নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা -Napittachora Waterfall and Trail
বিগত কয়েক বছর ধরে অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় পর্যটকদের কাছে যেসব ঝর্ণা আকর্ষণীয় এবং উপভোগ্য হিসেবে ধরা দিয়েছে, তাদের মধ্যে অন্যতম চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা। সীতাকুণ্ড-মিরসরাই অঞ্চলের ঝর্ণাগুলোর মধ্যে খৈয়াছড়ার পর এ ঝর্ণায় সবচেয়ে বেশি পর্যটকের আনাগোনা। নাপিত্তাছড়ার রূপ-লাবণ্য এবং সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটকেরা এখানে এসে ভিড় জমান।
পাহাড় ও ঝর্ণার অপরুপ সৌন্দর্যে মিশে আছে মিরসরাই এর নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা৷ এখানে মূলত মোট তিনটি ঝর্ণা রয়েছে যেগুলো হলো কুপিটাকুম, মিঠাছড়া ও বান্দরকুম ঝর্ণা। এই ঝর্ণা গুলো দেখতে যাওয়ার পাহাড়ি ঝিরিপথ কে নাপিত্তাছড়া ট্রেইল বলা হয়ে থাকে। বর্ষার মৌসুমে ঝর্ণা গুলোর পূর্ণরুপ সৌন্দর্যের দেখা মেলে। তিনটা ঝর্ণায় কাছাকাছি অবস্থিত। জল - পাথুরে পথ বেয়ে এগিয়ে গেলেই দেখা মিলে পরপর তিনটি ঝর্ণার।
কুপিটাকুম
চট্টগ্রামের মিরসরাই এর নয়দুয়ার বাজার হতে ঝর্ণার ট্রেইল শুরু হয়। যাত্রা সুবিধার জন্য সাথে গাইড ও নিয়ে যেতে পারেন। পাহাড়ি ঝিরিপথ বেয়ে এগিয়ে গেলেই কিছু দূর পর দেখা মেলে প্রথম ঝর্ণা কুপিটাকুম। বর্ষায় এখানে প্রচুর পানি থাকার কারনে ঝর্ণার একদম কাছে যেতে হলে সাঁতার কেটে যেতে হবে।
মিঠাছড়া
কুপিটাকুম ঝর্ণার পরে একটি ঢালু পাহাড়ি পথ পাড় হলেই দেখতে পাবেন ২য় ঝর্ণা মিঠাছড়া। উচু পাহাড় হতে নেমে আসা ঝর্ণার পানির আওয়াজ পুরো অরণ্যে জুড়ে গর্জন করে।
বান্দরকুম
এরপর আরো কিছু পথ পাড় হয়ে দেখা মিলবে ৩য় ঝর্ণা বান্দরকুম বা বান্দরিছড়া। এই ঝর্ণাটি সবচেয়ে উঁচু ঝর্ণা। বর্ষাকালে এই ঝর্ণা গুলোর সর্বোচ্চ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
অবস্থান
চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কের মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়ন অন্তর্ভুক্ত নয়াদুয়ার বাজার এলাকায় এটির অবস্থান। মহাসড়ক থেকে নাপিত্তাছড়া ঝর্ণায় পৌছাতে ৫০-৬০ মিনিটের মত সময় লাগে।
কোন সময় যাবেন
বর্ষাকাল ঝর্ণায় যাবার সবচেয়ে ভাল সময়। তখন ঝর্ণা গুলোকে যৌবনবতী সুন্দরী নারীর চেয়েও আকর্ষণীয় মনে হয়। ঝর্ণায় বেশ পানি থাকে।এছাড়া বছরের যে কোন সময়ই যেতে পারবেন।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে নাপিত্তাছড়া
ঢাকা থেকে বাসে: ঢাকার যে কোন জায়গা থেকে চট্রগ্রাম গামী যে কোন বাসে করে নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা যেতে পারবেন। এস আলম, শ্যামলি, সৌদিয়া, ইউনিক, হানিফ, ঈগল, এনা প্রভৃতি পরিবহনের নন এসি বাস ভাড়া ৪২০- ৪৮০ টাকা। এসি বাসের মধ্যে গ্রিনলাইন, সৌদিয়া, সোহাগ, টি আর এইসব বাস ভাড়া ৮০০-১১০০ টাকা। আপনার পছন্দ মত বাসে এসে মিরসরাই এর নয়দুয়ারী বাজারে নেমে যেতে হবে। সুপারভাইজারকে আগে বলে রাখলে আপনাকে নামিয়ে দিবে।
ঢাকা থেকে ট্রেনে: ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম গামী যে কোন আন্তঃনগর ট্রেনে এসে ফেনী স্টেশনে নামতে হবে। শ্রেনী ভেদে ট্রেন ভাড়া জন প্রতি ২৬৫-৮০০ টাকা। ফেনী স্টেশন থেকে ১০-১৫ টাকা রিক্সা/অটো দিয়ে ফেনী মহিপাল বাস স্ট্যান্ড যেতে হবে। সেখান থেকে লোকাল বাসে বা লেগুনাতে করে মিরসরাই এর নয়দুয়ারী বাজার আসতে পারবেন।
চট্রগ্রাম থেকে নাপিত্তাছড়া
চট্টগ্রাম নগরের অলংকার সিটি গেইট থেকে কিছু লোকাল বাসে করে মিরসরাই এর নয়দুয়ারী বাজার আসতে পারবেন। ভাড়া ৮০-১০০ টাকা।
কোথায় খাবেন
নাপিত্তাছড়া যাওয়ার পথে রেললাইন পার হওয়ার পর থেকেই বেশকিছু স্থানীয় খাবার হোটেল পাবেন।
আপনারা চাইলে এগুলোর কোন একটিতে খাবার অর্ডার করে যেতে পারেন অথবা ট্র্যাকিং শেষ করে এসেও এসব হোটেলে খেতে পারবেন। তবে আপনারা বেশি সদস্য হলে অর্ডার করে যাওয়াই সুবিধাজনক হবে। এসব হোটেলে খেতে খরচ হবে জনপ্রতি ১২০-১৫০ টাকা।
চট্টগ্রামে নানান মানের হোটেল আছে । নীচে কয়েকটি বাজেট হোটেলে নাম ঠিকানা দেয়া হলোঃ
১. হোটেল প্যা রামাউন্ট, স্টেশন রোড, চট্টগ্রাম। ভাড়াঃনন-এসি সিঙ্গেল ৮০০ টাকা, ডাবল ১৩০০ টাকা, এসি ১৪০০ টাকা ও ১৮০০ টাকা ।
যোগাযোগ : ০৩১-২৮৫৬৭৭১, ০১৭১-৩২৪৮৭৫৪।
২. হোটেল এশিয়ান এসআর, স্টেশন রোড, চট্টগ্রাম। ভাড়া : নন এসি : ১০০০ টাকা, নন এসি সিঙ্গেল। এসি : ১৭২৫ টাকা ।
যোগাযোগ: ০১৭১১-৮৮৯৫৫৫।
৩. হোটেল সাফিনা, এনায়েত বাজার, চট্টগ্রাম। একটি পারিবারিক পরিবেশের মাঝারি মানের হোটেল । ভাড়া : ৭০০ টাকা থেকে শুরু । এসি ১৩০০ টাকা ।
যোগাযোগ: ০৩১-০৬১৪০।
৪. হোটেল নাবা ইন, রোড ৫, প্লট-৬০, ও আর নিজাম রোড, চট্টগ্রাম। যারা নাসিরাবাদ/ও আর নিজাম রোড এলাকায় থাকতে চান তাদের জন্য আদর্শ । ভাড়া : ২৫০০/৩০০০ টাকা ।
যোগাযোগঃ০১৭৫৫ ৫৬৪৩৮২
৫. হোটেল ল্যান্ডমার্ক, ৩০৭২ শেখ মুজিব রোড, আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম। ভাড়া-২৩০০/৩৪০০ টাকা যোগাযোগ: ০১৮২-০১৪১৯৯৫, ০১৭৩১-৮৮৬৯৯৭।