মুহাম্মাদ (সা.)-এর সেরা উপদেশ
সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ট নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। দুনিয়াতে যারা তাঁর দেখানো পথে চলবে, পরকালে তারাই জান্নাতে যাবে। তারাই জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে। আমরা তাঁর উম্মত বা অনুসারী দল। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সব কালের সব যুগের সেরা আদর্শ। আল্লাহ তাআলা বিশ্ববাসীর জন্য তাঁকে সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ ও রহমত করে পাঠিয়েছেন। কুরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন-
‘আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছি।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ১০৭)
তাদের জন্যে রাসুলুল্লাহর জীবনে উত্তম আদর্শ রয়েছে; যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে বেশি স্মরণ করে।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ২১)
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী হাদীস পড়তে হবে এবং সে অনুযায়ী চলতে হবে। তবেই মহান আল্লাহ খুশী হবেন আমাদের প্রতি।
মুহাম্মাদ (সা.)-এর সেরা উপদেশ
সালাম দেয়া
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্যতম গুণ ছিল- তিনি সবাইকে আগে আগে সালাম দিতেন। সাধারণ কেউ তাকে আগে সালাম দিতে পারতেন না। এটি ছিল বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্যতম শিক্ষা। এ কারণেই তিনি বলেছেন- ‘কথা বলার আগে সালাম দাও।’
তাওবা করা
তাওবা মানুষকে পাপমুক্ত করে। জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেয়। আল্লাহর রহমতের ছায়ায় আশ্রয় দেয়। গুনাহের কারণে মানুষের জীবন থেকে উঠে যাওয়া বরকত তাওবার মাধ্যমে ফিরে আসে। এ কারণে রাসুল (সা.) তাঁর উম্মতকে বেশি বেশি তাওবার পরামর্শ দিতেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে লোক পশ্চিম আকাশে সূর্যোদয় হওয়ার আগে তাওবা করবে আল্লাহ তাআলা তার তাওবা কবুল করবেন। (মুসলিম, হাদিস : ৬৭৫৪)
নামাজ পড়া
নামাজ ছিল প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের শ্রেষ্ঠ ইবাদাত ও আদর্শ। এমনকি তিনি যখন কোনো বিপদে পড়তেন সঙ্গে সঙ্গে তিনি নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন। আবার কোনো কারণে কষ্ট বা হতাশা বা চিন্তাগ্রস্ত হলেও তিনি তাৎক্ষণিক নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন।
জিকির করা
আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমি কি তোমাদের আমলগুলোর সর্বোত্তমটি সম্পর্কে তোমাদের অবহিত করব না, যা তোমাদের প্রভুর কাছে সর্বাধিক প্রিয়, তোমাদের মর্যাদা বেশি উন্নীতকারী, তোমাদের সোনা-রুপা দান করার চেয়ে এবং যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে তোমাদের শত্রুদের হত্যা করা এবং তোমাদের নিহত হওয়ার চেয়ে উত্তম? সাহাবিরা বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, সেটি কী? তিনি বলেন, আল্লাহর জিকির। মুআজ বিন জাবাল (রা.) বলেন, কোনো মানুষের জন্য আল্লাহর জিকিরের চেয়ে উত্তম আমল নাই, যা তাকে মহামহিম আল্লাহর শাস্তি থেকে রেহাই দিতে পারে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৭৯০)
রোজা পালন করা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি সপ্তাহে দুই দিন (সোম ও বৃহস্পতিবার) রোজা রাখতেন। মাসে ৩ দিন (আইয়্যামে বিজ) চন্দ্র মাসের ১৩-১৫ তারিখ রোজা রাখতেন।
কোরআন পাঠ করা
আবু উসামাহ আল বাহিলী (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা কোরআন পাঠ করো। কারণ কিয়ামতের দিন তার পাঠকারীর জন্য সে সুপারিশকারী হিসেবে আসবে। (মুসলিম, হাদিস : ১৭৫৯)
সাদকা বা দান করা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেশি বেশি সাদকা করতেন। ইসলামের জন্য সাদকা করতে হজরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা তার সমূদয় সম্পদ প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দিয়েছিলেন। আর তিনি তা দ্বীনের পথে ব্যয় করেছেন। বেশি বেশি সাদকা বা দান করার নির্দেশ দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে যখন কোনো সাদকা আসতো তিনি তা সবার মাঝে বিলিয়ে দিতেন।
সততা অবলম্বন
আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ...তোমরা অবশ্যই সততা অবলম্বন করবে। কেননা সততা নেক কাজের দিকে পথ দেখায় এবং নেক কাজ জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়।
আর কোনো ব্যক্তি সর্বদা সততা বজায় রাখলে এবং সততাকে নিজের স্বভাবে পরিণত করলে, শেষ পর্যন্ত আল্লাহর কাছে তার নাম পরম সত্যবাদী হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৮৯)
আল্লাহকে স্মরণ করা
আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন বাস্তবায়নই ছিল বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মিশন। তিনি সব সময় সব কাজে মহান আল্লাহকে স্মরণ করতেন এবং আল্লাহ স্মরণ করতে বলতেন। আল্লাহর নির্দেশ-
‘সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর; আমিও তোমাদের স্মরণ রাখবো আর আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; অকৃতজ্ঞ হয়ো না।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫২)
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে বেশি পরিমাণে স্মরণ কর।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ৪১)
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন কোনো বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত হও, তখন সুদৃঢ় থাক এবং আল্লাহকে বেশি পরিমাণে স্মরণ কর; যাতে তোমরা উদ্দেশ্য কৃতকার্য হতে পার।’ (সুরা আনফাল : আয়াত ৪৫)
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মানুষকে ভালোবাসা
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন, আমার মহত্ত্বের কারণে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা স্থাপনকারীরা কোথায়? আজ আমি তাদের আমার বিশেষ ছায়ায় ছায়া প্রদান করব। আজ এমন দিন, যেদিন আমার ছায়া ছাড়া অন্য কোনো ছায়া নেই। (মুসলিম, হাদিস : ৬৪৪২)
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া
যারা বিনা হিসাবে জান্নাতে যেতে চায়, তাদের উচিত যত্নের সঙ্গে তাহাজ্জুদ নামাজ নিয়মিত পড়া। কুরআনের বিভিন্ন সুরায় এ নামাজের প্রতি তাগিদ দেয়া হয়েছে। তাই প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পর সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ি, তাবে-তাবেয়িসহ সব যুগের ওলি ও বিদ্বানরা তাহাজ্জুদ নামাজে রাত কাটিয়ে দিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লামকে বিশেষভাবে (রাতে) তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘হে চাদর আবৃত, রাতের সালাতে দাঁড়াও; কিছু অংশ ছাড়া।’ (সুরা মুজাম্মিল : আয়াত ১-২)
মা-বাবার সেবা করা
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তার নাক ভূলুণ্ঠিত হোক, যার কাছে আমার নাম উল্লিখিত হলো, কিন্তু সে আমার ওপর দরুদ পাঠ করেনি। ভূলুণ্ঠিত হোক তার নাক, যার কাছে রমজান মাস এলো অথচ তার গুনাহ মাফ হয়ে যাওয়ার আগেই তা পার হয়ে গেল। আর ভূলুণ্ঠিত হোক তার নাক, যার কাছে তার মা-বাবা বৃদ্ধে উপনীত হলো; কিন্তু তারা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করায়নি (সে তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করে জান্নাত অর্জন করেনি)। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪৫)
শিশুদের স্নেহ করা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোমলমতি শিশুদের বেশি স্নেহ করতেন এবং ভালোবাসতেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এক ব্যক্তি একটি শিশু নিয়ে বিশ্বনবির খিদমতে এসে শিশুটিকে চুমু দিতে লাগলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দৃশ্য দেখে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, শিশুটির প্রতি কি তোমার দয়া জেগে উঠেছে? সে বলল, ‘হ্যাঁ’, হে আল্লাহর রাসুল! তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘আল্লাহ তাআলা তোমার প্রতি এর চেয়েও অধিক দয়া করেন। কেননা তিনি দয়ালুদের শ্রেষ্ঠ দয়ালু। (বুখারি)
রোগীর খোঁজ নেওয়া
আলী (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে আমি বলতে শুনেছি, কোনো মুসলমান যদি অন্য কোনো মুসলিম রোগীকে সকাল বেলা দেখতে যায় তাহলে ৭০ হাজার ফেরেশতা তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত দোয়া করতে থাকে। সে যদি সন্ধ্যায় তাকে দেখতে যায় তবে ৭০ হাজার ফেরেশতা ভোর পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করতে থাকে এবং জান্নাতে তার জন্য একটি ফলের বাগান তৈরি হয়। (মুসলিম, হাদিস : ৯৬৯)
মিথ্যা পরিহার করা
মিথ্যা সব পাপের জননী। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব সময় মিথ্যা থেকে বিরত থাকার কথা বলেছেন। তিনি মিথ্যাকে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করতেন।
ইসলামের দাওয়াত দেওয়া
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি সৎপথের দিকে ডাকবে সে তার অনুসারীর সমান সওয়াব পাবে, অথচ অনুসরণকারীর সওয়াব কমানো হবে না। অপরদিকে যে ব্যক্তি ভ্রষ্টতার দিকে ডাকবে সে তার অনুসারীর সমান পাপে জর্জরিত হবে, তার অনুসারীর পাপ মোটেও কমানো হবে না। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬০৯)
ক্ষমা করা
ক্ষমা মহান আল্লাহ তাআলার অন্যতম গুণ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও ক্ষমা করতে ভালোবাসতেন। তিনি অন্যদের ক্ষমা করে দেয়াকে বেশি পছন্দ করতেন। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ক্ষমার ব্যাপারে এভাবে দোয়া করতেন এবং তাঁর উম্মতেকে দোয়া করতে বলতেন-
اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওয়ুন; তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালো বাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)
পরিবারের সঙ্গে কোমল আচরণ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কোমল আচরণ করতেন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কোমল ও উত্তম আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। খাবার-দাওয়া, কেনা-কাটা, সাংসারিক কাজে পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা ও উত্তম জিনিস দেয়াকে উত্তম ইবাদত ও খরচ বলে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং হাদিসের দিকনির্দেশনা হলো-
প্রথমেই পরিবার পরিজনের চাহিদা মেটানো। যাতে তারা সব সময় অভাবমুক্ত থাকে। যা পরিবারের দায়িত্বশীল ব্যক্তির ওপর ওয়াজিব।
মৃত্যুর সময় ওয়ারিশদেরকে স্বচ্চল অবস্থায় রেখে যাওয়া। যাতে করে অভিভাবকের মৃত্যুর পর কারো মুখাপেক্ষী হতে না হয়।
অন্যের দোষ গোপন রাখা
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, কোনো বান্দা যদি অন্য কোনো লোকের ত্রুটি-বিচ্যুতি দুনিয়াতে আড়াল করে রাখে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার ত্রুটি-বিচ্যুতি আড়াল করে রাখবেন। (মুসলিম, হাদিস : ৬৪৮৯)
মানুষের উপকার করা
রাসুল (সা.) তাঁর উম্মতদের ভালো কাজে আত্মনিয়োগের মাধ্যমে বেশি বেশি পুণ্য অর্জনের উৎসাহ দিতেন। এর মাধ্যমে একটি সমাজ যেমন সুন্দর হয়, তেমনি ব্যক্তিও সোনার মানুষে পরিণত হয়। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, প্রতিটি পুণ্যই দান-খয়রাতস্বরূপ। তোমার ভাইয়ের সঙ্গে তোমার হাসিমুখে সাক্ষাৎ এবং তোমার বালতি থেকে তোমার ভাইয়ের পাত্রে একটু পানি ঢেলে দেওয়াও সৎ কাজের অন্তর্ভুক্ত। (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৩০৪)
জ্ঞানার্জন
মহান আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদত করার জন্য। আর ইবাদতের জন্য প্রয়োজন সঠিক জ্ঞানের। জ্ঞানশূন্য মানুষের জন্য পৃথিবীটা কঠিন। জ্ঞান ছাড়া দুনিয়া-আখিরাত কোনো কিছু সাজানো উচিত নয়। রাসুল (সা.) দ্বিনি জ্ঞান (ইলম) অর্জনের বিশেষ ফজিলত বর্ণনা করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জ্ঞান অন্বেশনে কোনো পথে চলবে, তার জন্য আল্লাহ তাআলা জান্নাতের পথ সহজ করে দেবেন। (তিরমিজি, হাদিস : ২৬৪৬)
কাউকে অবহেলা না করা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো কাউকে অবহেলা করতেন না। কারো মর্যাদা বিনষ্ট হোক এটা তিনি কামনা করতেন না। সবার প্রতি তিনি উদার ছিলেন। বিশেষ করে তার কাছে আসা সব ব্যক্তিকেই তিনি সমাদর করতেন। গুরুত্ব দিতেন। তাদের কথা শুনতেন। সুতরাং কাউকেই অবহেলা করা ঠিক নয়।
কম হাসা
তিনি কম হাসতেন। কেননা বেশি হাসলে মুমিনের অন্তর নিস্তেজ হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন বেশি বেশি কাঁদো; অল্প অল্প হাসো। এটি কুরআনুল কারিমেরও নির্দেশনা-
‘অতএব, তারা সামান্য হেসে নিক এবং তারা তাদের কৃতকর্মের বদলাতে অনেক বেশী কাঁদবে।’ (সুরা তাওবাহ : আয়াত ৮২)
মুচকি হাসি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুচকি হাসি হাসতেন। এ হাসি অনেক উপকার বয়ে আনে। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সৎ আমলের কোনো কিছুকেই তুচ্ছ মনে করো না, যদি তা (সৎ আমলটি) তোমার নিজের ভাইয়ের সঙ্গে মুচকি হাসি দিয়ে মিলিত হওয়ার দ্বারাও হয়। (মুসলিম) মুসলমানের জন্য এটাও একটা সদকা।
খাবারের দোষ না ধরা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো খাবারের দোষ ধরতেন না। কোনো খাবার খেতে ভালো না লাগলে তিনি তা খাওয়া থেকে বিরত থাকতেন। হাদিসের এসেছে-
হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহ আনহু বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনোই কোনো খাবারের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করতেন না। খাবার পছন্দ ও রুচি হলে তিনি তা খেতেন। আর পছন্দ ও রুচি না হলে তা খাওয়া থেকে বিরত থাকতেন।’
নীরব থাকা
তিনি দীর্ঘ সময় নীরব থাকতেন। আল্লাহর কাছ থেকে ওহি ছাড়া কোনো কথা তিনি বলতেন। এ কারণেই নীরব থাকা বিশ্বনবির অন্যতম সুন্নাত ও ইবাদত।
সুস্পষ্ট কথা বলা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন সুস্পষ্টভাষী। তিনি ছিলেন সত্যমিথ্যার পার্থক্যকারী। সত্যের মানদণ্ডে তিনি ছিলেন স্পষ্টবাদী। কথা বলার সময় তিনি সুস্পষ্টভাষায় কথা বলতেন। তার কথা ছিল প্রাঞ্জল ও সুস্পষ্ট। এমন কেউ ছিলেন না যিনি প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা বুঝতেন না। সুতরাং কথা বলার ক্ষেত্রে সবার উচিত, সুস্পষ্ট ভাষায় কথা বলা।
উপহার গ্রহণ করা
উপহার দেয়া এবং নেয়া সুন্নাত। কেউ কাউকে উপহার দিলে তা গ্রহণ করার উৎসাহ দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিয়া বা উপহার গ্রহণ করতেন এবং নিজে ব্যবহার করতেন। কেননা তিনি সাদকা খেতেন না।
মেসওয়াক করা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘুম থেকে ওঠে মেসওয়াক করতেন। প্রত্যেক ওজুতে মেসওয়াক করতেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছন, ‘জিবরিল আলাইহিস সালাম বিশ্বনবিকে এতবেশি মেসওয়াক করার তাগিদ দিয়েছেন যে, তিনি মেসওয়াক ওয়াজিব হয়ে যাওয়ার আশংকা করতেন।
প্রতিশোধ পরায়ন না হওয়া
কারো প্রতি প্রতিশোধ না নেয়া ছিল বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্যতম আদর্শ। হদযোগ্য কোনো অপরাধ না থাকলে অপরাধীকে ক্ষমা করে দেয়া। কেউ অপরাধ করে থাকলে ধৈর্যধারণ করাও শ্রেয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের জন্য কখনোই প্রতিশোধ গ্রহণ করতেন না।
কাউকে কষ্ট না দেয়া
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো কাউকে আঘাত করতেন না। শারীরিক আঘাত তো দূরের কথা তিনি কথা বা আচরণ দিয়েও কাউকে কষ্ট দিতেন না। তবে যুদ্ধের ময়দানে কিংবা হদযোগ্য অপরাধের কথা ভিন্ন।