চঞ্চল শিশুকে সামলাতে করণীয় - How to deal with a fussy child
Hyperactive child

সন্তান অতিরিক্ত চঞ্চল? সামলাতে কী করবেন

শিশুরা চঞ্চল হবে এটাই তো স্বাভাবিক। তবে অতিরিক্ত চঞ্চলতার সঙ্গে যদি অমনোযোগিতাও লেজুড় হয়, তাহলে চিন্তার বিষয় বৈকি! সাধারণত ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বাচ্চার মধ্যেই এই সমস্যা থাকে। তবে এর মধ্যে বেশিরভাগ শিশু ভালো হয়ে যায় বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে। শিশু চঞ্চল হলে কোনও সমস্যা হয় না। তবে এর সঙ্গে আরও কিছু বিষয় যোগ হলে তবেই তা ভাবনার বিষয়।  শিশুর এধরনের সমস্যাকে বলা হয় অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার।

এই শিশুদের মস্তিষ্ক স্থির থাকে না। কোনও একটা জায়গায় কয়েক মিনিটের বেশি তারা টিকতে পারেনা । এরা চোখের সামনেই এমন সব কাণ্ড ঘটিয়ে বসে যে বাবা-মায়েদের পক্ষে এদের সামাল দেওয়া বেজায় মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়।

কি দেখে বুঝবেন যে আপনার সন্তান বেশি চঞ্চল

১. আপনার সন্তান খুব ছোটাছুটি করতে পারে। আমাদের আশেপাশের অনেক শিশুই প্রয়োজন ছাড়াই এদিক-ওদিক ছোটাছুটি ও লাফালাফি করছে। আবার কখনো এটা ওটা ভাঙছে, এক জায়গায় স্থির থাকছে  না, ক্লাসে বসে থাকে না, মনোযোগ দিতে পারে না। সবসময় তারা অস্থির হয়ে থাকে। এমন হলে মিশুকে সামলানো মুশকিল হতে পারে।

২. অতিমাত্রায় চঞ্চল শিশুরা লেখাপড়া, টিভি দেখা, খেলাধুলা করতে গেলে বেশিক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না। যেখানে মনোযোগের বেশি প্রয়োজন যেমন ক্লাসে, হোমওয়ার্ক করতে, কোথাও কোনো লাইনে দাঁড়াতে- এই জায়গাগুলোতে চঞ্চল শিশুরা খুবই অধৈর্য হয়ে পড়ে অন্য শিশুদের তুলনায়। এক্ষেত্রে বাবা-মার সতর্ক হওয়া উচিত যে শিশুর মধ্যে কোনো সমস্যা আছে কিনা।  তারপর যাচাই করা উচিৎ।

৩. অনেক সময় চঞ্চল শিশুরা হঠাৎ করেই যা মন চাচ্ছে তাই করছে, জিনিসপত্র ভাঙছে, গরম কিছুতে হাত দিচ্ছে, বৈদ্যুতিক সুইচে হাত দিচ্ছে। এতে করে তাদের ভয়ংকর পরিস্থিতি হয়ে বসতেই পারে। কেউ নিষেধ করলে সেই কাজ সে আরও বেশি করে করতে চাইবে।

৪. অন্যান্য লক্ষণের মধ্যে অবাধ্যতা, লেখাপড়ার ব্যাঘাত ঘটানো, মুরব্বিদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা, অল্পতে ক্ষেপে যায়, রেগে যায়, শিশুর মনের আবেগ উঠানামা করা, ঘরের ভাইবোন মা-বাবা, পাড়া-প্রতিবেশীরা অর্থাৎ সবাই শিশুর আচরণে বিরক্তবোধ করতে শুরু করলে বোঝাই যায় সে একটু অস্বাভাবিক চঞ্চল।

সন্তান অতিরিক্ত চঞ্চল হলে সামলাতে কী করবেন

অতিরিক্ত চঞ্চলতা কখনো মেনে নেওয়া উচিৎ নয়। অভিভাবকদের উচিৎ তাদের দিকে লক্ষ্য রাখা। চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ। সেই মতো চিকিৎসাও নিতে হতে পারে। সেই মতো ওষুধ ও অন্যান্য নিয়মকানুন মেনে চললে এসব শিশু স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে।

আর শিশুর চঞ্চলতাকে কখনো প্রশ্রয় দেবেন না। তাকে নিষেধ করবেন, সময় নিয়ে বোঝাবেন যে তার কোনটা করা উচিৎ নয়।

​সঠিক খাদ্যাভ্যাস

বিজ্ঞানীরা আজকাল বলছেন, এ ধরনের শিশুদের ক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনলে ফল পাওয়া যায়। যেসব শিশুর রক্তে অ্যামোনিয়া বেশি, তারা ক্ষারধর্মী খাবার এড়িয়ে চলবে। আবার যাদের ল্যাকটিক অ্যাসিড বেশি, তারা দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার কম খেলেই ভালো। ক্ষারধর্মী খাবার হলো সব ধরনের ডাল, শাক, কিছু ফল (জাম্বুরা, আমড়া, লেবু, কমলা ও মাল্টা), শুঁটকি মাছ, চিংড়ি মাছ, বাদাম, অতিরিক্ত লবণ, সয়াসস, টমেটো সস, আচার, নারকেল ইত্যাদি। এ ছাড়া কোমল পানীয়, চকলেট এদের উপসর্গ বাড়িয়ে দিতে পারে। হাইপার অ্যাকটিভ শিশুদের পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। কড লিভার অয়েল এদের ক্ষেত্রে উপকারী প্রমাণিত হয়েছে।

শিশুর আচার-আচরণ ও মনোজগতের ওপর খাদ্যাভ্যাসের প্রভাব অনেক। এ নিয়ে আরও গবেষণা চলছে। সুষম, স্বাস্থ্যকর ও সুশৃঙ্খল খাদ্যাভ্যাস দেহের মতো শিশুর মনের জন্যও যে দরকার, তা এখন প্রমাণিত সত্য।


শক্তির সঠিক ব্য়বহার

ছোট বাচ্চাদের নানা রকমের ক্রিয়াকলাপে জড়িয়ে রাখুন, যাতে তাদের এই চঞ্চলতাকে সঠিক পথে সঞ্চালিত করা যায়। যেমন ধরুন, নাচ, গান, বাস্কেটবল, ক্রিকেট বা সাঁতারের ক্লাসে ভর্তি করে দিন বাচ্চাকে। 

নিউরোবিক্স বা মেন্টাল অ্যারোবিক্সও মস্তিষ্ককে উৎসাহিত করে, সেই সঙ্গে মনোযোগ বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করে। নানা রকমের বোর্ড গেমস, ধাঁধা সমাধান করানোর মতো খেলাও শেখাতে পারেন বাচ্চাকে। তাতে তারা কিছু সময়ের জন্য হলেও শান্ত থাকবে।


মন শান্ত করতে মিউজিক

নানা শারীরিক সমস্যার সমাধানে মিউজিক থেরাপি ব্যবহার করা হচ্ছে। বাচ্চার চঞ্চল মন শান্ত করতে হাল্কা, মেডিটেটিভ অথবা ক্লাসিকাল সঙ্গীত শোনাতে পারেন। এই ধরনের সঙ্গীত মস্তিষ্ককে শান্ত রাখতে সাহায্য করে। তবে ভুলেও বাচ্চাকে হার্ড রক মিউজিক শোনাবেন না যেন! এতে বিপরীত প্রভাব পড়বে বাচ্চার উপর।

​নিয়মিত ম্যাসাজ

মোলায়েম শারীরিক স্পর্শ ও ভালোবাসাপূর্ণ শব্দ এন্ডোর্ফিন্সকে উত্তেজিত করার কার্যকরী উপায়। হাইপার অ্যাক্টিভ সন্তানকে শান্ত করার জন্য তাদের ভালোবেসে ডেকে তাদের মাথা, চোখ, হাত, পা ও পিঠে হাল্কা ম্যাসাজ করুন। এর ফলে তারা স্বস্তি পাবে ও আনন্দ অনুভব করবে।

শিশুর জেদ তাড়াতে যা করতে পারেন

মনোবিজ্ঞানের একটা নিয়ম হলো, সন্তানের যেসব আচরণে মা-বাবা মনোযোগ দেবেন, সেসব আচরণ সে বারবার করবে। এই মনোযোগ যেমন আমরা আদর বা প্রশংসা করা, দাবি পূরণ করার মাধ্যমে দিতে পারি, তেমনি ‘বকা দেওয়া’, ‘বোঝানো’র মাধ্যমেও হতে পারে। কিন্তু কোনো কিছু কেনার জন্য জেদ করলে, সেটা কিনে দিলে  জেদ করার প্রবণতা আরও বাড়বে।

শিশুর জেদ দূর করার দোয়া

أَفَغَيْرَ دِينِ اللَّهِ يَبْغُونَ وَلَهُ أَسْلَمَ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا وَإِلَيْهِ يُرْجَعُونَ

উচ্চারণ: আফাগাইরা দ্বি-নিল্লাহি ইয়াবগুন, ওয়ালাহু আসলামা মান ফিস্-সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্ব, তাউআং ওয়া কারহাং; ওয়া ইলাইহি ইয়ুরজাঊন।

অর্থ : ‘তারা কি আল্লাহর দেওয়া জীবন ব্যবস্থার পরিবর্তে অন্য জীবন ব্যবস্থা তালাশ করছে? নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে যা কিছু আছে— স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক তার অনুগত হবে। সবাই তার কাছে ফিরে যাবে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৮৩)

ফজিলত ও হাদিস : যে ব্যক্তির সন্তান বা প্রাণী তাকে কষ্ট দেয়, সে যেন তার কানে সূরা আল ইমরানের ৮৩ নং আয়াত পড়ে। (আল-মুজামুল আউসাত লিত্ তাবারানি, হাদিস : ৬৪)


শিশুর জেদ দূর করার আমল

সন্তানের অতিরিক্ত জেদ থাকলে, কথা না শোনলে, কথা না মানলে প্রতিদিন ৭ বার সন্তানের কপালের উপরিভাগের চুলে হাত রেখে এ আয়াতখানা পাঠ করে তার চেহারা ও কানে ফুঁ দিলে— জেদ কমে আসে। এ আমল নূন্যতম ২১ দিন লাগাতার করতে হয়।

তথ্যসূত্র: ittefaq.com.bd,
পিপুল গাছের উপকারিতা
কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা - Home Remedies for Kidney Disease
নিম ডাল দিয়ে দাঁত মাজার উপকারিতা - Benefits of brushing teeth with neem dal
আই মেকআপ করার নিয়ম - Eye makeup rules
চুল পড়া বন্ধ এবং মাথায় নতুন চুল গজাতে ঘরোয়া উপায়
জেনে নিন শসা খাওয়ার উপকারিতা
আমলকীর উপকারিতা
পায়ের গোড়ালি ফাটার কারণ ও প্রতিকার
ব্রণ দূর করার সহজ ও কার্যকরী ক্রিম - Easy and effective cream to get rid of acne
হালিম তৈরির রেসিপি