেরার ইনফেকশনজনিত কারণে, ইউভিয়াল টিস্যু ইনফেকশনজনিত কারণ ইত্যাদি। তবে ভাইরাস কেরাটাইটিস বা হারপেম সিমপেক্স ভাইরাসজনিত ইনফেকশনই মুলত ভাইরাসজনিত ইনফেকশন। এ ধরনের ইনফেকশনে সাধারণত এক চোখ আক্রান্ত হয়ে থাকে।
চোখ ওঠার কারন
জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে, এডিনো ভাইরাস, স্কেলেরার ইনফেকশন, হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস, ইউভিয়াল টিস্যু ইনফেকশন ইত্যাদি নানান কারণে চোখ লাল হতে পারে। ভাইরাস কেরাটাইটিস অথবা হারপেম সিমপেক্স ভাইরাসজনিত ইনফেকশনই মুলত ভাইরাসজনিত ইনফেকশন। সাধারণত এ ধরনের ইনফেকশনে এক চোখ আক্রান্ত হয়। এছাড়াও ময়লা, ধূলাবালি, ঔষধ, কেমিক্যালস্ অথবা প্রসাধনী ব্যবহারের সময়ও প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে।
চোখ ওঠার লক্ষণ ও উপসর্গ
১. চোখের সাদা অংশ লাল হয়ে যাওয়া।
২. চোখের পাতা ফুলে যাওয়া।
৩. চোখ দিয়ে পানি পড়া।
৪. চোখে জ্বালাপোড়া করা।
৫. চোখে হলুদ, সাদা রঙের ময়লা জমা।
৬. ঘুম হতে ওঠার পর চোখের দুই পাতা একসঙ্গে লেগে থাকা।
৭. হালকা জ্বরসহ মাথাব্যথা।
কীভাবে চোখ উঠার জীবাণু ছড়ায়
চোখে ভাইরাস দিয়ে প্রদাহ হলে চোখের পানিতে ভাইরাস ভেসে বেড়ায়। যখন এই অশ্রু মুছতে যাই, তখনই এটি আমাদের হাতে এসে যায়। এরপর থেকেই সেই হাত দিয়েই আমরা যা কিছুই ছুঁই না কেন, সেখানে ভাইরাস চলে আসে। যেমন কারোর সঙ্গে করমর্দন, টিভি, এয়ারকন্ডিশনার রিমোট, ব্যবহৃত তোয়ালে, বিছানার চাদর, বালিশের কভার, এমনকি মুঠোফোন ইত্যাদিতে চলে আসতে পারে। এ জন্যই আক্রান্ত ব্যক্তিকে এই সময়ে বাসায় থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়। তার ব্যবহৃত জিনিসপত্রও কিছুটা আলাদা রাখা ভালো।
১. চোখ ওঠা খুবই ছোঁয়াচে রোগ। সাধারণত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে এটি হয়। অপরিষ্কার হাত, আক্রান্ত ব্যক্তির স্পর্শে, আক্রান্ত ব্যক্তির তোয়ালে, গামছা ব্যবহারে চোখ উঠতে পারে।
২. অ্যালার্জি ধুলাবালির মাধ্যমে।
৩. চোখের কসমেটিকস ব্যবহারে চোখ উঠতে পারে।
চিকিৎসা
যেসব কারণে চোখ ওঠে, সেসব বিষয় থেকে দূরে থাকতে হবে।
১. হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে চোখ পরিষ্কার রাখতে হবে এবং চোখের পাতাগুলো খোলা রাখতে হবে।
২. চোখে কালো চশমা পরতে পারেন।
৩. পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ভিটামিনযুক্ত খাবার খান।
৪. ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার নিয়ম মেনে চলুন।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন
১. যখন আপনার চোখ থেকে ঘন হলুদ কিংবা সবুজাভ হলুদ রঙের ময়লা পদার্থ বের হয়।
২. চোখ ব্যথা থাকলে।
৩. চোখে ঝাপসা দেখতে পেলে অথবা দেখতে সমস্যা হলে।
৪. রোদে গেলে কিংবা কোনো অ্যালার্জিক বস্তুর জন্য চোখে অসুবিধা অনুভব করলে।
৫. চোখের সাদা অংশ ফুলে উঠলে কিংবা লাল হয়ে গেলে।
যা করবেন না
১. কোনো চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া চোখের ড্রপ ও ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না।
প্রতিকার
১. চোখ ওঠা খুবই ছোঁয়াচে রোগ। পরিবারের একজনের থেকে অন্যজনের হতে পারে। সুতরাং এসব ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধের জন্য পরিবারের সবাই কাপড়, তোয়ালে ও অন্যান্য জিনিস আলাদা ব্যবহার করুন।
২. চোখে হাত দেবেন না।
৩. ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ভালোমতো পরিষ্কার করুন।
৪. যেসব জিনিসে অ্যালার্জিক তা থেকে দূরে থাকুন।
৫. আক্রান্ত হলে ঘরে বিশ্রাম নিন।
প্রতিরোধ
চোখ উঠা রোগ থেকে বাঁচতে হলে প্রতিরোধ ব্যবস্থা মেনে চলা উত্তম। প্রতিরোধ ব্যবস্থাগুলো হল:
১.এক জনের ব্যবহৃত তোয়ালে অন্যজন ব্যবহার না করা।
২.আক্রান্ত চোখ স্পর্শ করলে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া।
৩.ডাক্তারের পরামর্শমত সঠিকভাবে সঠিক সময় ঔষধ নেয়া।
৪.ঘনঘন চোখ ঘষা থেকে বিরত থাকা ও চোখে বার বার পানির ঝাপসা না দেয়া।
৫.অসুস্থ চোখে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করা যাবে না।
৬.ধূলা-বালি ও সূর্যের আলো থেকে চোখ রক্ষায় কালো সানগ্লাস ব্যবহার করতে হবে।
৭.পুকুরের পানিতে গোসল করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৮.চোখ উঠা ছোঁয়াচে রোগ। তাই পরিবারের অন্যান্যদের সাথে মেলামেশা কমানো উচিৎ।
৯.শিশুদের চোখ উঠলে হালকা বা কুসুম গরম পানি দিয়ে চোখ পরিষ্কার করতে হবে। চোখের পাতা খোলা রাখতে হবে। তবে জোর করে চোখ খোলার চেষ্টা করবেন না।
সতর্কতা
যেসব সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে তা হলো-ধুলাবালি, আগুন-আলো-রোদে কম যাওয়া, ময়লা-আবর্জনাযুক্ত স্যাতসেঁতে জায়গায় না যাওয়া, পুকুর বা নদী-নালায় গোসল না করা, চোখে কালো চশমা ব্যবহার করা, টিভি না দেখা। সম্ভব হলে ১০ থেকে ১৫ দিন সম্পূর্ণ বিশ্রাম নেয়া এবং চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া।
চোখের যেকোনো রোগেই অবহেলা করবেন না। কারণ সামান্য ভুলের জন্য সারাজীবন আফসোস করা লাগতে পারে। উপরের পরামর্শগুরো কেবলই সচেতনতার জন্য। চোখের যেকোনো সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি।