
সেরা প্রেমের কবিতা
ভালোবাসার কবিতা (Valobasar Kobita): কবিতা পড়তে ও শুনতে আমরা সবাই পছন্দ করি। বিশেষকরে প্রেমের কবিতা (Premer Kobita) এর প্রতি আমাদের সবার আগ্রহ একটু বেশি থাকে। ভালোবাসা নিয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন “ভালোবেসে সখি নিভৃত যতনে আমার নামটি লিখ তোমার মনেরও মন্দিরে”। শুধু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর নয়, যুগে যুগে যত জ্ঞানি গুনি কবি এর আবির্ভাব হয়েছে, তারা সকলেই কবিতার মাধ্যমে প্রেম ভালোবাসার স্লো গান গেয়েছেন।
১.আছে আমার হৃদয় আছে ভরে– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আছে আমার হৃদয় আছে ভরে,
এখন তুমি যা খুশি তাই করো।
এমনি যদি বিরাজ’ অন্তরে
বাহির হতে সকলই মোর হরো।
সব পিপাসার যেথায় অবসান
সেথায় যদি পূর্ণ করো প্রাণ,
তাহার পরে মরুপথের মাঝে
উঠে রৌদ্র উঠুক খরতর।
এই যে খেলা খেলছ কত ছলে
এই খেলা তো আমি ভালবাসি।
এক দিকেতে ভাসাও আঁখিজলে,
আরেক দিকে জাগিয়ে তোল’ হাসি।
যখন ভাবি সব খোয়ালাম বুঝি
গভীর করে পাই তাহারে খুঁজি,
কোলের থেকে যখন ফেল’ দূরে
বুকের মাঝে আবার তুলে ধর’।
২.তুমিই শুধু তুমি– সৈয়দ শামসুল হক
তোমার দেহে লতিয়ে ওঠা ঘন সবুজ শাড়ি।
কপালে ওই টকটকে লাল টিপ।
আমি কি আর তোমাকে ছেড়ে
কোথাও যেতে পারি?
তুমি আমার পতাকা, আমার কৃষির বদ্বীপ।
করতলের স্বপ্ন-আমন ধানের গন্ধ তুমি
তুমি আমার চিত্রকলার তুলি।
পদ্য লেখার ছন্দ তুমি−সকল শব্দভুমি।
সন্তানের মুখে প্রথম বুলি।
বুকে তোমার দুধের নদী সংখ্যা তেরো শত।
পাহাড় থেকে সমতলে যে নামি−
নতুন চরের মতো তোমার চিবুক জাগ্রত−
তুমি আমার, প্রেমে তোমার আমি।
এমন তুমি রেখেছ ঘিরে−এমন করে সব−
যেদিকে যাই−তুমিই শুধু−তুমি!
অন্ধকারেও নিঃশ্বাসে পাই তোমার অনুভব,
ভোরের প্রথম আলোতেও তো তুমি!
৩.বউ – নির্মলেন্দু গুণ
কে কবে বলেছে হবে না? হবে,বউ থেকে হবে ।
একদি আমিও বলেছিঃ ‘ওসবে হবে না ।’
বাজে কথা । আজ বলি,হবে,বউ থেকে হবে ।
বউ থেকে হয় মানুষের পুনর্জন্ম,মাটি,লোহা,
সোনার কবিতা, —কী সে নয়?
গোলাপ,শেফালি,যুঁই,ভোরের আকাশে প্রজাপতি,
ভালোবাসা,ভাগ্য,ভাড়াবাড়ি ইতিপূর্বে এভাবে মিশেনি ।
ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল,দুইজন্ম এবার মিশেছে,দেখা যাক ।
হতচ্ছাড়া ব্যর্থ প্রেম,গাঁজা,মদ,নৈঃসঙ্গ আমার
ভালোবেসে হে তরুণ,তোমাকে দিলাম,তুমি নাও ।
যদি কোনদিন বড় কবি হও,আমার সাফল্য
কতদূর একদিন তুমি তা বুঝিবে ।
আমি কতো ভালোবাসা দু’পায়ে মাড়িয়ে অবশেষে,
কল্পনার মেঘলোক ছেড়ে পৌঁছেছি বাস্তব মেঘে ।
আজ রাত বৃষ্টি হবে মানুষের চিরকাম্য দাবির ভিতরে ।
তার শয্যাপাশে আমার হয়েছে স্থান, মুখোমুখি,
অনায়াসে আমি তা বলি না, বলে যারা জানে দূর থেকে ।
আমি কাছে থেকে জানি, বিনিময়ে আমাকে হয়েছে দিতে
জীবনের নানা মূল্যে কেনা বিশ্বখানি, তার হাতে তুলে ।
অনায়াসে আমিও পারিনি । ক্রমে ক্রমে, বিভিন্ন কিস্তিতে
আমি তা দিয়েছি, ফুলে ফুলে ভালোবেসে যেভাবে প্রেমিক ।
প্রথমে আত্মার দ্যুতি, তারপর তাকে ঘিরে মুগ্ধ আনাগোনা ।
স্বর্গের সাজানো বাগানে পদস্পর্শে জ্বলে গেছি দূরে, তারপর
পেয়েছি বিশ্রাম । আজ রাত সম্পর্কের ভিতরে এসেছি ।
সবাই মিলবে এসে মৌন-মিহি শিল্পে অতঃপর,
তোমার প্রদত্ত দানে পূর্ণ হবে পৃথিবী আমার ।
৪.বিশু পাগলের কবিতা – শ্রীজাত
বিপদ আবার ডাক দিয়েছে, দমকা বাতাস… আলগা বোতাম…
বসন্তকে সাক্ষী রেখে আজ যদি ফের সঙ্গী হতাম?
একখানা দিন ওলোট পালট, একখানা বেশ ঝাপটা বিকেল
পাগল হওয়া বিশুই কেবল সামলে রাখে নন্দিনীকে।
যা ইচ্ছে তাই বলুক লোকে, নিন্দুকে আর কী না রটায়
অনামী সেই বাস স্টপেজে দেখা হবেই পৌনে ছ’টায়।
একটু হাঁটা, একটু চলা, একটু বসা পাড়ার রোয়াক…
মিথ্যে একটা আঙুল তোমার কপালে আজ সত্যি ছোঁয়াক।
এই দেখা তো মুহূর্ত নয়, অন্যরকম অনন্তকাল
মাথার মধ্যে গুমরে মরে পাগলা হাওয়ার একলা পোকা।
ফিরবে তুমি ভিড় বাসে আর আমার ফেরা চুপবালিশে
চোখের পাতা কমল কি না, কে আর অত রাখছে হিসেব…
কেবল তোমার ফুলের মালা, রাজার দিকে সপাট জেহাদ –
যুগ পেরিয়ে আরেকটিবার আমার হাতে দিও সে হাত…
হাতের রেখায় থাকবে জানি মাইলফলক, সরাইখানা…
কৃষ্ণচূড়ার ছোট্ট চিঠি, রাধাচূড়ার বলতে মানা
বিপদ আসুক, লাগুক বাতাস, ছুটুক সময় তোমার দিকে
পাগল হওয়া বিশুই জেনো আগলে রাখে নন্দিনীকে!
৫.আনন্দ– সুকুমার রায়
যে আনন্দ ফুলের বাসে,
যে আনন্দ পাখির গানে,
যে আনন্দ অরুণ আলোয়,
যে আনন্দ শিশুর প্রাণে,
যে আনন্দ বাতাস বহে,
যে আনন্দ সাগরজলে,
যে আনন্দ ধুলির কণায়,
যে আনন্দ তৃণের দলে,
যে আনন্দ আকাশ ভরা,
যে আনন্দ তারায় তারায়,
যে আনন্দ সকল সুখে,
যে আনন্দ রক্তধারায়
সে আনন্দ মধুর হয়ে
তোমার প্রাণে পড়ুক ঝরি,
সে আনন্দ আলোর মত
থাকুক তব জীবন ভরি।
৬.অনন্ত প্রেম– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি শত রূপে শতবার
জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার।
চিরকাল ধরে মুগ্ধ হৃদয় গাঁথিয়াছে গীতহার–
কত রূপ ধরে পরেছ গলায়, নিয়েছ সে উপহার
জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার।
যত শুনি সেই অতীত কাহিনী, প্রাচীন প্রেমের ব্যথা,
অতি পুরাতন বিরহমিলন কথা,
অসীম অতীতে চাহিতে চাহিতে দেখা দেয় অবশেষে
কালের তিমিররজনী ভেদিয়া তোমারি মুরতি এসে
চিরস্মৃতিময়ী ধ্রুবতারকার বেশে।
আমরা দুজনে ভাসিয়া এসেছি যুগলপ্রেমের স্রোতে
অনাদি কালের হৃদয়-উৎস হতে।
আমরা দুজনে করিয়াছি খেলা কোটি প্রেমিকের মাঝে
বিরহবিধুর নয়নসলিলে, মিলনমধুর লাজে–
পুরাতন প্রেম নিত্যনূতন সাজে।
আজি সেই চির-দিবসের প্রেম অবসান লভিয়াছে,
রাশি রাশি হয়ে তোমার পায়ের কাছে।
নিখিলের সুখ, নিখিলের দুখ, নিখিল প্রাণের প্রীতি,
একটি প্রেমের মাঝারে মিশেছে সকল প্রেমের স্মৃতি–
সকল কালের সকল কবির গীতি।
৭.স্বপ্নে – জয় গোস্বামী
স্বপ্নে তোকে বাড়ির দিকে এগিয়ে দিতে যাই
স্বপ্নে এসে দাঁড়াই পাড়ার মোড়ে
কখন তুই ফিরবি ভেবে চারিদিকে তাকাই
টান লাগাই তোর বিনুনি ধরে।
স্বপ্নে আমি ভিক্টোরিয়ায় তোর পাশে দাঁড়াই
স্বপ্নে বসি ট্যাক্সিতে তোর পাশে
স্বপ্নে আমি তোর হাত থেকে বাদাম ভাজা খাই
কাঁধ থেকে তোর ওড়না লুটোয় ঘাসে।
তুলতে গেলি – কনুই ছুঁলো হাত
তুলতে গেলি – কাঁধে লাগলো কাঁধ
সরে বসব? আকাশভরা ছাতে
মেঘের পাশে সরে বসল চাঁদ।
ক’টা বাজলো? উঠে পড়লি তুই
সব ঘড়িকে বন্ধ করল কে?
রাগ করবি? হাতটা একটু ছুঁই?
বাড়ির দিকে এগিয়ে দিচ্ছি তোকে…
স্বপ্নে তোকে এগিয়ে দিই যদি
তোর বরের তাতে কি যায় আসে?
সত্যি বলছি, বিশ্বাস করবি না
স্বপ্নে আমার চোখেও জল আসে!
৮.অনেক দিনের চেনা – শ্রীজাত
দাড়িয়ে দুরে। অনেকদিনের চেনা।
আজকাল যার সঙ্গে থাকো, সে না।
একলা তুমি কফিশপের ভেতর
ঝগড়া করে পালিয়ে এলে। সে তাে।
দাঁড়িয়ে আছে উল্টো ফুটপাতে
আগের মতই ব্রিফকেস হাতে
তোমার কফি আসতে দেরি, তারও
বাস আসতে মিনিট পাঁচেক আরও।
আজকাল যার সঙ্গে থাকো, হঠাৎ
মনে হচ্ছে ফুরিয়ে গেছে কথা।।
আজ ফের সেই ঝগড়াঝাটি করে।
বসেছ কফিশপের ভেতরে।
উল্টো দিকের ফুটপাতে যে, তাকে
ডাকবে নাকি, সময় যদি থাকে?
আঙ্গুল দিয়ে নাড়ছে চামচ, মানে।
ভাবছ সে লােক যাবে কতক্ষণে
আসলে তার অনেক আগেই যাওয়া
আগের স্মৃতি ফিরিয়ে আনে হাওয়া
প্রাক্তন বর, প্রেমিক ভবিষ্যতের!
আজকাল তাদের আকসার এসব ঘটে—
৯.যখন বৃষ্টি নামলো – শক্তি চট্টোপাধ্যায়
বুকের মধ্যে বৃষ্টি নামে, নৌকা টলোমলো
কূল ছেড়ে আজ অকূলে যাই এমনও সম্বল
নেই নিকটে – হয়তো ছিলো বৃষ্টি আসার আগে
চলচ্ছক্তিহীন হয়েছি,তাই কি মনে জাগে
পোড়োবাড়ির স্মৃতি? আমার স্বপ্নে-মেশা দিনও?
চলচ্ছক্তিহীন হয়েছি, চলচ্ছক্তিহীন।
বৃষ্টি নামলো যখন আমি উঠোন-পানে একা
দৌড়ে গিয়ে ভেবেছিলাম তোমার পাবো দেখা
হয়তো মেঘে-বৃষ্টিতে বা শিউলিগাছের তলে
আজানুকেশ ভিজিয়ে নিচ্ছো আকাশ-ছেঁচা জলে
কিন্তু তুমি নেই বাহিরে- অন্তরে মেঘ করে
ভারি ব্যাপক বৃষ্টি আমার বুকের মধ্যে ঝরে!
১০.যেন বলে ওঠে – আরণ্যক বসু
আসলে কথারা সব বিলুপ্ত পাখির ঠোঁটে শিলালিপি হয়ে আছে
আসলে কথারা সব নিঃশেষে মুছে গেছে আলোকবর্ষ দূরে
তারাহীন নীল অন্ধকারে
আসলে কথারা এসে ফিরে চলে গেছে সেই
মটরশুঁটির ক্ষেতে, সবুজে সবুজে
তুমি ফিরে এসে সেই শিলালিপি পাঠ করো প্রিয়বন্ধু
কি কথা? কী কথা? এই শিলালিপি ভরে আছে
পাথরের বুকে ঘুম হয়ে!
মৃত তিতিরের ঠোঁটে কোন সে শব্দের রেশ
লেগে আছে লক্ষ বছর ধরে-আমাকে শোনাও!
চলো গিয়ে বসি সেই শব্দহীন তিরতির গ্রামীণ নদীর কাছে
চলো, শুনি, কী কথা বলার ছিল তার
সে-ও তো অনেক কথা উজানে, ভাঁটির টানে বলে ব’য়ে গেছে
তুমি সেই অন্তহীন স্তব্ধতায় শব্দরাশি মুক্ত করে দাও প্রিয়মুখ
তুমি সেই বৃষ্টিধোয়া নিরুচ্চার শব্দগুলো চালচিত্র করে দাও
জীবনে আমার
টুং টাং বেজে যাক অশ্রুত শব্দের কথামালা
অপেক্ষার, প্রতিক্ষার টুকরো টুকরো যতো উন্মীলন
বাগ্ময় হয়ে উঠে আমাকে কাঁদায় যেন
আমাকে ভাসায় যেন বাঁধভাঙা উৎসের অনিবার্য স্রোতো
সব শব্দ মিলে মিশে যেন বলে ওঠে-ভালোবাসি, ভালোবাসি…