গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত-Guliakhali Sea Beach
গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় নদীর মোহনায় অবস্থিত। এটি মুরাদপুর সৈকত নামেও পরিচিত। সমুদ্রসৈকতটিকে পর্যটন সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করেছে সরকার। উপকূলীয় সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ২৫৯ দশমিক ১০ একর জায়গা এই ঘোষণার আওতায় থাকবে।
ইতিহাস
সৈকতটি সম্পর্কে ধারণা কম থাকায় পূর্বে এখানে মানুষের সমাগম কম হতো। ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) কিছু ছাত্র ঘুরে তার ছবি ফেসবুক, ইউটিউবে আপলোড করেন। এরপরই সৈকতটির ব্যাপারে সবাই জানতে পারেন। বর্তমানে এখানে প্রচুর মানুষের সমাগম হয়।
অবস্থান
গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত এটি সীতাকুণ্ডের সীতাকুণ্ড বাজার থেকে ৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত।
প্রাকৃতিক নৈসর্গ
প্রকৃতি ও গঠনগত দিক থেকে এটি অন্যান্য সমুদ্র সৈকত থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। সৈকতের পশ্চিমে দিগন্ত জোড়া জলরাশি, পূর্ব দিকে তাকালে দেখা মেলে পাহাড়ের। এলাকায় কেওড়া বন রয়েছে। কেওড়া বনের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালের চারদিকে কেওড়া গাছের শ্বাসমূল দেখা যায়। এই বন সমুদ্রের অনেকটা গভীর পর্যন্ত চলে গেছে। এর পরিবেশ সোয়াম্প ফরেস্ট ও ম্যানগ্রোভ বনের মত। সৈকত জুড়ে সবুজ গালিচার বিস্তীর্ণ ঘাস একে অন্যান্য সমুদ্র সৈকত থেকে করেছে অন্যন্য। এই সবুজের মাঝ দিয়েে এঁকে বেঁকে গেছে সরু নালা। নালাগুলো জোয়ারের সময় পানিতে ভরে উঠে। পাখি, ঢেউ আর বাতাসের মিতালীর অনন্য অবস্থান দেখা যায় এই সমুদ্র সৈকতে। সৈকতের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে চন্দ্রনাথ পাহাড় ও মন্দির, বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্কের সহস্রধারা ও সুপ্তধারা নামের দুটি ঝরনা।
পর্যটন কেন্দ্র
প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতকে পর্যটন সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। সৈকতটি এতদিন সরকারি ভাবে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি লাভ না করলেও সেখানে প্রচুর মানুষের সমাগম হয়ে থাকে। যা স্থানীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। আগে সৈকতে বোট ভাড়া/গাড়ি পার্কিং এর কোন সু-ব্যবস্থা ছিল না। সাম্প্রতিক সময়ে কর্তৃপক্ষ তা বেঁধে দিয়েছেন। তবে ট্যুরিস্ট পুলিশ না থাকায় রাতে সৈকতটি নিরাপদ নয়।
গুলিয়াখালী বীচে যাওয়ার উপায়
আপনি খুব সহজেই দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত যেতে পারবেন। তার জন্য প্রথমে আসতে হবে সীতাকুণ্ডে। বিভিন্ন উপায়ে ঢাকা, চট্রগ্রাম, সিলেট থেকে সীতাকুণ্ডে আসতে পারবেন।
ঢাকা থেকে সীতাকুণ্ড যাওয়ার উপায়
ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম গামী যে কোন বাসে করেই যেতে পারবেন সীতাকুন্ড। যাওয়া একেবারেই সহজ। আপনি সীতাকুণ্ড যাওয়ার জন্য এসি ও নন এসি দুই ধরনের বাস পাবেন। ভাড়া নিবে ৪৮০ – ১২৫০ টাকা মত। আর অবশ্যই বাসের সুপারভাইজার কে আগেই বলে রাখবেন সীতাকুন্ড নামিয়ে দিতে।
এছাড়া ঢাকা থেকে সীতাকুন্ড মেইল ট্রেনে করে জনপ্রতি ১২০ টাকা ভাড়া সীতাকুণ্ড যেতে পারেন। ঢাকা থেকে আন্তঃনগর ট্রেনে করে ফেনী যেতে পারবেন, শ্রেনী ভেদে ভাড়া নিবে ২৬৫ – ৮০০ টাকা। ফেনী থেকে লোকাল বাসে করে সীতাকুণ্ড যেতে পারেন। ফেনী থেকে লোকাল বাসে সীতাকুণ্ড যেতে ৫০ থেকে ৭০ টাকা ভাড়া লাগবে।
চট্রগ্রাম থেকে সীতাকুণ্ড যাওয়ার উপায়
চট্রগ্রাম শহরের অলংকার মোড়, খান মোড়, কদমতলী থেকে সীতাকুণ্ড যাবার বাস ও টেক্সি পাবেন। পছন্দ মতো জায়গা থেকে চলে আসতে পারবেন সীতাকুণ্ড বাজারে।
সীতাকুন্ড থেকে গুলিয়াখালী যাওয়ার উপায়
সিএনজি বা অটো নিয়ে সীতাকুন্ড বাস স্ট্যান্ড ব্রীজের নিচ থেকে গুলিয়াখালি বীচের বাঁধ পর্যন্ত চলে আসতে পারেন। ভাড়া নিবে ৩০ টাকা। আপনি চাইলে অটো রিজার্ভ করে নিয়ে যেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে ১৫০ – ২০০ টাকার মত।
কোথায় খাবেন এবং থাকবেন
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, গুলিয়াখালী বিচে থাকা ও খাবার কোন ব্যবস্থা নেই! হালকা খাবারের জন্য ছোট ১ টি দোকান রয়েছে মাত্র। তাই আসার পথে সীতাকুণ্ড বাজার থেকে প্রয়োজনীয় খাবার নিয়ে নিন।
যদিও এই স্থানটি ১ দিনের ভ্রমণ স্থান। তারপরও যদি থাকতে চান তাহলে সীতাকুণ্ড বাজারে সাইমুন এবং সৌদিয়া হোটেলে থাকতে পারবেন। রুম ভাড়া নিবে ৩০০ – ১৬০০ টাকার মত।
পার্শ্ববর্তী দর্শনীয় স্থান
গুলিয়াখালী সৈকতে গেলে একই দিনে চন্দ্রনাথ পাহাড়, সহস্রধারা লেক ও ঝর্ণা এবং মহাময়া ঝর্ণা, বাঁশবাড়িয়া সৈকত দেখা যাবে।