হালাল রিজিক বৃদ্ধির আমল - Halal sustenance growth period
মুসলিম মাত্রেই বিশ্বাস করেন যে তার আয় ও উপার্জন, জীবন ও মৃত্যু, এবং সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য ইত্যাদি র্নিধারণ হয়ে যায় যখন তিনি মায়ের উদরে থাকেন। আর এসব তিনি লাভ করেন তার জন্য বরাদ্দ উপায়-উপকরণগুলোর মাধ্যমে। তাই আমাদের কর্তব্য হলো হাত গুটিয়ে বসে না থেকে এর জন্য র্নিধারিত উপায়-উপকরণ সংগ্রহে চেষ্টা করা। যেমন চাষাবাদ, ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিল্প-চারু, চাকরি-বাকরি বা অন্য কিছু। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿هُوَ ٱلَّذِي جَعَلَ لَكُمُ ٱلۡأَرۡضَ ذَلُولٗا فَٱمۡشُواْ فِي مَنَاكِبِهَا وَكُلُواْ مِن رِّزۡقِهِۦۖ وَإِلَيۡهِ ٱلنُّشُورُ ١٥﴾ [الملك: ١٥]
‘তিনিই তো তোমাদের জন্য যমীনকে সুগম করে দিয়েছেন, কাজেই তোমরা এর পথে প্রান্তরে বিচরণ কর এবং তাঁর রিযক থেকে তোমরা আহার কর। আর তাঁর নিকটই পুনরুত্থান।’ {সূরা আল-মুলক, আয়াত : ১৫}
যেসব আমলে আপনার রিজিক বাড়বে
রিজিকে বরকত মানুষের জন্য অনেক জরুরি বিষয়। এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা দীর্ঘ হায়াত পেয়েছেন, সে হিসেবে ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি কিংবা আমল-ইবাদতের পাশাপাশি রিজিকেও বরকত পাননি। বান্দার জন্য আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে মহা অনুগ্রহ হলো- ‘হালাল রিজিক। তিনি বান্দাকে বিভিন্ন উপায়ে এ রিজিক দিয়ে থাকেন। কী সেসব উপায়?
আল্লাহর ভয়
আল্লাহকে যে যত বেশি ভয় করবে আল্লাহ তায়ালা ওই ব্যক্তির তত সহায় হবেন এবং কল্পনাতীতভাবে দান করবেন রিজিক। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য নিষ্কৃতির পথ করে দেবেন। আর তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিজিক দেবেন।’ (সুরা তালাক : ২-৩)
আল্লাহর ওপর ভরসা
আল্লাহর প্রতি একান্তভাবে ভরসা করলে শুধু রিজিকই নয় বরং মহান আল্লাহ ওই বান্দার সব কিছুর ব্যাপারে যথেষ্ট হয়ে যান। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সব কিছুর জন্য একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন।’ (সুরা তালাক : আয়াত ৩)
করজে হাসানা ও সদকা
কোনো ব্যক্তি যখন আল্লাহর রাস্তায় সম্পদ খরচ করবে, দান-সাদকা করবে কিংবা অন্যকে উত্তম ঋণ দান করবে, তখন আল্লাহ তায়ালা ওই বান্দার রিজিক অনেকগুণ বাড়িয়ে দেবেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এমন কে আছে যে, আল্লাহকে করজ দেবে, উত্তম করজ; অতঃপর আল্লাহ তাকে দ্বিগুণ-বহু গুণ বৃদ্ধি করে দেবেন? আল্লাহই সঙ্কোচিত করেন এবং তিনিই প্রশস্ততা দান করেন এবং তাঁরই কাছে তোমরা সবাই ফিরে যাবে।’ (সুরা বাকারা : ২৪৫)
শুকরিয়া জ্ঞাপন
সুখে-দুঃখে সব সময় আল্লাহর শুকরিয়া বা কৃতজ্ঞতা আদায় করলে বান্দার প্রাপ্তি ও চাহিদাকে আল্লাহ পূরণ করে দেবেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের আরও বাড়িয়ে দেব। আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আজাব বড়ই কঠিন।’ (সুরা ইবরাহিম : ৭)
ইস্তেগফার পড়া
আল্লাহ ক্ষমাশীল, তিনি ক্ষমা প্রার্থনাকারীকে ভালোবাসেন। ক্ষমা প্রার্থনায় যেসব নেয়ামত লাভ হয়, এর মধ্যে রিজিকের প্রাধান্যই বেশি। আল্লাহ তায়ালা হজরত নুহকে (আ.) দেওয়া নসিহতে তাই বলেছেন, ‘অতঃপর আমি নুহকে বলেছি, তোমরা তোমাদের পালন কর্তার ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর অজস্র (রিজিক উৎপাদনে) বৃষ্টিধারা ছেড়ে দেবেন, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্য নদী-নালা প্রবাহিত করবেন।’ (সুরা নুহ : ১০-১২)
আত্মীয় সম্পর্ক অটুট
আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখা মহান আল্লাহর অন্যতম নির্দেশ। এ ইবাদতে শুধু রিজিক বাড়ে এমন নয়, বরং হায়াতও বাড়ে বলে উল্লেখ করেছেন বিশ^নবী (সা.)। হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিতÑ আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কামনা করে যে তার রিজিক বেড়ে যাক এবং হায়াত (জীবন) দীর্ঘায়িত হোক; সে যেন আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করে।’ (বুখারি : ৫৯৮৬)। প্রত্যেক মুসলমানের কোরআন সুন্নাহয় ঘোষিত উল্লেখিত নসিহতগুলো মোতাবেক জীবন পরিচালনা করা কর্তব্য। হালাল ও উত্তম রিজিক লাভে আল্লাহর কাছে তার সেখানো পদ্ধতিতে চেষ্টা করা। আল্লাহ তায়ালা সবাইকে উত্তম রিজিক লাভের তওফিক দান করুন। কোরআন সুন্নাহর নসিহত মেনে চলার তওফিক দান করুন। আমিন।
আল্লাহর কাছে বেশি বেশি প্রার্থনা করা
অভাব থেকে মুক্ত থাকতে চাইলে, রিজিকে বরকত পেতে চাইলে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়ার বিকল্প নেই। যে কোনো বিষয়ে মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করার কথা মহান আল্লাহ এভাবে বলেছেন-
وَ قَالَ رَبُّکُمُ ادۡعُوۡنِیۡۤ اَسۡتَجِبۡ لَکُمۡ ؕ اِنَّ الَّذِیۡنَ یَسۡتَکۡبِرُوۡنَ عَنۡ عِبَادَتِیۡ سَیَدۡخُلُوۡنَ جَهَنَّمَ دٰخِرِیۡنَ
‘তোমাদের প্রতিপালক বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। যারা অহংকারে আমার উপাসনায় বিমুখ, ওরা লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (সুরা গাফির/মুমিনুন : আয়াত ৬০)
হারাম পরিত্যাগ করা
আল্লাহ তায়ালার নিকট থেকে হালাল রিজিক পাওয়ার আশায়, শাস্তির ভয়ে ভীত হয়ে সর্বপ্রকার হারাম উপার্জন থেকে নিবৃত্ত থাকা। অবশ্যই এর বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা উত্তম রিজিক প্রদান করবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালাকে খুশি করার লক্ষ্যে হারাম বর্জন করে, আল্লাহ তায়ালা তাকে তার চেয়েও শ্রেষ্ঠ কিছু দান করেন। হাদিসে বর্ণিত বনি ইসরাইলের বিখ্যাত ঘটনাসহ সাহাবায়ে কেরামের এ সংক্রান্ত ঘটনাবলি স্বরণযোগ্য।
ইবাদতের জন্য নিজেকে ব্যস্ত রাখা
ইবাদত তথা নামাজে খুব বেশি মনোযোগী হওয়া। নিজে যেমন প্র্যত্যেক ওয়াক্তর নামাজ পড়তে হবে তেমনি পরিবারের লোকদের নামাজ পড়ানো ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে। আর তাতে আল্লাহ রিজিক বাড়িয়ে দেবেন বলে এভাবে ঘোষণা করেছেন-
وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا لَا نَسْأَلُكَ رِزْقًا نَّحْنُ نَرْزُقُكَ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوَى
‘আপনি আপনার পরিবারের লোকদেরকে নামাজের আদেশ দিন এবং নিজেও এর ওপর অবিচল থাকুন। আমি আপনার কাছে কোনো রিজিক চাই না। আমি আপনাকে রিজিক দেই এবং আল্লাহকে ভয় করার পরিণাম শুভ তথা কল্যাণকার।’ (সুরা ত্বাহা : আয়াত ১৩২)
দুর্বলের প্রতি সদয় হওয়া বা সদাচার করা
মুস‘আব ইবন সা‘দ রাদিআল্লাহু আনহু যুদ্ধজয়ের পর মনে মনে কল্পনা করলেন, তিনি বোধ হয় তাঁর বীরত্ব ও শৌর্য-বীর্য হেতু অন্যদের চেয়ে নিজেকে বেশি মর্যাদাবান। সেই প্রেক্ষিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
« هَلْ تُنْصَرُونَ وَتُرْزَقُونَ إِلاَّ بِضُعَفَائِكُمْ » .
‘তোমাদের মধ্যে থাকা দুর্বলদের কারণে কেবল তোমাদের সাহায্য করা হয় এবং রিজিক প্রদান করা হয়।’ [বুখারী : ২৮৯৬]
আল্লাহর পথে জিহাদ
একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের জিহাদেও সম্পদের ব্যপ্তি ঘটে। গনীমত বা যুদ্ধলব্ধ সম্পদের মাধ্যমে সংসারে প্রাচুর্য আসে। যেমন ইবন উমর রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« وَجُعِلَ رِزْقِي تَحْتَ ظِلِّ رُمْحِي ».
‘আর আমার রিজিক রাখা হয়েছে আমার বর্শার ছায়াতলে।’ [মুসনাদ আহমদ : ৫৬৬৭; বাইহাকী : ১১৫৪; শু‘আবুল ঈমান : ১৯৭৮৩]