জামাতে নামাজ আদায়ের সময় এক রাকাত পেলে বাকি নামাজ কিভাবে পড়বো? -If you get one rakat during congregational prayer, how will you pray the rest of the prayer?
জামাতে নামাজ আদায়ের আগ্রহে মুসল্লিরা আগেই মসজিদে উপস্থিত হন। তবে কখনো কোনো কারণে নামাজে হাজির হতে দেরি হয়ে যায়। তখন দুই-এক রাকাত নামাজ ছুটে যায়। জামাতে নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে কিছু রাকাত ছুটে গেলে করণীয় কী—তা জেনে রাখা জরুরি।
জামাতে নামাজের গুরুত্ব মর্যাদা ও ফজিলত অনেক বেশি। এটি হাদিসের বিশুদ্ধ বর্ণনা থেকে প্রমাণিত। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জামাতে নামাজ পড়ার প্রতি বিশেষ জোর দিয়েছেন। কিন্তু জামাতে নামাজ পড়তে এসে যদি কেউ মাসবুক হয় তবে বাকি নামাজ কীভাবে সম্পন্ন করবেন? ছুটে যাওয়া নামাজ পড়ার নিয়মই বা কী?
জামাতের ছুটে যাওয়া নামাজ নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করার কিছুই নেই। জামাতের ছুটে যাওয়া নামাজ আদায় করা একেবারেই সহজ। মুক্তাদির ছুটে যাওয়া রাকাতগুলো আদায়ের নিয়ম ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হলো-
১. জোহর-আসর ও ইশার নামাজ
জোহর-আসর ও ইশার ফরজ নামাজ ৪ রাকাত। যে ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে জোহর বা আসর অথবা ইশার নামাজে এক রাকাত পেল তার জন্য আবশ্যক হলো- ইমামের সালাম ফেরানোর পরে বাকি তিন রাকাত নামাজ পড়ে নেয়া। সে দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ফাতেহা ও অন্য একটি সুরা পাঠ করে রুকু-সেজদার পর প্রথম তাশাহহুদের জন্য বসবে। এরপর বাকি দুই রাকাতে শুধুমাত্র সুরা ফাতিহা পাঠ করবে।
অর্থাৎ মাসবূক ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে যেখান থেকে নামাজ পেয়েছে, তাকে তার নামাজের প্রথমাংশ বা প্রথম রাকাত ধরবে। তারপর নামাজের বাকি অংশ পূর্ণ করবে।
২. মাগরিবের নামাজ
মাগরিবের ফরজ ৩ রাকাত। যে ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে মাগরিবের নামাজের এক রাকাত পেল, সে ইমামের সালাম ফিরানোর পর দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ফাতেহা ও অন্য একটি সুরা মিলিয়ে রুকু-সেজদার পর প্রথম তাশাহহুদের জন্য বসবে। এরপর তৃতীয় রাকাতে শুধুমাত্র সুরা ফাতিহা পাঠ করে রুকু-সেজদার পর শেষ তাশাহহুদ, দরূদ ও দোয়া পড়ার মাধ্যমে নামাজ শেষ করবে।
৩. ফজর ও জুমার নামাজ
ফজর ও জুমার নামাজের ফরজ ২ রাকাত। যে ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে ফজর বা জুমার নামাজের এক রাকাত পেল, সে ইমামের সালাম ফেরানোর পর দ্বিতীয় রাকাত সুরা ফাতেহা ও অন্য একটি সুরা মিলিয়ে রুকু-সেজদার পর বৈঠকের (তাশাহহুদ) পর সালামের মাধ্যমে নামাজ শেষ করবে।
৪. সব নামাজের ক্ষেত্রে
যখন কেউ জামাতে নামাজের ক্ষেত্রে ইমামকে শেষ বৈঠকে পায়, তখন তার জন্য সুন্নাত হলো- সে যেন নামাজে শরিক হয় এবং ইমামের উভয় দিকে সালাম ফেরানো শেষ হলে ছুটে যাওয়া রাকাতসমূহ যথাযথভাবে সাধারণ নিয়মে তার নামাজ পূর্ণ করে। স্বাভাবিক সময় যেভাবে নামাজ পড়ে, ঠিক সেভাবে। আর জুমার নামাজের ক্ষেত্রে শেষ বৈঠকে পেলে পুরো ৪ রাকাত জোহরের নামাজ আদায় করতে হয়।
জামাতে নামাজ পড়ার ফজিলত
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি মসজিদে জামাতে নামাজ আদায় করলে তা তার বাড়ি বা বাজারে নামাজ আদায় করার চেয়ে ২০ গুণেরও অধিক মর্যাদা সম্পন্ন। কারণ কোনো লোক যখন নামাজের জন্য অজু করে এবং ভালোভাবে অজু করে মসজিদে আসে তখন তাকে নামাজ ছাড়া আর কিছুই মসজিদে আনে না। আর সে নামাজ ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যও পোষণ করে না।
১. সুতরাং সে যখনই এ উদ্দেশে (মসজিদের দিকে) কদম (পদক্ষেপ) বাড়ায় তখন থেকে মসজিদে প্রবেশ না করা পর্যন্ত তার প্রতিটি কদমে কদমে ওই ব্যক্তির মর্যাদা বাড়ানো হয় এবং একটি করে পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।
২. এরপর মসজিদে প্রবেশ করার পর যতক্ষণ সে নামাজের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে ততক্ষণ যেন সে নামাজেই রত থাকে।
৩. আর তোমাদের কেউ যখন নামাজ আদায় করার পর নামাজের স্থানেই বসে থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত মালায়েকাহ (ফেরেশতাগণ) তার জন্য এ বলে দোয়া করতে থাকে যে-
اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ اللَّهُمَّ تُبْ عَلَيْهِ مَا لَمْ يُؤْذِ فِيهِ مَا لَمْ يُحْدِثْ فِيهِ
’হে আল্লাহ! তুমি তার প্রতি অনুগ্রহ দান করো। হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা করো। হে আল্লাহ! তুমি তার তওবা কবুল করো।’
এরূপ দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত করতে থাকে যতক্ষণ না সে কাউকে কষ্ট দেয় এবং যতক্ষণ পর্যন্ত অজু নষ্ট না হয়।’ (মুসলিম)