রায়ের বাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ
রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরে অবস্থিত দেশের একটি অন্যতম ঐতিহাসিক স্থান রায়ের বাজার। বর্তমানে রায়ের বাজারের সঙ্গে জড়িয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধের ভয়াল স্মৃতি। মুক্তিযুদ্ধে নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার উদ্দেশ্যে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাতের আঁধারে সাংবাদিক, শিক্ষক, শিল্পী, চিকিৎসক, লেখক, প্রকৌশলীসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন পেশার বুদ্ধিজীবীদের ঘর থেকে তুলে নিয়ে যায়। এদের মধ্যে ছিলেন ড. গোবিন্দচন্দ্র দেব, মুনীর চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, শহিদুল্লাহ কায়সার, ডা. ফজলে রাব্বীসহ আরও অনেকে। এরপর বাংলার সূর্য সন্তানদের নৃশংসভাবে হত্যা করে তাদের লাশ রায়ের বাজারের ইটখোলায় ফেলে রাখে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর রায়েরবাজারের ইটখোলায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পচা গলা লাশের স্তূপ দৃষ্টিগোচর হয়।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ সরকার রায়ের বাজারের বধ্যভূমিতে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। পরবর্তী সময়ে স্থপতি ফরিদউদ্দীন আহমেদ এবং স্থপতি জামি-আল-শফি-র নকশায় ১৯৯৬ সালে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে ১৯৯৯ সালে শেষ হয়। রায়ের বাজার বধ্যভূমি এলাকাটির আয়তন ৩.৫১ একর। স্মৃতিসৌধের প্রধান অংশে রয়েছে ১৭.৬৮ মিটার উচ্চতা, ০.৯১ মিটার প্রস্থ এবং ১১৫.৮২ মিটার দৈর্ঘ্যরে ইটের তৈরি দুই প্রান্ত ভাঙা এবং বাঁকানো একটি দেয়াল। যা ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের মৃতদেহ প্রাপ্তির ইটখোলাকে নির্দেশ করে। আর দেয়ালের ভগ্ন দুইপ্রান্ত বুদ্ধিজীবী হত্যার দুঃখ এবং শোকের গভীরতা নির্দেশ করছে। দেয়ালের দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি বর্গাকৃতির জানালা রয়েছে। জানালা দিয়ে পেছনের আকাশ দেখা যায়। আর এই জানালাটি দেয়ালের শোকের গভীরতা কমিয়ে আশার বাণী বয়ে আনে।
বাঁকা দেয়ালের সামনে রয়েছে একটি স্থির জলাধার, যেখানে পানির নিচ থেকে কালো গ্র্যানাইট পাথরের একটি স্তম্ভ ওপরে উঠে এসেছে। যা মুহ্যমান শোকের প্রতীক।
পরিদর্শনের সময়সূচী
রায়ের বাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধটি সকাল ৯ থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে। রাতের বেলায় এখানে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আছে।
টিকেট মূল্য
এখানে টিকিটের কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি। বিনামূল্যে যে কোন পর্যটক ঘুরে দেখতে পারেন।
কিভাবে যাওয়া যায়
রায়ের বাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ দেখতে যেতে হলে পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের বাবুবাজার আসতে হবে। বাবু বাজার ব্রীজের নীচে নদী সংলগ্ন থেকে যানজাবিল ব্রাদার্স নামে কিছু লোকাল বাস এখান থেকে ছেড়ে যায়। এতে ১২ টাকার একটি টিকেট কেটে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে আসা যাবে। এছাড়া গাবতলী থেকে আসতে হলে ঠিক তেমনি যানজাবিল ব্রাদার্স প্রভৃতি পরিবহনে ১৩/১৪ টাকার টিকেটে কেটে আসা যাবে। এই রুটে ব্রাদার্স পরিবহনের যথেষ্ট গাড়ি চলাচল করে। অথবা আপনি মোহাম্মদপুরের বাসে উঠে ধানমন্ডি ১৫ (পুরান) নেমে রিক্সাযোগে যেতে পারবেন।