রোজা অবস্থায় ইনসুলিন নেওয়া যাবে কি?-Can insulin be taken while fasting?
ডায়াবেটিস চিকিৎসায় ইনসুলিনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এই রোগের কারণ হলো ইনসুলিনের ঘাটতি অথবা অকার্যকারিতা। টাইপ-১ ডায়াবেটিসের চিকিৎসা পুরোটাই ইনসুলিননির্ভর। টাইপ-২ ডায়াবেটিস চিকিৎসারও একপর্যায়ে ইনসুলিন অপরিহার্য হয়ে ওঠে। সব মিলিয়ে একটা বড়সংখ্যক ডায়াবেটিসের রোগী ইনসুলিন নেওয়া অবস্থায় রোজা রাখেন। রোজা রেখে ইনসুলিনের ওপর নির্ভরশীল ডায়াবেটিস রোগীরা কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন।
ইনসুলিনের অন্যতম প্রধান পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা হঠাৎ একেবারে কমে যাওয়া। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা প্রতি লিটারে ৩ দশমিক ৯ মিলিমোল বা তার নিচে নেমে গেলে একে বলা হয় হাইপোগ্লাইসেমিয়া। এমন হলে রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন, এমনকি মৃত্যু হতে পারে। মস্তিষ্কের কোষ স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার প্রভাবে। রোজার সময় সব ধরনের ডায়াবেটিস রোগী অন্য সময়ের তুলনায় বেশি হাইপোগ্লাইসেমিয়ার শিকার হন। সে জন্য ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রোজার সময় ইনসুলিনের ব্যবহার সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন থাকা দরকার।
রোজা রেখে ইনসুলিন নেওয়া যাবে?
স্বাভাবিক অবস্থায় কেউ যদি সিয়াম পালন করে তাকে, তাহলে ইনসুলিনের খুব বেশি প্রয়োজন হয় না। তারপরও যদি আপনার ইনসুলিনের প্রয়োজন হয়, আপনি ইনসুলিন নিতে পারবেন। এর মাধ্যমে সিয়াম নষ্ট হয় না। যেহেতু ইনসুলিন চামড়ার নিচে দেওয়া হয়। এটি পেটে যায় না বা খাবারের কাজ করে না। অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামের বক্তব্য অনুযায়ী, যে সমস্ত জিনিসের মাধ্যমে খাবারের বা পানির কোনো কাজ হয় না, শুধু মাত্র ওষুধ হিসাবে সেটা নেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে এর মাধ্যমে সিয়াম নষ্ট হবে না।
রোজায় ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা যাবে?
রোজা অবস্থায় রক্ত দিলে রোজা ভাঙে না। তাই টেস্ট বা পরীক্ষার জন্য রক্ত দেওয়া যাবে। তবে এ পরিমাণ রক্ত দেওয়া মাকরুহ— যার কারণে শরীর অধিক দুর্বল হয়ে পড়ে এবং রোযা রাখা কষ্টকর হয়ে যাবে। তাই দুর্বল লোকদের জন্য রোযা অবস্থায় অন্য রোগীকে রক্ত দেওয়া ঠিক নয়।
আর এমন সবল ব্যক্তি যে রোজা অবস্থায় অন্যকে রক্ত দিলে রোজা রাখা তার জন্য কষ্টকর হবে না— সে রক্ত দিতে পারবে। এতে কোনো অসুবিধা নেই। আর যেহেতু ডায়াবেটিসের সুগার মাপার জন্য সুচ ঢুকিয়ে যে একফোঁটা রক্ত নেওয়া হয়, এতে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না ইনশাআল্লাহ। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯৩৬, ১৯৪০; আল-বাহরুর রায়েক : ২/২৭৩; কিতাবুল আসল : ২/১৬৮; মাজমাউল আনহুর : ১/৩৬০)
রোজায় ডায়াবেটিস রোগীরা ইনসুলিন নেবেন যেভাবে
১. যারা প্রি-মিক্সড ইনসুলিন নেন (যেমন মিক্সটার্ড ৩০/৭০) কিংবা যারা দুবেলা ইনসুলিন নেন, তাদের সকালের ইনসুলিন ইফতারের সময় নিতে হবে। তবে ইফতারের সময় রোজা ভেঙে ইনসুলিন নিয়ে আধঘণ্টা অপেক্ষার দরকার নেই। ইফতারের ২০ মিনিট আগেও ইনসুলিন নেওয়া যাবে। রাতের ইনসুলিন নিতে হবে সেহরির সময়।
২. যাদের রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে থাকে তাদের ক্ষেত্রে ইফতারের সময় (সকালের ডোজ) ২০-৩০ শতাংশ কম নিলেও হবে। রাতের ইনসুলিনের অর্ধেক পরিমাণ বা এক তৃতীয়াংশ পরিমাণ সেহরিতে নিতে হবে।
৩. যাদের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে থাকে না বা বেশি থাকে তাদের জন্য সকালের ডোজ ২০-৩০ শতাংশ বাড়বে। সেহরিতে রাতের ডোজের অর্ধেক দিতে হবে।
৪. বেসাল ইনসুলিন যদি কেউ নিয়ে থাকেন তার ডোজ ২০-৩০ শতাংশ কমবে।
৫. ইনসুলিনের সঙ্গে কেউ মুখে খাওয়ার ওষুধ নিয়ে থাকলে সকালের ডোজ ইফতারে ও রাতের ডোজ সেহরির সময় নেবে।
৬. ডায়াবেটিক রোগীদের অবশ্যই রোজার শুরুতে একজন অভিজ্ঞ ডায়াবেটিক বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে ইনসুলিনের ডোজ ও ডায়েট ঠিক করিয়ে নিতে হবে।