
কাঁচা মরিচ বা কাঁচা লঙ্কার খাওয়ার গুণাগুণ ও অপকারিতা-Benefits and harms of eating green chillies
মরিচ বা কাঁচা লঙ্কা এক প্রকারের ফল যা মসলা হিসাবে ঝাল স্বাদের জন্য রান্নায় ব্যবহার করা হয়। ক্যাপসিকাম (Capsicum) গণের সোলানেসি (Solaneceae) পরিবারের উদ্ভিদের ফলকে সাধারণভাবে মরিচ বলা হয়ে থাকে। মরিচের ফলকে মসলা হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
বেশিরভাগ মানুষ ঝাল খাবার খেতে পছন্দ করেন। ঝাল খাবার তৈরির সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান হলো মরিচ। এই মরিচ আবার নানাভাবে খাবারে ব্যবহার করা হয়। যেমন ধরুন কাঁচা মরিচ, শুকনো মরিচ, মরিচের গুঁড়া ইত্যাদি। রান্নায় তো ব্যবহার হয়ই, পাশাপাশি খাবারের সঙ্গে অনেকে কাঁচা মরিচ খেয়ে থাকেন।
কাঁচা মরিচে আছে রাইবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, আয়রন, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ, থিয়ামিন, ডায়েটারি ফাইবার ইত্যাদি। এছাড়াও কাঁচা মরিচ খেলে আরও মিলবে ম্যাগনেসিয়াম, কপার, পটাসিয়াম, ভিটামিন এ, সি, কে, বি৬। আর এই সবগুলো উপাদানই আমাদের শরীরের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। চলুন জেনে নেয়া যাক প্রতিদিন কাঁচা মরিচ খাওয়ার উপকারিতা-
ভালো থাকে হার্ট
হার্টের সমস্যা থেকে বাঁচতে প্রতিদিন কাঁচা মরিচ খাওয়ার অভ্যাস করুন। কাঁচা মরিচে থাকা উপকারী উপাদান আমাদের রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়, সেইসঙ্গে নিয়ন্ত্রণে রাখে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রাও। এটি ব্লাড ক্লট হতেও বাঁধা দেয়। যে কারণে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা কমে। সেইসঙ্গে দূরে থাকে হার্টের নানা সমস্যাও।
ক্যান্সারের আশঙ্কা কমায়
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর কাঁচা মরিচ। নিয়মিত কাঁচা মরিচ খেলে শরীরের ক্ষতিকর উপাদান বের হয়ে যায়, মেলে নানা উপকার। পাশাপাশি ক্যান্সারের সেল জন্ম নেয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়। তাই ক্যান্সার থেকে বাঁচতে নিয়মিত কাঁচা মরিচ খান।
হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে
কাঁচা মরিচ খাওয়া মাত্র শরীরে ভিটামিন সি-এর মাত্রা যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি স্যালাইভার উৎপাদনও বৃদ্ধি পায়, যে কারণে হজম ক্ষমতার এত মাত্রায় উন্নতি ঘটে যে গ্যাস, অম্বল এবং বদহজমের মতো সমস্যা দূরে পালায় চোখের পলকে। ডায়েটারি ফাইবারে পরিপূর্ণ হওয়ার কারণে কাঁচা মরিচ হজমের জন্য খুবই উপকারী। এ ছাড়া ঠাণ্ডার সঙ্গে লড়তে সাহায্য করে কাঁচা মরিচ। হঠাৎ ঠাণ্ডা সমস্যা ও সাইনাসের সমস্যা থেকে বাঁচায় কাঁচা মরিচের থাকা ক্যারাসাসিন।
সাইনাস দূরে রাখে
কাঁচা মরিচে থাকা ক্যাপসিসিন শরীরের নানা কাজে লাগে। ঝাল স্বাদও লাগে এই ক্যাপসিসিনের কারণে। এই উপাদান শরীরে প্রবেশ করলে মিউকাস মেমব্রেনের মধ্যে রক্তের প্রবাহ বেড়ে যায়। যে কারণে সাইনাসের ইনফেকশন থাকলে তা দ্রুত কমতে শুরু করে। তাই সাইনাস থেকে বাঁচতে নিয়মিত কাঁচা মরিচ খাওয়ার অভ্যাস করুন।
ওজন নিয়ন্ত্রণে আসে
প্রতিদিন কাঁচা মরিচ খেলে হজম ক্ষমতা এত মাত্রায় বৃদ্ধি পায় যে ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। সেই সঙ্গে শরীরে জমে থাকা ফ্যাট সেলেরা এত মাত্রায় গলতে শুরু করে যে ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে একেবারেই সময় লাগে না।
শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় থাকে
কাঁচা মরিচের স্বাদ কেন ঝাল হয় জানা আছে? এর মধ্যে ক্যাপসিসিন নামক উপাদান এক্ষেত্রে নিজের খেল দেখিয়ে থাকে। এই উপাদানটি স্বাদ গ্রন্থিকে অ্যাকটিভ করে তোলার পাশাপাশি মস্তিষ্কের হাইপোথেলামাস অংশকে অতি মাত্রায় সচল করে তোলে। ফলে শরীরের তাপমাত্র এতটা কমে যায় যে গরমের খারাপ প্রভাব দেহের উপর পরার আশঙ্কা একেবারেই থাকে না।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
প্রতিদিন কাঁচা মরিচ খাওয়ার অভ্যাস থাকলে তা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে। এতে আছে ভিটামিন সি, বিটা ক্যারোটিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এসব উপাদান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে। সেইসঙ্গে এটি দৃষ্টিশক্তি বাড়াতেও কাজ করে। নিয়মিত কাঁচা মরিচ খেলে ত্বক সুন্দর থাকে, ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে না।
চোখ ভালো রাখে
ভিটামিন এ থাকায় এটি সব বয়সী ব্যক্তির দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে ও চোখব্যথা দূর করে।
ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়
মরিচে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি এবং বিটা-ক্যারোটিন। এই দুটি উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে বলিরেখা গায়েব হতে শুরু করে। ফলে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় চোখে পরার মতো। সেই সঙ্গে চুলের স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটে। এই দুটি উপাদান দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটাতেও সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস থেকে বাঁচায়
কাঁচা মরিচ খেলে তা রক্তে শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। যে কারণে দূরে থাকে ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিস থেকে বাঁচতে নিয়মিত কাঁচা মরিচ খাওয়ার অভ্যাস করুন। সেইসঙ্গে যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তারাও এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত কাঁচা মরিচ খেতে পারেন।
মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে
মানসিক চাপ কমাতে দারুণ কাজ করে কাঁচা মরিচ। আপনার যদি খুব বেশি মন খারাপ লাগে তবে কাঁচা মরিচ খেয়ে নিন। এতে মেজাজ দ্রুতই ফুরফুরে হয়ে উঠবে, কমবে মানসিক চাপ। কারণ কাঁচা মরিচ খেলে শরীরে ন্ডোরফিন হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। যে কারণে মানসিক চাপ কমার পাশাপাশি বাড়ে আনন্দও।
চর্বি দূর করে
শুকনো মরিচের গুঁড়ায় রয়েছে ক্যাপসেসিন নামের একটি যৌগ যা শরীরের বিপাকীয় কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি করে এবং চর্বি দূর হতে সাহায্য করে। এ ছাড়া এটি এমন উপযোগী হরমোন তৈরি করে যার ফলে যৌন জীবন উন্নত হয়।
কাঁচা মরিচের পুষ্টিগুণ
এই কাঁচা মরিচ ভিটামিনের এক চমৎকার উৎস। রয়েছে নানা পুষ্টিগুণও। আধা কাপ পরিমাণ কুচি কাঁচা মরিচে প্রায় ৮০০ ইউনিটের বেশি ভিটামিন এ রয়েছে। সমপরিমাণ কাঁচা মরিচ কুচিতে পাবেন প্রায় ১৮২ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, যা একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক ভিটামিন সির চাহিদার সমান।
তবে গবেষকেরা বলছেন, কাঁচা মরিচের ভিটামিন সি তাপ, অতিরিক্ত আলো ও বাতাসের কারণে একটু একটু করে হারায়। তাই তাজা কাঁচা মরিচ না খেতে পারলে তা ঠান্ডা ও অন্ধকার জায়গায় সংরক্ষণ করুন। এ জন্য বাজার থেকে আনা তাজা কাঁচা মরিচ জিপার ব্যাগে মুখ আটকে ফ্রিজে রাখুন এবং তিন-চার দিনের মধ্যেই শেষ করতে চেষ্টা করুন। এ ছাড়া ভিটামিন কে রয়েছে এতে। এতে আছে ভিটামিন এ, সি, বি-৬, আয়রন, পটাশিয়াম এবং খুবই সামান্য পরিমাণে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট।
কাঁচা মরিচ খাওয়ার অপকারিতা
কাঁচা মরিচ যেমন খাদ্যের রুচি বাড়াতে পারে তেমনি এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। অনেকেই যারা ঝাল খাদক এবং কাঁচা মরিচ খেতে পছন্দ করেন তাদের জন্য কাঁচামরিচ খাওয়ার অপকারিতা গুলো জানা বিশেষ করে জরুরী। তাহলে চলুন এবার কাঁচা মরিচ খাওয়ার অপকারিতা গুলো কি তা জেনে নিন।
১। অতিরিক্ত কাঁচামরিচ খাওয়ার ফলে আপনার পেট ব্যথা হতে পারে।
২। অন্ত্রে জ্বলন্ত সংবেদন হতে পারে।
৩। আলসারের মতো সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
৪। চামড়া জ্বালা হতে পারে।
৫। অতিরিক্ত কাঁচামরিচ খাওয়ার ফলে আপনার পেটের বিভিন্ন পিড়া দেখা দিতে পারে।
৬। অম্ল ,মাথা ব্যথা, পেট ব্যথার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৭। অনেক সময় অতিরিক্ত কাঁচামরিচ খাওয়ার ফলে ডায়রিয়াই আক্রান্ত হতে পারেন।
তাই আমাদের সকলের নিয়ম মেনে কাঁচামরিচ খাওয়া উচিত। আশা করি কাঁচা মরিচ খাওয়ার অপকারিতা গুলো বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন। এবং কাঁচা মরিচ খাওয়ার নিয়ম অনুযায়ী অবশ্যই আমাদের কাঁচা মরিচ খাওয়া উচিত।