হিজাব কি নারীর নিরাপত্তা দেয়? - Hijab gives women security?
প্রশ্নঃ
হিজাব বা পর্দা যদি নারীকে আসলেই নিরাপত্তা দিতো, তাহলে অনেক সময়ে হিজাবী নারীরাও কেন ধর্ষণ বা যৌন হয়রানীর শিকার হয়? তারা তো ছোট পোশাক পরে না, অশ্লীল পোশাক পরে না। এর দ্বারা কি প্রমাণ হয় না যে পর্দা নারীকে নিরাপত্তা দিতে সক্ষম না?
উত্তরঃ
ইসলাম নারীকে পর্দার আদেশ দেয়। তবে কখনো এটি দাবি করা হয় না যে "শুধুমাত্র" পর্দাই নারীর নিরাপত্তা বিধানে সক্ষম। বরং বলা হয় যেঃ পর্দা নারীর নিরাপত্তার জন্য সহায়ক।
যেমন, করোনায় আক্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচার জন্য সতর্কতা হিসেবে মানুষ মাস্ক পরে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে স্রেফ মাস্ক পরলেই মানুষ করোনা থেকে পূর্ণ নিরাপত্তা লাভ করতে পারে! বরং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, ভ্যাক্সিন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ইত্যাদি সকল কিছু নিশ্চিতের দ্বারা করোনা থেকে নিরাপদ থাকা যায়। একইভাবে পর্দা নারীর নিরাপত্তার জন্য একটি সহায়ক মাধ্যম; তবে এটিই নিরাপত্তার জন্য সব কিছু না। এটা একটা কমন সেন্স যে একজন খোলামেলা পোশাকের নারীর চেয়ে একজন পর্দানশীল নারীর ব্যাপারে লম্পট পুরুষদের মনে কম কামভাব জাগ্রত হবে; আর ধর্ষণ ও যৌন হয়রানীর মূলেই আছে পুরুষের কামভাব। মাস্ক পরার পরেও করোনা আক্রান্ত হলে যদি কেউ বলেঃ "এর দ্বারা প্রমাণ হল যে মাস্ক করোনা থেকে নিরাপত্তা দিতে সক্ষম না! কাজেই মাস্ক পরা অসার কর্ম!" - এহেন দাবিকারীকে কি কেউ বোধ-বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ বলবে?
আর পর্দা করার মূল উদ্দেশ্য আল্লাহর হুকুম পালন, ফরয বিধান পালন। সবার আগে এই কথাটি মাথায় রেখে পর্দা করতে হয়।
অনেক সময় এমন হয় যে অন্য কোনো স্থানে খোলামেলা পোশাকে কোনো নারীকে দেখে অথবা টিভি বা অন্য কোনো মিডিয়াতে অশ্লীল জিনিস দেখে একজন পুরুষ কামোত্তেজিত হয়, পরে একজন হিজাবী/অ-হিজাবী নারীর উপর অশালীন কামনা চরিতার্থ করে। এখানেও পর্দাহীনতাই এই অপরাধের প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। পর্দা শুধু নারীর না, পুরুষেরও আছে। আল কুরআনে ২৪ নং সুরা নুরের ৩০ নং আয়াতে প্রথমে পুরুষের পর্দার কথা এসেছে। এরপর ৩১ নং আয়াতে নারীর পর্দার কথা এসেছে।
“মু’মিনদের বল তাদের দৃষ্টি অবনমিত করতে আর তাদের লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করতে, এটাই তাদের জন্য বেশি পবিত্র, তারা যা কিছু করে সে সম্পর্কে আল্লাহ খুব ভালভাবেই অবগত।
আর ঈমানদার নারীদেরকে বলে দাও তাদের দৃষ্টি অবনমিত করতে আর তাদের লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করতে, আর তাদের শোভা সৌন্দর্য প্রকাশ না করতে যা এমনিতেই প্রকাশিত হয় তা ব্যতীত। তাদের ঘাড় ও বুক যেন মাথার কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়। তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভাই-এর ছেলে, বোনের ছেলে, নিজেদের মহিলাগণ, স্বীয় মালিকানাধীন দাসী, পুরুষদের মধ্যে যৌন কামনামুক্ত পুরুষ আর নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া অন্যের কাছে নিজেদের শোভা সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন নিজেদের গোপন শোভা সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবাহ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।” [1]
সমাজে পরিপূর্ণভাবে ইসলাম কায়েম হলে তাহলে নারী-পুরুষ সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। আর ইসলামের অনেক বিধানের মধ্যে একটা হচ্ছে পর্দা। ইসলাম সাধারণভাবে সকল মানুষকে তাকওয়া বা পরহেজগারী অবলম্বনের আদেশ দেয়, আত্মশুদ্ধির বিধান দেয়। [2] এরপর ইসলাম পুরুষকে চোখের হেফাজত ও পর্দার আদেশ দেয় (সুরা নুর ২৪ : ৩০)। এরপর ইসলাম নারীকেও চোখের হেফাজত ও পর্দার আদেশ দেয় (সুরা নুর ২৪ : ৩১)। একজন পুরুষ যদি আল্লাহর বিধান অনুসারে চোখের হেফাজত করে তাহলে তার দ্বারা অশ্লীল চিন্তা ও যৌন অপরাধের সম্ভাবনা অনেকটাই হ্রাস পেয়ে যায়। আর নারীরা যদি যথার্থভাবে হিজাব করতো, তাহলে পুরুষের জন্যও চোখের হেফাজত সহজ হয়ে যেতো। এখানে নারী ও পুরুষের উচিত পরস্পর আল্লাহর বিধান পালনে সহযোগী হওয়া। হিজাব মানে কিন্তু শুধু এক টুকরা কাপড় না; হিজাব হচ্ছে পরিপূর্ণ পর্দার এক বিধান যার মাঝে আচার-আচরণ, শালীনতা, পোশাক সব কিছুই অন্তর্ভুক্ত। নারী ও পুরুষ সকলে যদি ইসলামের এই বিধানগুলো মেনে চলে তাহলে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানী ঘটা কার্যত অসম্ভব। এরপরেও যদি কোনো লম্পটের দ্বারা নারীর উপর হয়রানী আসে, ইসলামে তার কঠিন সাজার বিধান আছে। [3] এভাবে ইসলাম ধাপে ধাপে মানুষের নিরাপত্তা রক্ষায় ব্যবস্থা নেয়।
ইসলামের একটা বিধানের অংশবিশেষ দ্বারা নয় বরং পরিপূর্ণভাবে ইসলামী বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজের সকলের দুনিয়া ও আখিরাতের পূর্ণ নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়। আল্লাহ সবাইকে বুঝ দান করুন।
তথ্যসূত্রঃ
[1] আল কুরআন, নুর ২৪ : ৩০-৩১
[2] "নিঃসন্দেহে সে সফলকাম হয়েছে, যে তাকে পরিশুদ্ধ করেছে। এবং সে ব্যর্থ হয়েছে, যে তা (নাফস)-কে কলুষিত করেছে।"
(আল কুরআন, শামস ৯১ : ৯-১০)
"সুতরাং যে সীমালঙ্ঘন করে। আর দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দেয়, নিশ্চয় জাহান্নাম হবে তার আবাসস্থল। আর যে স্বীয় রবের সামনে দাঁড়ানোকে ভয় করে এবং কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজকে বিরত রাখে, নিশ্চয় জান্নাত হবে তার আবাসস্থল।
(আল কুরআন, নাযি'আত ৭৯ : ৩৭-৪১)
"অবশ্যই সাফল্য লাভ করবে যে পরিশুদ্ধ হয়। এবং তার রবের নাম স্মরণ করে ও সালাত কায়েম করে।"
(আল কুরআন, আ'লা ৮৭ : ১৪-১৫)