প্রজাপতি পার্ক বাংলাদেশ-Butterfly Park Bangladesh
বন্দরনগরী চট্টগ্রাম মানেই আকর্ষণীয় একটি পর্যটনস্থলের নাম। অসংখ্য দর্শনীয় স্থানে ভরপুর এই জেলাটি তাই ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে এক আকর্ষণের নাম। আর চট্টগ্রামের পতেঙ্গা হল সমুদ্র বিলাসীদের পছন্দের জায়গা। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত পাড়ের ঢেউ আর ঝাউয়ের সারির মায়ার টানে প্রতিদিনই হাজারো ভ্রমণ পিয়াসু মানুষ ছুটে আসেন পতেঙ্গায়। তবে সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্যের সাথে এখানে আরো আছে বিনোদনের আরেকটি অপরূপ অনুষঙ্গ প্রজাপতি পার্ক।
অবস্থান
প্রজাপতি পার্ক বা বাটারফ্লাই পার্ক বাংলাদেশের চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা নেভাল একাডেমি রোডে অবস্থিত একটি প্রজাপতি পার্ক। প্রায় ছয় একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এই পার্কটিতে প্রায় ৬০০ প্রজাতির প্রজাপতি রয়েছে। ধারণা করা হয় এই পার্কটিই ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম প্রজাপতি পার্ক।
প্রজাপতি পার্কে কি কি দেখতে পাবেন
এই প্রজাপতি পার্কে রয়েছে ট্রপিক্যাল-গার্ডেন, বাটারফ্লাই জোন, বাটারফ্লাই মিউজিয়াম, বাটারফ্লাই রিয়ারিংরুম, কৃত্রিম লেক-ঝর্ণা, ফিশফিডিং জোন ও বাটারফ্লাই ফিডিং জোন। একটি রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট, ওয়াটার রাইড, কৃত্রিম ঝরনা, বর্ণিল ফুলের বাগান আর সেই বাগানে অসংখ্য প্রজাপতির মেলা। পার্কে প্রবেশ করে প্রথমেই দেখা মিলবে কৃত্রিম ঝর্ণার। কৃত্রিম ঝর্ণা পেরিয়ে চোখে পড়বে তারের জালে তৈরি ‘বাটারফ্লাই জোন’।
এখানে জালের ভেতরে নানা রঙের প্রজাপতির বিশাল জগত। হাজার হাজার প্রজাপতি আপনাকে আমন্ত্রণ জানাবে নিজেদের ভুবনে। গাছের ডালে, পাতায়-পাতায় উড়ছে প্রজাপতির দল। নানা রঙের প্রজাপতির দেখা মেলে এ পার্কে। সকাল সকাল পার্কে প্রবেশ করলে অনেক প্রজাপতির দেখতে পাবেন। কারণ বিকালের পর থেকে ঝোপে চলে যেতে থাকে প্রজাপতির দল। এজন্য দিনের আলো থাকতেই বেড়াতে আসবেন এখানে।
বাটারফ্লাই জোন থেকে বেরিয়ে যেতেই চোখে পড়বে ‘বাটারফ্লাই মিউজিয়াম’।এটি মূলত একটি প্রজাপতি জাদুঘর। যেখানে সংরক্ষণ করা হয়েছে বিভিন্ন দেশ-বিদেশ থেকে শত শত মৃত প্রজাপতি এবং ভেতরের দেয়ালে কাচঘেরা বাক্সে মেডিসিন দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে সাথে তুলে ধরা হয়েছে বিভিন্ন প্রজাপতির জীবনচক্র সহ নানান উপাদান। প্রজাপতির জাদুঘর থেকে বেরিয়ে একটু সামনে গেলেই পাবেন শিশুদের খেলাধুলার জন্য পার্ক। এই পার্কটি সাজানো হয়েছে পরিপাটি করে বাচ্চাদের পছন্দনীয় রাইড গুলো নিয়ে।
আর পার্কের পূর্ব দিকে একটি জলাশয় রয়েছে যার মধ্যে আপনি নৌকা ভ্রমণ করতে পারবেন। পার্কটিকে সাজাতে বিভিন্ন পশুর মাটির ভাস্কর্য রাখা হয়েছে। এছাড়া পাঁচ শতাধিক লোকের জন্য একটি বনভোজন কেন্দ্রও ব্যবস্থা আছে। আরো আছে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য হল। আপনি চাইলে প্রজাপতি পার্কে রাতও কাটাতে পারবেন। এ জন্য আছে বাটারফ্লাই রিসোর্ট। চার হাজার থেকে সাত হাজার টাকা ভাড়ায় এই রিসোর্ট বুকিং দিতে পারবেন। বেশ সাজানো গোছানো রিসোর্টের কক্ষগুলো। আধুনিক সব সুবিধা আছে এই রিসোর্টে। সব মিলিয়ে বিনোদনের সব উপকরণই আছে পার্কটিতে।
টিকেট মূল্য ও সময়সূচী
প্রজাপতি পার্কের প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ১০০ টাকা,ছোটদের জন্য ৫০ টাকা। প্রজাপতি সাধারণত সকাল ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে এবং বিকেলের দিকে পার্ক জুড়ে উড়ে বেড়াতে দেয়া যায়। সন্ধ্যার আগে থেকেই ঝোপের মধ্যে অবস্থান নিতে শুরু করে তাই সন্ধ্যার পর দেখা যায় না। দর্শনার্থীদের জন্য পার্কটি প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে রাত এগারটা পর্যন্ত খোলা থাকে।
যেভাবে যাবেন
ঢাকার ফকিরাপুল, সায়দাবাদ, মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে চট্টগ্রাম যেতে পারেন। এস আলম, শ্যামলী, সৌদিয়া, ইউনিক, হানিফ, ঈগল, এনা, সোহাগ টি আর প্রভৃতি এসি ও নন-এসি বাস চট্টগ্রাম যায় প্রতিদিন। ভাড়া পড়বে ৪২০ থেকে ১১০০ টাকা। চট্টগ্রাম শহর থেকে পতেঙ্গাগামী বাস কিংবা লেগুনায় চড়ে আসতে পারেন এই পার্কে। এছাড়া চাইলে সিএনজিচালিত বেবিট্যাক্সিতেও আসতে পারেন ।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ট্রেনের সময়সূচী
রাতে থাকতে চাইলে আপনাকে চট্টগ্রাম শহরে ফিরে আসতে হবে থাকার জন্য। চট্টগ্রামে নানান মানের হোটেল আছে । নীচে কয়েকটি বাজেট হোটেলে নাম ঠিকানা দেয়া হলোঃ
১. হোটেল প্যা রামাউন্ট, স্টেশন রোড, চট্টগ্রাম। ভাড়াঃনন-এসি সিঙ্গেল ৮০০ টাকা, ডাবল ১৩০০ টাকা, এসি ১৪০০ টাকা ও ১৮০০ টাকা ।
যোগাযোগ : ০৩১-২৮৫৬৭৭১, ০১৭১-৩২৪৮৭৫৪।
২. হোটেল এশিয়ান এসআর, স্টেশন রোড, চট্টগ্রাম। ভাড়া : নন এসি : ১০০০ টাকা, নন এসি সিঙ্গেল। এসি : ১৭২৫ টাকা ।
যোগাযোগ: ০১৭১১-৮৮৯৫৫৫।
৩. হোটেল সাফিনা, এনায়েত বাজার, চট্টগ্রাম। একটি পারিবারিক পরিবেশের মাঝারি মানের হোটেল । ভাড়া : ৭০০ টাকা থেকে শুরু । এসি ১৩০০ টাকা ।
যোগাযোগ: ০৩১-০৬১৪০।
৪. হোটেল নাবা ইন, রোড ৫, প্লট-৬০, ও আর নিজাম রোড, চট্টগ্রাম। যারা নাসিরাবাদ/ও আর নিজাম রোড এলাকায় থাকতে চান তাদের জন্য আদর্শ । ভাড়া : ২৫০০/৩০০০ টাকা ।
যোগাযোগঃ০১৭৫৫ ৫৬৪৩৮২
৫. হোটেল ল্যান্ডমার্ক, ৩০৭২ শেখ মুজিব রোড, আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম। ভাড়া-২৩০০/৩৪০০ টাকা যোগাযোগ: ০১৮২-০১৪১৯৯৫, ০১৭৩১-৮৮৬৯৯৭।