সাতলার শাপলা বিল, বরিশাল-Satla Shapla Bill Barisal
বরিশাল নগরী থেকে প্রায় ষাট কিলোমিটার দূরে উজিরপুর ও অগৈলঝারা উপজেলা নিয়ে এই লাল শাপলা বিল গড়ে উঠেছে। উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের সাতলা গ্রাম, হারতা ইউনিয়নের কালবিলা ও আগৈলঝারা উপজেলা বাগধা ইউনিয়নের বাগধা গ্রামসহ প্রায় হাজার একর এলাকা জুড়ে এই লাল শাপলার বিল বিস্তৃত।
বরিশালের লাল শাপলার বিল পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান হয়ে উঠেছে। শাপলার সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিন কয়েক হাজার দর্শনার্থী ভিড় করছেন। প্রাকৃতিকভাবেই এই শাপলার অবারিত রঙ্গিন রুপ যে কাউকে মুগ্ধ করবে। রুপসী বাংলার এই রুপের প্রশংসা এখন গ্রাম ছাড়িয়ে দেশ-দেশান্তরে।সাধারণত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে এই বিলে লাল শাপলা ফুল ফোটে। আর ওই বিলের জলে ফুটন্ত লাল শাপলা দেখতে জেলা ছাড়িয়ে ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন। শিগগিরই এটি দেশের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিনত হতে পারে বলে স্থানীয়দের ধারণা।বিলের চারপাশে গাঢ় সবুজের পটভূমিতে এ যেন বাংলার এক মুখরিত “লাল স্বর্গ”। দূর থেকে সবুজের মধ্যে লাল রঙ দেখে দুরূহ হয়ে উঠার মতো অবস্থা। দূরত্ব কমার সাথে সাথে স্পষ্ট হয়ে ওঠে ফুলের অস্তিত্ব। আগাছা আর লতা পাতায় ভরা বিলে ফুটন্ত কোটি কোটি লাল শাপলা সত্যিই সৌন্দর্যের লীলাভূমি।বিলের লাল শাপলার নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। মনোমুগ্ধকর এ বিলের শাপলা দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্নস্থান থেকে ছুটে আসছেন ভ্রমন পিপাসু প্রকৃতি প্রেমিরা। এ বিলের শাপলাকে ঘিরে নির্মিত হয়েছে বিজ্ঞাপন চিত্র। ফলে দিন-দিন দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠছে সাতলার ‘শাপলার বিল’।
প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা বিলটির আকার প্রায় ২০০ একর। বিলে তিন ধরনের শাপলা জন্মে—লাল, সাদা ও বেগুনি রঙের। তবে লাল শাপলাই বেশি। গোটা উত্তর সাতলা গ্রাম জুড়েই শাপলার চাষ করা হয়। শাপলা গ্রাম সাতলার প্রায় ১০ হাজার একর জলাভুমিতে শাপলার চাষ করা হয়। শাপলা গ্রামের প্রায় ৭০% অধিবাসীই শাপলা চাষ এবং শাপলা বিপণনের সাথে যুক্ত। শাপলা গ্রাম সাতলা থেকেই সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় শাপলা ফুল সরবরাহ করা হয়। শাপলার ছবি তোলার জন্য ফটোগ্রাফারদের কাছে সাতলা একটি আদর্শ জায়গা।
কখন যাবেন
সাধারণত আগস্টের থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এই ৩ মাস এখানে শাপলা ফুটে। বছরের এই মাসগুলোতে শাপলা গ্রাম সাতলা গেলে হাজারো শাপলা দেখতে পাবেন। আর শাপলা দেখতে হলে অবশ্যই খুব সকালে যেতে হবে কারণ বেলা গড়ানোর সাথে সাথে শাপলা ফুল বুজে যায় কিংবা শাপলা ফুল ব্যবসাহীরা ফুল বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে যায়। তাই সবচেয়ে ভালো হয় এক রাত গ্রামে থেকে ভোরে শাপলা বিলে চলে গেলে।
সাতলা কিভাবে যাবেন
বাসে বা সড়ক পথে ঢাকা থেকে বরিশাল
সড়ক পথে ঢাকা থেকে বরিশাল যেতে প্রায় ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা সময় লাগে। ঢাকার গাবতলি বাস টার্মিনাল থেকে ভোর ৬ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত নিয়মিত ভাবে বাস বরিশালের পথে যাত্রা করে। বাসগুলো সাধারণত পাটুরিয়া ঘাট দিয়ে বরিশাল যায়, তবে কিছু বাস মাওয়া ঘাট পাড় হয়ে বরিশালের দিকে যায়। ঢাকা থেকে আসা বাসগুলো বরিশাল শহরের নতুল্লাবাদ বাস স্ট্যান্ডে এসে থামে।
ঢাকা থেকে বরিশাল রুটে চলাচলকারী বাসগুলোর মধ্যে হানিফ পরিবহন ঈগল পরিবহন, শাকুরা পরিবহন অন্যতম। বরিশাল যেতে এসি এবং নন-এসি বাসের ভাড়া ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। এই রুটে বেশ কিছু লোকাল বাস চলাচল করে সময় বাঁচাতে এসব বাস এড়িয়ে চলাই উত্তম। এসব বাসে বরিশাল যেতে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা ভাড়া লাগে।
নৌপথে বরিশাল
ঢাকার সদরঘাট থেকে রাত ৮ টা থেকে রাত ৯ টার মধ্যে সুন্দরবন ৭/৮, সুরভী ৮, পারাবত ১১, কীর্তনখোলা ১/২ লঞ্চ গুলো বরিশালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। আর সকালে যেতে চাইলে গ্রিনলাইন লঞ্চে যেতে পারেন। রাতে যাত্রা করা লঞ্চগুলো ভোর ৫ টার দিকে বরিশাল পৌঁছায়। এসব লঞ্চের ডেকের ভাড়া ১৫০ টাকা, ডাবল কেবিনের ভাড়া ১৬০০ টাকা এবং ভিআইপি কেবিন ভাড়া ৪৫০০ টাকা।
বরিশাল হতে সাতলা
বরিশাল থেকে বাসে শিকারপুর এসে অটো ভাড়া করে সাতলা যেতে পারবেন। এছাড়া ঢাকা থেকে বাসে বরিশাল যাওয়ার সময় উজিরপুরের নুতনহাট বাস থেকে নেমে সেখান থেকেও সরাসরি অটো করে সাতলা শাপলা বিল দেখতে যেতে পারবেন। কিংবা বরিশালের নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে সাতলা যাওয়ার সরাসরি বাস সার্ভিসে ২ ঘন্টায় পৌঁছে যেতে পারবেন আপনার গন্তব্যে। এছাড়াও বরিশাল থেকে মহেন্দ্র গাড়িতে চড়েও ঘুরে আসতে পারবেন শাপলা গ্রাম সাতলা হতে।
কোথায় থাকবেন
যদি আগের দিন কিংবা সাতলা গ্রামে রাত থাকতে চান তবে সাতলার স্কুলে অথবা স্থানীয় কোন গৃহস্তের বাড়িতে কথা বলে রাত্রিযাপন করতে পারবেন। অতিথিপরায়ন সাতলা গ্রামের মানুষেরা খুশি মনেই আতিথিয়তা করে থাকে।
বরিশালে বেশ কিছু ভালো মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে, যেগুলোতে অনায়াসে রাত্রি যাপন করতে পারবেন। আবাসিক হোটেলের মধ্যে হোটেল হক ইন্টারন্যাশনা, হোটেল গ্র্যান্ড প্লাজা, হোটেল প্যারাডাইজ টু ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল এথেনা ইন্টারন্যাশনাল উল্লেখযোগ্য।